সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
ও রয়দা, রেডিও জকি কী করে হব গো ?

সে মজার কথা বলে হাসায়, মন খারাপের কথা বলে কাঁদায়। কেউ তার সঙ্গে ফোনে আড্ডা দিতে চাইলে, সে কিছুক্ষণ অন্তত কথা বলে তার সঙ্গে। আর হ্যাঁ, সে শুধু বকবক করে তাইই নয়, সে গানও শোনায়। চেনা-অচেনা, নতুন-পুরোনো নানান স্বাদের গান শোনায়। তাকে চোখে দেখা যায়না, অথচ তার গলা রোজ শুনতে শুনতে একটা অদৃশ্য বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। এই অদৃশ্য বন্ধুরাই রেডিও জকি।

রেডিওতে বকবক-টগবগ করা তাদের কাজ, তাদের পেশা। কিন্তু শুধু পেশার খাতিরে কথা বলা নয়, তাদের নেশাও কথা বলা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কত্ত গল্প করে তারা। কখনো একা একাই বকবক করে, কখনো তার সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য যারা শ্রোতা, মানে যারা শুনছে – তাদের ফোন করতে বলে। তাদের সঙ্গে জমে ওঠে আড্ডা। সব্বাই যে ফোন করে, তা নয়। অনেকেই চুপচাপ শোনে সেই আড্ডা। আর এভাবেই একটা অদৃশ্য বন্ধুত্ব বেড়ে ওঠে শ্রোতা আর বক্তা, মানে যে কথা বলছে, তার।

রেডিও জকিদের দেখা যায়না, কারণ রেডিও মানেই শুধু শোনার জিনিস। শুনে শুনে সব কিছু বুঝতে হয়, বিশ্বাস করতে হয়। রেডিওকে বলা হয় – The theatre of the mind, মনের নাটক। এই নাটক মানে কিন্তু বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করা –সেই নাটক নয়। এই নাটক মানে নাটকীয়তা। মানে, এমনভাবে কথা বলা, কোনো বিষয় নিয়ে গল্প করা, আলোচনা করা – একা বা অনেকের সঙ্গে কথা বলে – যে যারা শুনছে, তারা মনের মধ্যে একটা ছবি কল্পনা করতে পারে। যেন ঘটনাটা চোখের সামনে ঘটছে – এমনভাবে কথাগুলো বলছে সেই রেডিও জকি। তার কথা বলার ধরণ, তার ব্যবহার করা শব্দ – সব মিলেমিশে এমন একটা অবস্থা তৈরি করে শ্রোতার মনের মধ্যে, যে সে স্পষ্ট দেখতে পায় মনে মনে – কী ঘটছে!

রেডিও জকির কাজই হল তার গলা দিয়ে গল্প বলা। খুব অদ্ভুত লাগল শুনতে, তাই না? গলা দিয়েই তো গল্প বলে – তাহলে আর আলাদা কিসের! আলাদা এই কারণে, আমরা যেভাবে কথা বলি, সেইভাবে গল্প বললে বা কথা বললে ঠিক মজাটা পাওয়া যায় না। যেমন, পরের লাইনগুলো পড়ো : “গাড়িটা ডানদিকে বাঁক নিতেই ক্যাঁচ করে ব্রেক কষে থেমে গেল। আমি জানলা দিয়ে গলা বাড়িয়ে দেখলাম, এক ফুটেরও কম দূরত্বে গভীর খাত নেমে গেছে। এক সেকেন্ড দেরিতে ব্রেক কষলেই...আর বাড়ি ফেরা হত না”। এই লাইনগুলো যেভাবে পড়ে ফেললে, তাতে মনের মধ্যে ভয়ের ছবিটা তৈরি হল না। পাশে খাত, ব্রেক না মারলে মরেই যেত – এই ভয়টা গলা দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে হবে। আর, তার সঙ্গে কোথাও কোথাও থেমে যেতে হবে – সেই ভয়টা তাহলে আরো ফুটে উঠবে। গা শিরশিরিয়ে উঠবে। তুমি গাড়ির মধ্যে বসে নেই, তাও তুমিও ভয় পাবে – আর এক সেকেন্ড দেরি হলেই আমিও...

এটাই নাটকীয়তা। তাই বলে সব সময় তো আর এইভাবে ভয় দেখিয়ে বা হাসতে হাসতে কথা বলা যায় না। কথা বলার এই জাদু আস্তে আস্তে অভ্যেস হয়ে যায়। গলা দিয়ে গল্প বলা তখন শুধু এইরকম গল্প বলার সময় নয়, এমনি কথা বলার সময়েও সেই গলা কাজ করে তখন। সেই গলায় এমনি কথা শুনতেও খুব ভালো লাগে তখন। আর, তখনই অদৃশ্য বন্ধু হয়ে যায় সেই রেডিও জকি।

একজন রেডিও জকি-কে শুধু গল্প বললেই বা কথা বললেই হবে না, সেই কথা-গল্প বলার জন্য তাকে মালমশলাও জোগাড় করতে হবে। তাকে অনেক বিষয় নিয়ে জানতে হবে – না জানলে, সে কথা বলবে কী করে? জানার জন্য পড়ত হবে – বই, ম্যাগাজিন - মানে পত্রিকা, কাগজ, গল্প, উপন্যাস, কবিতা আর যা যা পাওয়া যায় পড়ার জন্য। যে কোন ভাষায় পড়ো। এক-এর বেশি ভাষায় পড়তে পারলে জ্ঞানের পরিধি অনেক বাড়বে, যে কোন বিষয় নিয়ে তখন কথা বলতে পারবে। আর শুধু পড়লেই হবেনা, শুনতে-দেখতেও হবে। গান শোনা, সিনেমা দেখা, তথ্যচিত্র বা ডকুমেন্ট্যরি দেখা, টিভি বা ইন্ট্যরনেটে এমন কিছু দেখা যার থেকে নতুন কিছু শিখতে পারবে – তবে, সেই শেখাটা যেন ভালো হয় যাতে সেটাকে কাজে লাগানো যায় – সেটা খেয়াল রাখতে হবে। একজন রেডিও জকিকে অনেক কথা বলতে হয় – কিন্তু বুঝে কথা বলতে হয়। তাই, সে যত জানবে, তত সে বুঝতে পারবে – কখন, কোন কথা, কীভাবে বলতে হয়।

দেখা যায় না, কিন্তু দারুণ ভালো কথা বলে। ভালো গান শোনায়। কেউ একলা থাকলে তার সঙ্গেই যেন কথা বলে। ফোন হয়ত করেনা তাকে, কিন্তু তার একলা বকবক-টগবগ শুনতে শুনতেই সময় কেটে যায়, এমন ভালো এক অদৃশ্য বন্ধু সে। এইযে জাদু – সেই জাদুর টানে অনেকেই রেডিও জকি হতে চায়। এবং, সেটা হতে পারাটা মোটেই কঠিন নয়। এতক্ষণ যা যা বললাম – সব দিক বুঝে ভালো কথা বলা, পড়া-শোনা-দেখা, নাটকীয়তা – এই গুণগুলো অনেকের মধ্যেই থাকে। অনেকেই ভালো আবৃত্তি করে, নাটক করে, গান করে। যুক্তি-তর্ক বা ডিবেট করে, ক্যুইজ করে। তাদের সাধারণ জ্ঞান অনেকের থেকেই বেশি, তারা ভালো কথাও বলতে পারে। এই সবকিছু মিলিয়েমিশিয়ে ভালো গুণগুলো যাদের মধ্যে আছে – তাদের সব্বাই, বা যে কেউ রেডিও জকি হতে পারে।

কিন্তু খেয়াল রেখো – রেডিওর জাদু তার ওই অদৃশ্য থাকার মধ্যেই। তাকে দেখা গেলেই, তার গলার জাদু অনেকটা যেন কমে যায়। তাকে শুনে শুনে মনের মধ্যে একটা ছবি কল্পনা করতে পারছি, আমার কল্পনাশক্তি বাড়ছে, আমি নিজের মত করে যেন সিনেমা দেখতে পাচ্ছি – এটাই রেডিওর জাদু। যেটা অনেকটা নষ্ট হয়েছে এখন ইন্ট্যরনেটের যুগে। এখন তো আমরা সবকিছুই দেখতে চাই। শুধু শুনে কোনো কিছুকে বিশ্বাস করব, ভালোবাসবো – সেটা অনেকটা কমেছে। ফলে রেডিও জকির কাজটা একটু কঠিন হয়েছে, বদলে গেছে তার কাজের ধরণ। তাকে দেখা যাচ্ছে বেশি, মানুষ হয়ত শুনছে তাকে কম। আগামী দিনে সেটা আরো কঠিন হবে হয়ত, যত দাপট বাড়বে social media-র – ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউ টিউব বা অন্যান্য মাধ্যমের। তবে, রেডিও ব্যাপারটা আগামীদিনে ইন্ট্যরনেট রেডিওতে বা অন্য কোনভাবে লড়াই করে নিজের জায়গা তৈরি করে জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে পারবে নাকি – সেটা এক্ষুণি বলা মুশকিল।

তাই, যারা রেডিও জকি হতে চাও, আমি এতক্ষণ ধরে যা যা বললাম – তা মেনে চলার চেষ্টা করো। নিজের জ্ঞান বাড়াও, যখন যেখানে সুযোগ পাবে সেখানে ভালো কথা বলার অভ্যেস তৈরি করো। ভালো কথা বলতে পারাটা প্রথম শর্ত – অনেক কথা বলতে পারলেই রেডিও জকি হওয়া যায় না। বুঝে-মেপে কথা বলাটা রপ্ত করতে হয়। তারপর – রেডিও জকি হওয়ার পরীক্ষায় (audition) ডাক পেলে নিজেকে সেরার সেরা প্রমাণ করতে পারলেই কেল্লা ফতে  - তুমিও হতে পারবে রেডিও জকি !

ছবিঃ ব্যক্তিগত সংগ্রহ, পিক্সাবে

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা