সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

পুজো তবে এসেই গেল।হিমের পরশ গায়ে মেখে শরৎ এসেছে আর পুজো আসবে না? বৃষ্টিটা এবছর এখনও বেশ হচ্ছে বটে, তবে খেয়াল করলে দেখবে, অন্য সময়ে আকাশের রঙ কিন্তু কি সুন্দর নীল । সাদা মেঘভেলাগুলো আকাশের গায়ে হেলেদুলে ভেসে বেড়াচ্ছে। বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ, কাছে দূরে শোনা যাচ্ছে চন্ডীপাঠের আওয়াজ। রাস্তায় কি ভীড় রে বাবা! নতুন জামা কাপড়ের আনন্দে খুশিতে উজ্জ্বল ছোটো মুখগুলি কলকল করে বাবামায়ের হাত ধরে রাস্তা মাতিয়ে চলেছে। পাড়ার প্যান্ডেলে বসে হাসি আড্ডার মধ্যে আজ তবে পুজোর গল্পই হোক্‌? বলামাত্রই হাত ঘুরিয়ে চোখ বড় করে টুক্‌টুকি শুরু করল গত রাত্রে ঠাম্মির কাছে শোনা সেই গল্পটাঃ

দক্ষরাজার ছোট মেয়ে সতী দেখতে খুব সুন্দর আর রাজার সবচেয়ে আদরের। বাড়ির সব লোকজনকে সে যত্ন করতে পারে, তাদের সে ভালবাসে। সে হাসলে ঝর্ণার জলের শব্দ শোনা যায়; কোকিল ময়নারা দল বেঁধে তার গান শুনতে আসে। পথের মানুষ দাঁড়িয়ে পড়ে বিভোর হয়ে তার নাচ দেখে।

সতী একটু বড় হয়েছে। একদিন কথক ঠাকুরের মুখে শুনল শিবের কথা। শিব শান্ত, সহজ একজন দেবতা। দেবতা বলে তাঁর কোন অহঙ্কার নেই অন্যদের মত। বেশির ভাগ সময় তিনি তপস্যায় মগ্ন থাকেন। তাঁর সাজগোজ নেই, বড় প্রাসাদে তিনি থাকেন না। সাধারণভাবে থাকতে তিনি ভালবাসেন।

কথকের গল্প শুনে সতীর কৌতূহল হল। দেবতা হয়েও দেবসুলভ অহঙ্কার নেই! তার এঁকে দেখার ইচ্ছে হল। একদিন বোনেদের সঙ্গে পাহাড়, নদী, বন দিয়ে সাজানো বাগানে বেড়াতে গিয়ে দূর থেকে তপস্যারত শিবকে দেখল। শিবকে দেখে তার এত ভাল লাগল যে তার মা বাবা যখন তার বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে শুরু করলেন, সে মাকে বলল, সে একমাত্র শিবকেই বিয়ে করতে চায়। তার মা বাবা তাকে অনেক বোঝালেন শিবকে বিয়ে না করার জন্য, ভয় দেখালেন, কিন্তু সতী কারো কথাই শুনল না। সে শিবকে বিয়ে করে কৈলাশ পর্বতে থাকতে চলে গেল। রেগেমেগে দক্ষরাজা মেয়ের মুখ দেখাই বন্ধ করে দিলেন। শিব - সতীর আপন ঘরকন্না শুরু হল।

দক্ষরাজ এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেছেন, সমস্ত পৃথিবী সেখানে নিমন্ত্রিত হয়েছে। শিব খবরটা শুনলেন, আর দেখলেন তাঁর বা সতীর কোন নিমন্ত্রণ হয় নি। তিনি বুঝলেন কারণটা কি। কিন্তু সতী কষ্ট পাবে বলে তিনি সেকথা তার সঙ্গে আলোচনা করলেন না। কিন্তু খবর কি থেমে থাকে? তার কানেও খবরটা এল। পাহাড়চূড়োয় তার বাড়ির বারান্দায় বসে সে দেখল, আকাশপথে রংবেরঙের গাড়ি চড়ে তার বোনেরা সেজেগুজে কলকল করতে করতে বাপের বাড়ি যাচ্ছে। সে শিবের কাছে গিয়ে আবদার করল যে সেও যাবে সেখানে।

শিব তাকে অনেক বোঝালেন যে বিনা নিমন্ত্রণে কারো বাড়ি যেতে নেই। সতী কোন কথাই শুনতে চায় না দেখে অবশেষে এটাও বললেন, কেন দক্ষ তাঁদের নিমন্ত্রণ করেননি। কিন্তু সতী নাছোড়। বাপের বাড়ি যেতে আবার নিমন্ত্রণের কি প্রয়োজন? সে একাই যাবার উদ্যোগ করতে লাগল। বাধ্য হয়ে শিব তাঁর অনুচর নন্দী-ভৃঙ্গীকে সঙ্গে দিয়ে সতীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। দক্ষরাজকে তিনি চিনতেন; তাই তাঁর মন অজানা এক অমঙ্গলের আশঙ্কায় হাহাকার করতে লাগল।

যেমনটা আশঙ্কা করা গিয়েছিল, দক্ষ সতীকে দেখেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। কোন সাহসে ভিখারির বউ রাজার বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছাড়াই ঢুকে পড়ে, সে জন্য বিস্তর বকাবকি করলেন। তারপর শুরু করলেন শিবের প্রতি কুবাক্য বর্ষণ। শিব যে কত খারাপ, কত নীচ, রাজার সঙ্গে তাঁর যে কোন তুলনাই চলে না, সেকথা চিৎকার করে সবাইকে জানাতে লাগলেন। সেই যজ্ঞে যারা উপস্থিত ছিলেন, কারোরই শিবনিন্দা শুনতে ভাল লাগছিল না। কিন্তু দক্ষের প্রচন্ডতাকে সবাই ভয় পেত, তাই কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পেল না, চুপ করে রইল।

যতক্ষণ দক্ষ শুধুই সতীকে বকছিলেন, সে চুপ করে ছিল। কিন্তু যখন শিব নিন্দা শুরু হল, সে আর চুপ করে থাকতে পারল না। শিবের মত দেবতাকে যে তার বাবা সংসারের নোংরামিতে নামিয়ে নিয়ে আসতে পারেন, সেটা সে ভাবেইনি। সে বুঝল, কেন শিব তাকে আসতে দিতে চাইছিলেন না। স্বামীর নামে এত নিন্দাবাক্য শুনে তার এত দুঃখ ও অপমান বোধ হল যে, তার আর বাঁচবার ইচ্ছা রইল না। শিবের কাছে সে নানারকম যোগের প্রক্রিয়া শিখেছিল। তারই সাহায্যে সে শ্বাস রুদ্ধ করে দক্ষের দেওয়া শরীর ত্যাগ করল।

এতক্ষণ নন্দীভৃঙ্গী চুপ করে ছিল। এখন তারা হাহাকার করে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে একজন দৌড়াল শিবকে খবর দিতে।

এই নিদারুণ খবরে শিবের শান্ত ভাব আর রইল না। ভীষণ রাগে তাঁর শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল, চোখ দিয়ে আগুন বেরোতে লাগল।তাঁর অনুচর বীরভদ্র, ভয়ঙ্কর তার চেহারা। সে গিয়ে যজ্ঞস্থল লন্ডভন্ড করে দিল। যে সব ঋষিরা যজ্ঞের কাজে নিযুক্ত ছিলেন, তাঁরা ভয়ে কে যে কোথায় দৌড় লাগালেন, কেউ দেখলও না। তার কাছে মহাপ্রতাপশালী দক্ষ তো শিশু। তাঁর সব চেঁচামেচি একেবারে চুপ। ক্রুদ্ধ বীরভদ্র কি রাজাকে ছেড়ে দেবার পাত্র? সে তাঁকে ধরে তাঁর মাথাটা ছিঁড়ে যজ্ঞের আগুনে ফেলে দিল। ভয়ে সবাই চুপ, মেয়েরা কাঁদতেও পারছে না।

এতক্ষণে শিবের ক্রোধ শান্ত হয়ে এসেছে। তিনি হলেন মহাদেব, শান্ত, সুন্দর। ক্রোধ বেশিক্ষণ তাঁকে আচ্ছন্ন করতে পারে না। সংযত পায়ে তিনি এসে দাঁড়ালেন সতীর শরীরের সামনে। সবাই তাঁকে হাত জোড় করে প্রণাম করলেন। উপস্থিত ঋষিরা তাঁকে জানালেন, "প্রভু, দক্ষ এই যজ্ঞের আয়োজন করেছেন। পূর্ণাহুতি হবার আগেই তার মৃত্যু ঘটেছে। যজ্ঞ অসম্পূর্ণ থাকলে সকলের পক্ষেই অমঙ্গলের হবে। দয়া করে রাজার জীবন ফিরিয়ে দিন, যাতে সে আহুতি দিতে পারে।" শিব কিছুক্ষণ কোন কথা বললেন না। তাঁর নিজের কষ্টের জন্য সকলের অমঙ্গল তিনি কখনও চাইবেন না। এদিকে রাজার নিজের মুন্ডু তো আগুনে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই যজ্ঞে বলি দেবার জন্য যে ছাগলগুলিকে আনা হয়েছিল, তাদের একটার মুন্ডু কেটে তিনি রাজার শরীরে জোড়া লাগিয়ে দিলেন। তারপর সতীর দেহ কাঁধে তুলে ধীরে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। সভার সকলের চোখে তখন জলের ধারা।

টুক্‌টুকির গল্প শেষ হবার পর অনেকক্ষণ কেউ কোন কথা বলল না। সবার মনে সতীর জন্য দুঃখ ভরে গেছে।একটু পর আস্তে আস্তে মন্টু বলল, "আমিও একটা গল্প জানি। সেটা এই গল্পটার পরের ঘটনা। আর এত কষ্টের নয়।" সবার চোখ আবার চক্‌চক করে উঠল। চারপাশের হৈচৈএর মধ্যে মন্টু শুরু করল তার গল্প।

শুক্তি দত্ত ভালবেসে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রূপকথা, প্রাচীন সাহিত্য, দেশবিদেশের লোকসাহিত্য, গল্পকথা পড়তে ভালবাসেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা বা শিশুদের সেই গল্প শোনাতেও ভালবাসেন। প্রধানতঃ শিশুমনস্তত্ত্ব ও তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন। সেটা শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি শিশু সাহিত্য, লোকসাহিত্য প্রভৃতিকে তাদের মূল্যবোধ বিকাশে কাজে লাগাতে চান।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা