সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

দৈত্যদের রাজা তারকাসুর। বহু বছর ধরে সে তপস্যা করেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজা হবার জন্য। তার তপস্যার প্রচন্ডতায় অস্থির হয়ে পিতামহ ব্রহ্মা শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলেন তাকে বর দিতে। প্রথমে সে চাইল অমর হবার বর। কিন্তু ব্রহ্মা তাতে নারাজ। একমাত্র দেবতারাই এই বর পাবার অধিকারী। তখন সে একটা ফন্দি আঁটল। সে জানত, সতী মারা গেছেন। তারপর থেকে মহাদেব এমন ধ্যানে মগ্ন হয়ে আছেন যে কেউ তাঁর সামনে যাবার সাহসই পায় না। মহাদেবকে বিয়ে করতে পারে, এমন মেয়ে ত্রিভুবনে নেই। তাই মহাদেবের ছেলেপুলে হবারও কোন আশঙ্কা নেই। সব ভেবে সে বলল, " প্রভু, আমি একমাত্র শিবের পুত্রের হাতেই পরাস্ত হয়ে মারা যাব, আমাকে এই বরই দিন"। ব্রহ্মা তখন যেতে পারলেই বাঁচেন। সাত-পাঁচ না ভেবে তিনি তথাস্তু বলে অন্তর্হিত হলেন।

এইবার শুরু হল তারকাসুরের কাজ। কেউ তাকে আটকাতে পারছে না। সে ঋষিদের যজ্ঞ নষ্ট করে, দেবতাদের ঘরছাড়া করে, মানুষদের কেটে মেরে মহা হল্লা শুরু করে দিল। তার অত্যাচারে দেবতা মানুষ সকলের প্রাণ ওষ্ঠাগত। কি হয়, কি হয়, বিষ্ণু বললেন, মহাশক্তি যদি আবার জন্ম নিয়ে শিবকে বিয়ে করেন, তাহলে তাঁদের যে সন্তান হবে সেই পারবে তারকাসুরকে বধ করতে। তিনি সবাইকে মহাশক্তির আরাধনা করার পরামর্শ দিলেন।

আবার শুরু দেবতাদের আরাধনা। হাজার বছর ধরে আদ্যাশক্তির পূজা করার পর তিনি দেখা দিলেন। দেবতাদের আশ্বাস দিয়ে বললেন," আগের জন্মে আমিই সতী ছিলাম। তোমাদের দুঃখ নিবারণ করার জন্যই এবার আমি জন্ম নেব হিমালয়ের ঘরে তাঁরই মেয়ে হয়ে। দেবাদিদেবকে আমি ছাড়া আর কেউই সন্তুষ্ট করতে পারবে না। তোমরা নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে যাও।" সকলে আনন্দে মহাদেবীর নামে জয়ধ্বনি দিল।

যথাসময়ে পর্বতরাজ হিমালয়ের ঘরে একটি ফুট্‌ফুটে মেয়ের জন্ম হল। হিমালয় এবং তাঁর স্ত্রী আগেই জানতেন মেয়েটি কে। তাই তাঁরা খুব যত্ন করে বড় করলেন। ছোট্ট মেয়েটিকে তাঁরা পার্বতী, গৌরী, শৈলজা প্রভৃতি কত নামেই না ডাকতেন। একটু বড় হয়েই তিনি, যেখানে শিব ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে আছেন, সেখানে চলে গেলেন শিবকে পূজা করে প্রসন্ন করে তাঁর ধ্যানভঙ্গ করার জন্য। একমনে তপস্যা করতে করতে তাঁর সোনার রঙ কালো হয়ে গেল। আরো কঠিন তপস্যার জন্য তিনি দিনে একবার গাছের একটা মাত্র পাতা খেয়ে থাকতেন; একপায়ে দাঁড়িয়ে শিবের নাম জপ করতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হলেন। শিবের ধ্যান ভাঙল। খবর পেয়ে হিমালয় এসে তাঁকে প্রণাম করে তাঁকে অনুরোধ করলেন পার্বতীকে বিয়ে করার জন্য। শিব রাজি হলে তাঁদের দুজনের বিয়ে হল। সারা জগতে ঋষি, দেবতা, মানুষ, যে যেখানে আছে সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হল। সকলের কি উল্লাস! তারা তো এই জন্যেই অপেক্ষা করেছেন এতদিন।

এই বিয়ের খবর কিন্তু তারকাসুরের কানেও পৌঁছেছিল। সেতো প্রথমে খুব অবাক হয়ে গেল। এও কি সম্ভব! সে সতর্ক হয়ে রইল। এবার যখন শিবের ঘরে গৌরীর কোল আলো করে একটি ছেলের জন্ম হল, সে চেষ্টা করল শিশুটিকে চুরি করতে। কিন্তু এপক্ষের লোকজনও তক্কে তক্কে ছিল। তারা শিশুকে রাতারাতি কৃত্তিকা নামের ছয়জন সেবিকার হাতে তুলে দিয়ে তাদের যে কোথায় পাঠিয়ে দিল, তারকাসুর কিছুতেই সে খবর অনেক চেষ্টা করেও বের করতে পারল না। সবাই এর নাম দিল কার্তিক।

মন্টু বলল, এর পরের কথা তো সবাই বুঝতে পারবে। গল্পও শেষ হয়ে এল। এত বছর তারকাসুর সবার উপর এত অত্যাচার করেছে, এবার তার শোধ নেবার পালা শিব । কার্তিককে সেনাপতি করে দেবতারা আবার যুদ্ধ করতে নামল। যুদ্ধের জন্য কার্তিককে শিব তাঁর নিজের ধনুক দিলেন। গরুড় তাঁর ছেলে ময়ূরকে দিলেন বাহন হিসাবে, যাতে সে কার্তিককে প্রয়োজনমত এখানে সেখানে নিয়ে যেতে পারে। সেই ময়ূরের পিঠে চড়ে, শিবের দেওয়া ধনুক দিয়ে যুদ্ধ করে তারকাসুরকে নিহত করলেন কার্তিক। দেবতারা আবার তাঁদের ঘর-বাড়ি, রাজত্ব, সব ফিরে পেল।

যারা চোখ বড় করে গল্প শুনছিল, তারা এবার হাততালি দিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, ওই তো ময়ূরটা, ওই তো ময়ূরটা। কেউ কেউ আবার লাফ দিয়ে গিয়ে ময়ূরটাকে দেখেও এল। পাশে বসে একজন বুড়ো দাদু খুব মন দিয়ে ছেলেপুলেদের গল্প শুনছিলেন। তিনি এবার বললেন,"বাঃ, কি সুন্দর গল্প বললে তোমরা। কিন্তু তোমরা কি জানো, প্যান্ডেলের দুর্গামা মহিষাসুরকে কিভাবে মারলেন?"

শুক্তি দত্ত ভালবেসে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রূপকথা, প্রাচীন সাহিত্য, দেশবিদেশের লোকসাহিত্য, গল্পকথা পড়তে ভালবাসেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা বা শিশুদের সেই গল্প শোনাতেও ভালবাসেন। প্রধানতঃ শিশুমনস্তত্ত্ব ও তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন। সেটা শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি শিশু সাহিত্য, লোকসাহিত্য প্রভৃতিকে তাদের মূল্যবোধ বিকাশে কাজে লাগাতে চান।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা