সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

হৈ হৈ করে ছেলেমেয়ের দল দাদুর পাঞ্জাবি ধরে ঝুলে পড়ল। এবার দাদুর গল্প শুনতেই হবে। দাদু শুরু করলেন -- তোমরা তো জানোই দৈত্য, দানব, অসুররা বড়ই দুর্দান্ত, শক্তিশালী হয়। তাদের খালি মতলব, কি করে দেবতাদের রাজ্য দখল করবে, তাদের সুখ সুবিধা ভোগ করবে। কিন্তু দেবতারা যেমন জগতের সকলের ভালোর কথা ভাবেন, দানবেরা তো তেমন নয়। একে কেটে, ওকে মেরে চারদিকে লন্ডভন্ড বাধাতেই ওদের আনন্দ। মহিষাসুরও ছিল এরকমই একজন দৈত্যরাজ। তারকাসুরের মত সেও বহু বছর কঠিন তপস্যা করেছিল ব্রহ্মার কাছ থেকে অমরত্ব বর পাবার জন্য। কিন্তু এরকম বর দিতে ব্রহ্মা যখন কিছুতেই রাজি হলেন না, তখন সে একটা ফন্দি ঠিক করল। সে বলল, "আর কেউ নয়, আমি শুধু নারীর হাতেই বধ্য হব। হে পিতামহ, আপনি আমায় এই বর দিন"। সে ভাবল, আমি এত শক্তিশালী। দেবতারাই আমার সঙ্গে এঁটে ওঠে না। কোন নারীর পক্ষে তো আমায় হারানো স্বপ্ন দেখবারই সামিল। সুতরাং সোজাসুজি না হলেও আমি এইভাবেই চিরজয়ী অমর হয়ে থাকব। আমায় হারায় কার সাধ্য? সে নিজের গোঁফে তা দিয়ে হেসে উঠল।

মহিষাসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে স্বর্গহারা দেবতার দল আবার উপস্থিত হল ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের কাছে। যেহেতু ব্রহ্মার বরেই এই দুর্দশার সূত্রপাত, তাই সবাই মিলে তাঁকে ঘিরেই হৈচৈ করতে লাগল। নিজেদের অসহায়তায় তাঁরা ক্রমেই ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছিলেন। অবশেষে বিষ্ণুর ক্রোধ জ্যোতিরূপে তাঁর শরীর থেকে বেরিয়ে এল। ব্রহ্মা ও শিবের ক্রোধও জ্যোতিরূপে তার সঙ্গে মিশল। পরপর অন্যান্য দেবতাদের জ্যোতিও একসঙ্গে মিশে এক অপূর্ব নারীমূর্তি সৃষ্টি হল, তাঁর দশটা হাত। সকলের শক্তির মিশ্রণে তিনি হলেন মহাশক্তি। এই বিশ্বের সব কিছুতে যে চৈতন্যময়ী শক্তি মিশে রয়েছে, সেই আদ্যাশক্তির আরেকটা রূপই হলেন এই মহাশক্তি।

মহাশক্তিকে দেখে সবাই আনন্দে তাঁর নামে জয়ধ্বনি করে উঠল। তাঁর দশ হাতকে ভরিয়ে দিয়ে বিষ্ণু দিলেন চক্র, শিব তাঁর ত্রিশূল, ব্রহ্মা কমন্ডলু, বরুণ শঙ্খ, কুবের পাশ ও আর আর দেবতারা তাঁদের নিজের নিজের অস্ত্র দিয়ে দেবীকে যুদ্ধের জন্য সাজিয়ে দিলেন। সূর্য নিজের জ্যোতি দিয়ে তাঁর সমস্ত রোমকূপ ভরিয়ে দিয়ে তাঁকে তেজোময়ী করে তুললেন। এই তেজ দিয়েই তিনি অনেক অসুরকে সংহার করেছিলেন। সকলের দুর্গতি নাশ করবেন বলে তাঁর নাম দেওয়া হল দুর্গা।

দশভুজা দেবীর অস্ত্রসজ্জা তো হল। কিন্তু তাঁর বাহন কই? কিসে চড়ে যুদ্ধ করবেন? এবার হিমালয় তাঁকে নতুন রকমের একটা উপহার দিলেন। একটা মস্ত বড় শক্তিশালী সিংহ দেবীর বাহন হয়ে এল। দাদু বললেন, ওই যে দুগ্‌গা ঠাকুরের পায়ের কাছে দেখছ, ঘ্যাঁক্‌ করে অসুরকে কামড়ে দিচ্ছে, ওটাই সেই সিংহ। শুনে দাদুর ছোট নাতির দল আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল।

মহিষাসুরের কাছে খবর পৌঁছাল, একজন অতি রূপবতী নারী একা পাহাড়ের উপত্যকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দূত গিয়ে বলল, এই মহিলা একমাত্র মহিষাসুরেরই স্ত্রী হবার যোগ্যা। শোনা মাত্রই সে লম্ফ দিয়ে তার মহা মহা বীর সেনাপতি শুম্ভ-নিশুম্ভ, চন্ড-মুন্ড, রক্তবীজ, চিক্ষুর প্রভৃতিদের পাঠালো তাঁকে ধরে আনতে, কিন্তু প্রত্যেকেই সেই দেবীর হাতে নিহত হল। প্রচন্ড রেগে মহিষাসুর বিরাট সৈন্যদল নিয়ে নিজেই রওনা হল তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করতে। আকাশ পাতাল এক করে যুদ্ধ হতে লাগল। যুদ্ধের সময় ভয়ঙ্কর সব দৈত্যদের ধ্বংস করার জন্য মহাশক্তি দুর্গা তাঁর শরীর থেকে সৃষ্টি করলেন কৌষিকী, মহাকালী, চামুন্ডা প্রভৃতি দেবীদের।

মহিষাসুর যতই যুদ্ধে হেরে যেতে লাগল, ততই সে নানারকম যাদুবিদ্যা দেখাতে লাগল। কখনও হাতি, কখনও সিংহ, কখনও বা মস্ত বড় বন্য শুয়োরের রূপ ধরে সে দেবী দুর্গাকে আঁচড়ে কামড়ে অস্থির করে তুলল। নয়দিন ধরে প্রচন্ড যুদ্ধের পর সে একটা বিশাল শক্তিশালী মোষের ভিতর ঢুকে যুদ্ধ শুরু করলে দেবী তলোয়ারের এক কোপে মোষের মাথাটা কেটে ফেললেন। আর তো ছদ্মবেশে থাকার উপায় নেই। বাধ্য হয়ে যেই না অসুর নিজমূর্তি ধরেছে, দেবীর হাতের শিবদত্ত ত্রিশূল সজোড়ে তার বুকে বসে গেল।

পৃথিবী জুড়ে সে কি উল্লাস! চারদিকে সমস্ত দেবী, অপ্সরারা উলু দিতে লাগল। কিন্নর গন্ধর্বদল সুরেলা গলায় গান ধরল। সবাই আনন্দে একে অন্যের গলা জড়িয়ে ধরল। সেই জন্যই তো আজ মানুষ দেবী দুর্গাকে প্রণাম করে বলবে, 'সর্বস্যার্তি হরে দেবী নারায়ণি নমোহস্তুতে'।

শুভম বলল, "কি সুন্দর গল্প দাদু। আচ্ছা, দুগ্‌গা ঠাকুরের মাথার উপর যে সব ঠাকুরদের ছবি থাকে, তারা কি এই যুদ্ধ দেখতে এসেছিল?" দাদু হা হা করে হেসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। "ঠিক বলেছ দাদুভাই, সেটা তুমি ভাবতেই পার। তবে আসল খবরটা কি জানো? দেবতারা সব তাঁদের তেজ, শক্তি,অস্ত্র দিয়ে দুর্গাকে সাজিয়েছিলেন তো, সেটা বোঝাতেই তাঁদেরও ছবি সেখানে দেয়া হয়েছে।"

তিতলির জিজ্ঞাসা ধেয়ে এল, ও দাদু, কাত্তিক গণেশের কথা কিছু বললে না? দাদু হাসলেন, "তোমরা জানোতো, ওরা চারজনেই হল দুর্গামায়ের ছেলে মেয়ে। মা এত যুদ্ধ করলেন, কত পরিশ্রম হল বলো? তাই মা এসেছেন ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাবা-মার কাছে বিশ্রাম নিতে। এখন চারদিক কত সুন্দর বলো? বৃষ্টি শেষ, হাওয়া এত গরম নয়, কত ফুল ফুটেছে চারদিকে। এখনই তো বেড়াবার সময়। আর মা এসেছেন বলে সবাই কত খুশি হয়ে আনন্দ করছে বল? এজন্যই তো তোমরা আজ নতুন জামা পরে এখানে প্যান্ডেলে এসেছ দুর্গামাকে পূজা করতে।"

সবাই আনন্দে হেসে উঠল। তারপর দৌড়াল দুর্গা ঠাকুরের সাজসজ্জা দেখতে।


ছবিঃমহাশ্বেতা রায়, দাড়িদা

শুক্তি দত্ত ভালবেসে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রূপকথা, প্রাচীন সাহিত্য, দেশবিদেশের লোকসাহিত্য, গল্পকথা পড়তে ভালবাসেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা বা শিশুদের সেই গল্প শোনাতেও ভালবাসেন। প্রধানতঃ শিশুমনস্তত্ত্ব ও তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন। সেটা শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি শিশু সাহিত্য, লোকসাহিত্য প্রভৃতিকে তাদের মূল্যবোধ বিকাশে কাজে লাগাতে চান।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা