সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

মা দুর্গার পর কালী আর তার ঠিক পরেপরেই জগদ্ধাত্রী পুজো। জানো কে এই জগদ্ধাত্রী?

মহিষাসুর বধ সম্পন্ন করে বিজয়িনী মা দুর্গা ফিরে গেছেন দেবলোকে। দেবতারা তো মহা খুশি। এদ্দিনে অসুরমুক্ত হয়েছে দেবলোক। একে অপরকে বলছেন, কেমন অস্ত্র দিয়ে দুর্গাকে আমরা পাঠিয়েছিলাম অসুর নিধন যজ্ঞে? তাঁদের অহংকার দেখে কে? নিজেদের দর্পে মটমট করছেন সকল দেবগণ। আরো একবার বিজয়োৎসব হবে স্বর্গলোকে, তার মহড়া চলছে। হঠাত এক ব্রাহ্মণ এসে দাঁড়ালেন তাদের সম্মুখে।

ব্রাহ্মণ রূপী তেজোদ্দৃপ্ত ঐ ব্যক্তির নাম যক্ষ। আলোর জ্যোতি ঠিকরে পড়ছে সেই যক্ষের শরীর থেকে। এবার ভয়ানক পরীক্ষার সম্মুখীন দেবতারা। নিজেদের মুখ চাওয়াচাউয়ি করতে লাগলেন। সেই ব্রাহ্মণরূপী যক্ষের সামনে একে একে সব দেবতারা আসতে লাগলেন।

যক্ষ বললেন, একটা ঘাস রাখলাম এইখানে। কে এই ঘাসকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবে?

পবনদেব অর্থাত বায়ুর দেবতা সামনে এসে দাঁড়ালেন। এ আর এমন কি। যার হাওয়ার দাপটে সুবৃহৎ মহীরুহ উৎপাটিত হয় সে কিনা সামান্য এক টুকরো ঘাসকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবেনা? নিজের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও পবনদেব পারলেন না সেই একরত্তি ঘাসকে উড়িয়ে দিতে।

এবার অগ্নিদেবের পালা। তাঁকে বলা হল ঐ ঘাসটিকে পুড়িয়ে দিতে। অগ্নিদেব ভাবলেন, এ আর এমন কি! সারা দুনিয়া যার করালগ্রাসে পুড়ে ছারখার হতে পারে, তার কাছে একটুকরো ঘাস? কিন্তু সর্বশক্তি দিয়েও অগ্নিদেব পারলেননা সেই ঘাসের টুকরোটিকে জ্বালিয়ে দিতে।

এবার যক্ষ হাসতে হাসতে নিজের রূপ ধারণ করে বললেন, খুব গর্ব না তোমাদের অসুর বধ হয়েছে বলে? আসলে আমাদের বিশ্বকে ধারণ করে রেখেছেন মা দুর্গার মত আরো একজন যার নাম জগদ্ধাত্রী। এই দেবীর কোনো অহংবোধ নেই। সমস্ত জগতের পালিকা তিনি। সমগ্র জগতকে ধারণ করে রেখেছেন যিনি। তাই অসুর বধের মত সুবিশাল কার্য সম্পন্ন করেও দেবতাদের গর্ববোধকে এক কথায় উড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন সেই ব্রাহ্মণরূপী যক্ষ যিনি আসলে প্রজাপিতা ব্রহ্মা অর্থাত যিনি কিনা এই সমগ্র বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা তাঁর এক অবতার।

জগদ্ধাত্রী আসলে কোন্‌ দেবী?

জগদ্ধাত্রী, দুর্গা এবং কালী সকলেই এক এবং অভিন্ন। জগদ্ধাত্রীর অর্থ হল জগতকে ধারণ করছেন যে দেবী এবং এক‌ই সাথে জগতের পালন ও ত্রাণ করছেন যিনি। ইংরেজীতে যার অর্থ "protector of the world"

দুর্গার অনেকগুলি অবতারের একটি হল জগদ্ধাত্রী।

পুরাণ মতে এই দেবীর বর্ণ হল ভোরের কচি সূর্যের মত স্নিগ্ধ। ইনি মা দুর্গার মত ত্রিনয়না কিন্তু দশভুজা নন, চতুর্ভুজা। উনি তো যুদ্ধ করতে আসেননি। উনি একহাতে বরাভয়, আর বাকী তিন হাতে শঙ্খ, চক্র এবং তীর-ধনুক ধরে থাকেন। পরণে তাঁর টকটকে লাল শাড়ি আর নানাবিধ জ্বলজ্বলে অলঙ্কারে ভূষিতা। তিনিও মাদুর্গার মত সিংহবাহিনী কিন্তু পায়ের নীচে ওনার মহিষাসুরের বদলে মৃত করিন্দ্রাসুর নামক এক ঐরাবত। তবে উনি মা দুর্গার সবকটি রূপের মধ্যে সবচেয়ে সৌম্যা, সুদর্শনা, স্নিগ্ধা এবং শান্ত রূপ। তবে ঐ ব্রাহ্মণের গল্প অনুযায়ী জগদ্ধাত্রী নাকি "নাগযজ্ঞ-উপবীত" অর্থাত সাপ জড়ানো একটি পৈতে ধারণ করে থাকেন শরীরে কারণ তিনি একাধারে ব্রাহ্মণ আবার একাধারে যোগী।

দুর্গাপুজোয় যেমন পাঁচদিন ধরে পুজো চলে জগদ্ধাত্রী পুজোয় অষ্টমীর দিন একসাথে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পুজো হয়।

জানো কি এই দেবী জগদ্ধাত্রীর সঙ্গে আমাদের দেশের কি সম্পর্ক?

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ উপন্যাসে রয়েছে আমাদের দেশের অন্যতম দেশাত্মবোধক গান "বন্দেমাতরম" । যেটিকে একসময় আমাদের জাতীয় সঙ্গীত রূপে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র এই গ্রন্থে আমাদের দেশমাতৃকাকে এক দেবীর সাথে তুলনা করেছেন। তাঁর মতে আমাদের ভারতমাতা বর্তমানে কালীমায়ের মত অর্থাত দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি খাঁড়া হাতে এগিয়ে এসেছেন, পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করার জন্য। তাঁর আসল রূপ জগদ্ধাত্রীর মত সুন্দর এবং শান্ত। আর ভবিষ্যতে তিনি হবেন মা দুর্গার মত অর্থাত প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর মা দুর্গার মত, ঠিক অসুর নিধন করে যেমন বিজয়িনী হয়েছিলেন । আমাদের ভারতমাতাও তেমনি অপরাজিতা থাকবেন আজীবন। আর ভারতমায়ের শরীরে এই তিন দেবী অর্থাত দুর্গা, কালী ও জগদ্ধাত্রী একসাথে বিরাজমানা তাই তো আমাদের দেশের মধ্যে এত শক্তি লুকিয়ে আছে, কেউ আমাদের পরাস্ত করতে পারবেনা কখনো।

ইন্দিরা মুখার্জি নিয়মিত বিভিন্ন কাগুজে পত্রিকা এবং ওয়েবম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালিখি করেন। কবিতা-গল্প-ভ্রমণকাহিনী লেখা ছাড়াও, রসায়নশাস্ত্রের এই ছাত্রীর পছন্দের তালিকায় রয়েছে ভাল বই পড়া, ভ্রমণ, সঙ্গীতচর্চা এবং রান্না-বান্না। 'প্যাপিরাস' ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদক ইন্দিরা মুখার্জির সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিভিন্ন স্বাদের বই-ও প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা