সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
এক ঘড়া মোহর আর দুষ্টু পুরোহিত

আজ তোমাদের রাশিয়ার পুরোনো দিনের একটা গল্প শোনাই। অনেক বছর আগে সেখানকার এক গ্রামে এক বুড়ো বুড়ি থাকত। তারা ভীষণ গরীব ছিল। খুব কষ্ট করে তাদের দিন চলত। একদিন বুড়ির কি যেন একটা অসুখ করল। পয়সা নেই তো ডাক্তার দেখাবে কিভাবে? বিনাচিকিৎসায় ভুগে বুড়ি মারা গেল। বুড়ো খানিকক্ষণ খুব কান্নাকাটি করল। তারপর তার চিন্তা হল বুড়ির তো সৎকার করাতে হবে; টাকার প্রয়োজন। কি করে? সে তার সব বন্ধুদের কাছে সাহায্য চাইল। কবর দেবার জন্য সামান্য কিছু হলেই চলবে। কিন্তু হা--য়, কেউ তাকে একটাও টাকা দিলনা, কারণ সবাই জানত যে তাকে কিছু দিলে সেটা আর ফেরৎ পাওয়া যাবে না।

হন্যে হয়ে ঘুরতে ঘুরতে শেষ পর্যন্ত সে গ্রামের পুরোহিতের কাছে গেল। সকলেই জানত, পুরোহিতটা ছিল খুব শয়তান। তাই বুড়ির শেষ কাজ করানোর জন্য বুড়ো যখন সেই পুরোহিতের কাছে হাত পাতলো কিছু সাহায্যের জন্য, সে স্বভাবমতই বুড়োকে খিঁচিয়ে উঠল, “টাকা আছে টাকা? আগে আমার দক্ষিণা-টা তো দাও, তারপর আমায় ডেকে নিয়ে যেও। টাকা ছাড়া আমি কোন কাজ করিনা জানোনা?” বুড়ো কত কাকুতি মিনতি করল, “আমার হাতে তো কানাকড়িও নেই ঠাকুর। তুমি দয়া করে আমার বৌয়ের সৎকারটা করিয়ে দাও। নইলে ওর তো ঈশ্বরের কাছে যাওয়া হবে না। তোমার টাকা আমি যেভাবেই হোক, শোধ করে দেব।” দুষ্টু পুরোহিতের মন কিছুতেই নরম হল না। তার এক কথা, আগে টাকা তারপর অন্য কাজ।

আর কোন উপায় না দেখে বুড়ো মানুষটা শেষ পর্যন্ত ঠিক করল সে নিজেই একটা গর্ত খুঁড়ে তার স্ত্রীকে সমাধিস্থ করবে। সে কবরখানায় গিয়ে একটা কোদালের সাহায্যে মাটি খুঁড়তে শুরু করল। হঠাৎ কোদালের ঘায়ে খটাং করে একটা শব্দ হল। মনে হল যেন কোদালটা কোন একটা ধাতুর পাত্রে আঘাত করল। সে সাবধানে কোদাল চালাতে লাগল। আরো খানিকক্ষণ খোঁড়ার পর বেরিয়ে এল একটা ঘড়া। সেটা দেখে বুড়ো বেশ অবাক হল, তারপর ঢাকনা তুলে দেখে কি, ভিতরে একরাশ সোনার মোহর ভর্তি! দেখে বুড়োর তো চোখ ঠিক্‌রে যায় আর কি! সে তো জীবনেও এত টাকা দেখেনি। তার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিল। হাঁটু গেঁড়ে মাটিতে বসে সে ঈশ্বরকে বারবার ধন্যবাদ দিতে লাগল। হাত জোড় করে বলল, “হে দয়াময় ভগবান, আমি জানি তুমিই আমাকে সাহায্য করার জন্য সোনার মোহর ভর্তি এই কলসীটা দিয়েছ। এই টাকা দিয়ে এখন আমি ভালভাবেই আমার স্ত্রীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে পারব।”

মাটি খোঁড়া থামিয়ে বুড়ো ঘড়া নিয়ে বাড়ী ফিরল। টাকা থাকলে সবই সহজ হয়ে যায়। বুড়োর বেলাতেও তার অন্যথা হল না। খুব ভাল করে কবর খুঁড়ে বুড়িকে সমাধিস্থ করা হল। এই শ্রাদ্ধোৎসবে যারা এসেছিল, তাদের মনোমত সুস্বাদু খাবার দিয়ে আপ্যায়িত করা হল। একাজে সাহায্য করার জন্য এবার অনেক বন্ধুই এগিয়ে এল। বুড়ো আবার সেই পুরোহিতের কাছে গেল। পুরোহিত যেই আগের মত টাকার জন্য খিঁচিয়ে উঠেছে, অমনি বুড়ো কোন কথা না বলে একটা মোহর গুঁজে দিল। মোহর দেখে পুরোহিতের চোখ তো ছানাবড়া। তার আর আপত্তি করার কারণ নেই। সেও খুশীমনে শ্রাদ্ধকার্য করতে এগিয়ে এল। সেদিন সে এমনভাবে মন্ত্র পড়েছিল, যেরকম সে হয়তো আর কোনদিনও করেনি। তা ছাড়া খাওয়ার আয়োজন দেখে তার তো আর বাক্য সরেনা। উৎকৃষ্ট মাছ, মাংস, মদ – কি নেই সেখানে! পেট পুরে তিনজনের খাবার সে একলাই খেয়ে ফেলল।

কিন্তু পুরোহিতের মনে খট্‌কা লাগল। এটা কি করে হল? যে লোকটার কাছে তার বৌকে কবর দেবার জন্য একটা কানাকড়িও ছিল না, হঠাৎ সে এত টাকা কোথা থেকে পেল? সব কিছু জানার জন্য তার মন খুবই উতলা হচ্ছিল, কিন্তু সে ঘাপ্‌টি মেরে সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল। সবার সামনে এসব টাকা পয়সার কথা বলা উচিত নয়। কিছুক্ষণ পর বুড়োর বাড়ির সব লোকজন চলে গেলে সে বুড়োকে ডাকল। কড়া গলায় চোখ পাকিয়ে বলল, “হ্যাঁরে, এত টাকা তুই কোথায় পেলি? আমায় সব কথা খুলে বল্‌। জানিস্‌ না, আমাকে বলা মানে ভগবানকে বলা? তুই যদি আমার কাছে অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে কোন কথা লুকোস্‌ বা মিথ্যা বলিস, তবে সেটা কিন্তু সাংঘাতিক পাপ হবে।”

বুড়ো খুবই সরল ছিল। কিছুই গোপন করতে পারে না। সে পুঙ্খানুপুঙ্খ সব কিছু পুরোহিতকে খুলে বলল। শুনে পুরোহিত মুখে কিছু বলল না বটে, কিন্তু তার অন্তর ঈর্ষায় জ্বলে যেতে লাগল।

শুক্তি দত্ত ভালবেসে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রূপকথা, প্রাচীন সাহিত্য, দেশবিদেশের লোকসাহিত্য, গল্পকথা পড়তে ভালবাসেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা বা শিশুদের সেই গল্প শোনাতেও ভালবাসেন। প্রধানতঃ শিশুমনস্তত্ত্ব ও তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন। সেটা শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি শিশু সাহিত্য, লোকসাহিত্য প্রভৃতিকে তাদের মূল্যবোধ বিকাশে কাজে লাগাতে চান।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা