সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
 সাধু আর শয়তান

অনেক কাল আগের কথা, লাটভিয়ার উপকথা থেকে জানা যায় যে আমাদের এই পৃথিবীতে তখন দুজন ছাড়া অন্য কোন মানুষ ছিল না; ঘোড়ার মত দুএকটি প্রাণী ছাড়া আজকের দিনে আমরা চারপাশে যত পশুপাখি দেখি, সেসব কিছুই ছিল না। তারা তখনও জন্মায়নি। মানুষ দুজন হলেন সাধু আর শয়তান।

এক বসন্তকালে সাধু ঠিক করলেন যে তিনি কিছু শস্য উৎপাদন করবেন, যাতে সারা বছর অন্নচিন্তা না থাকে। তিনি একটা ঘোড়ার গাড়ির সঙ্গে লাঙ্গল জুড়ে মাঠে গেলেন। সারাদিন ধরে অনেক পরিশ্রম করে সমস্ত জমি চাষ হল। পরদিন তিনি সেখানে খানিকটা শষ্যের বীজ ছড়িয়ে দিলেন।

সাধু যখন প্রচন্ড পরিশ্রমে জমি তৈরী করে শস্যদানা ছড়িয়ে ফসল তৈরীর কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তখন শয়তান মাঠের কাছে একটি ঝোপের আড়ালে বসে সব দেখছিল। শয়তানের মূল কাজ ছিল গরু চরানো। সে চাষের কাজ কিছুই জানত না। তাই খুব অবাক হয়ে সাধুর কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করছিল। দেখতে দেখতে সে মনে মনে বলল, "হচ্ছেটা কি? সকাল থেকে উঠে এই সাধু এইসব গাড়ি ঘোড়া দিয়ে করছেটা কি? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। যাই হোক, আমায় এখন প্রতিদিন সকালে উঠে সাধুর কাজকর্মের উপর নজর রাখতে হবে। কিন্তু কোথায় বসি? আচ্ছা, এই ঝোপটার পিছনে বসলে সাধুকে দেখতে সুবিধা হবে মনে হচ্ছে। দেখা যাক।"

যথা সময়ে সাধুর চাষের ক্ষেত পাকা ফসলে ভরে উঠল। শীত আসার ঠিক আগেই সাধু এলেন ফসল কেটে ঘরে তোলার জন্য।ঝোপের পিছনে বসে থাকা শয়তানের পক্ষে্ আর চুপ করে থাকা সম্ভব হল না। "একি, সাধু তো সব ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপার কি হল, সেটা তো এখন সাধুর কাছে জিজ্ঞেস করতেই হয়", সে গুটিগুটি ঝোপ থেকে বেড়িয়ে এসে সাধুর কাছে এল। সাধু বললেন, "বসন্তকালে পরিশ্রম করে মাঠ চষে ফসল বুনেছিলাম। এখন তা পেকেছে, তাই কেটে ঘরে নিয়ে যাচ্ছি। এবার আমি নিশ্চিন্ত যে সারা শীতে আর খাবার জন্য আর চিন্তা করতে হবে না।"

শয়তানের মনে হল, "বাঃ, মতলবখানা তো বেশ ভাল! বছরে মাত্র একবার ফসল ফলালেই যদি কাল কি খাব, এই চিন্তা দূর হয়ে যায়, তবে তো মন্দ নয়। তাছাড়া রোজ রোজ গরু-ছাগল চড়াতে আর ভাল লাগে না। তাই খাবার জোগাড়ের জন্য এটাই ভাল ব্যবস্থা।" সে সাধুকে বিনীতভাবে বলল, "এবছরের মত তো আপনার চাষের কাজ শেষ। বছরও তো শেষ হয়ে এল। সামনের বছর থেকে যদি আপনার সঙ্গে আমি যোগ দেই? আমরা দুজনে একসঙ্গে খাটলে পরিশ্রমও কম হবে আর আরো বেশি ফসল পাওয়া যাবে, তাই না?"

সাধু তার কথায় আপত্তির কোন কারণ দেখতে পেলেন না। তিনি যেই রাজি হলেন, অমনি শয়তান বলল,"তবে মহারাজ, ফসলের যে অংশটা মাটির উপরে থাকবে, সে অংশটা কিন্তু আমার ভাগে হবে। আপনি নিচের অংশটা নেবেন।" সাধু কথাটা শুনে একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর মুচ্‌কি হেসে বললেন, "তথাস্তু"।

শয়তানের এরকম কথা বলার কারণ কি জানো? সে খেয়াল করেছিল যে সাধু ফসলের যে অংশটা মাটির উপরে ছিল, সেইটুকুই সংগ্রহ করেছিলেন। সেতো চাষের কিছু জানত না, তাই সে ভেবেছিল বোধহয় শুধু উপরটাই খাবার জন্য লাগে। সেজন্য সে ওই কথাটা বলে খুব চালাকি করতে চাইল।

সাধু কিছু চিন্তা করে সেবছর আলু চাষ করলেন। আলু তো মাটির নীচে হয়; তাই আলুর ফলন যখন তৈরী হল, সাধু শর্ত মোতাবেক মাটি খুঁড়ে সব আলু তুলে নিয়ে গেলেন। শয়তানের জন্য পড়ে রইল শুক্‌নো আলুগাছগুলো। শয়তান আর কি করে? শর্ত তো সে নিজেই তৈরী করেছে, তাই কিছু বলতেও পারল না। ঠকে গিয়ে সারা শীতকাল তাকে সেই শুক্‌নো বিস্বাদ আলুগাছ চিবিয়ে আর রাগে দাঁত কিড়্‌মিড়্‌ করেই কাটাতে হল।

পরের বসন্তে শয়তান সাধুকে বলল, "দেখুন এবার আমি ফসলের নিচের দিকটা অর্থাৎ মাটির তলার অংশটা চাই। উপরের অংশ এবার আপনার।" সেতো মনে মনে ভাবছে, দাঁড়াও এবার দেখাব মজা। সাধু কিন্তু একটুও বিরক্ত হলেন না। তিনি হেসে তাতেই রাজি হলেন। আর এবার সাধু সেই জমিতে চাষ করলেন গম। অনেকটা সময় ধরে গমগাছগুলি হেলে দুলে বাতাসের সঙ্গে খেলতে খেলতে বড় হল। তারপর গাম যখন পাকল, সারা মাঠে সোনালি রঙের ঢেউ খেলে যাচ্ছিল। ফসল কাটার সময় হলে কি যে ঘটল, তা আর নতুন করে কিই বা বলি। সাধু সারা বছর ধরে গমের আটা থেকে নানা রকমের সুস্বাদু খাবার খেতে লাগলেন। বাড়িতে প্রায়ই ভোজসভা বসতে লাগল। আর শয়তানের ভাগ্যে জুটল খালি শুক্‌নো খড়।

সেই থেকে শয়তান আর সাধুর সাথে চাষ করা তো দূরে থাক, কোন কাজেই টক্কর দিতে যেত না।



(লাটভিয়ার উপকথা)

শুক্তি দত্ত ভালবেসে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রূপকথা, প্রাচীন সাহিত্য, দেশবিদেশের লোকসাহিত্য, গল্পকথা পড়তে ভালবাসেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা বা শিশুদের সেই গল্প শোনাতেও ভালবাসেন। প্রধানতঃ শিশুমনস্তত্ত্ব ও তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন। সেটা শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি শিশু সাহিত্য, লোকসাহিত্য প্রভৃতিকে তাদের মূল্যবোধ বিকাশে কাজে লাগাতে চান।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা