- চড়াইঃ
- কেন? যেখানেই বানাই, আমরাই তো বানাই। হ্যাঁ, বাসা বানানোর সময় মেঝেয়, বিছানায় খড়কুটো পড়লে লোকে বিরক্ত হয় বটে, কিন্তু মেনেও নেয়। কিছু দুষ্টু লোক আছে, তারা বাসা ফেলেও দেয়, বাইরে। তেমন বাড়িতে বাসা বানাতে আমাদের বয়েই গেছে। আমি যে ঘরে বাসা বানাই, সে খুব ভাল, জানো কাঠঠোকরা দাদা। সে একটুও বিরক্ত হয় না। শীতকালের বিকেলে জানালা দরজা বন্ধ করার সময় বলে, কিরে ঢুকেছিস? আমি বাসার থেকে মাথা তুলে দুবার বলি চিলিক চিলিক। তারপর জানালা বন্ধ করে। আবার ঐ শীতের ভোরেই ঘরের মধ্যে উড়তে উড়তে ডাকি চিলিক চিলিক...ঘুম ভেঙে ভালো লোকটা জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে দেয়।
- পায়রাঃ
- বক বকম। বক বকম। তোরা এতো বকতেও পারিস, বাপরে। টিয়া দিদি সেই যে একটা কথা বলতে গেল, তারপর তোদের বকবকের ঠ্যালায়, একদম চুপ হয়ে গেল।
- কাঠঠোকরাঃ
- ঠিক, ঠিক। টিয়া দিদি, কি বলছিলে বলো।
- টিয়াঃ
- বলছিলাম, আজকে আকাশের রং দেখেছিস। কি সুন্দর নীল। যেন ঝকঝক করছে।
- কাকঃ
- এতে আবার নতুন কি হল? আকাশের রং তো নীলই।
- পায়রাঃ
- তোর মাথা আর মুণ্ডু। এমন রং কোনদিন হয়? হয় না। বর্ষাকালে তো সারাক্ষণ মেঘে ঢাকা থাকে, দেখাই যায় না। গরমকালে আকাশ ঝাঁঝাঁ করে, তাকানো যায় না। আর শীতকালে নীল হয় ঠিকই কিন্তু এমনটি হয় না।
- টিয়াঃ
- ঠিক বলেছিস, পায়রা। মনে হচ্ছে না, কাল সারারাতে ভগবান অনেক লোকজন দিয়ে মেজে ঘষে আকাশটাকে পরিষ্কার করে রেখেছেন?
- কাঠঠোকরাঃ
- কিন্তু টিয়াদিদি, একদম পরিষ্কার নয় কিন্তু, দু একটা মেঘ এখনো রয়ে গেছে এদিক ওদিকে।
- মাছরাঙাঃ
- একই রং ভালো লাগে নাকি? নানান রং থাকলে তবে না মানায়? আর ওগুলো তো জলো মেঘ নয়, তুলোর মতো হালকা। ওতে আর বৃষ্টি নেই, একদম ফাঁকা। ভেসে ভেসে উড়ে বেড়াবে আকাশময়। ওরা না থাকলে আকাশের নীল রংটা খুব একটা ভালো লাগত না, টিয়াদিদি, তাই না, একঘেয়ে লাগত।
- টিয়াঃ
- এই তো ধর না, তোদের যে গায়ের নানান রং, কি সুন্দর তোদের দেখতে লাগে। এই মাছরাঙা যখন গাছের ডাল থেকে ডানা মেলে পুকুরের জলে মাছ ধরতে ঝাঁপ দেয়। গাছের মগডালে বসে আমি দেখি, আহা চোখ জুড়িয়ে যায়। একটু একটু হিংসেও হয়।
- কাঠঠোকরাঃ
- কেন, হিংসে হয় কেন?
- টিয়াঃ
- দেখছিস না, আমার তো একটাই রং। তুইও যেমন কাঠঠোকরা, তাল বা নারকেলের গুঁড়িতে বসে, ঠুকঠুক করে গর্ত করে পোকা খাস, আর আমি পেয়ারা গাছের ডালে পেয়ারা খেতে খেতে তোকে দেখি। কি সুন্দর রং তোর পালকে।
আশ্বিনের শারদ প্রাতে
পাতা 2 এর 4
- বিস্তারিত
- লিখেছেন কিশোর ঘোষাল
- ক্যাটfগরি: নাটক
পেশায় সিভিল ইঞ্জিনীয়ার হিসেবে প্রায় ২৫ বছর ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে নির্মাণ কাজে জড়িত। সঙ্গে লেখালেখির ইচ্ছে ও অভ্যেস অনেকদিনের।বিভিন্ন মুদ্রিত পত্রিকা এবং ওয়েব ম্যাগে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে নানাধরণের সৃষ্টি...এবং এই ইচ্ছামতী সেই ইচ্ছের পালে ভরে তুলছে অনুকূল বাতাস।