সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
টিয়াঃ
(মিষ্টি হেসে) ঠিক তাই। আশ্বিন মাস, পুজোর মাস। আর ক’দিন পরেই পুজো। তাই ঐ আকাশ অমন নীল আর রোদ্দুর এমন সোনার মতো। এখন চাঁপা, বেল, জুঁই, মাধবী আর ফুটবে না। এখন ফুটবে শিউলি, টগর, পদ্ম, গন্ধরাজ। গাছে গাছে আমার গায়ের রংয়ে পাতার রং মিলে যাবে, আর তাতে সোনা রোদ্দুর এসে চিকমিক করে হাসবে। নদীর ধারে ধারে, বুড়ো দাদুর মতো সাদা মাথা দুলিয়ে হাসবে রাশি রাশি কাশফুল। কিন্তু চড়াই, তুই কি করে জানলি রে?
চড়াইঃ
কাল সন্ধেবেলা আমি ছানাদুটোকে তখন ভুলিয়ে ভালিয়ে গান টান শুনিয়ে অনেক কষ্টে সবে ঘুম পাড়িয়েছি। আমারও একটু ঘুমের ঘোর আসছিল। এমন সময় ভালো লোকটা ঘরে এল, সঙ্গে তার ছোট্ট মেয়ে আর বউ। বিছানার ওপর একগাদা জিনিষ ধপাস ধপাস করে ফেলল। আমি আমার ডানাদুটো একটুখানি মেলে ছানাদের কানদুটো চেপে দিলাম, যাতে ওদের ঘুম না ভাঙে। তারপর একটু উঁচু হয়ে বাসার থেকে দেখলাম, ও মা, কত জামা কাপড়। তার কত রকমের রং। একটা একটা করে বের করছে, আর বলছে এটা ফুলকি বোনুর। এটা পল্টু ভাইয়ের। এটা ঝিলিকদিদির। এটা রুকুদাদার। এটা আমার। এটাও আমার। এটাও আমার। আর এটাও আমার। সে সব জামা কাপড়ের কি সুন্দর রং আর কি বাহারের নকশা।
মাছরাঙাঃ
সত্যি আমি কি, বোকা গো টিয়াদিদি। আমিও তো কাল দেখেছি, পুকুরের ওই পাড়ে অনেক বাঁশ ফেলেছে, মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। আমার মাথাতেই এল না, যে ওটা পুজোর মণ্ডপ! দুগ্‌গা মা আসছেন, তাঁর ছেলে মেয়েদের নিয়ে। ইস্‌, কি বোকা, আমি কি বোকা। পুজোর সময় বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোকে বেশ লাগে, তাই না টিয়াদিদি? কি সুন্দর সব রং।
শালিকঃ
শুধু রং? আর নতুন জামা কাপড়ের গন্ধ? সেও কি কম সুন্দর নাকি। আমি তো মানুষের খুব কাছাকাছি যাই, তাই জানি।
কাঠঠোকরাঃ
আমারও খুব ইচ্ছে হয় জানিস? অন্ততঃ এই সময় ওদের বাচ্চাগুলোর কাছে যেতে। কিন্তু ভয় লাগে। যদি ধরে ফেলে, আর খাঁচার মধ্যে বন্দী করে রাখে?
শালিকঃ
ইস্‌, ধরলেই হল আর কি। আমাকে ধরতে এলেই ফুড়ুৎ উড়ে যাই। আরও কি করি জানো? উড়ে যাওয়ার সময় ডানায় শিস দিই। ঠিক দুয়ো দেওয়ার মতো- ধরতে পারলে না।
পায়রাঃ
ওই পুজোর মণ্ডপ বানানোর পর কেউ কোনোদিন গেছিস? ভেতরটা কেমন হয় দেখেছিস?
চড়াইঃ
আমি তো প্রায়ই যাই।
শালিখঃ
আমিও। যখন বেশী ভিড় ভাট্টা থাকে না, দুপুরের দিকে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে, উড়ে উড়ে দেখে আসি, মায়ের প্রতিমা। গণেশদাদা, কাত্তিকদাদা, লক্ষ্মীদিদি আর সরস্বতীদিদিকে।
চড়াইঃ
আর ঐ দুষ্টু লোকটা? একদম সেই দুষ্টু লোকটার মতো, যে আমার বাসা ভেঙে দিয়েছিল, বিছানায় খড়কুটো ফেলেছিলাম বলে। আচ্ছা, আমি কি ইচ্ছে করে ফেলেছিলাম? আমার ছোট্ট ঠোঁট থেকে পড়েই তো গিয়েছিল, বাবা। তাই বলে আমার বাসাটা ফেলে দিতে হবে?
টিয়াঃ
আচ্ছা, আচ্ছা, আর কাঁদিস না। তোর ভালো লোকটা তো তোকে ভালোই বাসে, কাঁদিস না। কিন্তু মায়ের কাছে দুষ্টু লোক কি করে আসে?
পায়রাঃ
আসে কি গো, টিয়াদিদি, ওই দুষ্টু লোকটার বুকে ত্রিশূল দিয়ে, মা দুগ্‌গাই তো ওকে মেরে ফেলবে। তাই জন্যেই তো পুজো। অষ্টমীর শেষ আর নবমী শুরুর সন্ধিক্ষণেই তো ঘ্যাচাং ফু। দুষ্টু লোকটার দুষ্টুমি ঘুঁচে যাবে। তারপর দশমীর দিন বিজয়ার আনন্দ। দুষ্টু লোকেরা আর নেই, শুধু আনন্দ আর আনন্দ। নারকেল নাড়ু খাও। কুচো নিমকি। মটরের ঘুগনি। মিষ্টি।
চড়াইঃ
আমরা কত্তো খেয়েছি, বাচ্চারা তো খুব ভালো হয়, ওরা এমনিই দেয়। আবার অনেক সময় ওদের হাত থেকে পড়েও যায়। ঘুগনির মটরগুলোর যা স্বাদ হয় না, ওফ্‌, এখনই আমার ঠোঁট সুড়সুড় করছে।
শালিকঃ
আমি মটর খেয়ে দেখেছি, এমন কিছু আহামরি নয়, তার চেয়ে নিমকি, আহা, অনেক ভালো।
কাকঃ
(ঠোঁট চুলকে) আমিও তো খুব খাই, এই পুজোর কটা দিন। খুব বাচ্চাদের হাত থেকে, আমি তো আবার মাঝে মাঝে ছোঁ মেরে নিয়েও নিই। কই, আমার তো কিছু হয় না।
পায়রাঃ
তোরা বড্ড লোভী কিন্তু, যাই বলিস আর তাই বলিস। মানুষের ওই সব খাবার খেতে ভালো হলেও, বেশি খাস না। শরীর খারাপ হবে। মানুষ যা কিছু খায়, খায় মশলা দিয়ে, মিষ্টি দিয়ে, নুন দিয়ে, ঝাল দিয়ে। ওসব আমাদের পক্ষে মোটেই ভালো না। চড়াই, তোর ওই ভালো লোকের ছোট্ট মেয়েটি রোজ সকাল সকাল ছাদে গিয়ে আমাদের চালের দানা, গমের দানা দেয়। আমরা অনেকে গিয়ে খুব মজা করে খাই। আবার ছোট্ট একটা থালায় খাবার জলও দেয়। গম-টম খেয়ে, জলে পেট ভরিয়ে আমরা ঘুরে ঘুরে ওই মেয়েটির সঙ্গে খুব খেলা করি। আর গলা ফুলিয়ে বলি বকম বকম, কি রকম সকম...।
মাছরাঙাঃ
তোরা সব মানুষের কাছঘেঁষা পাখি। আমরা বাবা, দূর থেকে দেখেই মজা পাই। হাসি খুশি রঙীন জামাকাপড় পড়ে বাচ্চাগুলো কি আনন্দই না করে। আমি পুকুর পাড়ের জামরুল গাছের পাতার আড়ালে বসে সব দেখি। খালি কষ্ট হয় রাত্রে, এত আলো, এত আওয়াজ, এত ভিড়। সে যাকগে, কটা মাত্র তো দিন। সারাবছর ভারি বস্তার মতো ব্যাগ ঘাড়ে করে বেচারা বাচ্চাগুলো রোজ স্কুলে যায়। বিকেলে বাড়িতে পড়াতে আসেন দিদিমণি। তারপরেও আছে সাঁতার শেখা, ছবি আঁকা, গান, গিটার, কুংফু। ওরা যদি সারা বছর ঐ কষ্ট সহ্য করতে পারে, আমরাও না হয় চার পাঁচটা দিন একটু মেনেই নিলাম। কি বলো, টিয়া দিদি, তাই না?
টিয়াঃ
ঠিক বলেছিস,রে মাছরাঙা, একদম ঠিক। চল, অনেক হল, এখন আবার আমরা বের হই, উড়ে চলি ফুলবাগানে। সকলকে খবর দিই, পুজো আসছে, আসছেন মা দুগ্‌গা। পায়রা আর চড়াই, তোদের কিন্তু দায়িত্ব রইল ঠিক কবে পুজো সেটা জেনে আসার। ঠিক আছে? চল, উড়ি।

পেশায় সিভিল ইঞ্জিনীয়ার হিসেবে প্রায় ২৫ বছর ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে নির্মাণ কাজে জড়িত। সঙ্গে লেখালেখির ইচ্ছে ও অভ্যেস অনেকদিনের।বিভিন্ন মুদ্রিত পত্রিকা এবং ওয়েব ম্যাগে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে নানাধরণের সৃষ্টি...এবং এই ইচ্ছামতী সেই ইচ্ছের পালে ভরে তুলছে অনুকূল বাতাস।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা