মূল গল্প : সুকুমার রায়
চরিত্র : যতীনের বাবা, যতীনের মা, প্রথম মুচি, দ্বিতীয় মুচি, তৃতীয় মুচি, চতুর্থ মুচি, পঞ্চম মুচি, দরজির দল (৪ জন) ও যতীন।
। প্রথম দৃশ্য ।
(যতীনের বাড়ি)
যতীন : এইরে আবার চটিটা ছিঁড়ল। এ চটি আর পরা যাবে না। পায়ে ঠিকমতো লাগছিল না। কেন যে কিনেছিলাম! প্রতিমাসে দেখছি আমার একজোড়া চটি লাগে, এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। ওই যে বাবা আসছে।
(যতীনের বাবার প্রবেশ)
বাবা : কী হল আবার? আবার বুঝি চটি ছিঁড়লে?
যতীন : ঠিক বলেছ। আমার নিজেরই খুব দুঃখ হচ্ছে। কী করব বলো?
বাবা : কী আর করবে? আমার মাথা ধরে তো আছেই। মাথা খাবে আর কী! আমার তো মনে হয় তোমার জন্য আমার একটা জুতোর দোকান খোলা উচিত ছিল।
যতীন : এটা তোমার ঠিক কথা। তবে জুতোর দোকান খুললেই হবে? দু'দিন যেতে না যেতে আমার ধুতিও যে ছিঁড়ে যায়। সে বেলা?
বাবা : বোঝো ঠ্যালা! কোনও জিনিসে তোমার যত্ন নেই। বইগুলো সব মলাট ছেঁড়া, কোণ দুমড়ানো, স্লেটটা ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত ফাটা।
যতীন : এরজন্য কি শুধু আমি দায়ী? বইগুলো বা স্লেটটার বুঝি দোষ নেই? আর শুধু কি আমার বইই ছেঁড়ে, আমার স্লেট কি ফাটে! আর কি কারো বই ছেঁড়ে না, স্লেট ফাটে না?
বাবা : থামো যতীন। অনেক বলেছ। স্লেটের পেনসিলগুলি সর্বদাই তোমার হাত থেকে পড়ে যায় কেন বলতে পারো? আর তাতেই টুকরো টুকরো হয়ে যায়। তোমার হাতে কি জোর নেই? স্লেটের পেনসিলগুলোকে কি ধরতে জানো না?
যতীন : এটা অবশ্য আমার দোষ।
বাবা : শুধু কি এই? এত মন্দ অভ্যাস কেন তোমার? লেড পেনসিলের গোড়া না চিবোলে কি হয় না? চিবিয়ে চিবিয়ে পেনসিলের কাঠটা বাদামের খোলার মতো করে ফেললে।
যতীন : কী করব বলো? তখন খুব খিদে পেয়েছিল।
বাবা : কেন কেন? তুমি কি বাড়িতে ভাত পাও না? নাকি তোমাকে কম খেতে দেয়? সময়মতো তো খাও, নাকি? তবে খিদে পাবে কেন?
যতীন : ভুল হয়ে গেছে বাবা, আর হবে না। কিন্তু আমার চটি!
বাবা : এবার তোমাকে নতুন জুতো কিনে দেব। আবার যদি অমন করে জুতো নষ্ট করো তবে ওই ছেঁড়া জুতোই পরে থাকবে।