সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
যতীনের জুতো

। তৃতীয় দৃশ্য ।

(সেদিন ছেঁড়া চটিটাকে নিয়ে সাঁই সাঁই করে শূন্যের ওপর দিয়ে কোথায় যে ছুটে চলল যতীন, তার ঠিক ঠিকানা নেই। এসে পড়ল অচেনা দেশে। চারদিকে অনেক মুচি বসে আছে। ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে যতীনের প্রবেশ।)

প্রথম মুচি : (পয়সা দিয়ে বাক্সে আওয়াজ করে) তোমাকেই তো খুঁজছি ভায়া। এসো এসো কাছে এসো।
দ্বিতীয় মুচি : আমি ওকে প্রথম দেখেছি। কাজেই ও আমার কাছে প্রথম আসবে।
তৃতীয় মুচি : তা বোলো না। ওর যাকে পছন্দ হবে, তার কাছেই ও যাবে। এতে আমাদের কিছু বলার নেই।
চতুর্থ মুচি : এটা ঠিক কথা। নয়তো ঝামেলা হবে। মারপিট হবে, কথা কাটাকাটি হবে।
পঞ্চম মুচি : (একটু মাতব্বর গোছের) তুমি দেখছি ভারী দুষ্টু। জুতো জোড়ার এমন দশা করেছ? দেখো দেখি, আরেকটু হলে বেচারিদের প্রাণ বেরিয়ে যেত।
যতীন : (একটু সাহস পেয়ে) তুমি তো খুব সুন্দর কথা বলো! জুতোর আবার প্রাণ থাকে নাকি?
মুচিরা : তা নয়তো কী? তোমরা বুঝি মনে করো তোমরা যখন জুতো পায়ে দিয়ে জোরে জোরে ছোটো, তখন ওদের লাগে না? খুব লাগে।
যতীন : কী করে বুঝলে যে ওদের লাগে?
প্রথম মুচি : লাগে বলেই তো ওরা মচমচ করে। যখন তুমি চটি পায়ে দিয়ে দুড় দুড় করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করেছিলে আর তোমার পায়ের চাপে ওর পাশ কেটে গেছিল, তখন কি ওর লাগেনি?
দ্বিতীয় মুচি : খুব লেগেছিল।
তৃতীয় মুচি : সেই জন্যই ও তোমাকে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছে।
চতুর্থ মুচি : যত রাজ্যের ছেলেদের জিনিসপত্রের ভার আমাদের ওপর।
পঞ্চম মুচি : তারা সে সবের অযত্ন করলে আমরা তাদের শিক্ষা দিই।
প্রথম মুচি : (যতীনের হাতে ছেঁড়া চটি দিয়ে) নাও, সেলাই করো।
যতীন : (রেগে গিয়ে) আমি জুতো সেলাই করি না, মুচিরা করে।
দ্বিতীয় মুচি : (একটু হেসে) একি তোমাদের দেশ পেয়েছ যে, 'করব না' বললেই হল? এই ছুঁচ সুতো নাও, সেলাই করো।
যতীন : (ভয় পেয়ে) আমি জুতো সেলাই করতে জানি না। সত্যি জানি না।
তৃতীয় মুচি : আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। সেলাই তোমাকে করতেই হবে।

(যতীন ভয়ে ভয়ে চটি সেলাই করছে। ছুঁচ হাতে ফুটে আছে। আঃ শব্দ করছে। কিছু পরে)

চতুর্থ মুচি : সেলাই হল? সারাদিন তো কাটিয়ে দিলে।
যতীন : সারাদিনে এক পাটি চটি সেলাই হল।
পঞ্চম মুচি : গুড বয় । এটাই তো শুনতে চাইছিলুম। দেখলে তো চেষ্টা করলে তুমিও আমাদের মতো জুতো সেলাই করতে পারবে। এটা বুঝলে তো?
যতীন : বুঝলাম ভাই, খুব বুঝলাম। কাল অন্যটা করব। এখন খিদে পেয়েছে।
প্রথম মুচি : সে কী! সব কাজ শেষ না করে তুমি খেতেও পাবে না, ঘুমোতেও পাবে না। একপাটি চটি এখনও বাকি আছে।
দ্বিতীয় মুচি : তারপর তোমাকে আস্তে আস্তে চলতে শিখতে হবে, যেন আর কোনও জুতোর ওপর অত্যাচার না করো।
তৃতীয় মুচি : তারপর দরজিভাইদের কাছে গিয়ে ছেঁড়া কাপড় সেলাই করতে হবে। তারপর আর কী কী জিনিস নষ্ট করেছ দেখা যাবে ।
চতুর্থ মুচি : এই নাও তোমার জুতোর অন্যপাটি।

(যতীনের চোখে জল এল। দেখা গেল যতীনের হাতে অন্য একপাটি চটি)

যতীন : (কেঁদে কেঁদে) সেলাইয়ের কাজ আমি করি না, মুচিরা পারে।
দ্বিতীয় মুচি : এ কি তোমাদের দেশ পেয়েছ যে, 'করব না' বললেই হল? ছুঁচ সুতো তোমার কাছেই আছে। সেলাই করো।
যতীন : আবার বলছি, আমি জুতো সেলাই করতে জানি না। সত্যি বলছি জানি না।
তৃতীয় মুচি : আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। সেলাই তোমাকে করতেই হবে।
(যতীন ভয়ে ভয়ে সেলাই করছে। সেলাই শেষ হতেই)
চটি সেলাই হল তাহলে? দেখলে তো তুমি সেলাই করতে পারো কি না?
চতুর্থ মুচি : যাও একেবারে পাঁচতলা পর্যন্ত উঠে যাও, আবার নেমে এসো।
পঞ্চম মুচি : দেখো, আস্তে আস্তে একটি করে সিঁড়ি উঠবে নামবে।

(যতীনের প্রস্থান। কিছু পরে ফিরে আসে।)

প্রথম মুচি : হয়নি। তুমি দুটো সিঁড়ি একসঙ্গে উঠেছ। পাঁচবার লাফিয়েছ, দু'বার তিনটে করে সিঁড়ি ভেঙেছ। আবার ওঠো। মনে থাকে যেন, একটুও লাফাবে না, একটাও সিঁড়ি ডিঙোবে না।

(যতীনের প্রস্থান। কিছু পরে ফিরে আসে।)

মুচিরা : আচ্ছা এবার মন্দ হয়নি। তা হলে চলো দরজির কাছে।
(সকলের প্রস্থান)

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা