। চতুর্থ দৃশ্য ।
(একটা মাঠ। সেখানে দরজিরা বসে সেলাই করছে। যতীন ও মুচিদের প্রবেশ।)
দরজিরা : (যতীনকে দেখে) কী? কী ছিঁড়েছে? মুচিরা : নতুন ধুতিটা দেখ কতটা ছিঁড়ে ফেলেছে। দরজিরা : ওকে বলতে দাও, ওকে বলতে দাও। যতীন : ধুতিটা আমার ছিঁড়ে গেছে। দরজিরা : (মাথা নেড়ে) বড়ো অন্যায়, বড়ো অন্যায়। শিগ্গির সেলাই করো। যতীন : (রেগে গিয়ে) আমি ধুতি সেলাই করি না, দরজিরা করে। প্রথম দরজি : (সামান্য হেসে) একি তোমাদের দেশ পেয়েছ যে, 'করব না' বললেই হল? এই ছুঁচ সুতো নাও, সেলাই করো। যতীন : (ভয় পেয়ে) আমি ধুতি সেলাই করতে জানি না। সত্যি বলছি জানি না। দ্বিতীয় মুচি : ভয় পেয়ো না। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। সেলাই তোমাকে করতে হবেই হবে।
(যতীন মাঠে বসে ভয়ে ভয়ে ধুতি সেলাই করছে। ছুঁচ হাতে ফুটছে। উঁ আঁ করছে। দু-এক ফোঁড় দিয়েছে।)
দরজিরা : (চেঁচিয়ে ওঠে) ওকে কি সেলাই বলে? খোলো, খোলো।
(যতীন আবার নতুন করে সেলাই করে।)
দরজিরা : (আবার চেঁচিয়ে ওঠে) ওকে কি সেলাই বলে? খোলো, খোলো।
যতীন : (কেঁদে ফেলে) আমার বড্ড খিদে পেয়েছে। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দাও, আর আমি কখনও কাপড় ছিঁড়ব না, জুতো ছিঁড়ব না।
দরজিরা : (হাসতে হাসতে) খিদে পেয়েছে? তা তোমার খাবার জিনিস তো আমাদের কাছে ঢের আছে। দাঁড়াও। (একজন দরজির প্রস্থান, কিছু পরে ফিরে আসে।)
প্রথম দরজি : (কতগুলি পেনসিল দেখিয়ে) তুমি তো পেনসিল চিবোতে ভালোবাসো, নাও এইগুলি চিবিয়ে খাও। আর কিছু আমাদের কাছে নেই।
যতীন : না, না, এ আমি খাব না, খাব না। আমি আর কোনোদিনই পেনসিল চিবিয়ে খাব না। (বলতে বলতেই যতীন মাটিতে শুয়ে পড়ে।)
দরজিরা : বেশ তো তবে আমরা যাই। আমাদের অনেক কাজ আছে ভাই। শুধু তোমাকে দেখলে তো হবে না।
মুচিরা : যা বলেছ, আমাদেরও কি কাজ কম আছে? সারাদিন ছেলে ছোকরার চটি ছিঁড়ছে জুতো ছিঁড়ছে আর আমরা সেলাই করে চলেছি। চটি বা জুতো ছেঁড়ার শেষ নেই আমাদেরও সেলাইয়ের শেষ নেই।
দরজিরা : যাই বলো, ওদের জন্যই তো আমরা দুটো পয়সা পাচ্ছি। আমাদের পরিবারটাও দুমুঠো খেতে পাচ্ছে, তাই না?
মুচিরা : ঠিক বলেছ। যাই বলো যতীনের মতো ছেলে হয় না। একটু দুষ্টু এই যা।
দরজিরা : ছোটোরা একটু দুষ্টু হবেই। সব বড়োরাই একসময় ছোটো ছিল। সে সময় তারাও খুব দুষ্টু ছিল, এটা তো মানবে?
মুচিরা : ঠিক বলেছ। তবে ভাই অনেক বেলা হল, কথা বাড়িয়ে কাজ নেই।
দরজিরা : বেশ তো চলো। দেখি খদ্দেরদের কী হাল!
(মুচিদের দরজিদের প্রস্থান।)