সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
গ্রীনহাউস এফেক্ট

তোমরা হয়তো শুনে থাকবে গ্রীনহাউস এফেক্ট বা গ্রীনহাউজ প্রভাব এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার, যার ফলে পৃথিবীটা ক্রমে গরম আর মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। কথাটা কতটা সত্যি? সেটা বলার আগে গ্রীনহাউস ব্যাপারটা একটু নেড়েচেড়ে দেখা যাক।

গ্রীনহাউস হচ্ছে এক বিশাল কাঁচের ডোম যার নিচে থাকে চারাগাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাইজের গাছ। গাছের বাড়ের জন্য চাই সূর্যের আলো ও তাপ। শীতের দেশে বা পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে সূর্যের তাপ খুব কম, সেখানে ঐ তাপটুকু কৌশলে আটকে রাখা হয় ঐ গ্রীনহাউসের সাহায্যে।

ম্যাজিকটা কী, বুঝতে হলে তাপ কীভাবে এক বস্তু থেকে আরেক বস্তুতে যায় বোঝা দরকার। তাপ একরকম শক্তি, যা গরম জিনিস থেকে ঠাণ্ডা জিনিসে গিয়ে সেটাকে উত্তপ্ত করে। যে জিনিসের মধ্য দিয়ে তাপ সহজে যেতে পারে, তাকে বলে সুপরিবাহী বা গুড কন্ডাক্টর। যেমন রূপো, তামা, লোহা প্রভৃতি ধাতু, পারদ বা মার্কারি ও অভ্র বা মাইকা। যাদের মধ্য দিয়ে তাপ সহজে যেতে পারে না, তাদের বলে কুপরিবাহী বা ব্যাড কন্ডাক্টর। যেমন বেকেলাইট, অ্যাজবেস্টস, কাঁচ আরও নানা অধাতু আর প্রায় সব তরল ও গ্যাস। পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তাপ চলাচলকে বলে তাপের পরিবহন বা কন্ডাকশন।

কুপরিবাহী তরল বা গ্যাসের মধ্য দিয়েও তাপ চলাচলের আরেক উপায় আছে। গরমে জিনিস বাড়ে, ফলে তার চাপ কমে। কম চাপের জায়গায় ছুটে আসে বেশি চাপের জায়গার ঠাণ্ডা তরল বা গ্যাস। সে আবার গরম হয়ে বাড়ে। এভাবে গরম-ঠাণ্ডা তরল বা গ্যাস অনবরত নিজেদের মধ্যে জায়গা বদল করতে করতে তাপ বেঁটে নেয়। একে বলে তাপের পরিচলন বা কনভেকশন।

গ্রীনহাউস এফেক্ট

পরিবহন বা পরিচলন হয় কঠিন, তরল বা গ্যাস অর্থাৎ কোনো বস্তুর মধ্য দিয়ে। সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার, যার অধিকাংশই বস্তুহীন মহাশূন্য। তাহলে সূর্য থেকে তাপ পৃথিবীতে আসে কীভাবে? আসে বিকিরণ বা রেডিয়েশন-এর সাহায্যে। তাপের বিকিরণের জন্য কোনো বস্তুমাধ্যম লাগে না, বরং আলোর মতোই বিকিরিত তাপ পথে কিছু না থাকলে সহজে চলাচল করতে পারে। পথে কোনো অস্বচ্ছ বস্তু পড়লে তা বিকিরিত তাপ আটকে দিতে পারে। অস্বচ্ছ পদার্থ বিকিরিত তাপ কিছুটা শুষে নেয়, কিছুটা ঠিকরে ফিরিয়ে দেয়। বস্তুর উপরিভাগ কালো ও অমসৃণ হলে তা বিকিরিত তাপ অনেকটাই শুষে নেয়, কিন্তু সাদা ও মসৃণ উপরিভাগে বেশির ভাগ বিকিরিত তাপ ঠিকরে ফিরে যায়। আর স্বচ্ছ মাধ্যম ভেদ করে বিকিরিত তাপের প্রায় সবটাই অন্যদিকে চলে যায়।

গ্রীনহাউসে ফিরে আসি। গ্রীনহাউসের ডোম কাঁচের। কাঁচ তাপের কুপরিবাহী বলে ডোমের ভেতর-বাইরে পরিবহন মারফত তাপ বিনিময় হয় না। আবার কাঁচ বাতাস আটকে দেয় দেখে পরিচলনের মাধ্যমেও তাপের লেনদেন সম্ভব নয়। কিন্তু সূর্যের থেকে বিকিরিত তাপ স্বচ্ছ মাধ্যম ভেদ করে ডোমের ভেতর ঢুকে পড়ে। বস্তু যত গরম, তার থেকে তত তাপের বিকিরণ। তাই প্রচণ্ড উত্তপ্ত সূর্য যে তাপ বিকিরণ করে, তার সামান্য ভগ্নাংশও কাঁচের ডোম থেকে বিকিরিত হয়ে বেরোতে পারে না। ফলে চারাগাছগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় তাপ একটু একটু করে জমা হয়। এভাবে কোনো স্বচ্ছ মাধ্যমের ভেতরে বিকিরিত তাপ আটকা পড়ে বস্তুকে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত করলে তাকে বলা যায় গ্রীনহাউস-গোছের ব্যাপার বা গ্রীনহাউস এফেক্ট।

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরো, গরমের দুপুরে বাইরের গরম বাতাস থেকে বাঁচবার জন্য তুমি ঘরের সব ক’টা জানালা বন্ধ করে দিয়েছো, কিন্তু কাঁচের মধ্য দিয়ে রোদ্দুর ঘরে এসে পড়ছে। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রীনহাউস এফেক্টে ঘর হয়তো বাইরের চাইতেও গরম হয়ে উঠবে। তার হাত থেকে রেহাই পেতে হলে পর্দা বা ওরকম কিছু দিয়ে জানালার কাঁচ ঢাকতে হবে, যাতে রোদের সঙ্গে বিকিরিত তাপ ভেতরে না ঢোকে। তা না হলে বরং একটা জানালা খুলে দেওয়া ভালো, যাতে ঘরে তাপ জমে তাপমাত্রা অন্ততঃ বাইরের চেয়ে বেশি না হয়। একই অভিজ্ঞতা হতে পারে যদি গরমকালের দুপুরে দূরপাল্লার ট্রেনে যেতে যেতে কাঁচের জানালায় পর্দা না টানা হয়। দুপুরবেলা এসি গাড়ি করে যেতে যেতেও গ্রীনহাউস এফেক্টে ভেতরটা গরম হয়ে এসি তেমন কাজ করছে না বলে মনে হতে পারে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ার ও মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অনিরুদ্ধ সেন কলকাতা-মুম্বইয়ের বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও ওয়েব ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখক। তাঁর লেখা ও অনুবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, এবং সংকলিত বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা