সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

দীর্ঘকাল গরুড়ের দেখা নেই। সে তার পিতার কাছে যাবার পর তার জীবনেও অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। একদিন হঠাৎ তার মনে হল, মা যেন তাকে ডাকছেন। প্রতিশ্রুতিমত সে চলল তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। সেই সময় বিনতা কদ্রু ও তার হাজার পুত্রকে অন্য একটা দ্বীপে বেড়াতে নিয়ে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছেন। সারা দিনের সমস্ত কাজের শেষে শ্রান্ত ক্লান্ত হলেও বিনতার রেহাই নেই। তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তো আছেই। দুঃখে যন্ত্রণায় চোখ মুছতে মুছতে বিনতা ভাবছিলেন, দেবতাদেরও প্রিয় এমন দুই মহাবলী পুত্রের জননী হয়েও তাঁর কি কপাল! এই দুঃখের কি শেষ নেই? এমন সময় গরুড় এসে তাঁকে প্রণাম করে দাঁড়াল। সে বিনতাকে কাঁদতে দেখে আর তাঁর মলিন অবস্থা দেখে অবাক হয়ে কারণ জানতে চাইল। বিনতা সব খুলে জানালে গরুড় তো রেগে অগ্নিশর্মা। কপট কদ্রুপুত্রদেরকে সে পারলে তখনই মারতে যায় আরকি। কিন্তু বিনতা তাকে শান্ত করে বললেন, যেভাবেই হোক, পণবদ্ধ অবস্থা থেকে তিনি এভাবে মুক্তি পেলে সেটা তাঁরই অপযশ।

মায়ের কথায় একটু শান্ত হয়ে গরুড় কদ্রুর সঙ্গে দেখা করে মায়ের পরিবর্তে সেদিনের দাসত্ব স্বীকার করতে চাইল। কদ্রু ও তার ছেলেদের তো মহা আনন্দ। শক্ত সমর্থ মহাবিহঙ্গের পিঠে চেপে তারা চলল বেড়াতে। ফিরে আসার পর গরুড় কদ্রুর কাছে জানতে চাইল কিভাবে এই পণ থেকে বিনতা মুক্তি পেতে পারেন। কদ্রু ভাবলেন, তাঁর পুত্রেরা অমর নয়। নানা ভাবে মানুষ ও দেবতারা তাদের বিনষ্ট করে থাকে। যে অমৃত খেয়ে দেবতারা অমর হয়েছেন, তা যদি ছেলেদের জন্য পাওয়া যায় তবে এর থেকে ভাল আর কিছুই হতে পারে না। আর অমৃত সংগ্রহের জন্য গরুড়ের থেকে উপযুক্ত জন আর কোথায়? তিনি বললেন, যদি সে তাঁর পুত্রদের জন্য অমৃত এনে দিতে পারে তবেই বিনতা দাসীত্বপণ থেকে মুক্তি পাবেন।

গরুড়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল, কারণ কাজটা তো সহজ নয়। কিন্তু সে বাক্যব্যয় না করে সম্মতি জানিয়ে মার কাছে বিদায় নিতে এসে বলল, "মা, তোমার এই কষ্টের লাঘব না হওয়া পর্যন্ত আমার স্বস্তি হবে না। আমি শীঘ্রই তোমায় মুক্ত করে নিয়ে যাব।" বিনতার আশীর্বাদ নিয়ে সে চলল পিতার কাছে, কারণ অমৃতের খোঁজ তাঁরই কাছে আছে।

সূর্যমণ্ডলে সেদিন মহা কলরব। কে এক মহাশক্তিশালী পুরুষ এসেছেন অমৃতের সন্ধানে। রক্ষীরা ত্বরিদ্গতিতে দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে সংবাদ পাঠাল, "মহারাজ, অমৃতভবনের চারপাশের সপ্তবলয় রক্ষাব্যবস্থাকে পর্যুদস্ত করে এক জ্যোতির্ময় পুরুষ অমৃতের জন্য এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁকে আটকানো আমাদের সাধ্য নয়। আপনি শীঘ্র আসুন।"

সসৈন্য ইন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়েও গরুড়ের মুখে একটুও ভয়ের ছাপ নেই। দেখে ইন্দ্র বিস্মিত হলেন। তবুও প্রথমে শান্তভাবে তার উদ্দেশ্য জানতে চাইলেন, তারপর তাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করলেন। গরুড় সবিনয়ে তার আসার কারণ বিবৃত করে জানাল, যেহেতু এছাড়া তার মা-র মুক্তি পাবার কোন আশা নেই, তাই সে অমৃত নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। স্বয়ং দেবরাজের কথায় সে বিচলিত হচ্ছে না দেখে তিনি ক্রমশঃ ক্রুদ্ধ হতে লাগলেন। দুইজনে যুদ্ধ শুরু হল। কিন্তু প্রবল পরাক্রমী ভুবনবিজয়ী বাসব কিছুতেই গরুড়কে পরাস্ত করতে পারলেন না। শেষে তাঁর হাতে উঠে এল দধীচির অস্থি দ্বারা নির্মিত চরমতম অস্ত্র বজ্র। সারা বিশ্ব হায় হায় করে উঠল এই ভয়ংকর অস্ত্রের প্রয়োগের ফল জেনে। কিন্তু গরুড় ভয় পেল না। মহাস্ত্রটিকে প্রণাম করে সে তার পাখা থেকে একটি পালক খসিয়ে নির্ভীকভাবে বজ্রের সামনে পেতে দিল। অস্ত্রের আঘাতে পালকটি পুড়ে ছাই হয়ে গেল, কিন্তু গরুড়ের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হল না।

এবার ইন্দ্রের মনে ভয় হল। বজ্র যার কাছে ব্যর্থ হয় সে তো সাধারণ মানুষ নয়! তিনি গরুড়ের সঙ্গে সখ্য স্থাপন করতে হাত বাড়ালেন। তিনি গরুড়কে বোঝালেন, কেন কদ্রুপুত্রদের হাতে অমৃতের মত জিনিষ তুলে দেওয়া যায় না। অমৃত শুধুমাত্র সৎভাবাপন্ন মানুষের জন্য; হীনভাবাপন্ন লোকেদের হাতে অমৃত যাওয়ার অর্থ পৃথিবীর সর্বনাশ ডেকে আনা। দুজনে মিলে অনেকক্ষণ ধরে যুক্তি করলেন, কিভাবে গরুড়ের মায়ের মুক্তিলাভ সম্ভব হয়, অথচ অমৃত নাগদের করায়ত্ত না হয়। শেষ পর্যন্ত দুজনে একমত হয়ে একটা উপায় ঠিক করলেন। সেইমত অবশেষে অমৃত হস্তান্তরিত হল।

নাগলোকে ফিরে গরুড় কদ্রুকে বললেন, "আপনার কথামত অমৃত নিয়ে এসেছি। এবার আমার মাকে মুক্তি দিন।" অমৃতের নাম শুনে উল্লসিত কদ্রু-সন্তানেরা তখুনি প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে আরকি। কিন্তু গরুড় তাদেরকে বাধা দিয়ে বলল, "অমৃত অত্যন্ত পবিত্র জিনিষ। তাই তোমরা সবাই স্নান করে পরিষ্কার হয়ে এসো। ততক্ষণ এই পাত্রটি এই ঘরে একটি কুশাসনের উপর রক্ষিত থাক (কুশ এক ধরণের ঘাস যার পাতার ধারটা খুব ধারালো)।" কথাটার সারবত্তা উপলব্ধি করে সকলেই স্নান করতে গেল। খালি ঘরে সেই বহু আকাঙ্খিত অমৃতভাণ্ডটি পড়ে রইল। গরুড় তার মাকে নিয়ে চলে গেল।

ইন্দ্রের কাছে এটাই তো সেই বহুপ্রার্থিত সুযোগ। এই মুহূর্তের জন্যই তাঁর গরুড়ের সঙ্গে গোপন আলোচনা হয়েছিল। সকলের অগোচরে তিনি পাত্রটি সরিয়ে নিয়ে গেলেন। একটু পরেই স্নানশেষে সর্পকুল এসে দেখল, একি,কোথায় অমৃত, কোথায় কি? সেই ঘরে কোন পাত্রেরই চিহ্ন নেই। হতাশ সাপেরা সবাই মিলে সেই কুশাসনটিকেই চাটতে লাগল। তারা ভেবেছিল এই কুশাসনের উপরই পাত্রটি রাখা ছিল; যদি এক কণাও সেখানে পড়ে থাকে। কিন্তু ফল হল কি? কুশের ধারে তাদের জিব দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। সেই থেকে সব সাপেরই জিভের অগ্রভাগ দুই ফাঁক হয়ে গেছে। গরুড় ধারে পাশে কোথাও ছিল না, তাই তারা তাকেও দোষ দিতে পারল না।

বন্ধুরা, কদ্রু আর বিনতার গল্প এখানেই শেষ হল। এরকম বহু সুন্দর গল্পের খনি হল মহাভারত। যদি তোমাদের ভাল লাগে, তবে আরেকদিন অন্য গল্প শোনা যাবে।


ছবিঃঅনুভব সোম

শুক্তি দত্ত ভালবেসে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রূপকথা, প্রাচীন সাহিত্য, দেশবিদেশের লোকসাহিত্য, গল্পকথা পড়তে ভালবাসেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা বা শিশুদের সেই গল্প শোনাতেও ভালবাসেন। প্রধানতঃ শিশুমনস্তত্ত্ব ও তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন। সেটা শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি শিশু সাহিত্য, লোকসাহিত্য প্রভৃতিকে তাদের মূল্যবোধ বিকাশে কাজে লাগাতে চান।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা