সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
ঊদেয়ার রাজাদের দেশ - মহিশূর-পর্ব ১
তোমাকে আমি চাইলে অনেক রকম গল্প শোনাতেই পারি। সে দেশ-বিদেশের রূপকথার, দত্যি-দানোর গল্প হোক, তোমার মত নতুন কুঁড়িদের গল্প হোক, বাঘ-ভাল্লুকের অথবা ভূত-ভূতুমদের... কিন্তু নেহাত গালভরা গপ্পো বলতে ইচ্ছে করছিল না... মনে হ’ল এমন কিছু বলি যা আমি নিজে দেখেছি, সেসবের মাঝে থেকেছি... আর তুমিও একদিন দেখতে চাইবে সেই সব কিছু। কাজকর্মের জন্য বেশ কয়েক বছর হ’ল নিজের শহর কলকাতা থেকে বহুদূরে দক্ষিণ ভারতে পড়ে আছি, জানো? শহরটার নাম ব্যাঙ্গালোর, কলকাতার অনেক বাঙালি আমার মতই এখন এইখানে থাকে। আমিও তাদের একজন। তো এই দক্ষিণে থাকতে থাকতে, কাজকর্মের ফাঁকে এখান-ওখান বেরিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা যে কবে নেশা হয়ে গেছে, বুঝতেই পারিনি। সেই প্রথম ব্যাঙ্গালোর থেকে একবার মাইসোর গেছিলাম... তারপর সময় পেলে কখনও ওখানে, কখনও সেখানে। আজ তোমায় সেই প্রথম বার মাইসোর যাওয়ার গপ্পোটাই বরং বলি, কেমন?
ব্যাঙ্গালোর শহরটার নাম কে না জানে... এখন আবার বলা হচ্ছে ব্যাঙ্গালুরু! বেশ বড় শহর, কি নামডাক, তাই না? কিন্তু এই যে এখন তোমরা শুনছ ব্যাঙ্গালোর নাম, কর্নাটক রাজ্যের বড় শহর, দক্ষিণ ভারতের সব থেকে উন্নত শহর... মুম্বাইয়ের মতই প্রতিপত্তিশীল। কিন্তু কর্নাটক রাজ্যও চিরকাল ছিল না, আর এই নব নির্মিত বাঙ্গালোর অথবা ব্যাঙ্গালুরু শহরের বয়সও খুব বেশি নয়। মহিশূর বা মাইসোর প্রভিন্স-এর অধীনে ছিলো বিস্তৃত অঞ্চল, তারই অনেকটা দক্ষিণে, একদম তামিলনাড়ু সীমান্তের কাছে ব্যাঙ্গালোর (যা তখনও শহর হয়নি, খানিক জঙ্গল, আর খানিকটা ছোট ছোট বসতি)। মাইসোরই এই রাজ্যের প্রাচীন শহর, বর্ধিষ্ণু অঞ্চল... মাইসোর সিটি এই প্রভিন্স-এর রাজধানী, যেখানে রাজা থাকতেন। তুমি টিপু সুলতানের নাম শুনেছ? তার আসল নাম খানা অবশ্য বেশ পেল্লায়, তবে ওই টিপু নামেই সকলে এক ডাকে চেনে। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন শুরু হওয়ার আগেও যে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর জবরদখল ছিল, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এই টিপু সুলতান, ঠিক আমাদের বাংলার নবাব সিরাজ এর মতন। সেই টিপু সুলতানও রাজত্ব চালাতেন এই মাইসোরের কাছেই, তাঁর রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তনম থেকে। এখন সব কিছুই মাইসোর জেলার অন্তর্গত... মাইসোর শহর, শ্রীরঙ্গপত্তনমের অবশিষ্ট যা কিছু... আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেই সময়ের দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসের কিছু টুকরো। সত্যিই দেখার মত বেশ কিছু নিদর্শন... যা সব ঠিক করে দেখতে গেলে একটা গোটা দিন লেগে যাবে।

 

মাইসোরে যদি কেউ বেড়াতে যেতে চায়, তাহলে ব্যাঙ্গালোর শহর থেকেই যায়। হয় ট্রেন-এ, না হ’লে গাড়িতে... আর যারা ট্র্যাভেল এজেন্সির সঙ্গে যায়, তারা যায় ট্যুরিস্ট বাসে। দুটো শহরের মাঝখানে ব্যবধান দেড়শো কিলোমিটারের মত। মাঝখানে লম্বা ঝকঝকে হাইওয়ে – মাইসোর রোড। কলকাতা শহর থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূরে কোথাও যাওয়া মানে একটা বেলা পার হয়ে যাওয়া... ওই কল্যানী পৌঁছতেই গাড়ী করে দু ঘণ্টা লেগে যায়! কিন্তু বললে বিশ্বাস করবে না, এই দেড়শো কিলোমিটারের পথও কেবল তিন ঘণ্টায় পার করে দেওয়া যায়... হুশ হুশ করে গাড়ি চলে হাইওয়ে দিয়ে! আমিও যখন গেছি... ওই গাড়িতেই গেছি, অবশ্যই ভাড়া করে নেওয়া গাড়ি। এই নিয়ে আর না হ’লেও বার পাঁচেক ওপথে যাওয়া হয়ে গেছে... সেইরকমই একটা মাইসোর-যাত্রার গল্প তোমাকে এইবার বলা যাক, কেমন?

এটা ২০০৯ সালের কথা, নিজের মাইসোর যাওয়ার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন থেকেই... বন্ধু এবং সহকর্মীদের কাছে জানলাম প্ল্যান করে দেখলে একদিনেই অনেকটা দেখে নেওয়া যায়... সময় করে একটা উইকেণ্ডেই যাওয়া স্থির করলাম... শনিবার দেখে। সাতপাঁচ ভেবে দেখলাম, ট্রেনে করে গেলে সেই মাইসোর স্টেশনে নেমে, আবার গাড়ি করে শ্রীরঙ্গপত্তনম অবধি আসতে হবে, এদিক ওদিক ঘোরার জন্য একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতেই হবে। তা’ছাড়া ট্রেনে করে যাওয়ার যেমন একটা মজা আছে... তেমন এই লম্বা হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি করে যাওয়ারও একটা মজা আছে... আর হিসেব করলে সময়েও কম লাগে, তাই একটা চার-চাকা ভাড়া করেই রওনা হ’লাম। সময়টা অবশ্য বেড়াতে যাওয়ার উপযুক্ত ছিল না। জুলাই মাসের শেষ দিক, বর্ষাকাল তখনও ভাল মতই আছে... কখনও রোদ, কখনও মেঘ, কখনও হঠাৎ বৃষ্টি। কেউ প্ল্যান করে বেড়াতে গেলে ওইরকম সময় না যাওয়াই ভাল, সারাদিন বৃষ্টি চললে বেড়ানোটাই মাটি। আমার কপাল ভাল ছিল, যাওয়ার পথে সকালে এক পশলা বৃষ্টি ছাড়া আর কোনও বিপত্তি হয়নি... মাঝে মাঝে জমাট মেঘ ভয় দেখালেও তার থেকে বেশি কিছু করেনি। করলে সেইদিনের গপ্পো আর তোমাকে এত ফলাও করে বলাই হ’ত না।

পুরোপুরি কলকাতার মানুষ হলেও, জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের নিবাস এখন ব্যাঙ্গালোর বা ব্যাঙ্গালুরু। কলকাতারই কলেজ থেকে বি টেক পাশ করে এখন একটি বহুজাতিক সংস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের কর্মী। বাংলা সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা থেকেই মাঝে মধ্যে একটু লেখা আর সময় সুযোগ হ'লে ব্যাগ গুছিয়ে কাছে-দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়া, এই নিয়েই জয়দীপ। সেই সব বেড়াতে যাওয়ার নানা রকম অভিজ্ঞতা ছোটদের কাছে বলার ইচ্ছে বহুদিন। সেই ইচ্ছাপূরণ করতেই ইচ্ছামতীর ছোট্ট বন্ধুদের জন্য কলম ধরা।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা