সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
সভ্যতার সঙ্কটঃ জলশূন্যতার পথে কেপটাউন

সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার শহর 'কেপ টাউন'-এর নাম, ক্রিকেট খেলার সূত্রে আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত। কিন্তু খুব আশংকাজনক কারণে শহরটির নাম, আবার খবরে জায়গা করে নিয়েছে।

'খরা'! হ্যাঁ ভাবতে খুব অবাক লাগলেও, বিশ্বের অন্যতম একটি উন্নত আধুনিক 'মেট্রোসিটি' খরা কবলিত। কেপটাউন শহরটি মূলতঃ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর আওতায় পড়ে, শুষ্ক গ্রীষ্মকাল আর শীতকালীন বৃষ্টি। শহরে জল সরবরাহ হয় বড় বড় ছটা 'ড্যাম' বা কৃত্রিম জলাধার থেকে, যার জলের উৎস হ'ল বৃষ্টিপাত। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এবং গত ক'বছর বৃষ্টিপাতের ঘাটতিই শহরটিকে ঠেলে দিয়েছে এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির অভিমুখে।

১৯৯৫ থেকে ২০১৮ অব্দি কেপটাউনের জনসংখ্যা ২.৪ মিলিয়ন থেকে বেড়ে প্রায় ৪.৩ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে, ৭৯% বৃদ্ধি! কিন্তু জলাধারে জলের সঞ্চয় বেড়েছে মোটে ১৫%।

এদিকে ২০১৩-১৪ সালের পর ধীরে ধীরে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে বাড়তে থাকে খরার প্রকোপ। শুষ্ক শীতকাল আর 'এল নিনো'-র প্রভাবে জলাধারগুলোর ওয়াটার লেভেল ক্রমাগত কমতে থাকে। যদিও ২০১৬ তে সাউথ আফ্রিকার অন্যান্য এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত খরার অবসান ঘটায় কিন্তু কেপ টাউন এলাকার পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন ঘটে না। ২০১৭ সালের মে মাস নাগাদ এই খরাকে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খরা বলে ঘোষণা করা হয়। জল ব্যবহারে নানা নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। প্রতিটি মানুষের দৈন্যন্দিন জল ব্যবহারের পরিমাণও সীমিত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন মাথাপিছু ৫০ লিটারে।

২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি কেপ টাউনের মেয়র প্যাট্রিসিয়া ডে লিলি ঘোষণা করেন জলাধারগুলির জলের লেভেল ১৩.৫% এর নীচে নেমে গেলে 'ডে জিরো' ডিক্লেয়ার করা হবে এবং বাড়ি বাড়ি মিউনিসিপ্যালিটির জল সরবরাহ বন্ধ করা হবে। বাসিন্দাদের নির্দিষ্ট কিছু জল সরবরাহের বুথ থেকে জল নিতে হবে এবং সেটা দিনে জনপ্রতি ২৫ লিটারের বেশি নয়। প্রথমে ২২শে এপ্রিল 'ডে জিরো' ঘোষণা করা হলেও পরে সেটাকে অগাস্ট মাস অব্দি পেছনো হয়েছিল। শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, জলের লেভেল আপাতত প্রায় ২২%, তাই ২০১৯ সাল অব্দি 'জিরো ডে' পেছনো সম্ভব হয়েছে। জল ব্যবহারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারী করে পরিস্থিতি কিছুটা আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়েছে কেপ টাউন প্রশাসন।

সভ্যতার সঙ্কটঃ জলশূন্যতার পথে কেপটাউন

দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইউনিভার্সিটি অফ কেপ টাউনের একটি রিসার্চ টিম জানিয়েছে এরকম গুরুতর খরা পরিস্থিতি গড়ে ৩১১ বছরে একবার হয়।

এই খরার প্রভাবে চাষবাসও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় ৩৭০০০ মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়েছে যার ফলে ৫০০০০ এরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন। বেকারত্ব এবং জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি চরমে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস অব্দি প্রায় ১.১৭ বিলিয়ন ইউ. এস. ডলারের লোকসান হয়েছে এই খরার ফলে।

জনজীবন সাংঘাতিকভাবে ব্যাহত। মানুষ নানা উপায়ে জল রিসাইকল করার চেষ্টা করছেন যতটা সম্ভব। পানীয় জলের জন্য লম্বা লম্বা লাইন পড়ছে দোকানে বাজারে। যে সমস্ত অর্থশালী মানুষের পক্ষে শহর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া সম্ভব, তাঁরা সেই পথই নিচ্ছেন। সারা শহরবাসী স্তম্ভিত কী করে এই পরিণাম দাঁড়াল এত বড় শহরের। এ কি শুধু কর্তৃপক্ষের অবহেলা বা দূরদর্শীতার অভাবের ফল?

সচেতন না হ'লে, জলের অপচয় বন্ধ না করলে, নির্বিবাদে গাছ কাটতে থাকলে, জলাজমি বোজাতে থাকলে, হয়ত কালে কালে এই অবস্থা বিশ্বের সমস্ত বড় ছোট শহরেরই হবে।

কেপ টাউন শহর তার বিপদ কাটিয়ে পুনরায় স্বাভাবিক হোক, এই প্রার্থনার সাথে সাথে, সমগ্র মানবজাতির সচেতনতার উন্মেষ হোক, এটাই কাম্য।

গ্রাফিক্সঃ মহাশ্বেতা রায়

একটি আড়াই বছরের সন্তানের জননী। স্বামীর কর্মসূত্রে বর্তমানে আমেরিকায় থাকেন, দেশের ঠিকানা হাওড়া। বছর তিন আগে কলকাতার সাহা ইনস্টিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স থেকে পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন। শিশু-কিশোর সাহিত্য পড়তে ও লিখতে ভালবাসেন।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা