খেলাঘরখেলাঘর

তিনতলার দক্ষিণের ঘরে থাকতেন আমার মেজোকাকা বা কাকামণি- সুবিনয় রায়। বাবা মারা যাবার পরে ছাপাখানার তদারকি কাকামণিই করতেন। জার্মানি থেকে তখন নানারকম কাগজের নমুনার বই আসত আমাদের অফিসে। মোটা, পাতলা, রেশমী, খসখসে, চকচকে, এবড়োখেবড়ো, কতরকম যে কাগজ তার ঠিক নেই। কাকামণির ঘরে গেলে তিনি আমার হাতে ওই রকম একটা বই দিয়ে বলতেন- দেখ তো এর মধ্যে কোনটা চলবে। আমি বিজ্ঞের মতো পর পর কাগজের উপর হাত বুলিয়ে বুলিয়ে চলবে কি চলবে না বলে দিতাম। আমার ধারণা ছিল আমার বাছাই করা কাগজই আসবে জার্মানি থেকে...
...বাবা মারা যাবার দু'বছর পর অবধি সন্দেশ পত্রিকা বেরিয়েছিল। একতলার ছাপাখানায় সন্দেশ ছাপা হচ্ছে, তার তিন রঙের মলাট ছাপা হচ্ছে, একথা আমার পরিষ্কার মনে আছে। ছাপাখানায় ঢুঁ মারার সময়টা ছিল দুপুরবেলা। দোতলাতেই যাওয়া হত বেশি। ঢুকলেই দেখা যেত ডাইনে সারি সারি কম্পোজিটারের দল তাদের খোপ কাটা হরফের বাক্সের উপর ঝুঁকে পড়ে হরফ বেছে বেছে পর পর বসিয়ে লেখার সঙ্গে মিলিয়ে লাইন তৈরি করছেন। সকলেরই মুখ চেনা হয়ে গিয়েছিল, ঘরে ঢুকলে সকলেই আমার দিকে চেয়ে হাসতেন। আমি তাঁদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতাম ঘরের পিছন দিকে। আজও তারপিন তেলের গন্ধ পেলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ইউ রায় এন্ড সন্সের ব্লক মেকিং ডিপার্টমেন্টের ছবি। ঘরের মাঝখানে রাখা বিরাট প্রোসেস ক্যামেরা। ক্যামেরার কাজ যে শিখে নিয়েছিল বেশ পাকা ভাবে, সেই রামদহিন প্রেসে যোগ দিয়েছিল সামান্য বেয়ারা হিসাবে। বিহারের ছেলে। রামদহিন ছিল প্রায় ঘরের লোকের মত, আর তার কাছেই ছিল আমার যত আবদার। একটা কাগজে হিজিবিজি কিছু এঁকে নিয়ে গিয়ে তার হাতে দিয়ে বলতাম, 'রামদহিন, এটা সন্দেশে বেরোবে'। রামদহিন তক্ষুণি মাথা নেড়ে  বলে দিত, 'হাঁ খোখাবাবু, হাঁ'। শুধু তাই না; আমার ছবি ক্যামেরার নিচের দিকে মুখ করা লেন্সের তলায় বিছিয়ে রেখে আমাকে কোলে তুলে ক্যামেরার পিছনের ঘষা কাঁচে দেখিয়ে দিত সে ছবির উলটো ছায়া।...

যখন ছোট ছিলাম
সত্যজিত রায়
আনন্দ পাবলিশার্স
৭৫ টাকা

বইপোকা অবশ্যই নতুন নতুন বই পড়তে ভালবাসেন। আরো ভালবাসেন সেইসব বই এর খোঁজ সবাইকে দিতে। নতুন নতুন বইয়ের খোঁজ পেতে চোখ রাখ বইপোকার দপ্তরে। আর তোমার কাছে যদি কোন খুব ভাল বই থাকে, যেটার কথা তুমি বন্ধুদের এবং বইপোকাকে জানাতে চাও, তাহলে বইপোকাকে সেই বইয়ের খবর জানিয়ে চিঠি লেখ ইচ্ছামতীর মেইল ঠিকানায়।