তা, লাভ তো একটা হলই, সেটা বলি এবার।
বিজ্ঞানের বইতে নিশ্চয়ই পড়েছ যে আমরা অর্থাৎ প্রাণীরা নিজেদের খাবার তৈরী করতে পারি না, অন্যের তৈরী করা খাবার খাই। এই 'অন্য'রা হল উদ্ভিদ বা গাছপালা। গাছপালা না থাকলে আমরা না খেতে পেয়েই মারা পড়তাম! ওদের তৈরী করা খাবার খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি।
ওরা খাবার তৈরী করে কি করে, সেটাও হয়ত জান কিছুটা। সবুজ রং-এর গাছের পাতা হল গাছের রান্নাঘর। পাতার রং সবুজ হওয়ার কারণ হল এর মধ্যে থাকে 'ক্লোরোফিল' নামের একরকম কণা, যারা সূর্যের আলো শোষন করে। পাতার উল্টো দিকে অনেক ছিদ্র থাকে, এদের নাম 'স্টোমা'। ( একটা ছিদ্র হল 'স্টোমাটা', আর অনেকগুলো একত্রে হল 'স্টোমা')। এই 'স্টোমা'র ভেতর দিয়ে পাতা বাতাস থেকে কার্বণ-ডাই-অক্সাইড গ্যাস সংগ্রহ করে, আর শিকড়ের সাহায্যে মাটি থেকে শোষন করে জল। সূর্যালোকের খবরদারিতে এরা সবাই মিলে মিশে পাতার মধ্যে তোমার মত রান্নাবাটি খেলে! আর তাইতে হয়ে যায় খাবার!
সেই খাবারেই ত আমরা ভাগ বসাই।
তুমি নিশ্চয়ই ভাবছ যে আমরা যে মাছ-মাংস খাই, কই সে সব ত আর গাছেরা তৈরী করে না! তাহলে ?
আমরা যে মাছ বা যে সমস্ত প্রানীর মাংস খাই, তারা সবাই কিন্তু সবুজ শ্যাওলা বা ঘাসপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। ওরা বেঁচে না থাকলে আমরা মাছ-মাংস পেতাম কোথায় ? সুতরাং বুঝতেই পারছ, আমরা সব প্রানীরাই গাছের তৈরী খাবারই খাই, কখনও প্রত্যক্ষভাবে কখনও
পরোক্ষভাবে (পরোক্ষভাবে মানে, গাছপালা খেয়ে বেঁচে থাকা প্রাণীদের খেয়ে)।
(স্টোমার মধ্য দিয়ে যে গাছপালা কেবলমাত্র কার্বন-ডাই-অক্সাইডই শোষণ করে তা কিন্তু নয়, শ্বাসকার্য চালাবার জন্য অক্সিজেনও টেনে নেয়। দিনের বেলা খাবার তৈরী আর শ্বাসকার্য দুটোই চলে, রাতে কিন্তু খাবার তৈরী বন্ধ! কেন ? সূর্যের আলো না থাকলে রান্না হবে কি করে! সূর্যের আলোর খবরদারিটা তো চাই, না কি!
গাছপালা আমাদের আর একটা বিরাট উপকার করে। নিজেরা খাবার বানাবার সময় অক্সিজেন তৈরী করে আর সেই অক্সিজেন স্টোমার ছিদ্র দিয়েই বাতাসে মিশিয়ে দেয়। এটা তো জানই যে অক্সিজেন ছাড়া আমাদের একদম চলবে না! সেই জন্য শহরাঞ্চলে, যেখানে অনেক মানুষ থাকে, অনেক গাড়িঘোড়া চলে, সেখানে অনেক গাছপালা থাকা দরকার যাতে অনেক অক্সিজেন পাওয়া যায়। আর ঠিক এই কারণেই বর্ষাকালে আমরা গাছপালা পুঁতে 'বন মহোৎসব' করি।
স্টোমা কিন্তু আরও কাজ করে, এটা অবশ্য গাছের নিজের জন্য কাজ! গাছের শরীরে বাড়তি জল জমে গেলে অকেজো সেই জলও সেই সব ছিদ্রপথে বাষ্পাকারে বেরিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলে 'প্রস্বেদন'। দেখ, ঐটু্কু টুকু সব ছিদ্রের কত কাজ! অবাক হতে হয়! তাই না ?)
একটু আগে বললাম যে গাছ শিকড়ের সাহায্যে মাটি থেকে জল শোষন করে, সেটা গাছ করে আগে বলা ঐ অসমোসিস প্রক্রিয়ার সাহায্যে। এটা একটু বলি।
তুমি নিশ্চয়ই জান যে প্রাণী বা গাছপালা অসংখ্য 'কোষ' বা cell দিয়ে তৈরী। এরা এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। এদের দেওয়ালগুলি হল ঐ 'আংশিক-ভেদ্য পর্দা' দিয়ে তৈরী। গাছপালা মাটির ভেতর যে শিকড় চালিয়ে দেয়, সেই শিকড়ের ডগায় থাকে অতি নরম সব রোঁয়া, যার মধ্যেকার কোষের দেওয়ালগুলিও খুব নরম, আর এরা আংশিক-ভেদ্যও। তাই ডিমের মধ্যে যে কারিকুরি হল এখানেও তেমনটাই তো হবে। নাকি ?
কোষের মধ্যে থলথলে জেলির মত সাইটোপ্লাজম থাকে আর বাইরে মাটির মধ্যে থাকে জল, যার ঘনত্ব কম, আর এদের মাঝে রয়েছে ঐ পর্দা। সুতরাং বুঝতেই পারছ যে, কম ঘন জল পর্দা ভেদ করে ঘন সাইটোপ্লাজমের মধ্যে ঢুকে পড়ে। অর্থাৎ শিকড়ের কোষে জল ঢুকে পড়ল। এই জল কোষের জেলিটার ঘনত্ব কমিয়ে দিল যেটা কিনা তার পাশেরটার থেকে কম হয়ে গেল। তাই এই জল আবার তার পাশেরটাতেও একই উপায়ে ঢুকে পড়ে। এ রকম পর পর চলতেই থাকে। এই ভাবে লক্ষ লক্ষ কোষের মাধ্যমে প্রচুর জল গাছের পাতায় পৌঁছে যায়। তারপর আর কি-ই বা হতে পারে রান্নাবান্না ছাড়া! এই কারণেই, গাছের সবুজ পাতাকে অনেক সময়ে বলা হয় গাছের রান্নাঘর।
পাতায় পৌঁছান পর্যন্ত আর যা যা হয় তা আর বললাম না। কঠিন কঠিন বিষয় গুলো বলে তোমার ছোট্ট মাথাটা ঘুলিয়ে দেবার দরকার কি! তাই না ? বড় হয়ে, মাথাটা যখন এই এত্তবড় হবে, তখন এই বিষয়ে অনেককিছু জানতে পারবে। কোথায় বলত!
কেন ! ঐ যে, ঐ 'জীবন বিজ্ঞান' বইতে!
সন্তোষ কুমার রায়
কোদালিয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
ছবিঃ
উইকিপিডিয়া