খেলাঘরখেলাঘর

পরশমণি
 
কোন সময় এমন হয়েছে কিনা মনে করে দেখত।
ধর তুমি কোন ট্যাক্সি বা গাড়ী করে বেড়াতে যাচ্ছ আনন্দ করতে, আর ঠিক সেই সময় নামল বৃষ্টি। ব্যস। জানালা দিয়ে জলের ছাঁট আসতে শুরু করল। জানালা বন্ধ করে গরমে ভাপা ছাড়া আর গতি কি ? সুতরাং সব জানালা বন্ধ হল।

ড্রাইভার কাকুর সামনের কাচ যেটা দিয়ে তিনি রাস্তা দেখেন সেটা ঝাপসা হয়ে গেল ।আর তাতে তিনি কাচ মোছার যন্ত্র (ওয়াইপার) চালু করে দিলেন। এতে একটা কাজ হল। কাচটা একটু পরিষ্কার হল। পুরোটা হল না। ক্রমশঃ কাচটার ঘোলাটে ভাবটা আরও বাড়তে থাকল।
 
ওয়াইপার
গাড়ির কাঁচ পরিষ্কার করছে ওয়াইপার
 
এইবার কাকু একটা কাজ করলেন, তিনি হাত দিয়ে কাচের ভেতরের দিকটা মুছে দিলেন। ওমনি সেটা সাফ হয়ে গেল। খেয়াল করে দেখ, তোমার পাশের জানালার কাচটাও কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে। আঙুল দিয়ে দাগ কাট।আর আশ্চ্যর্যের ব্যাপার হল কাচটা তো পরিষ্কার হলই আর তোমার আঙুলটাও  ভিজে গেল।
         
ব্যাপারটা কি হল ?সব কাচ বন্ধ, অথচ ভেতরে জল ?এল কোথা থেকে ? অবাক কান্ড ! কান্ডটা জানতে চাও ?
         
তাহলে ত "ইচ্ছামতীর" পুরোন সংখ্যাগুলো একটু ঘাঁটতে হয়! বাতাসে যে জলীয় বাষ্প আছে তা প্রমানের জন্য অন্ততঃ দুটো বিষয়ের কথা বলেছি সেই সব সংখ্যায়। মনে করিয়ে দিই একটু ?
 
একটা শুকনো কাচের গ্লাসে বরফের টুকরো মেশানো জল রাখলে গ্লাসের বাইরের দিকে বিন্দু বিন্দু জল জমে যাওয়া প্রমান করে যে বাতাসে জলীয় বাষ্প আছে -- এ হল প্রথমটা, আর দ্বিতীয়টা হল সেই যে বরফের টুকরো থেকে ধোঁয়া ওঠা ! মনে পড়ে ?
         
তাহলে এবার আমাদের কথায় অর্থাৎ গাড়ীর ভেতরে জল এল কোত্থেকে সেটা জানার চেস্টা করা যাক। বাইরে ত বৃষ্টি  হচ্ছিল,আর এতে কাচ ভিজে ঠান্ডা হয়ে পড়ছিল। অথচ ভেতরের বাতাসটা গরম। গরম বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প ঠান্ডা কাচের ছোঁয়ায় ঠান্ডা হয়ে জলবিন্দুতে পরিণত হয়ে কাচের গায়ে জমে যাচ্ছিল। এ ভাবে অনেক জমা জলবিন্দু কাচকে ঘোলাটে করে দেয়। তাইত ড্রাইভার কাকুকে হাত দিয়ে কাচ মুছতে হয় আর কাচে ঘষলে তোমার হাতের আঙুল ভিজে যায়।

ঘনীভবন 
কাঁচের গায়ে জমে থাকা জলবিন্দুর ওপর দিয়ে আঙ্গুল চালিয়ে এঁকে ফেলা যায় মজার ছবি
 
      
এতগুলো কথা বললাম কেন সেটা বলতে পারবে ? আসলে আমাদের চার পাশে এমন সুন্দর সুন্দর ব্যাপার ঘটে, যা আমরা দেখতে পেলেও কারন জানি না। যেমন, মেঘ ও বৃষ্টি, শিশির, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত --এ রকম সব ঘটনা। চমতকার ব্যাপার না এসব ?
 

তুমি যাতে বুঝতে পার তেমন সহজ করে বলার চেষ্টা করছি। প্রথমে বলি শিশিরের কথা। বর্ষার পরেই আসে শরত,কাজেই সে সময় বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। শরতকালে রাতের দিকে মাটি যখন ঠান্ডা হয়ে যায় তখন তার কাছাকাছি থাকা বাতাসও ঠান্ডা হয়ে পড়ে। ফলে সেখানে থাকা বাষ্পও জমে জল হয়ে যায়। সেই জল ঘাসের ডগায় বা ছোট ছোট গাছের পাতায় বিন্দু বিন্দু জলের আকারে জমতে থাকে। সেটাই শিশির। শীত কালে গ্রামাঞ্চলে ঘাসে এত শিশির পড়ে যে তার ওপর দিয়ে হাটতে গেলে পা ভিজে সপসপে হয়ে যায়। হেঁটে দেখো কখনো।


শিশির
ঘাস এবং পোকাটার গায়ে শিশিরবিন্দু
       
জলীয় বাষ্প ছাড়াও অনেক রকম ধুলিকণা,ধোঁয়া- এসব ভেসে বেড়ায় বাতাসে। এরা ঠান্ডা হয়ে গেলে তার ওপর বাষ্প জমে জলকণার আকারে ভেসে থাকে। অনেক অনেক এরকম জলকণা জমা হয়ে কুয়াশা তৈরী করে। দুপুরে কিন্তু কুয়াশা কেটে যায়। কেন বলত ? দুপুরে রোদ উঠে গরম পড়লে জল আবার বাষ্প হয়ে যায় বলে।
কুয়াশা
কুয়াশায় আবছা হয়ে আছে বহুতলের মাথা
         
আবার কোন কারনে জলীয় বাষ্প হালকা হয়ে অনেক ওপরে উঠে গেলে সেখানে গিয়ে ঠান্ডা হয়ে ঠিক কুয়াশার মতোই জলকণায় পরিণত হয়ে ভেসে বেড়ায়। এমন একত্রে ভেসে বেড়ানো জলকণাই হল গিয়ে মেঘ। আর মেঘের মধ্যে থাকা জলকণাগুলো জুড়ে জুড়ে এক একটা বড় বড় জলবিন্দু তৈরী হয়। তখন সেগুলো যে ভারি হয়ে যায় বুঝতেই পারছ। এরাই বৃষ্টি হয়ে নীচে নেমে আসে।
মেঘ
আকাশ জুড়ে মেঘ -একটূ পরেই বৃষ্টি নামবে
       
তুষার তৈরী হতে গেলে ধুলিকণা বা ধোঁয়ার কোন দরকার হয় না। খুব ঠান্ডা পড়লে জলীয় বাষ্প জমে গিয়ে বরফ হয়ে যায় আর বাতাসে ভেসে বেড়ায়। পরে বৃষ্টির
মত ঝির ঝির করে পড়তে থাকে। এ হল তুষার পাত।
তুষার
তুষারপাতে চারিদিক সাদা হয়ে গেছে- চলছে তুষার নিয়ে খেলা
       
আর কখনো কখনো বৃষ্টিকে, পড়ার সময় মাটি থেকে অনেক ওপরে কোন খুব ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়। তখন বৃষ্টির ফোঁটাগুলো জমে বরফ হয়ে
যায়। সেই সব ছোটবড় বরফের টুকরোগুলো বৃষ্টির মত পড়তে থাকে। এর নামই শিলাবৃষ্টি। মাথায় পড়লে আর রক্ষে নেই।
শিলাবৃষ্টি
নানান আয়তনের তুষার জমা শিলা - হাতে নিলে বরফের মত ঠান্ডা
        
ধোঁয়াশার নাম শুনেছ কখনো ? ধোঁয়া আর কুয়াশা একসাথে যখন বাতাসে ভেসে বেড়ায় তখন এটা হয়। কলকাতার মত বড় বড় শহরে কুয়াশা আর গাড়ীর ধোঁয়া মিশে এরকম ধোঁয়াশা হয়। এমন হলে চারিদিক অন্ধকার অন্ধকার লাগে, সূর্যের আলো এসে পৌঁছায় না। লন্ডন শহরে একবার এরকম হয়ে বেশ কয়েক দিনের জন্য শহরটা অচল হয়ে পড়েছিল।

ধোঁয়াশা
মহানগরের মাথায় ওপর ভেসে আছে ধূসর কালচে ধোঁয়াশা     
  
আমি কিন্তু এইসব প্রাকিতিক ঘটনাগুলো তোমার যাতে বুঝতে সুবিধা হয় তেমন করে বললাম, বড় হয়ে এ বিষয়ে আরো বিশদে জানতে পারবে।
 
আজ এখানেই শেষ করি,কি বল ?
 
 
 
সন্তোষ কুমার রায়
রূপনারায়ণপুর, বর্ধমান


ছবিঃ
উইকিপিডিয়া
সন্তোষ কুমার রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। শৈশব ও কৈশোর যথাক্রমে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় কাটলেও, কর্মজীবন কেটেছে বাংলা বিহার সীমান্তের হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ শিল্পনগরীতে। শিল্পনগরী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের এবং বড়দের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখেছেন বহুবছর। বর্তমানে ইচ্ছামতীর পরশমণি বিভাগে নিয়মিত লেখা ছাড়াও তিনি একটি গ্রুপ ব্লগের সদস্য রূপে লেখালিখি করেন ।