ডাঃ দিলীপ মহলানবিশ
কলেরা গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন আর এক বাঙালি বিজ্ঞানী। তিনি হলেন ডাঃ দিলীপ মহলানবিশ (জন্ম ১৯৩৪ সাল)। কলেরা রোগীকে বাঁচাতে শিরা দিয়ে স্যালাইন (সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবণ) ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। রক্তে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড আয়নের মাত্রা বাড়ে, রক্তের তারল্য বৃদ্ধি পায়। হৃদযন্ত্র সহজেই তা পাম্প করে শরীরে ছড়িয়ে দিতে পারে। রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। ঠিক সময়মত স্যালাইন দিনে না পারলেই রোগী মারা যায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় উদবাস্তু শিবিরে ব্যাপক হারে কলেরা দেখা দেয়। কলকাতা থেকে ডাক্তারী পাশ করে এবং ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় শিশু-চিকিতসায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ডঃ মহলানবিশ তখন কলকাতার জন হপকিন্স ইউনিভারসিটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে এ গবেষণারত। বনগাঁ হাসপাতালে কলেরার মোকাবিলায় তাঁর ডাক পড়ল। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন স্যালাইনের সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। অনেক রোগীর মৃত্যু অনিবার্য। নিজের গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি রোগীদের জলে নুন আর চিনি দিয়ে মিশিয়ে খাওয়াতে লাগলেন। এই পদ্ধতির নাম Oral Redydration Therapy বা ORT. উদরাময় রোগে ভাতের মাড়, নারকোলের জল এসবের উপযোগিতার কথা এর আগে অনেকেই বলেছিলেন। গ্লুকোজের উপস্থিতিতে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড আয়ন খাদ্যনালী থেকে শোষিত হয়ে রক্তে মেশে - এই তথ্য জানিয়েছিলেন পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু শিরার ভেতর দিয়ে স্যালাইন দেওয়ার বহুল প্রচলিত পদ্ধতি বর্জন করে রোগীকে সরাসরি নুন চিনি মেশানো জল খাওয়ানোর ঝুঁকি কেউই নিতে পারেন নি। সঙ্কট মুহূর্তে দিশেহারা না হয়ে ডাঃ মহলানবিশ সেই কাজটাই করে ফেললেন সাহসের সঙ্গে। অবিশ্বাস্য ফল পাওয়া গেল। মৃত্যুর হার নেমে এল শতকরা কুড়ি- ত্রিশ ভাগ থেকে শতকরা তিন ভাগে। এরপরে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যোগ দিয়ে এই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিলেন সারা পৃথিবীতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাঁর এই কীর্তিকে miracle cure for an old scourge আখ্যা দিল। বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যান্সেট (The Lancet) ORTকে potentially the most important medical advance of the 20th century বলে ঘোষণা করল। সারা পৃথিবীতে এখন ORT বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। সহকর্মী গবেষকদের সঙ্গে নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ডাঃ মহলানবিশ।
অতি সামান্য জিনিষ নিয়ে গবেষণা করে যে কত বড় বৈজ্ঞানিক কীর্তি স্থাপন করা যায় তার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন ডাঃ শম্ভুনাথ দে এবং ডাঃ দিলীপ মহলানবিশ। কিন্তু শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে ক'জন এঁদের কথা জানে? কথায় বলে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।
একটা জিনিষ তোমরা মনে রেখ। যদি কোন কারণে পেট খারাপ হয়, ঘন ঘন টয়লেটে যেতে হয়,প্রতিবার টয়লেট থেকে ফিরে নুন চিনি মেশানো জল খাওয়া অবশ্যই দরকার। নুন বা চিনি খাওয়ার ব্যাপারে যাঁদের বিধি নিষধ আছে তাঁদের উচিত এ ব্যাপারে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নেওয়া তাঁরা ঐ পরিস্থিতিতে কি করবেন। মোট কথা শরীরে জলের অভাব কিছুতেই হতে দেওয়া চলবে না।
ডঃ মাধব চট্টোপাধ্যায়
সেন্টার ফর সেল্যুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি
হায়দ্রাবাদ, অন্ধ্র প্রদেশ
ছবিঃ
বিভিন্ন ওয়েবসাইট