আফ্রিকার লোককথা :
চ্যাড দেশের গপ্প:
গভীর জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে ব্যাধ আরাম্পই একদিন কুড়িয়ে পায় কোনো এক অতিকায় প্রাণীর ধূসর রঙের চামড়া!কুটিরে ফিরে সে চামড়াটিকে লুকিয়ে রাখে গোপন কোথাও ।
এই ঘটনার প্রায় বেশ কিছুদিন পর চ্যাড জলাশয়ের তীরে যুবক ব্যাধের সঙ্গে আলাপ হয় সুন্দরী স্বাস্হ্যবতী বহ্লালের । বহ্লাল তাকে করুনকন্ঠে জানায়, নাইতে নেমে তার প্রিয় পোশাকটি প্রবল জোয়ারে ভেসে গেছে । বহ্লালের অসহায় অবস্থা দেখে আরাম্পইয়ের মনে দয়ার সঞ্চার হয় । সে তখনই মেয়েটিকে প্রয়োজনীয় পোশাক বানিয়ে দেয় । এমনকি বিয়ে করে নিজের কুটিরেও আশ্রয় দান করে ।দেখতে দেখতে বছর কয়েকের মধ্যে তাদের ছ’সাতটি বিশাল আকৃতির শক্তিমান পুত্রসন্তান জন্মায় । সুখে শান্তিতে বেশ ভালই দিন কাটছিল সকলের । কিন্তু হঠাতই একদিন সব কেমন যেন ওলোট পালোট হয়ে গেলো!
আরাম্পই সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে শিকারে বের হলে প্রতিদিনের মত এইদিনও ঘরের কাজে মন দিয়েছিল বহ্লাল । ধানের গোলা ঝাঁট দিতে গিয়ে হঠাতই সে আবিষ্কার করে ফেলে আরাম্পইয়ের লুকিয়ে রাখা সেই ধূসর রঙের চামড়াটা!বিস্ময় আনন্দে কেঁপে ওঠে বহ্লাল!এই তো তার হারিয়ে যাওয়া পোশাক!তার ধারণা হয় নিশ্চয়ই স্বামী আরাম্পই পোশাকটি চুরি করে লুকিয়ে রেখে দিনের পর দিন তার সাথে মিথ্যাচার করেছে! রাগে দুঃখে অভিমানে পোশাকটি গায়ে জড়িয়ে বহ্লাল আবার বনে ফিরে যায় ।পরবর্তীকালে আরাম্পই বহ্লালের ভুল ভাঙিয়ে তাকে সংসারে ফিরে আসতে বারবার অনুরোধ জানালেও সে আর ফেরেনি । কারণ ততদিনে আবার বন্য জীবনের স্বাদ ফিরে পেয়েছে সে । অতএব শূণ্য হাতে ঘরে ফেরে আরাম্পই ।
বাবার তত্ত্বাবধানেই ধীরে ধীরে বহ্লালের সন্তানরা বড় হতে থাকে । তাদের চেহারা হুবহু হাতির মত না হলেও হাঁটা চলা খাদ্যাভ্যাস মা হাতি বহ্লালের মতই ।
শোনা যায় বড় হয়ে আরাম্পই-বহ্লালের সন্তানরা মহা বলশালী যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিল । যে কোনো কঠিন বিপদে দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াত এরা। এমনকি অত্যাচারী রাজাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতেও পিছপা হতো না । মানুষ পশু নির্বিশেষে হাতিকে সবাই ভয় পেলেও বহ্লাল-সন্তানদের সঙ্গে হাতিগোষ্ঠির সম্পর্ক ছিলো বেশ মধুর । প্রচলিত আছে বহ্লাল-সন্তানদের মৃত্যুর পর তাদের উত্তরসূরীরা হাতিকেই বাহন হিসেবে চিহ্নিত করে । যেহেতু বর্তমান হস্তিকুলের পূর্বসূরী রূপে মানবপিতা আরাম্পই-র নাম প্রাচীন লোককাহিনিতে উল্লেখ করা হয়,অতএব সহজ সমীকরণে বলা যেতেই পারে যে মানুষের মত হাতির বিচক্ষণ বুদ্ধিবৃত্তি সম্ভবত আদিপিতা আরাম্পই-এরই অবদান!