খেলাঘরখেলাঘর

 

বোকা উগং

বৃদ্ধের আর্জি নাকচ করে কেউ তাকে কষ্ট দিতে চায় না।অতএব ছেনি হাতুড়ি কোদাল হাতে শুরু হলো অক্লান্ত পরিশ্রম।পাহাড় কাটা তো আর মুখের কথা নয়।মাসের পর মাস,বছরের পর বছর অবিশ্রান্ত পাথর ছেনেও মেদ ঝরানো গেলো না তায়হাং-ওয়ান্গুর।তবু হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেবার বান্দা কেউ নয়।
কান্ড দেখতে জনতার ভিড়ে হাজির ছিলেন প্রাজ্ঞ ঝিসউ।বোকা উগং ও তার বংশধরদের মূর্খামি দেখে তিনি তো হেসেই অস্হির।হায় হায় পাহাড় গুঁড়ো করার মত নির্বোধ ইচ্ছের কথা কে কবে শুনেছে!শেষে আর থাকতে না পেরে ঝিসউ ছুটে গেলেন উগংকে বোঝাতে।এমন নিষ্ফল খাটুনি বন্ধ করতে অনুনয় করলেন।
বুড়ো কোনো উপদেশ কানে তুলতেই নারাজ।তার সেই এক গোঁ;  ‘‘জানি, সময় ফুরিয়ে এসেছে।যে কোনোদিন যমের ডাকে সাড়া দিতে হবে আমায়।চলে যেতে হবে জীবনের পরপারে।তা বলে ভেবো না পাহাড় কাটার কাজ থেমে যাবে।আমার পুত্র পৌত্র প্রপৌত্র বংশপরম্পরায় মেটাবে আমার অতৃপ্ত অভিলাষ।ক্ষতবিক্ষত করবে দানব তায়হাং-ওয়ান্গুর উদ্ধত শরীর।দেখবো ওদের বৃদ্ধি
থামে কিনা!’’

উগংয়ের এহেন সংকল্পে কেঁপে ওঠেন স্বয়ং নগদেব।কী ঝামেলায় পড়া গেলো রে বাবা!আজ হোক কিংবা কাল,মনে হচ্ছে ছেলেপুলের দল পাহাড় গুঁড়ো করেই ছাড়বে!কথায় বলে,বিপদে পড়লে মানুষ শরণাপন্ন হয় ঈশ্বরের।তবে ঈশ্বরের বিপদে গতি কি?কার কাছে বুদ্ধি চাইবেন তাঁরা?নগদেব ধর্না দিলেন দেবতাকুলের হেড অর্থাৎ পরমেশ্বরের দরবারে।পরিস্হিতি সম্পূর্ণ বিচারবিবেচনা করে এবার তাঁকেও ঢোঁক গিলতে হলো।উগংয়ের অদম্য মানসিক দৃঢ়তার কাছে হার স্বীকারের জন্য মনে মনে তৈরী হলেন বিধাতা।শক্তির দেবতা কাওশির দুই বলবান পুত্রকে নির্দেশ দিলেন; বোকা মানুষটার দৃষ্টিপথ থেকে সরিয়ে পাহাড় দুটির একটিকে সুজু অঞ্চলের পূর্বে,অন্যটিকে ইয়াংজু অঞ্চলের দক্ষিণে প্রতিস্হাপন করতে।উগংয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হল।আর এক সরল বৃদ্ধের অসম্ভবকে সম্ভব করার উদ্ভট জেদের গপ্পটা চিরকালের তরে ঠাঁই পেয়ে গেলো পুরাণের ধূসর পাতায়।

 

 

শর্মিষ্ঠা খাঁ
দক্ষিণ কোরিয়া