খেলাঘরখেলাঘর

 শীতের আলবাম

শীতের ঘন কুয়াশার মধ্যে আমাদের বাস যখন ভসরা ঘাটে থামলো তখন বুঝতে পারিনি সামনে কিছুটা হাঁটলেই সুবর্ণরেখা নদী।

ভসরা ঘাট

খেয়া পারাপারের জন্য অনেক যাত্রী সেখানে উপস্থিত। আমিও উঠে পড়লাম।

নৌকা

তুমি হয়তো এখোনো মনে মনে ভাবছো আমি চলেছি কোথায়। সত্যি বিশ্বাস করো চাঁদের বুড়ি যখন আমাকে শীতের লেখা লিখতে বললো তখন আমি ভাবছি কোথায় যাবো !
এমন একটা জায়গায় আমাকে যেতে হবে যেখানে এই নবান্নে সবাই আনন্দে মেতে আছে। সিরাজুলকে ফোন করলাম কিন্তু সিরাজুলের সামনেই পরীক্ষা। আর এই শীতে সুন্দরবন থেকে সিরাজুলের আসাটাও বেশ কষ্টকর। তাই হঠাতই একদিন নিজেই বেড়িয়ে পড়লাম আমার দিদির বাড়ি নয়া গ্রামে।আচ্ছা দাঁড়াও নৌকা থেকে নেমে এখোনো হাঁটা পথে অনেকটা পেরোতে হবে সুবর্ণরেখা নদী।

সুবর্ন রেখা

দিদি যখন আমাকে চিঠি লিখলো তখনো মনে মনে ভাবতে পারিনি এমন এক সুন্দর গ্রামে আমি আসছি। নতুন ফসল ঘরে তোলার যে আনন্দ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তা বাড়ির সামনের আলপনা দেখে বোঝা যায়।

আলপনা

কেউ করেছেন লক্ষ্মী পুজো আবার কোনো আদিবাসী পরিবারের কোনো মহিলা সারাদিনের কাজের ফাঁকে এঁকেছেন ময়ূর।

ময়ুর

ফসল ঘরে তোলা বললেই তো আর ঘরে তোলা নয় তার সাথে জড়িয়ে আছে আরো অনেক কিছু। বাড়ির সবাই তাই কাজে ব্যস্ত। এমনকি ক্লাস নাইনের অমর আর সেভেনের অমৃতা বাবা মাকে সাহায্য করছে ধান ঝাড়ার কাজে।

অমর-অমৃতা

কেউ কেউ এই শীতে আগুন পোহাতে বসেছেন। জড়ো হয়ে বসে সবাই মিলে আগুন পোহাচ্ছেন।

আগুন পোহানো

তুমি যদি এই গ্রামে কোনো দিন আসো তাহলে দেখবে এখানে হাতি চারিদিকে কেমন যেন ঘুর ঘুর করছে। এরা কিন্তু কেউ পোষা হাতি নয়। সবাই জঙ্গলের।

হাতি

হাতি গ্রামের মানুষের ফসলের অনেক ক্ষতি করে। তাই অনেকেই এবার ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। যারা পেরেছে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। যারা পারেনি তারা বছরের প্রথম থেকেই কষ্টে চালাবে। জঙ্গলের কাঠের ওপর তাদের ভরসা। কিন্তু সেটা বিক্রি করেও বা তাদের আর কত টাকা উপার্জন হবে...

কাঠ কাটা

তাই অনেকে বাবুই ঘাস দিয়ে ঝুড়ি, অন্যান্য কাজের জিনিষ এবং শৌখিন জিনিষ তৈরী করতে শিখেছেন। সেগুলো বাজারে বিক্রি করবেন।

বাবুই ঘাস


ফিরে আসছি, আমার খুড়িমা ডেকে বললেন পিঠা পুলির সময় এসেছো আর কিছু খেয়ে যাবে না তাও কি হয়?তিনি পাটিসাপটা ভাজতে বসলেন।

খুড়িমা
 
পাটিসাপ্টা

তুমি পাটিসাপটা দেখে লোভ দাও আর আমি সেই ফাঁকে বাড়ির পাশের ঝিলে শীতের পাখি দেখে আসি কেমন...

পাখি

 

 

কল্লোল

চলচ্চিত্রবিদ্যা বিষয়ে অধ্যাপনা, তথ্যচিত্র নির্মাণ, ফিল্ম ও টেলিভিশন ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যরচনা, এবং ফাঁকে ফাঁকে পেলে নিজের ব্লগে নানা স্বাদের লেখালিখি - বিবিধ ধারার ব্যস্ততার মধ্যে চাঁদের বুড়ির সাথে ইচ্ছামতীর প্রথম পায়ে হাঁটার দিনগুলিতে হাত ধরেছিলেন কল্লোল । এখনো সময় পেলে মাঝেমধ্যেই ইচ্ছামতীর জন্য কলম ধরেন হুগলী, উত্তরপাড়া নিবাসী কল্লোল।