দেবারুণ দেব, চতুর্থ শ্রেণী, এপিজে স্কুল, কলকাতা
মধুরিমা গোস্বামী, সপ্তম শ্রেণী, দ্য ভবানীপুর গুজরাতি এডুকেশন সোসাইটি স্কুল, কলকাতা
নীলাগ্নি দাস, দ্বিতীয় শ্রেণী, আর্মি পাব্লিক স্কুল, গুয়াহাটি
ঊর্মি ব্যানার্জি, নবম শ্রেণী, দ্য নিউ হরাইজন পাব্লিক স্কুল, নভি মুম্বই
আবার তো জাঁকিয়ে পড়লো শীত । কেমন মজা করছো ইচ্ছামতীর ছোট্ট বন্ধুরা ? ছোটবেলায় শীতই ছিল আমার ফেভারিট ঋতু । নভেম্বর আসতেই হাড় কাঁপানো উত্তুরে হাওয়া, ছুটির দিনে দুপুরবেলায় জম্পেশ ভুরিভোজের পর জানলার ধারে একচিলতে রোদ্দুরে পা ছড়িয়ে দিয়ে সুর্যিমামার গরম ওম নেওয়া এর মজাই আলাদা! রবিবার আমাদের হাউসিং কমপ্লেক্স-এর চত্বরে সকাল থেকেই আসে একে একে ফেরিওয়ালা ।শীতের রবিবার তার সঙ্গে যোগ দেয় জয়নগরের মোয়া, নলেনগুড়ের পাটালি - ও:, ভাবতেই জিভে জল! আর শুরু হত ক্রিকেটের মরশুম । তখনো এমন বারোমেসে ক্রিকেটের রমরমা হয়নি কিনা! তাই শীতে টিভিতে ক্রিকেট দেখা আর গলিতে ইঁটের উইকেট পেতে রবারের বল পেটানো ছিল শীতের স্পেশালিটি! আর ব্যাডমিন্টন তো ছিলই ।বড় দাদারা আবার নেট, লাইট লাগিয়ে হিম পড়া রাত্তিরে খেলত ।যতদূর মনে পড়ছে- ক্লাস থ্রী কি ফোর অবধি আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা হত ডিসেম্বরে।জানুয়ারি থেকে নতুন ক্লাস । তাই বড়দিনের ছুটির আট-দশদিন ছিল আমাদের কাছে বছরের সেরা ছুটি ।গরমের বা পুজোর ছুটি লম্বা হলে কি হবে, হোমটাস্ক, পড়া, স্কুল খুললেই পরীক্ষা ইত্যাদি নানান ভীতি ! আর বড়দিনের ছুটি মানে নিখাদ মজা ।
অ্যানুয়াল পরীক্ষা শেষ হলেই কু-ঝিকঝিক রেলের গাড়ি চেপে (সত্যিকারের কয়লার স্টীম ইঞ্জিন!) গ্রামের বাড়ি যাওয়া । আর গ্রামেগঞ্জের শীত মানে জানো তো - কলকাতার দুদিনের সৌখীন শীত তার কাছে নস্যি । সুর্যিমামা ডুব দেওয়ার সাথে সাথেই যেন কালো চাদর মুড়ি দিয়ে চুপিচুপি নেমে আসতো শীতবুড়ি । সন্ধে হতেই মা, কাকিমা, ঠাকুমা, খুড়তুতো - জ্যাঠতুতো ভাইবোনেদের নিয়ে রান্নাঘর হাউসফুল ।গরম গরম চা, মাটির উনুনে কয়লার আঁচে সেঁকা ফুলকো রুটি কিংবা খাঁটি সর্ষের তেল মাখা বাটিভর্তি ঘরে ভাজা মুড়ির সাথে চলতো জমাটি গপ্পো । তোমরা কি কেউ কয়লার বা কাঠের আঁচের উনুন দেখেছ ? হযতো সত্যিই কিছুদিন পর মিউজিয়ামে গিয়ে দেখা মিলবে এ সবের ।অথচ মাত্র দশ-বিশ বছর আগের কথা! যাইহোক, সেই উনুনের কাছাকাছি বসে আগুন পোহানোর মজা কম ছিল না । গ্রামেগঞ্জে লোডশেডিং-এর কোনো সমস্যা ছিল না তখন - কারণ বিজলিবাতিই আসে নি সেখানে । কেরোসিনের লম্ফ আর হ্যারিকেনের আলোয় চলতো সান্ধ্য আড্ডা ।আর দেয়ালে নিজেদেরই লম্বা লম্বা ছায়া দেখে ভয়ে ছোটোরা কেউ অন্ধকারে উঠে একা বাইরে যেতে চাইতাম না ।
নলেন গুড়ের সন্দেশ নিশ্চয় খেয়েছ তোমরা ? কিন্তু খেজুর গাছের রস জমানোর জন্য যে হাঁড়ি বাঁধা হয়, তা থেকে রস চুরি করে খাওয়ার মজা তো পাও নি! এক বিচ্ছু খুড়তুতো ভাই-এর সঙ্গে সন্ধে নাগাদ গিয়ে সেই অ্যাডভেঞ্চারও করেছি একবার । ধরা পড়লে অবশ্য মজাটা আর কেউ পেত! তবে সারা রাত রস জমার পর সকালে যখন জ্বাল দিয়ে গুড় বানানোর জন্য হাঁড়ি নামানো হয়, গেলাস ভর্তি সেই টাটকা রসে পাটকাঠির স্ট্র ডুবিয়ে খাওযার আনন্দ কোল্ড ড্রিংকে পাবে না ।
ছোটবেলার আর একটা মজার স্মৃতি মনে আছে এই শীতকালের ।গ্রামের বাড়িতে চড়ুইভাতি । বাড়ির সকলে মিলে হৈ হৈ করে আমাদের আমবাগানে যাওয়া হয়েছিল বনভোজন করতে । মাটি কেটে উনুন তৈরি হল ।ঘর থেকে সবাই চাল, ডাল, মশলাপাতি,আলু এসব নিয়ে যাওয়া হল । আমবাগানের পাশেই আমাদের বেগুনের ক্ষেত থেকে পটাপট বেগুন তোলা হল - বেগুনি ভাজা খাওয়ার জন্য । সারা দুপুর চলল খুব হৈ হল্লা । ঘরে ফেরার পথে কেমন যেন বেশি করে শীত শীত করতে লাগল । তারপর এল কাঁপুনি দিয়ে জ্বর - আর সাথে সাথে মোটা মোটা লেপের তলায় চাপা পড়লাম! এর পর বিচ্ছিরি সব ওষুধ আর ইঞ্জেকসনের ছূঁচ - স্মৃতি তেমন আর মধুর নয় !!
নতুন জ্যাম-জেলির কৌটো কখনও খুলবার চেষ্টা করেছ ? পারবেই না খুলতে। কেননা এত শক্ত করে আঁটা থাকে ! সেই রান্নাঘরে গিয়ে মা-এর সাহায্যই নিতে হবে!দেখ মা কেমন করে খোলেন সেটা।
মা সসপ্যানে খানিকটা জল গরম করে কৌটোর ঢাকনার দিকটা জলের মধ্যে ডুবিয়ে ( অর্থাৎ কৌটোটা উল্টো করে) দিলেন। কিছুক্ষণ রাখার পর সেটা তুলে ধাতব ঢাকনায় সামান্য চাপ দিয়ে ঘোরাতেই সেটা খুলে গেল!
কি করে হল বল দেখি। খুলতেই চাইছিল না, একটু গরম করতেই কেমন চট করে খুলে গেল ম্যাজিকের মত। আসলে গরম পেয়ে কৌটোর ঢাকনাটা সামান্য একটু বড় হয়ে গিয়ে এই কান্ডটা ঘটালো। বড় হয়ে গেলে কাচের কৌটোর গায়ে চেপে বসা ঢাকনাটা ত আলগা হবেই, তাহলে আর খুলতে অসুবিধেটা কোথায়! কিন্তু একটা কথা রয়েছে, ধাতব ঢাকনার সাথে সাথে কৌটোর কাচটাও ত বড় হবে, তাহলে আর ঢাকনাটা আলগা হবে কি করে, তাই না! কিন্তু তাহলেও ঢাকনাটা একটু বেশী বাড়বে, দুটো কারণে। এক, গরম জলের সংষ্পর্শে থাকায় ধাতব ঢাকনাটা বেশী গরম হবে, আর দুই,কাচের তুলনায় ধাতু বেশী বেড়ে যায়।
বেড়ে যাওয়ার মানেটা বুঝলে ? সেটা বলি শোন। আমরা আমাদের চারপাশে যত জিনিষ দেখি, সবগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়। এই তিনটি ভাগের নাম হল, কঠিন, তরল আর গ্যাসীয় পদার্থ। এদের নানা ধর্ম আছে, তার মধ্যে একটি হল, গরম হলে এরা প্রত্যেকেই আকারে বেড়ে যায়। এই বেড়ে যাওয়া বা প্রসারিত হওয়াকে বলে 'পদার্থের প্রসারন'। জ্যামের কৌটোটা কাচের আর ঢাকনাটা ধাতুর তৈরী, সুতরাং কঠিন পদার্থ। তাই এদের প্রসারনকে বলে 'কঠিন পদার্থের প্রসারন'।
এমন প্রসারনের আর একটা উদাহরন দিচ্ছি। কলকাতা শহরে ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানীর বিদ্যুতবাহী তার মাটির তলা দিয়ে গেলেও অন্যত্র রাস্তার পাশে খুঁটির পর খুঁটি পুঁতে তার টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। দিনের বেলায় দু'টি খুঁটির মধ্যেকার তার মোটামুটি টানটান থাকলেও সন্ধ্যার পর সেই তার একটু ঝুলে যায়। লক্ষ্য করেছ কখনও ? না করে থাকলে এবার করবে। বলতে পারবে তার কেন ঝুলে যায় ?
দিনের তুলনায় রাতে বেশী বিদ্যুৎ চলাচল করে, ফলে তার বেশী গরম হয়ে প্রসারিত হয়ে ঝুলে যায়! কোন পরিবাহিতে ( এখানে ধাতব তার ) বিদ্যুত প্রবাহিত হলে সেটা গরম হয়ে যায় কিনা!
গরম হলে যেমন পদার্থ প্রসারিত হয়, ঠান্ডা হলে তেমনই সংকুচিত হয় বা ছোট হয়ে যায়। জ্যামের কৌটো গরম জলে না ডুবিয়ে ঠান্ডা জলে ডোবালে ঢাকনাটা আরও চেপে বসে যেত। খোলাই যেত না।
এ'ত গেল কঠিন পদার্থের প্রসারনের কথা। এবার তরলের প্রসারনের কথা।
সংকোচন দিয়ে শুরু করি। সরু মুখের কাচের একটা বোতল পুরো জলভর্তি কর (একেবারে বোতলের মুখ পর্যন্ত টায় টায়)। টোম্যাটো সসের বোতল হলেও চলবে। ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে একটা বাটিতে রাখ আর বরফের মধ্যে জলভর্তি বোতলটা বসিয়ে দাও। কিছুক্ষণ পর দেখ। কি দেখবে বল দেখি ? জলের লেভেল কিছুটা নেমে এসেছে। কারণ হল বোতলের জল ঠান্ডা বরফের সান্নিধ্যে এসে সংকুচিত হয়ে গেছে। তাই লেভেল নেমে গেছে।
এবার বোতলটা বরফ থেকে বের করে টেবিলের ওপর রাখ। টেবিল বরফের চেয়ে গরম, সুতরাং জল এবার গরম হতে থাকবে। একটু পরে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবে বোতলে জলের লেভেল আবার উঠে গিয়ে আগের অবস্থায় চলে এসেছে। এর মানে কি হল ? এর মানে হল জল গরম হওয়ার কারণে প্রসারিত হল।
বোতলটা যদি গরমজলে বসিয়ে দাও তাহলে দেখতে পাবে যে বোতলের জল উপচে পড়ে যাচ্ছে, কারণটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ! জল তাপ পেয়ে আয়তনে বাড়ছে। জল না হয়ে অন্য কোন তরল হলেও একই ফল হত। এই প্রসারনকে বলে 'তরলের প্রসারন'।
এ রকম আর একটা উদাহরণ দিই। জ্বর হলে আমরা থারমোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দেখি,তা থেকে বুঝতে পারি শরীর কতটা উত্তপ্ত । থারমোমিটারের কুন্ডতে যে রুপোলী পদার্থ থাকে সেটা হল তরল ধাতু 'পারদ'। কুন্ডটা শরীরের সংস্পর্শে আনলে তরল পারদ শরীরের উত্তাপ অনুযায়ী প্রসারিত হয়,আর থারমোমিটার -এ সেটা দেখে আমরা বুঝতে পারি কতটা জ্বর হল।
বাড়িতে থারমোমিটার আছে ত ? তার কুন্ড বা বাল্ব্টা হাতের মুঠোয় ধর, দেখ কেমন করে পারদ উঠে যাচ্ছে তরতর করে। এখানেও একটা কথা আছে, পারদের সাথ সাথে কাচও বাড়বে তবে পারদের বৃদ্ধিটা এতই বেশী যে কাচেরটা বোঝাই যায় না! তরলের বৃদ্ধির হার কঠিনের চেয়ে বেশী।
এবার গ্যাসের প্রসারনটা কি দেখা যাক। একটা বেলুন টান টান করে, মানে বেশী করে হাওয়া ভরে ফুলিয়ে মুখটা ভাল করে বাঁধ যাতে হাওয়া বেরিয়ে না যায়। এবারে সেটাকে রোদে ফেলে রাখ। একটু পরে দেখবে অবাক কান্ড! ফটাস করে বেলুনটা ফেটে যাবে! কেন, সেটা বুঝলে কিছু ?
আসলে বেলুনটা রোদে ফেলে রাখলে বেলুনের ভেতরের বাতাস গরম হয়ে আয়তনে বাড়তে থাকে, আর তাতে বেলুনও আরও ফুলতে থাকে। কিন্তু কতক্ষণ আর ফুলবে ? একসময় ত ফেটে যাবেই! কিনা বল !
যদি ফোলানো বেলুনটা রোদে না রেখে ফ্রিজের ভেতর রেখে দাও তাহলে কিছুক্ষণ পর কি দেখবে বলত!বেলুনটা রীতিমত চুপসে ছোট হয়ে গেছে! কারণটা কি ? কি আবার! ঠান্ডায় বেলুনের বাতাস আয়তনে কমে গেছে আর তাতেই বেলুন ছোট হয়ে গেছে!
তাহলে দেখতে পেলে, কঠিন আর তরলের মত বাতাস বা অন্য গ্যাসও তাপ পেলে আয়তনে বাড়ে ঠান্ডা হলে আয়তনে কমে। এর নাম 'গ্যাসের প্রসারন'। গ্যাসের প্রসারনের হার তরলের চেয়ে বেশী।
নানাভাবে পদার্থের এই সব প্রসারন আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে। এ বিষয়ে বড় হয়ে আরও অনেককিছু জানতে পারবে।
সন্তোষ কুমার রায়
কোদালিয়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
ছবিঃ ইন্টারনেট
(আগের সংখ্যার পর)
স্বাধীনতার পরে পরে, আরো একটা মস্ত ঘটনা ঘটে বানিজ্যিক ছবির, মানে যে ছবি আমরা হই হই করে দেখতে যাই, সেই দুনিয়ায়। আর তা হল যাঁদের তারকা বা স্টার বলা হয় , এমন একজন বা দুজনের আবির্ভাব। এইখানে, আমাদের একটু ভাবতে হবে, উত্তমকুমার কি করে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন, এবং জীবনের শেষদিকে প্রায় নিজেই টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ার জলছবি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া চৌধুরী, মাধবী মুখোপাধ্যায় ও আরো পরের নায়িকাদের সঙ্গে তাঁর করা ছবি এখনও ঘরে ঘরে আলোচিত হয়। লোকের মুখে মুখে ফেরে এমন ছবির নাম হল 'হারানো সুর', 'সপ্তপদী', ' সাড়ে চুয়াত্তর', 'সাত পাকে বাঁধা'- এইসব।
উত্তমকুমার
উত্তমকুমার কেন এত বড় নক্ষত্র বা স্টার হয়ে উঠতে পারলেন? নিশ্চয়ই বড় অভিনেতা বলে, কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়। ছবি বিশ্বাস বা তুলসী চক্রবর্তীও তো খুব বড় অভিনেতা, কিন্তু তাঁরা তো আর 'স্টার' নন। উত্তমকুমার খুব আটপৌরে বাঙালির মত দেখতে ছিলেন। নায়কেরা যেরকম অসাধারণ সুন্দর হয় সেরকম কিছু নয়। আর সেখানেই তাঁর জোর। তাঁকে দেখলেই আমাদের পাশের বাড়ির ছেলে, দাদা অথবা খুব মাইডিয়ার কাকু মনে হয়। মনে হয়, জীবনের যে কোন ঝড়জলেই তিনি হটাত করে এসে আমাদের সমস্যার একটা সমাধান করে দেবেন, সে আমি ছবির নায়িকাই হই, অথবা ছোট কোন চরিত্রই হই। স্বাধীনতার পরে যখন বাঙালি জীবনে নানারকম বিচিত্র ও জটিল সমস্যা দেখা দিল, তখন উত্তমকুমারকে আমাদের প্রয়োজন ছিল। কারণ, তাঁর মুখ দেখলে মধ্যবিত্ত সমাজের হাজার হাজার মানুষের মনে হত, রাস্তায় যতই রোদ্দুর থাক, শরীরে যতই ঘাম ঝরুক, শেষ পর্যন্ত মুখে অমলিন হাসি নিয়ে উত্তমকুমার তো আছেনই। তাঁর অভিনীত গল্পে এই নিরাপদ আশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি ছিল। পন্ডিতেরা একে ক্যারিশ্মা (charisma) বলেন। আসলে পঞ্চাশের দশকে দেশ দুই টুকরো হয়ে যাওয়ায়, গ্রামীণ জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, তখনকার যুবক যুবতীদের জন্য যে ধরনের রূপকথার প্রয়োজন ছিল, উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন, রাজপুত্তুর ও রাজকন্যা হয়ে সেই প্রয়োজনের উত্তর দিতে পারতেন। এই জন্যই 'শাপমোচন' ছবিতে যখন গ্রামের ছেলে উত্তমকুমার শহরে এসে হেমন্ত মুখার্জীর গলায় গান গেয়ে একেবারে মাত করে দিলেন, তাঁর সেই জয়টাকে সেযুগের বাঙালী ছেলেমেয়েরা নিজেদের জয় বলে ভাবতে পেরেছিল। সুচিত্রা সেন ও প্রথম উত্তমকুমারের সাথে মিলে এখনকার বন্ধুত্ব ও মধুর সম্পর্কের বিষয়ে একটা ধারণা আমাদের দিয়েছিলেন।
সুচিত্রা সেন
আর কি ছিল যেই সোনার যুগ! উত্তমকুমারের গলায় গান গাইতেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র ও মান্না দে। মেয়েদের গলায় ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, লতা মঙ্গেশকর, পরের দিকে আরতি মুখোপাধ্যায়। হাসাতেন তুলসী চক্রবর্তী তো বটেই, আর ভানু আর জহর তো এখন কিংবদন্তী হয়ে গেছেন। আর ছোটখাট চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করতেন, তাঁরাও সত্যি বড় অভিনেতা। এমনকি নামজাদা নায়ক ছাড়াও একটা ছবি সফল হয়ে যেত, যেমন 'পলাতক' - অনুপকুমার যার নায়ক, অথবা 'গল্প হলেও সত্যি' - দেখতে বেশ খারাপ রবি ঘোষ যার প্রধান চরিত্র। শুধুমাত্র হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অথবা মান্না দে'র গলার গুণে একেকটা ছবি সুপারহিট হয়ে গেছে, যেমন 'মনিহার', 'শেষ পর্যন্ত', 'অ্যাণ্টনি ফিরিঙ্গি' । সেই সময়ে টেলিভিশন ছিল না, পরিবারগুলিও এত ছোট ছোট ছিল না। সেইযুগে সিনেমা দেখতে যাওয়া ছিল একটা মুক্তি- যেমন ধর পরীক্ষার পরে সিনেমা দেখতে যাওয়া হত। তখন সিনেমা দেখা ছিল একটা উতসব, যেমন বাড়িতে নতুন জামাই এলে । এই যে সবাই মিলে হলে যাওয়া, ছবির শেষে কড়াইশুঁটির কচুরি আর নলেনগুড়ের সন্দেশ খেয়ে বাড়ি ফেরা, সেজদা সেলুনে উত্তমকুমারের মত ইউ ছাঁট চুল ছেঁটে বাড়িতে ফিরে জ্যাঠামশাইয়ের কাছে কানমলা খাচ্ছে, অথবা ছোড়দি চুপিচুপি ছাদের কোণে প্র্যাকটিস করে নিচ্ছে -"মালতী মধুপে হল মিতালী..." সিনেমা ছিল এরকমই। মধ্যবিত্ত জীবনের জানালা দিয়ে দেখা এক টুকরো আকাশ...
হায়! সেই মায়াঝরা সন্ধ্যা!
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
অধ্যাপক
চলচ্চিত্রবিদ্যা বিভাগ
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
ছবিঃ উইকিপিডিয়া
সারা পৃথিবীতে ২০১১ এর এগারোই নভেম্বর দিনটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন অনেক মানুষ – কারনটা সহজ,এমন তারিখ তো আর বারবার আসে না, প্রত্যেকেই তার জীবনের কিছু স্মরনীয় মুহুর্ত পালন করতে চাইছিলেন এই দিনটাতে । মজার ব্যাপারটা হচ্ছে দুনিয়ার কচি কাঁচারাও এই দিনটার দিকে তাকিয়ে ছিল বিশেষ কারনে – টিনটিন আসছে যে বড় পর্দায়, তাও আবার ত্রিমাত্রিক ছবিতে অর্থাৎ টিনটিন কেবল সিনেমার পর্দায় ঘুরে বেড়াবে না, তাকে চলতে ফিরতে দেখা যাবে একেবারে সামনে থেকে – যেন জলজ্যান্ত টিনটিন গপ্পের বই থেকে এসে গেছে নাকের ডগায়। আবার টিনটিন যে শুধু খুদে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় এমন তো নয়, আজকের দিনে বৃদ্ধরাও তাঁদের শৈশবে টিনটিনকে নিয়ে মাতামাতি করেছেন। তার ওপরে এই সিনেমা তৈরী করেছেন স্টিভেন স্পিলবার্গের মত বিশ্বপ্রসিদ্ধ পরিচালক। কাজেই তিনি যখন টিনটিনের মত ঐতিহাসিক কার্টুন চরিত্র নিয়ে সিনেমা করছেন আর সে সিনেমা যখন মোশন ক্যাপচার টেকনোলজি দিয়ে তৈরী (অর্থাৎ অভিনেতাদের দিয়ে ছবির শুটিং করে তা ডিজিটাল মডেলের মধ্যে রূপান্তরিত করা), তখন সে সিনেমার ওপর প্রত্যাশা যে আর পাঁচটা অ্যানিমেশন ফিল্মের চেয়ে অনেক বেড়ে আকাশছোঁয়া হয়ে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ ছিল না।
গল্পটা একটু দেখা যাক। টিনটিন একদিন বাজারে ঘুরতে ঘুরতে কিনে ফেলে সপ্তদশ শতাব্দীর একটি জাহাজের মডেল, যার নাম ছিল ইউনিকর্ন। শাখারিন নামের এক ভদ্রলোক টিনটিনের কাছ থেকে জাহাজটি কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু টিনটিন রাজী না হওয়ার পর আকস্মিকভাবে সেটি চুরি যায়। এদিকে শহরে এক পকেটমারের উপদ্রবে সকলে অস্থির হয়ে উঠলে যমজ গোয়েন্দা জনসন আর রনসন তদন্তে নামে। এর মধ্যে টিনটিন বন্দী হয় কারাবুজান নামের একটি জাহাজে – যেখানে জাহাজের ক্যাপ্টেন আর্চিবল্ড হ্যাডককে নেশাগ্রস্ত করে রেখে শাখারিন ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা এক গভীর ষড়যন্ত্র করছেন। টিনটিনের আলাপ হয় ক্যাপ্টেন হ্যাডকের সাথে এবং সে পালায়। এরপর আস্তে আস্তে রহস্যের জাল একটু একটু করে পরিষ্কার হতে থাকে। ক্যাপ্টেন হ্যাডকের পূর্বপুরুষ স্যার ফ্রান্সিস হ্যাডক ইউনিকর্ন নামের একটি জাহাজে করে অতুল বৈভব নিয়ে সমুদ্রযাত্রা করার সময় রেড র্যাকহ্যাম নামের এক কুখ্যাত জলদস্যুর দ্বারা আক্রান্ত হন। জলদস্যুরা প্রতারনা করে জাহাজের সম্পদ দখল করার চেষ্টা করলে তিনি জাহাজে বিস্ফোরন ঘটিয়ে সেটিকে ডুবিয়ে দেন, তলোয়ারের লড়াইয়ে মেরে ফেলেন রেড র্যাকহ্যামকে। তিনি সেই অভাবনীয় সম্পদের কিছু অংশ সামলাতে পেরেছিলেন, এবং সেটাই গুপ্তধনের আকারে রেখে গেছেন আর সেই গুপ্তধনের সঙ্কেত লুকিয়ে রেখে গেছেন তিনটি ইউনিকর্ন জাহাজের মডেলের মাস্তুলে। অবশেষে টিনটিনের সাহস আর উপস্থিত বুদ্ধির কাছে হার মানে শাখারিন, আর ক্যাপ্টেন হ্যাডক পেয়ে যান তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গুপ্তধন।
গল্পটা ঠিক অক্ষরে অক্ষরে সিক্রেটস অফ ইউনিকর্ন বইয়ের মত নয় তবে অনেকেরই জানা – কারন তিনটি আলাদা গল্পের কিছু কিছু অংশ জুড়ে তৈরী হয়েছে সিনেমার গল্প। বই না পড়ে সিনেমা দেখলে ক্ষতি নেই, কিন্তু যারা কিনা টিনটিনের বইয়ের পোকা তারা তো মেলাতে যাবেই প্রতিটি চরিত্র, তাদের খুঁটিনাটি, তাদের মুখের বুলি, পোষাক সবকিছু - আর সেখানেই স্পিলবার্গের টিনটিন কোথাও যেন হার্জের টিনটিনের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। ক্যাপ্টেন হ্যাডক যেন সেই ক্যাপ্টেন হ্যাডক নন যিনি চেঁচিয়ে উঠবেন বস্তাপচা গেঁড়ি গুগলির ঝাঁক বলে। যে জনসন রনসনকে আমরা চিনি, সিনেমার পর্দায় তাঁরা একটু অন্যরকম। টিনটিন অনেকটা নিখুঁত হলেও, এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে টিনটিনের গল্পের মূল আকর্ষন কিন্তু কেবল সে নিজে নয় - অনেকটাই দাঁড় করিয়েছেন পার্শ্বচরিত্ররা। আর সেখানেই যেন একটু অতৃপ্তির স্বাদ থেকে গেল। তবে সিনেমাটি নিজের জায়গায় স্বতন্ত্র। আর সত্যজিত রায়ও গুপি বাঘার সিনেমা গল্প মেনে করেননি। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে তাকে বদলেছেন নিজের মত। কাজের কথা এইটাই যে স্পিলবার্গ আরো দুটি টিনটিনের সিনেমা নিয়ে চুক্তিবদ্ধ, বইয়ের পাতায় যে টিনটিনকে দেখেছি তাকে পর্দায় আরো বেশি করে পাওয়া যাবে এটা কে না চাইবে। তাই না?
অভ্র পাল
কলকাতা
ছবিঃ উইকিপিডিয়া
ওফ!পূজোয় কি আনন্দ! লেখাপড়ার বালাই নেই। টানা কত্তদিন ছুটি! তারপর আবার দুম করে স্কুল খুলে গেল। ব্যাস সব আনন্দের ইতি।আবার হাঁ করে সামনের বছরের দিকে চেয়ে বসে থাকে।
যাক গে! আসল গল্পে ফিরি, যদি মনটা একটু ভালো হয়।
১৭৭০ সালে কিন্তু বাংলার বুকে কোনো ভুমিকম্প হয় নি।বৃটিশ কোম্পানির তহশিলদাররা কোনোরকম বিচার না করেই কৃষকদের শেষ সম্বলটুকু খাজনার নামে কেড়ে নিতে লাগল। ইংরেজদের সাম্রাজ্য বিস্তারের অর্থ আর বিলেতে শিল্পের রসদ জোগাতে গিয়ে বাংলার কৃষক নিঃস্ব হল। বাংলার বুকে শস্যহানির জেরে দেখা দিল দুর্ভিক্ষ।বাংলার সন ১১৭৬ অনুসারে একে বলা হয় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। এই দুর্ভিক্ষে ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।ভাব তুমি, এই দুর্ভিক্ষ যে কোনো ভূমিকম্পের থেকেও ভয়ানক ছিল। আর বৃটিশরা ছিল পাথরের থেকেও হৃদয়হীন। যখন ১ কোটি মানুষ তাদের শোষণের জেরে প্রাণ হারাল, তখন বাংলার গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস তাদের কোম্পানির মালিকের কাছে রিপোর্ট পাঠালেন যে, “দুর্ভিক্ষের ও মহামারীর জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হলেও রাজস্ব আদায়ে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি, বরং আগের চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।“
কিন্ত এই মন্বন্ত্রও বাংলার মানুষের মনোবল ভেঙ্গে যায় নি; ইংরেজ অপশাসণ ও শোষণের বিরূদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছিল তারা অনেক আগে থেকেই।। তবে মন্বন্তরের সময় থেকেই তা বিদ্রোহের চেহারা নেয়।ইংরেজ-রা এর নাম দেয় সন্ন্যাসী বা ফকির বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের প্রথম সারির নেতারা হলেন মজনু শাহ, দেবী চৌধুরানী, মতি গিরি, মুশা শাহ, পরাগল শাহ প্রমুখ।প্রধান নেতা মজনু শাহ তাঁর সংগঠন ক্ষমতা ও বীরত্বে ইংরেজের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ান। বিহার থেকে বাংলার পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত এই বিদ্রোহের আগুন সফল ভাবে ছড়িয়ে পড়ে, বিদ্রোহীদের প্রচারে ও সাংগঠনিক ক্ষমতার প্রভাবে।
মুসলমান ফকির ও হিন্দু সন্ন্যাসীরা আলাদা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হলেও বিদ্রোহ পরিচালিত হত সঙ্ঘবদ্ধ ভাবেই। মজনু শাহ এক চিঠিতে রাণী ভাবানী-র কাছে প্রতিকারের দাবীতে সাহায্য প্রার্থনা করে লিখেছিলেন যে ইংরেজরা বিনা কারণে ১৫অ জন ফকিরকে হত্যা করেছে। এমনকি ইংরেজরা তাদের ধর্মস্থানে যেতে বাধা দেয়।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার বিরূদ্ধেই জনবিদ্রোহ যা পরবর্তী শতাব্দীতে রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের আন্দোলনের জন্ম দেয়। ইতিহাস সাক্ষী, সব জায়গায় স্থানীয় গরীব জনসাধারণ সন্ন্যাসী ও ফকিরদের সাহায্য করেছে।১৭৬০-১৮০০ সাল পর্যন্ত এই বিদ্রোহের প্রসার।
পূর্ববংগ থেকে শুরু করে উত্তরবংগের রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর এমনকি নেপালের সীমান্তবর্তী তরাই পর্যন্ত বাংলা আর বিহারের বিস্তৃত ভূখন্ড জুড়ে সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহীরা গেরিলা কৌশল অবলম্বন করে ইংরেজদের বিরূদ্ধে লড়াই করেছে।কোথাও কোথাও দূর্গ নির্মাণ করে, অস্ত্রসস্ত্র সংগ্রহ করে মুখোমুখি সংঘর্ষে অবতীর্ন হয়েছিল তারা।ঢাকা ও গোয়ালন্দে বজরা, ছিপ ও নৌকাতে জলযুদ্ধের মহড়া নিয়েছে তারা। দিনাজপুরের বালুরঘাটে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে ইংরেজবাহিনী পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয়। রংপুরের যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি এডওয়ার্ড নিহত হন ও তাঁর বাহিনী পরাজিত হয়। গেরিলা যুদ্ধের সাহায্যে প্রথমে পিছিয়ে এলেও পরে দ্বিগুন শক্তিতে অতর্কিতে শত্রুর ওপর আক্রমণ চালিয়ে তারা বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে বহুবার। মজনু শাহের অনুগামীরা ঘাঁটি কলকাতার ইংরেজদের কুঠি অভিযানের প্রস্তাব দেন। মজনু শাহ অবশ্য তা চান নি।তিনি ইংরেজদের শক্তিক্ষয় ও বিব্রত করে চূড়ান্ত আক্রমনের পক্ষপাতি ছিলেন।
কলকাতা আক্রান্ত হতে পারে এই ভয়ে ইংরেজরা বিরাট প্রস্তুতি নেয়। যশো্রের কাছে মোগলহাট নামে এক জায়গায় বিদ্রোহীরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছে, তখনই অতর্কিতে ইংরেজ সেনাপতি লেফটেন্যান্ট ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে এক সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী শেষরাত্রে আক্রমণ চালায়। মোগলহাটের যুদ্ধেই বিদ্রোহীদের চরম পর্যুদস্ত করে ইংরেজরা। এতে তাদের মনোবল বেশ আহত হয়।দুই ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহী নেতা নুরুল মহম্মদ ও পীতাম্বর এই যুদ্ধে নিহত হন। এরপর মজনু শাহ ইংরেজদের সাথে পর পর কয়েকটি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাংলা ছেড়ে বিহারে আশ্রয় নেন।বিদ্রোহীদের সংগঠন অ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
পলাশীর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য চল্লিশ বছর ব্যাপী সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ সফল হয় নি বটে, কিন্তু এটাই ছিল ইংরেজদের বিরূদ্ধে গণ আন্দোলনের প্রথম সোপান। ইতিহাসের তাই এই সাহস নেই যে এই বিদ্রোহ কে শুধুমাত্র একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাবে।
আর্য চ্যাটার্জি
কলকাতা