খেলাঘরখেলাঘর

ডিটেকটিভ




সকালে কোনরকমে জলখাবারটা খেয়েই ছুট দিলাম আমাদের গোপন আস্তানায়। সেটা আর কোথাও নয়, আমাদের পাড়ারই একটা শেষ না হওয়া বাড়িতে। বাড়িটার ছাত ঢালাই হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। কে জানে আবার কবে শুরু হবে। তবে যতদিন না হয় ততদিনই মঙ্গল। আমাদের এই আস্তানাটা খুব একটা জানাজানি হয়নি। গিয়ে দেখি পিন্টু ইতিমধ্যেই এসে হাজির হয়েছে। শুধু তাই ই না, একটা ছোট্ট নোটবুক নিয়ে কিসব যেন লেখালিখি করছে।
‘কিরে তুই কখন এলি?’
‘বেশ কিছুক্ষন। গোয়েন্দাদের ধৈর্য না ধরলে কিছু না।’
‘আরে শোননা, আমার কাছে একটা দারুন খবর আছে। আমি একটা রহস্য খুঁজে পেয়েছি জানিস।’
‘হুমম, ধীরে সুস্থে গুছিয়ে বল।’
‘আমাদের বাড়ি থেকে চুরি হয়ে গেছে। এর আগে কখনো আমাদের বাড়িতে চোর আসেনি’
‘হড়বড় করিসনি। কি চুরি হয়েছে?’
‘একটা নতুন বেডকভার আর ছোটকাকার একজোড়া জুতো।’
‘হুমম, বুঝেছি-’
‘কি বুঝলি রে?’  
‘এটা পুরনো খবর’
‘পুরনো খবর মানে? বললেই হল?’ আমি একটু জেদ করে বললাম, ‘একশবার নতুন খবর। চুরিটা হয়েছে পরশু রাত্তিরে। মা আমাকে কালকে রাত্তিরে বলেছে।’
‘আরে তা বলি নি। তোদের বাড়িতে চুরি হয়েছ নতুন। কিন্তু পাড়ায় সব বাড়িতেই কিছু না কিছু চুরি হচ্ছে কয়েকদিন থেকে। বড় কিছু নয়, সবই ছোটখাট জিনিস। তাই কেউ পুলিশের কাছেও যেতে পারছে না।’
‘সে তুই কি করে জানলি?’
পিন্টু একটু মুচকি হাসি হেসে বলল, ‘সে অনেক কথা। গোয়েন্দা তো আর বললেই কেউ হয়ে যায় না। চারদিকে খোঁজ খবর রাখতে হয় কি হচ্ছে, কি না হচ্ছে। বুঝলি?’
আমি অবাক হলাম, ‘ও তাহলে এখন উপায়? তুই কি কিছু ভেবেছিস নাকি কি করবি?’
‘পাড়ার সবাই খুব সতর্ক হয়ে গেছে। ঠিক করছে রাতে কয়েকদিন পাহারাও দিতে পারে।’
‘সে তো বড়রা দেবে। আমাদের কি আর সেখানে নেবে?’
‘না, তা নেবে না। আমাদের নিজের মত করে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। দেখতে হবে কার ওপর সন্দেহটা বেশি হয়?’
‘ধুর, চোরকে কি আমরা চিনি নাকি যে সন্দেহ করব?’
পিন্টু এবার একটু বিরক্তই হল। ‘উফফ, তোকে যে আর কি কি শেখাব ভেবে পাচ্ছি না। মন দিয়ে শোন – গোয়েন্দাগিরির নিয়ম হচ্ছে সন্দেহ করতে হবে সকলকেই। কাউকে বাদ দিলে চলবে না। অনেক ছোটখাট ঘটনার মধ্যেই ক্লুটা লুকিয়ে থাকতে পারে।’
আমার ব্যাপারটা ঠিক মনে ধরল না। তাও পিন্টু রাগ করতে পারে ভেবে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।