খেলাঘরখেলাঘর

তুলির পৃথিবী


তুলি মাঝে মাঝে চিড়িয়াখানায় যায় বাবার কোনো একজন পিওনের হাত ধরে। বাড়ির পাশেই চিড়িয়াখানা, বাবার অফিসও বটে। আর পিওনরা তাকে খুব ভালবাসে। তাই মা ওদের সঙ্গে যেতে আপত্তি করেন না। আর এখন তো বাড়িতে অতিথি এলে তুলিই গাইড দার্জিলিং ঘোরার জন্য। চিড়িয়াখানায় দুটো লাল রঙের পান্ডা এসেছে। তুলির কি আনন্দ! সে তাদের নাম দিল হুয়া-বুয়া। কিছুদিন ধরে সে রোজ তাদের সঙ্গে দেখা করতে যায়। বারবার তাদের নাম ধরে ডাকে। এখন তো এমন অবস্থা, যেদিন তুলি না যায় সেদিন পান্ডাদুটো এমন লম্ফঝম্ফ জুড়ে দেয় যে বাধ্য হয়ে কেউ না কেউ তুলিকে ডেকে নিয়ে আসে। তাকে দেখলেই সব ঠান্ডা।

এভাবেই জীবজন্তুদের ছানাপোনাদের নিয়ে তুলির সংসারযাত্রা এগিয়ে চলে। এইসব বন্ধুদের নিয়ে সে বেশ আছে। এর মধ্যে সে ক’দিন খুব জ্বরে ভুগে উঠল। তার বন্ধুদেরও মন খুব খারাপ। আজ সকাল থেকে তার আর জ্বর আসেনি। শরীর দুর্বল হলেও ঘরে থাকতে ভালো লাগছিল না তার। সে ধীরে ধীরে তাদের বাগানের একটা বড় গাছের তলায় গিয়ে বসল। তাকে দেখে মা কাঠবিড়ালিটা তার দুই ছানাকে নিয়ে সড়াৎ করে নেমে এল। কিচমিচ করে সম্ভাষণ করে জিজ্ঞাসা করল এই ক'দিনের অনুপস্থিতির কারণ; তারপর গায়ে মাথায় উঠে কানের কাছে চুমু খেয়ে অনেক আদর করে চলে গেল। তুলি অলস চোখে নির্মেঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। পাহাড়টা কি আকাশের খুব কাছে? আকাশটাকে কি ভীষণ নীল দেখাচ্ছে! আবেশে তুলির চোখটা বুজে এল।

চকচকে রোদ্দুরের মধ্যে প্রজাপতিটা এফুল থেকে ওফুলে ঘুরে ঘুরে মধু খেয়ে বেড়াচ্ছিল। এদিক দিয়ে যাবার সময় হঠাৎ দেখে তুলি হাসি হাসি মুখে শুয়ে আছে। ফরফর করে এক পাক দিয়ে তুলির মুখের উপর এসে জিজ্ঞাসা করল, "কিগো বন্ধু, কেমন আছো?" তুলি দেখল, দু'টো পরী তার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। সে ধড়মড় করে উঠে বসতেই, ওমা, বলা নেই কওয়া নেই পরী দু'টো তার হাত দু'দিক থেকে ধরে তাকে নিয়ে উড়তে শুরু করল! তুলি ভয়ে চিৎকার করে উঠল, "পড়ে যাব, পড়ে যাব, ছেড়ে দাও।" পরীরা হেসে বলল, "কেন পড়ে যাবে, আমরা তো তোমায় ধরে আছি। তোমার কি খুব ভয় করছে? তুমি চোখ বন্ধ করে ফেল।" সে তাই করল, আর একটু পরেই শুনল, "চোখ খোলো তুলি, আমরা এসে গেছি।" তুলি চোখ খুলে দেখে, ওমা, এ কোন জায়গা! কি সুন্দর চারদিকে সবুজ। সে ভারী খুশি হয়ে আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল। সে দেখল তার বন্ধুরা, শালিখ দুটো, প্রজাপতি, কাঠবিড়ালী তার ছানাপোনা সমেত সবাই হাজির। একজন নতুন বন্ধুকেও দেখতে পেল। একটা মস্ত হরিণ, তার মাথায় অনেক ডালপালা। ওকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে সবাই হেসে বলল, "তুলি, ও আমাদের নতুন বন্ধু। ওর নাম রানু। ওর শিং-এর বাহার দেখ!" মজায়, হাসিতে সবাই মেতে উঠল।

শুক্তি দত্ত ভালবেসে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। রূপকথা, প্রাচীন সাহিত্য, দেশবিদেশের লোকসাহিত্য, গল্পকথা পড়তে ভালবাসেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা বা শিশুদের সেই গল্প শোনাতেও ভালবাসেন। প্রধানতঃ শিশুমনস্তত্ত্ব ও তাদের শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে দীর্ঘকাল কাটিয়েছেন। সেটা শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি শিশু সাহিত্য, লোকসাহিত্য প্রভৃতিকে তাদের মূল্যবোধ বিকাশে কাজে লাগাতে চান।