খেলাঘরখেলাঘর

 
মৌচাক
 
 


দেখতে দেখতে পনেরো দিন কেটে গেল। মা শামুকের ছেলেমেয়েরা হাঁটতে শিখে গেল। তখন তাদের মধ্যে পাঁচজন শামুক মৌচাক ভাঙ্গা অভিযানে বেরলো। হাঁটতে হাঁটতে তারা যখন মৌচাকের কাছে গিয়ে পৌঁছল তখন ঘরে কোন মৌমাছি ছিল না। সব মৌমাছি মধু সংগ্রহে বেরিয়েছে। তাই দেখে শামুকরা ভারি খুশি হল। বলল – ‘চলো আমরা এখন যত পারি মধু খাই।’ সন্ধ্যের আগে পর্যন্ত তারা মধু খেয়েই চলল। এপাশে সন্ধ্যে হতেই সব মৌমাছিরা দলবেঁধে গান গাইতে গাইতে নাচতে নাচতে বাজনা বাজাতে বাজাতে বাড়ি ফিরে এলো। এসেই ঐ পাঁচটা শামুককে দেখতে পেয়ে খুব অবাক হল তারা।

রানী মৌমাছি বলল – ‘তোমরা এখানে কেন এসেছ? আর কেনই বা আমাদের সব মধু খেয়ে নিচ্ছ? এটা তোমাদের বাড়ি নয় আর এই মধুও তোমাদের খাবার নয়। এখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। তোমাদের বাড়ি ফিরে যেতে অসুবিধে হতে পারে। তাই আজকের রাত্রিটা আমি তোমাদের এখানে থাকতে দিতে পারি। কিন্তু তোমাদের কথা দিতে হবে যে ছোট্ট মৌমাছিদের তোমরা কোন ক্ষতি করবে না। ’

পাঁচটা শামুকের মধ্যে যে সব থেকে বড় ছিল সে হেসে উত্তর দিল – ‘তোমাদের মধুটা খেতে খুব ভালো। আমরা সপরিবারে এখানে চলে এসেছি। শুধু একটা বা দুটো রাত নয়। আমরা এখন থেকে বরাবরের জন্যে এখানেই থাকব। আর যতদিন না সব মধু শেষ হয়ে যায় ততদিন আমরা এই মধুই খেয়ে যাব।’

রানী মৌমাছি বলল – ‘শুধু একটা রাত্রি আমি তোমাদের থাকতে দিতে পারি। কোনভাবেই সারাজীবন তোমরা এখানে বসবাস করতে পারনা। তাছাড়া তোমরা কোন ভালো কাজ করেও আমাদের সাহায্য করতে পারবে না। এখন তো তোমাদের একটা রাত্রি এখানে থাকতে দিতেও আমার চিন্তা হচ্ছে। যখন আমরা ঘুমাবো তখন হয়তো মৌচাকের সব মধু তোমরা খেয়ে শেষ করে ফেলবে বা আমার ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলবে।’

চিন্তিত মুখে রানী মৌমাছি ওখান থেকে চলে গেল। তারপর বৃদ্ধ জ্ঞানী মৌমাছিদের ডেকে বলল – ‘আজ রাত্রে তোমরা ঘুমিয়ো না। আমি ঐ শামুকগুলোকে বিশ্বাস করতে পারছি না।’

পরদিন সকালে জ্ঞানী মৌমাছিরা রানী মৌমাছিকে এসে জানালো – ‘মোট পঁয়ত্রিশটা শিশু মৌমাছি কাল রাত্রে মারা গেছে। শামুকগুলো আমাদের সব ঘরে ঢুকে সারা রাত ঘুরে বেড়িয়েছে। সব মধুতে মুখের নোংরা লাগিয়ে দিয়েছে। সব মধু বিষাক্ত করে দিয়েছে। এই বিষাক্ত মধু খেলে মানুষরা ও মারা যেতে পারে। মহামান্য রানী, আমাদের উচিত এক্ষুনি ওদেরকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া।’

রানী মৌমাছি বলল – ‘আমরা আর একদিন দেখবো। এর মধ্যে ওরা স্বেচ্ছায় চলে না গেলে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’

তারপর রানী মৌমাছি গেল শামুকদের সঙ্গে কথা বলতে।
- ‘বন্ধুগন, তোমাদের বেশ সাস্থ্যবান দেখাচ্ছে। আমি জানি তোমরা এখানে বেশ মনের আনন্দে রয়েছ। এখানকার মধুও তোমাদের খুব সুস্বাদু লেগেছে। কিন্তু তোমরা আমাদের ঘরে থাকা শিশু মৌমাছিদের মেরে ফেললে কেন? আর কেনই বা আমাদের সব মধু নষ্ট করে দিয়েছ?’
শামুকরা কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল।
- ‘আমার মনে হয় আমি জানি কেন এটা করেছ তোমরা। আমার বিশ্বাস তোমরা আমাদের শত্রু। কিছুদিন আগে এক মা শামুকের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল যে আমাদের খুব বকাঝকা করেছিল। সে নিশ্চয় তোমাদের মা। সে যাই হোক। আমি এখন যা বলছি তা মন দিয়ে শোন। কাল দুপুরের মধ্যে যদি তোমরা এই বাড়ি ছেড়ে না চলে যাও তাহলে তোমরা সবাই এখানেই মারা যাবে।’

দুষ্টু ও অহংকারী শামুকের দল তাচ্ছিল্যের সুরে বলল – ‘তোমাদের যা ইচ্ছে তাই করো। আমরা এখানেই থাকবো। আমরা স্বাধীন। আমাদের যেখানে ইচ্ছে করে সেখানে যাবো, যা ভালো লাগবে তাই খাবো। এখন আমাদের এই মৌচাকের মধু খেতে ভালো লাগছে, তাই আমাদের ইচ্ছে হলে সব মধু আমরা খেয়ে শেষ করে দেব। মোটকথা আমরা এখান থেকে নড়ব না। এখানেই থাকব। দেখি তোমরা কী করতে পারো। ’