খেলাঘরখেলাঘর

 শামুক ও মৌমাছি
তখন রানী মৌমাছি খুব গম্ভীর হয়ে গেল। সে তার সেনাবাহিনীকে ডেকে পাঠালো। তাদের বলল – ‘তোমরা সবাই যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও। কাল দুপুর পর্যন্ত সব মোম প্রস্তুত করে রাখো। তরবারিতে ধার দিয়ে তৈরী থাকো যুদ্ধের জন্যে।’

সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর মধ্যে সাজো সাজো রব পড়ে গেল। হুলই তাদের তরবারি। হাজার হাজার সেনা মৌমাছি তাদের হূল শানিয়ে অপেক্ষা করে রইল।

পরদিন দুপুর বেলা শামুকরা কেউ মৌচাক ছেড়ে গেলনা। তাই দেখে রানী মৌমাছি যুদ্ধ শুরুর আদেশ দিল। ‘সবাই রন হুংকার দিতে শুরু করো। দরকার পড়লে হুল ফুটিয়ে শামুকদের মেরে ফেলবে।’

আদেশ পেয়েই সেনা মৌমাছিরা ভয়ংকর জোরে ভোঁভোঁ আওয়াজ করে রন হুঙ্কার দিতে শুরু করল। শামুকরা সেই আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে যে যার নিজেদের খোলের মধ্যে গুটিয়ে ঢুকে গেল।
তখন রানী আদেশ দিল – ‘মোম আনো জলদি।’

কিছু সেনা মৌমাছি আওয়াজ করে ওদের ভয় দেখিয়ে চলল। আর কিছু মৌমাছি মোম নিয়ে এসে ওদের মুখের কাছে ঢেলে দিয়ে মুখটা পুরো বন্ধ করে দিলো। দু ঘন্টার মধ্যে শামুক গুলোর এমন অবস্থা হল যে তারা না পারল একটুও নড়াচড়া করতে, না পারল নিঃশ্বাস নিতে।   

তখন রানী মৌমাছি সব শামুকদের উদ্দেশ্যে বলল – ‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম যে তোমরা আমাদের বন্ধু। তাই তোমাদের রাত্রে থাকতে দিয়েছিলাম, পেট ভরে মধু খেতে দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা ভেবেছ ভগবান এই গোটা পৃথিবীটা শুধু তোমাদের একার জন্যেই বানিয়েছেন। তোমরা ছাড়া আর কেউ সেখানে থাকতে পারবে না। তোমাদের এতো নীচু মন। তোমরা যদি এরকম ক্ষুদ্র ও দুর্বল প্রানী না হয়ে কোন পাখি বা জন্তুর মতো বড় ও শক্তিশালী প্রানী হতে তাহলে এই পৃথিবীতে আর অন্য কোন প্রানীরই স্থান হত না। এত করে বলা স্বত্ত্বেও এখান থেকে চলে যেতে রাজী হলে না, এখন এখানেই মরো। এটাই তোমাদের যোগ্য শাস্তি।’

তারপর রানী সব মৌমাছিদের নিয়ে আবার একটা নতুন মৌচাক তৈরী করল ও সেখানেই বসবাস করতে থাকল।

একদিন মৌমাছিদের মালিক এলো মধু নিতে। সে দেখল মৌচাকে কোন মৌমাছি নেই, শুধু পাঁচটা মরা শামুক পড়ে আছে। মালিক সববুঝতে পারল। বলল – ‘এই মৌচাকের মধু বিষাক্ত। এটা কে ভালো করে পরিস্কার করতে হবে।’ এই বলে সে সব বিষাক্ত মধু আর মরা শামুকদের মাটিতে ফেলে দিলো।

মৌমাছিরা বহাল তবিয়তে সুখে শান্তিতে বেঁচে রইল ও মানুষের উপকার করতে থাকল।


( নীতি বাক্য - গর্বিত ও স্বার্থপররা সব কিছু নিজেরা ভোগ করতে চায়, কিন্তু তারা কিছুই পাওয়ার উপযুক্ত নয়।)
 
 
 
 
(চীনা লোক কথা / নীতি কথা)

অনুবাদঃ
রুচিরা
বেইজিং,চীন