সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
স্বপ্ন দেখল পুটুং

পুটুং অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। চারপাশে গাছপালা, বাড়িঘর কিছু নেই। মস্ত একটা মরুভূমি খাঁ-খাঁ করছে। আকাশটা গনগনে উনুনের মতো জ্বলছে।
"পুটুং, ভবিষ্যতের পৃথিবীতে চলে এসেছো তুমি। নিউক্লিয়ার ব্লাস্টে পৃথিবীর জীবমণ্ডল পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছে। এখন তোমায় আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। পারবে তুমি?"
"আমি তো ছোট্ট। কী করে পারব আমি?"
"এটাই তো মানুষ বোঝে নি। তারা যে ছোট্ট, বেশী অসভ্যতা করলে যে তারাই মরবে এটাই তো তারা বোঝে নি। যাক গে, এখন তো তোমার হাতে বেশী সময় নেই। কথা না বলে কাজে লেগে পড়ো..."
"কী করে শুরু করব? তুমি কে?"
"আমি সৃষ্টিকর্তা। আমি এখন সূর্যকে বলব পৃথিবীকে একটু ঝাঁকিয়ে দিতে। তাহলে ভূকম্পন হবে, আর পৃথিবীর শরীরের ফাটল থেকে জলীয় বাষ্প-টাস্প বের হবে। বাইরে থেকে কিছু বরফযুক্ত উল্কাকে ডেকে নিচ্ছি। এসবের ধাক্কাধাক্কিতে জল তৈরি হলে তুমি সেগুলো এক জায়গায় জড়ো করবে। এমনি করে একদিন সাগর-মহাসাগর তৈরি হবে..."
"এত বড় কাজ! আমি পারব নাকি?"
"নিশ্চয় পারবে। এই দ্যাখো, করেই ফেলেছো। দ্যাখো, তোমার সামনে ওই নীল জলরাশি। ওই সমুদ্রের তীরে যাও। যেসব মাছ-কাঁকড়া তীরের কাছে আসবে, তাদের টেনে ডাঙায় তুলে দৌড় করাবে। তাহলেই ওদের বিবর্তন হয়ে উভচর প্রাণীর সৃষ্টি হবে..."
"ধ্যাৎ। অমন করে হয় নাকি? আমাদের বইতে লেখা আছে, ওসব বিবর্তন হতে লক্ষ লক্ষ বছর লাগে..."
"ধুর। ওসব বই নিউক্লিয়ার ব্লাস্টে ধুয়ে-মুছে সাফ। এখন এসব দু'মিনিটের ব্যপার। ওই দ্যাখো, উভচরেরা জন্মে গিয়েছে। এবার ওদের খুব করে খাইয়ে –দাইয়ে ডাইনোসরের মতো বিশাল চেহারা তৈরি করো..."
"সর্বনাশ!! ওরা তো তাহলে শেষে আমাকেই খেতে চাইবে। পঞ্চতন্ত্রের গল্পে পড়েছি, ঋষি ইঁদুরকে বাঘ বানানোয় বাঘ শেষে ঋষিকেই খেতে চেয়েছিলো..."
"ওরা খাবে না। বিশাল ভারী চেহারা নিয়ে ওরা নড়াচড়া করার আগেই আমরা ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী বানিয়ে ফেলব, যারা ওদের ডিম চুরি করে খাবে। আর উল্কাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, অ্যাসিড বৃষ্টি- এসব করে ওদের লাইফ জেরবার করে দেব..."
"না। কেন ওদের এভাবে মারবে?"
"মরবে না। সবাই মরবে না। কেউ জলে গিয়ে কুমীর হয়ে থাকবে। কেউ তোমার ঘরের দেওয়ালে টিকটিকি হয়ে থাকবে..."
"অ্যাই, সৃষ্টিদাদু, দ্যাখো, কথা বলতে বলতে সব ডাইনো মরে শেষ। চারপাশে গাছে গাছে বাঁদর জাতীয় প্রাণীরা কিচমিচ করছে..."
"আরে ওদেরই বংশে তোমরা জন্মাবে। ওই যে ওই লালমুখো শিম্পাঞ্জিটা ওকে ঠেলা মেরে গাছ থেকে ফেলে দাও..."
"কেন?"
"আরে ও মাটিতে পা ফেললেই এক বিরাট বিবর্তন ঘটে যাবে। এ সিঙ্গল স্টেপ অফ আ হনুমান, আ জায়েন্ট লীপ টু হিউম্যানকাইন্ড..."
"আরে ধুৎ। অমন ঠেলা মারলে হয় নাকি? ইতিহাসের বইতে যে পড়েছি, বানরদের মাটিতে পা রাখতে লক্ষ লক্ষ বছর লেগে গিয়েছিল..."
"নিকুচি করেছে ইতিহাস বইয়ের। তুমি ঠেলা মেরে দ্যাখোই না। ঠেলার নাম বাবাজি..."
ঠেলা মারল পুটুং "ওরে বাবা রে, দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে আসছে। পড়ল না তো। অন্য একটা ডাল ধরে নিল..."
"থাক। ও ব্যাটা বিবর্তন চায় না। বিবর্তনের অন্য শাখা ধরে ও গোরিলা-টরিলা কিছু হয়ে যাবে। তোমার হাতে আঁচড়ে দিয়ে একটু জিন শেয়ারিং করে নিল। এনিওয়ে, ওই মগডালে বসা বাঁদরটাকে এবার টার্গেট করি চলো। কেমন উদাস মুখ করে মগডালে বসে আছে। আমি ওর কানে ফুসমন্তর দেব 'তুই রামাপিথেকাস হবি। আর্ডিপিথেকাস হবি। তুই হোমোস্যাপিয়েন্স হবি। তুই মহাপন্ডিত হবি... এসব বলতে থাকব, আর তুমি রাম-ধাক্কা দিয়ে ওকে ফেলে দেবে..."

স্বপ্ন দেখল পুটুং

ধাক্কা দিয়ে বানরটাকে ফেলে দিয়ে পুটুং আর সৃষ্টিকর্তা বেশ কিছুক্ষণ হাই ফাইভ করল। তারপর সৃষ্টিকর্তা ব্যস্ত হয়ে বললেন "দাঁড়াও, এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। ও মোটামুটি সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে শুরু করলেই ওকে দিয়ে পাথর ঘষে অস্ত্র বানানো, চকমকি ঠুকে আগুন জ্বালানো- এসব শেখাতে হবে..."
হল। সেসবও হল। তারপর সৃষ্টিকর্তা চমকে উঠে বললেন "এই পুটুং, দ্যাখো, দ্যাখো, কেমন বরফ পড়ছে। হিমযুগ আসছে। চলো, শিগগির কোন গুহায় ঢুকে পড়ি..."
"সৃষ্টিদাদু, এটা কোন গুহা?"
"এটা ভীমবেটকা। গুহার ভেতরে আদিম মানুষগুলো কেমন কাটা কলাগাছের মতো পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে দ্যাখো। যেন ওদের ওপরে বিবর্তনের কোন চাপ নেই, যেন সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন দায় নেই! চলো, ব্যাটাদের কানে 'কু' করে জোরে আওয়াজ করে ঘুম ভাঙিয়ে টেনে তুলি। তারপর ওদের দিয়ে গুহার দেওয়ালে ছবি আঁকাব..." ওদের কানের কাছে মুখ রেখে চেঁচাও দিকি "ওঠো। জাগো। আলসেমি ছেড়ে/উঠে পড়ো তেড়ে..."
মানুষগুলো সত্যি গা-ঝাড়া দিয়ে উঠল। উঠে চমৎকার সব গুহাচিত্র আঁকল।
"এবার কী হবে সৃষ্টিদাদু?"
"এবারই তো আসল কাজ। পৃথিবীর তাপ বাড়লে মানুষগুলোকে চাষবাস শেখাতে হবে। তারপর কাব্য রচনা, নাটক করা..."
"পুটুং উঠে পড়। আর নাটক করতে হবে না" মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল পুটুং-এর।
"ধ্যাত্তেরি, ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলে তো। আমি মানব সভ্যতাটাকে অন্যরকম উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারতুম।এসব দূষণ, হিংসা, যুদ্ধ, মারামারি-কিচ্ছু থাকত না। সৃষ্টিকর্তা পুরো ব্যপারটা আমার হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন..."
"থাক। থাক। সভ্যতার দায়িত্ব ছেড়ে এবার স্কুলের হোমটাস্কগুলো সেরে নে।"

 

ছবিঃ মিতিল

জন্ম হুগলী জেলার কোন্নগর নবগ্রামে। বর্তমানে পেশাসূত্রে দেরাদুনে। পেশায় বিশ্বব্যাংকের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা। কৈশোরের শেষ থেকে ছড়া-কবিতা লিখছেন বিভিন্ন মুদ্রিত কিশোর পত্রিকায় এবং পরে বিভিন্ন ওয়েব পত্রিকায়। 

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা