সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চাঁদের বুড়ির চরকা-চিঠি ১৪২৪/০৬ঃ আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই প্রায় শেষ হয়ে গেল নতুন বছরের প্রথম দুটো মাস। হুশ করে কেটে গেল কতগুলো দিন। কেমন কাটল তোমার নতুন বছরের শুরুটা? গত দেড় মাসে নেই নেই করে পালিত হল অনেকগুলি দিন- নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মতিথি, প্রজাতন্ত্র দিবস, সরস্বতী পুজো- কেমন কাটল তোমার সেই সব দিনগুলি? শুধুই ভালোমন্দ খেয়ে, আলসেমি করে ছুটি কাটালে? নাকি স্কুলে গিয়ে নানারকমের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে? আর পিকনিক, দিন ভর ক্রিকেট ম্যাচ, রাস্তা জুড়ে নেট টাঙিয়ে ব্যান্ডমিন্টন খেলা, এসব ও কি করলে? তোমার কাছ থেকে এসব গপ্পো শুনতে খুবই ইচ্ছা করে আমাদের। লিখে পাঠাবে তো আমাদের?

তোমার বাড়ির আশেপাশে কেমন আবহাওয়া এখন? খুব ঠাণ্ডা, না কি খুব গরম? নাকি আমাদেরই মত, বসন্ত ঋতুর আসার খবর পাচ্ছ তুমি?আমাদের পাড়ায় শীত যাই যাই করছে। রোদের তাপ একটু একটু করে বাড়ছে যদিও, তবে ঠিক এই সময়ে খুবই ভালো আবহাওয়া- না ঠাণ্ডা, না গরম। এই সময়টা বড় সুন্দর। ন্যাড়া গাছে কচি পাতা ফোটে, ফুল গাছ গুলি রঙিন ফুলে ভরে যায়, নতুন জীবনের স্পন্দনে সবকিছু যেন তিরতির করে কাঁপতে থাকে। এই পৃথিবী জুড়ে এত কিছু খারাপ ঘটনা ঘটে চলেছে, সেসবের কথা মাথায় আসেই না। বরং মনে হয় যেখানে যা কিছু ভালো, যা কিছু নতুন, যা কিছু সব্বাইকে আনন্দ দেয়, সবার মনে আশা যোগায় - এমন সব ঘটনা, সব গল্প, সব তথ্য খুঁজে খুঁজে এনে জড়ো করি - তোমার, আমার, ইচ্ছামতীর জন্য; আমাদের সব বন্ধুদের জন্য। তোমার যদি মনে হয় তুমিও আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারো এমন সব ভালো খবর, যা পৃথিবীর জন্য এক সুস্থ ভবিষ্যতের কথা বলে, তাহলে তুমিও আমাদের লিখে , বা ছবি কিংবা ভিডিও তুলে পাঠাতে পারো এরকম সব নতুন খবর।

চাঁদের বুড়ির চরকা-চিঠি ১৪২৪/০৬ঃ আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

আজ ২১শে ফেব্রুয়ারী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আজকের দিনটি ইউনেস্কো পালন করছে ভাষার বৈচিত্র এবং বহুভাষাবাদের স্বপক্ষে কাজ করার শপথ নিয়ে (Acting Together For Linguistic Diversity and Multilingualism)। ২০১৫ সালে পৃথিবীর সমস্ত দেশের সব মানুষের উন্নতিকল্পে, রাষ্ট্রসঙ্ঘ নেয় ' সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য ৪' (Sustainable Development Goal 4) যার সবথেকে জরুরী লক্ষ্যটি হল 'সবার জন্য সমান শিক্ষা' - ২০৩০ সালের মধে সবার জন্য সমান উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া এবং সারাজীবন পড়াশোনা করার সুযোগ করে দেওয়া (Towards inclusive and equitable quality education and lifelong learning for all)। দিনে দিনে , নানারকম সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আমরা বুঝতে পারছি, যেকোনো মানুষকে তার প্রথম পড়াশোনা শেখানোর জন্য মাতৃভাষা জরুরী।কাজকর্মের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে জরুরী ভাষা, যেমন স্প্যানিশ কিংবা ইংরেজি তো শিখতে হবেই। কিন্তু তার আগে, প্রয়োজন খুব ভালো করে নিজের মাতৃভাষা শেখার।যে নিজের মাতৃভাষা সঠিক ভাবে শেখে, সে সহজেই অন্য ভাষাও শিখতে পারে। একের বেশি ভাষা শিখতে পারলে আমাদের জ্ঞান আহরনের মাত্রাও অনেক বেড়ে যায়। আর অন্য ভাষা, অন্য সংস্কৃতিকে সম্মান জানানোর পাশে পাশে আমরা নিজের সংস্কৃতি, নিজে ভাষার সৌন্দর্য্যকে আরোও বেশি ভালোবাসতে শিখি। যেকোনো ভাষার গল্প-কথার মধ্যে লুকিয়ে থাকে নানা ধরনের প্রাচীন জ্ঞান; ভাষাগুলি যদি ব্যবহার না হয়, হারিয়ে যায়, তাহলে সেই জ্ঞান গুলিও হারিয়ে যাবে। এই কথাটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেই পৃথিবীর সমস্ত ভাষাকে সমান অধিকার দেওয়ার কথা বলছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ।

ইচ্ছামতী আর চাঁদের বুড়িও একই ভাবনায় বিশ্বাসী। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ছোট বড় যত মানুষ, যাঁরা বাংলা ভাষায় কথা বলেন, বাংলা পড়তে চান, তাঁদের সবার পড়ার জন্য নানারকমের লেখালিখি সাজিয়ে গুছিয়ে হাজির করছে , গত দশ বছর ধরে। এইবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তোমার জন্য রইল একটি সিরিজঃ ছড়ায় ঘেরা মানব সেরা। কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই ছয়খানা কবিতা বিভিন্ন প্রখ্যাত বাঙালিকে নিয়ে। তবে কবিতাগুলি শুধুই তাঁদের বিষয়ে লেখা নয়; কবি এই কবিতাগুলির মধ্যে দিয়ে সেই সেই মানুষগুলির ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী শব্দচয়ন ও ছন্দ প্রয়োগ করেছেন; বাংলা ভাষাকে আরেকবার নতুন করে চিনতে সাহায্য করবে এই কবিতাগুলি। এই সিরিজের আরোও দুটি কবিতা গতবছর ইচ্ছামতীতে প্রকাশিত হয়েছে।

এরপরে একটা ভালো খবর দিই। পাঁচটি ওয়েব ম্যাগাজিন এবং আটটি প্রকাশনা সংস্থা একত্রিত হয়ে এই বছর থেকে দেওয়া শুরু করেছেন 'উত্তরাধিকার ওয়েবসাহিত্য পুরষ্কার'। পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে গল্প, ছড়া/কবিতা, প্রবন্ধ, কল্পবিজ্ঞান এবং অলঙ্করন- এই পাঁচটি বিভাগে। ইচ্ছামতী উদ্যোক্তাদের মধ্যে নেই, কিন্তু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল, কল্পবিজ্ঞান বাদ দিয়ে বাকি চারটি বিভাগে । খুবই আনন্দের খবর, প্রতিযোগী পত্রিকাগুলির নভেম্বর ২০১৬ থেকে অক্টোবর ২০১৭ অবধি এক বছর ধরে প্রকাশিত ছড়া/কবিতাগুলির মধ্যে থেকে, সেরা কবিতা হিসাবে ২০১৬-২০১৭ সালের জন্য 'সরল দে স্মারক পুরষ্কার' পেয়েছে ইচ্ছামতীতে প্রকাশিত তন্ময় ধরের কবিতা 'খেলা খেলা'। গত ৪ঠা জানুয়ারি,২০১৮, কলকাতার বইমেলায় হয়ে গেল এই পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠান। এই বিষয়ে বিশদে জানা যাবে 'উত্তরাধিকার ওয়েবসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬-২০১৭'-এর বিশেষ ক্রোড়পত্রে, যেটির লিঙ্ক আমাদের সাইডবারে আছে। এই ক্রোড়পত্রে অন্যান্য বিজয়ী লেখাগুলিকেও পড়তে পারা যাবে।

আজ এই পর্যন্তই থাক। নতুন বছরে তোমার জন্য কী কী নতুন উপহার নিয়ে হাজির হওয়া যায়, সে বিষয়ে এখন গোপন আলোচনায় বসব আমি আর ইচ্ছামতী। ইচ্ছামতীর দশ বছর বয়স পূর্ণ হবে আর কিছুদিন পরেই, তাই সব জরুরী আলোচনায় তাকে তো রাখতেই হয়। সঙ্গে হাজির থাকবে যত রাজ্যের গপ্পো বলা ডায়েরি, খাতা, নোটবই, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাব, পেন-পেন্সিল, রং-তুলি-কালি-কাগজ-আঠা-ফিতে-কাঁচি-পুঁতি, আর অবশ্যই থাকবে দুনিয়ার সমস্ত রঙের সুতো কাটে যে, আমার সেই চরকাখানি । সব্বাই মিলে যে এক হই-হই কান্ড, রই-রই ব্যাপার হবে, সে বলাই বাহুল্য!

ভালো থেকো ! সব্বাইকে ভালো রেখো।

চাঁদের বুড়ির চরকা

ছবিঃ
মহাশ্বেতা রায়
ইউনেস্কো 

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা