সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo

ইস্কুল যেতে আর ভাল লাগেনা পাটুর। অ্যাডিশন, সাবট্র্যাকশন,এমন কি সায়েন্স অবধি ও ঠিকই ছিল।ইংরাজির নতুন শব্দ টব্দ পড়ে ইংরাজি গল্পের বইগুলোকেও কামড়ানো যাচ্ছিল দিব্যি। আর বাংলাটাতো সে ভালোই বাসে।

ক্লাসে পড়ানোর অনেক আগেই বাড়িতে আবোল তাবোল, ক্ষীরের পুতুল টুতুল সব পড়ে সেরেছে। ক্লাসে যখন পড়ান আন্টি মজাই লাগে।

গেটের বাইরে বন্ধুদের মায়েরা অবশ্য রোজ বকাবকি করেন ইস্কুলকে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বাংলা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করা নাকি ভারি অন্যায়। বাচ্চাদের ওপর অযথা চাপ দেওয়া হচ্ছে। এতো পড়া !

পাটুবাবু চুপ করে থাকে ভয়ে ভয়ে। ভাবে এর আবার চাপ কী রে বাবা? এগুলো পড়তে তো খেলার চেয়ে ও বেশী মজা লাগে। এত বড়দের মাঝখানে সাহস করে কিচ্ছু বলে না। চুপচাপ রিক্সাকাকুর সঙ্গে বাড়ি চলে আসে।

পাটুবাবু অর্চিষ্মানের দুঃখ অন্যখানে। এই যে হাই ইস্কুলে উঠে অবধি, মোটা মোটা ছবিহীন বই থেকে অংক করা, এটা বড্ডই বাজে লাগছে তার। খাতা খুলে বসলেই এক দুই চার ছয় সব যেন ভূতের নেত্য লাগাচ্ছে মাথার মধ্যে ।

তার মধ্যে আবার টেব্‌ল্‌স্‌ মানে নামতা। এত মুখস্থ করা যায় কখনো ?

আস্তে আস্তে ইস্কুল যাবার কথা ভাবলেই পেট গুড়গুড় করতে শুরু করেছে পাটুবাবুর।

কী যে করে বেচারা ।

আজ যেন পেটটা বেশী কামড়াচ্ছে মনে হয়।দিদুনের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে পাটু। দিদুন ভেতর থেকে ডাক দেন, " ভাই ভিতরে এস। বাইরে কেন গো? "

কাঁচুমাচু মুখে ভিতরে ঢুকেই পড়ে পাটু।খাটে ঝপাং করে লাফিয়ে পড়ে বলে, " যাবনা। আজ ইস্কুলে যাব না।একটু বল না মাকে। "
"সেকী কেন গো? "
" আমার পেট কামড়াচ্ছে। সত্যি সত্যি তিন সত্যি, দিদুন। সাতের ঘরের টেবল ভাবলেই ভীষণ ব্যথা করছে পেটের মাঝখানটায়। "
দিদুনের সাদা ধবধবে চুল। চশমার কাঁচে চিকচিক করে সকালের আলো। এক গাল হেসে বলেন, " ওঃ এই জন্য? আচ্ছা আচ্ছা, দেখি পেটটার কী করা যায়-"
" আচ্ছা ভাইয়া, তুমি তো লক্ষী ছেলে। বাড়িতে যখন থাকো, বই নিয়ে নিজের মনে থাকো, তাই না? কারো সাতে পাঁচে থাকোনা। কী বল? "
জোরে ঘার নাড়ে পাটু। হ্যাঁ তো।
তবে আমার ডায়েরির পাতায় যদি লিখে ফেলি, পাটুবাবু পঁয়ত্রিশে নেই?"
" মানে? "
" কেন, সোজা হিসেব ত। সাতে পাঁচে পঁয়ত্রিশ না ? "
ওহো। মজার ব্যাপারটা বুঝে হাসি ফুটলো পাটুর মুখে।

দিদুনের ডায়েরিতে লেখা হতে থাকল মজার লিস্টি।
রাম সাত দুগুনে বছরকার জন্য বনে গেলেন।
তিন সাত্তে বছর হলেই পাটু সাবালক হবে।
সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাস চার সাত্তে দিনের হয়।
দু জনে মিলে ভেবে ভেবে কত যে মজার বাক্য রচনা করা হয়ে গেল!
এই সব মাথা খাটিয়ে বের করতে করতে কখন নামতাটা মুখস্থই হয়ে গেল অর্চিষ্মান পাটুবাবুর।
ঠিক করা হল ইস্কুলটা ঘুরেই আসা যাক।

তখন ডায়েরি বন্ধ করতে করতে দিদুন বললেন, "বাব্বা এই সাত সতেরোতে একেবারে হাঁফিয়ে গেলাম রে গোপাল।"
"সাত সতেরো ?"
"ও দিদুন, বারো অবধি মাল্টিপ্লাই করলেই হবে। অতদূর তো লাগবেনা গো।"
" উঁহু, সে কথা বলিনি ভাই। "
মিটিমিটি হাসেন দিদুন।
" ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাও দেখি। "
ওহোঃ তাই তো।শব্দেরা ফুলঝুরি হয়ে মজার ফুল্কি ফোটায় ছোট্ট পাটুর মাথায়।

দিদুনের ঘরের দেওয়ালে ঝুলছে ক্যালেন্ডার। তাতে বড় বড় করে সংখ্যা লেখা। ক্যালেন্ডারে তারিখ আজ কত?
সতেরোই জুলাই।
মানে সাত সতেরো।


ছবিঃ মঞ্জিমা মল্লিক

পেশায় চিকিৎসক। বিভিন্ন মুদ্রিত এবং ওয়েব পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন। বেশ কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত আছেন। প্রকাশিত হয়েছে একাধিক কবিতা ও গল্পের বই।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা