অত্রীশ মুখার্জি (তিয়াম), ৬ বছর, কলকাতা
তিয়ামের মা প্রজ্ঞা দেবনাথ লিখেছেন:
চারিদিক থেকে শুনে রোজ নিরন্তর প্রশ্ন করেছে তিয়াম। ওকে যতটা বোঝানো সম্ভব ততটা বুঝিয়েছি। বরাবরই ওর সঙ্গে মোটের উপর খোলাখুলিই কথা বলি। তাতেও সবটা বোঝাতে পারিনি। না বুঝিয়ে ওকে মিছিলে সামিল করতে চাইনি আমি। যেটুকু যা বোঝার পর থেকে আমায় বলেছে, মা আমিও মিছিলে যাব। ওকে সব বোঝানোর পর আরও কিছু কথা বলেছিলাম। প্রমিস করতে বলেছিলাম। ছবি ভিডিওতে দেখেছে লোকের হাতে পোস্টার। নিজে হাতে পোস্টার লিখেছে আজ। শুধু 'কষ্ট' বানানটা আমি বলে দিয়েছি।আজ আমি আর তিয়াম অনেকগুলো জমায়েতে গেলাম। আমায় রাস্তায় যেতে যেতে বলেছে, 'মা তুমি ভয় পেও না, আমি মেয়েদের সঙ্গে কখনও খারাপ করব না।' জমায়েতের পাশে পুলিশদের দেখে বলেছে, 'ওরা কেন বাজে লোকগুলোকে ধরছে না মা?' গড়িয়া থেকে যাদবপুর ৮বি অবধি প্রায় ৫-৬টি জমায়েতে আমরা 'we want justice' বলে স্লোগান তুলেছি। স্কুটিতে 'লড়াই করো' গান গেয়েছি। বাড়ি ঢোকার একটু আগে তিয়াম বলল, 'মা, কাল আমরা এই মিছিলের সবাই মিলে বাজে লোকগুলোকে খুঁজতে যাই চলো। সবাই মিলে খুঁজলে ঠিক পেয়ে যাব। দিদি টাকে এত কষ্ট দিয়েছে, ওদের ধরতেই হবে। তারপর তুমি আর (হাত গুণে) আরও ৯টা মেয়ে লাগবে। দশজন একসঙ্গে হলেই দুর্গা হয়ে যাবে। অসুরকে মেরে ফেলতে পারবে।' এই কথার একটি বর্ণও আমার বানানো নয়, বিশ্বাস করুন। ও এটাই বলল। ভবিষ্যত কী বলবে জানি না, আপাতত এটাই আমার পুঁজি! ভেবেছিলাম ছবি তুলব না, পোস্ট করব না। কিন্তু আমার মনে হল ওর আশাটুকু আরও মানুষের আশা হোক। ওর বিশ্বাসটুকু সত্যি হোক। সত্যি হোক। সত্যি হোক।
অনুমেহা ঘোষ, ১২ বছর, রায়গঞ্জ
অনুমেহার মা শর্মিষ্ঠা ঘোষ জানিয়েছেন অনুমেহা তার মা-বাবার সঙ্গে বিচারের দাবী চেয়ে তার শহরের সমস্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে।
স্রোত বসু (মেঘ), ৮ বছর, কলকাতা
মেঘের মা শ্রী বসু জানিয়েছেন:
মেঘের স্কুল থেকে মিস বলেন, ১টা এক্সট্রা খাতা দিতে যেখানে অবসর সময়ে ওরা ছবি আঁকবে । সেই খাতাটা মাঝে মাঝেই আমি উল্টে পাল্টে দেখি । ও ছবি আঁকতে ভালবাসে । তাই ওর মনের মধ্যে কি চলছে তার ১টা প্রতিচ্ছবি আমি ওই খাতাটার মধ্যে পাই । কখনো স্কুলের ছবি, মিসের ছবি, রোনাল্ডোর ছবি, শপিং মল, হোটেল ইত্যাদি ইত্যাদির ছবি চোখে পড়ে। আজ হঠাৎ এটা চোখে পড়ল... বুঝলাম বিষয়টার গভীরতা না বুঝলেও এটাও ওর মধ্যে ছাপ ফেলেছে... বানান ভুল, ট্যারাব্যাকা ফিগার কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেও কি অদ্ভুত ১টা ভালো লাগার অনুভূতি হল । গত ৯ তারিখ থেকে আমায় প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়েছে বহুবার । অনেকরকম ভাবে ৮ বছরের ছেলে কে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যতটা ওর পক্ষে বোঝা সম্ভব । বাড়িতে ব্যাজ, গাড়িতে স্টিকার, মা মাঝরাতে মিছিলে যাচ্ছে, বাবা হাসপাতালের মিছিলে সবই দেখছে কিন্তু তার মাঝে স্কুলে গিয়ে তিনিও যে এসব করছেন জানতাম না । আজ এটা দেখার পর জিজ্ঞেস করলাম এটা কখন আঁকলি ? বলল - "কেন ? স্কুলে । আর আমি সবাই কে শিখিয়েও দিয়েছি কি ভাবে উই ওয়ান্ট জাস্টিস করতে হয় । কেউ কেউ জানত, যারা জানত না, তাদের শিখিয়ে দিয়েছি ।"
ধীময়ী দাশ (পুটপুট), ৬ বছর, কলকাতা
পুটপুটের দাদু বিমোচন ভট্টাচার্য লিখেছেন:
কাল সন্ধেবেলা হেঁটে আসার পর আমার কাছে এলো। বলে - বাবা আমায় একতা জিনিস দিয়েছে।কী জিনিস বলো তো দাদুই? আমি বললাম- পারবো না। দেখি ওকে ওর মোবাইলটা ফেরত দিয়েছে ওর বাবা৷ প্রচুর অ্যাক্টিভিটি আছে তাতে। সিম নেই৷ অবসর সময়ে খেলে। বলে - জাস্তিস বানান কী? শুনে চলে গেল নিজেদের ঘরে৷ ফিরে এসে বলে - চোখ বন্ধ করো। বন্ধ করলাম চোখ৷ খুলে কি দেখলাম? আপনারাও দেখুন।
ঐশঞ্জাত সাহা (বাহার), ৯ বছর, কলকাতা
ঐশঞ্জাত-র মা নীপমঞ্জরী বর্মনের কথায়:
বাহার জলরং সবে শুরু করেছে। ওর মামা ওকে একটা ছবি বানাতে বলেছিল নিজের ভাবনা দিয়ে এখনকার সময় নিয়ে। কাল রাতে এটা বানালো ওর নিজের মতন করে। একদম নিজের ভাবনার প্রথম পোস্টার। সত্যি আমরা না চাইলেও ওরা কত বড় হয়ে গেল...
রিদা আলিনা, ১১ বছর, কলকাতা
রাজ জি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া খুব খারাপ ঘটনার প্রতিবাদে কবিতা লিখেছে রিদা আলিনা। কবিতাটি পাঠিয়েছেন রিদার দাদু জামাল ভড়।
তৃষা ব্যানার্জি, ১২ বছর, কলকাতা
আমাদের রাজ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির প্রেক্ষিতে তৃষার লেখা কবিতা এবং আঁকা ছবি পাঠিয়েছেন তৃষার বাবা স্নেহাংশু ব্যানার্জি
আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।