ছোটবেলায় দাদুর কাছে ঝিলের কথা অনেকবার শুনেছি। দাদু বলত এই ঝিলের সামনের মাঠটাতে আমরা ফুটবল খেলতাম আর গায়ে কাদা লাগতো তো একবার ঐ ঝিলে ঝাঁপ দিয়ে পরিষ্কার হয়ে যেতাম। এই বলে হাসত দাদু আর তারপর মজা করে বলতো তুই আর কি জানবি ,সারাদিন তো বাড়িতেই নিজের ঘরে বসে কাটিয়ে দিলি। মা বাবা বিদেশে চাকরি করতো তাই মানুষ হওয়া দাদু ঠাম্মার কাছে। স্কুল ছিল বাড়ির কাছে। তাই বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে মারতে ফিরি বাড়ি । এখন বয়স ৩২,দাদু ঠাম্মা আর নেই মা-বাবার সাথে পুজোর ছুটিতে এখানে এসেছি। যেই ঝিলে এককালে জল ছিল এখন তাতে শুধুই শুকনো মাটি আর পাতা পড়ে আছে। একটা বাগান বাড়ি আছে আমাদের এখানে ।তার ভেতর থেকে মার ডাক শুনলাম, “তিশা ভেতরে আয় রান্না হয়ে গেছে খেয়ে নে “। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায় ঠিক এভাবেই মা ডাকত। যাওয়ার আগে কিসের যেন একটা শব্দ শুনলাম, “কিসের শব্দ রে তিশা”? দাদা জিজ্ঞেস করল তার বয়স ৪০ আমারই মতন দাদু ঠাম্মার কাছে বড় হয়েছে। দাদা বিয়ে করেনি নিজের বাড়িতে একা থাকে পাশের বাড়ি বাচ্চাগুলোকে দেখে রোজ খেলতে তাতেই আনন্দ পায় ।দাদা আমি উত্তরে দিচ্ছি না দেখে বলল তুই যেমন ছিলি তেমনি রয়ে গেলি রে, কোনদিন কথার উত্তর দিস না, চল এবার তাহলে মা রাগ করবে । ভিতরে গিয়ে কষা মাংস আর গোবিন্দভোগ চালের ভাত অসাধারণ আমি এক্ষুনি সব খাব দাও দাও বাবা বলল, প্রায় মুখ থেকে জল পড়ছে । আহা বাচ্চাগুলো নিক। তোমার তো দেখতে খাই খাই মা বলল খেতে আয়। কত কিছুর কথা বললাম । খাওয়ার পরে মা বাবা ঘুমাতে গেল দাদা নিজের ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খেয়ে আমার সাথে বাইরে বসে হাওয়া খাচ্ছিল। হঠাৎ আবার সেই এক শব্দ কিন্তু ঠিক বলেও বোঝানোর যাচ্ছেনা সেই শব্দ। কেমন একটা জল বওয়ার সাথে বেড়ালের ডাক কিন্তু আশেপাশে তো কোন পুকুর বা ঝিল নেই আর ওখানে বেশি লোকও থাকে না যারা থাকে তাদের সাথে আমার আলাপ ওরাও কেউ বেড়ালও পোষে না। দাদাকে বললাম চল না ভোম্বল গিয়ে দেখি কিসের আওয়াজ। চল যদি তোর এতই যাওয়ার ইচ্ছে থাকে পরে কিছু হলে কাঁদবি না বলে দিলাম কিন্তু।আহা সেই ১০ বছরে বাচ্চা তো আর নেই রে পারিনা আমি এবার তুই চল - বলতে না বলতেই হঠাৎ করে দাম করে কিছুর আওয়াজ পেলাম। তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেলাম আওয়াজ টার দিকে কিন্তু কোথায় কি ব্রুনো ওই পাড়ার কুকুরটা বসে বসে ল্যাজ নাড়ছে। ব্রুনো তুই এই আওয়াজটা করলি আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম। বোকার মতো কথা বলছিল কেন তিশা এটা ব্রুনোর কাজ নয় ।
দাদা জানো আমার কিন্তু এখানে একটু গা ছম ছম করছে চল না দাদা এখান থেকে যাই - আমি ভয়ে ভয়ে বল্লাম দাদাকে। ঠিক বলেছিস কিন্তু তিশা আমারও জায়গা খুব একটা পোষাচ্ছে না । বাড়ি ফিরে এলাম তখন প্রায় বিকেল পাঁচটা, মা-বাবা ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। মা চা বানিয়ে বসে বললো দুটোতে মিলে কোথায় গিয়েছিলিস ?আরে ছাড়ো না ওই কথা আমি বলি কি তিশা এক প্যাকেট সিঙাড়া কিনে আনছে সাথে গরম গরম সিঙ্গারা খাবো - বাবা বলল আরে ধুর বাবা তিমু আর তোমার খাওয়া ! না তিশা যাবিনা তো আজ রাতে এমনিতেই রেস্টুরেন্টে খেতে যাব একটা বেলা অন্তত হালকা খাও মা - বিরক্ত হয়ে বলল। মা এটা বলল কি বলল না দাদা পেছন থেকে বলে উঠলো আরে মা বিরক্ত হচ্ছ কেনো? আমি ... কথা শেষ করতে পারল না দাদা হঠাৎ ভূমিকম্প ! একটা ফ্লাওয়ার পট মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে গেল । তার পর আর কথা বলল না। পুরো চা খাওয়াটা চুপ করে গেল তারপর যে যার মতো নিজের কাজ। এই ভাবেই পুজোর বাড়ি তিন দিন কাটালাম ওই আওয়াজ পেয়েছিলাম মাঝেমাঝে কিন্তু তার পিছনে রহস্য খুঁজে পাইনি। কিন্ত এখন মাথায় ঘোরে ওই আওয়াজ কিভাবে আমার কানে এল, কার কাছ থেকে এলো এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত এ জীবনে আর পাবনা।
আমার কথাঃ
আমার নাম অনরণ্যা মিত্র । আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি ।অনেক কিছু করতে পছন্দ করি তার মধ্যে গল্প লেখা একটা । আরো ছোট ছিলাম যখন তখন দাদু গল্প লেখা শিখিয়েছিল। দাদু লেখক তাই বাংলার ব্যাপারে দাদুর বই বইমেলায় বেড়ায় সেটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে আমি চাই যে পরবর্তীকালে আমিও দাদুর মত বড় লেখিকা হব আর আমার লেখা বই বেস্ট সেলিং হবে। আর এটাও চাই যে বড় লেখিকা হলে আমার ছোটবেলার কথা বলব ইন্টারভিউতে। আজকে আমি এখানে এসেছি যাতে আমি নিজের লেখা ধরন বদলে আরো ভালো করতে পারি ও গল্পটি কিভাবে এমন কিছু লিখতে পারি যাতে যারা পড়বে তারা ভাবতে পারবে না যে এটা আমার লেখা ।আমি অনেক বাংলা বই পড়েছি কিন্তু তার মধ্যে আমার প্রিয় হলো 'হ য ব র ল',আর 'চারমূর্তি' ।
ছবিঃ পিক্সাবে