মৌসুম হাতের খবরের কাগজ টা নামিয়ে রেখে জগুর দিয়ে যাওয়া চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে তার স্পেশাল দুধ-চিনি ছাড়া দার্জিলিং চায়ে একটা বেশ বড় চুমুক দিয়ে একটি সন্তুষ্টিসূচক আ শব্দ করে বললেন “বুঝলি রেনে, সেদিন কলেজের পুরনো বই খাতা চিঠিপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা ছবি বেরিয়ে পড়ল। ছবি দেখে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল”। আমি তো সঙ্গে সঙ্গে গল্পের সুগন্ধ পেয়ে সোজা হয়ে বসে গেছি। মাসতুতো ভাই রিওর কিন্তু ভ্রুক্ষেপ নেই। সে একমনে রুবিক্স কিউব ঘুরিয়ে যাচ্ছে। বুঝলাম বাবার মুখে গল্পটি তার আগেই শোনা হয়ে গেছে। পূজোর ছুটিতে মাসির বাড়ি বেড়াতে এসেছি দুদিন হল। মৌসুম সম্পর্কে আমার মেসো হন। রিও তার ছেলে। মৌসুম লোকটি বেশ মজার। কোন কোন দিন যেমন আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে, গাড় নীল আকাশে তুলো-পেঁজা মেঘ ভেসে বেড়ায়, ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে, রোদ ঝলমল করে, তেমন কোনো কোন দিন মৌসুম থাকেন চিকন মেজাজে। আজ সেইরকম দিন বুঝতে পারলাম। তাই ভাগ্যে একটা গল্প জুটে গেলে আশ্চর্য হব না। আবার বাদলা দিনের বিদ্যুতের মত মৌসুমের মেজাজেও মাঝে মাঝে এত গরম হয়ে থাকে যে তার কথা যত কম বলা যায় তত ভালো। তাই মৌসুম নামটা দেওয়া খুব ভুল হয়েছে বলে মনে হয় না। তার গল্পে স্টকও অজস্র । কলেজে ক্রিকেট দলের নেতা, পরীক্ষার আগের রাতে পড়া শেষ করে তিনটের সময় বন্ধুদের নিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলার ওস্তাদ, ক্যারামে অজেয় ও অসীম সাহস। আমার খুব ভালো লাগে।
মৌসুম বলা শুরু করলেন “তখন সেকেন্ড ইয়ারে, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি জলপাইগুড়িতে। বয়স কম দুঃসাহস বেশি। সারাক্ষণই বেয়াড়া কাজকর্ম করে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ একদিন বন্ধুদের আড্ডায় কথায় কথায় ভুতের কথা উঠল । রঙিন বলে উঠলো আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে জলপাইগুড়ির খ্রিষ্টান গোরস্থানে এখানে উপস্থিত কেউ রাত কাটাতে পারবে না।ম্যানলিকার সাহেবের ভূত তা হতেই দেবে না”। রাজেন বলে উঠল” তা বাপু তোমার এই ম্যানলিকার সাহেবটি কে গো?” রতিন বলল “ম্যানলিকার সাহেবের অট্টালিকা ছিল সেই গোরস্থানের জায়গায়। তার মৃত্যুর পর সেই অট্টলিকা ভেঙে সেখানে গোরস্থান বানানো হয়। এটা সাহেব মনে মেনে নিতে না পেরে ভূত হয় না পেরে ভূত হয়ে সেই গোরাস্থানে রয়ে গেছেন। আর তার জায়গায় জীবন্ত মানুষের প্রবেশ তিনি বিশেষ পছন্দ করেন না। কেউ যদি সেখানে রাত কাটিয়ে প্রমাণ দিতে পারো আমি তাকে পাঁচশো টাকা দেব। আর যদি না পার বুঝব সবাই ভীতু।হে হে”। মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ভীতু বলে বদনাম সহ্য হলো না। বলে ফেললাম “চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড” । রাত বারোটা নাগাদ একটি টর্চ, প্রমাণ হিসেবে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা, ম্যানলিকর সাহেবের সমাধির উপর নিজের নাম লিখে লিখে রাখার জন্য চক, আর এক ফ্লাস্ক গরম চা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। শহর পিছন ছেড়ে একটি নদীর ধার দিয়ে আধ ঘন্টা হেঁটে গোরস্থানে ঢুকলাম। দূরে শহরের আলো, ঝিঁঝির ডাক, আলো অন্ধকারের বিচিত্র খেলায় গায়ে কাঁটা দেওয়া থমথমে পরিবেশ ছিল। এগিয়ে গেলাম ম্যানলিকারের সমাধির দিকে। একবার পিছন ফিরে দেখলাম কেউ ফলো করছে কিনা। কাউকে দেখলাম না ।হঠাৎ অন্ধকারে থেকে সাহেবী পোশাক পরা মানুষ ভূত আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। আমি যে ক্যারাটে জানি সেই কথাটা জানত না বোধহয়। এক প্যাচে মাটিতে আছাড় মেরে মুখে আলো ফেলতে অবাক হয়ে গেলাম, এ কি এ যে রতিন। হোস্টেলে ফিরে সবাই মিলে জেরা করাতে সে যা বলল তা হল এই: সে ভেবেছিল যে আমাকে সাহেব ভূত সেজে ভয় দেখবে আর আমাকে ভীতু প্রমাণ করবে। জানত না ক্যারাটের প্যাঁচে পড়ে সে আছাড় খাবে। এখনো মনে মনে এখন মনে আছে ব্যথা আছে কিনা জিজ্ঞেস করাতে সে বলেছিল “না ক্যাতাকুতু দিয়েছিস তো, হাসি পাচ্ছে। ও কী ব্যথা!!!” বলা শেষ করে মৌসুম পকেট থেকে একটা ছবি বার করে দেখালেন। দেখলাম একটি পুরনো দিনের সাহেবদের মতো পোশাক পরা যুবককে ঘিরে জনা ছয়েক যুবক। তাদের মধ্যে থেকে দাড়ি গোঁফওয়ালা বিশ বছরের মৌসুমকে চিনতে কোন অসুবিধা হলো না।
আমার কথাঃ
আমি অনুরাগ সেন। আমি গার্ডেন হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি । আমার যে কোনো ধরনের গল্প শুনতে বা পড়তে খুব ভালো লাগে । মাঝে মাঝে গল্প লিখতেও ভাল লাগে। আমার হাসির গল্প ও রহস্য রোমাঞ্চ গল্প পড়তে সবচেয়ে ভালো লাগে। হাসির গল্প পড়তে একটু বেশি ভালো লাগে। এখনো অবধি যত হাসির বাংলা গল্প পড়েছি তার মধ্যে সুকুমার রায়ের লেখা 'হ য ব র ল' আমার সবচেয়ে ভালো লাগে ।প্রথম পড়ে কিছুতেই বুঝতে পারিনি। কিন্তু আরেকটু বড় হয়ে পড়ে খুব মজা পেয়েছিলাম হেসেছিলাম। আমার হাসির গল্পের প্রতি অনুরাগ 'হ য ব র ল' দিয়েই শুরু। কাকেশ্বর কুচকুচ আর চশমা বানান আমি কখনো ভুলব না।চন্দ্রবিন্দুর চ, বেড়ালের শ,আর রুমালের মা নিয়ে চশমা ছিল কোন গল্পের বই পড়া আমার প্রথম ভুল বানান।
ছবিঃ পিক্সাবে