খেলাঘরখেলাঘর

FacebookMySpaceTwitterDiggDeliciousStumbleuponGoogle BookmarksRedditNewsvineTechnoratiLinkedin

bioscope

-২-

ধীরে ধীরে সিনেমার জন্য মানুষের কৌতূহল আর নিছক জিজ্ঞাসায় থেমে থাকল না। কেউ কেউ ভাবলেন নতুন এই প্রকাশ মাধ্যমের সীমানা আরো বাড়িয়ে দেওয়া যায় কিনা। আমরা যে সময়ের কথা বলছি, তখনো পর্যন্ত ছায়াছবি শুধু সাধাসিধা বাস্তব কে দেখাতে পারত, তাতেও খুব আলোছায়ার কারিকুরি ছিল না। তারা সরল ভাবে একটা ঘটনা একটাই যায়গা থেকে দেখত।


সিনেমাকে আরেকটু সম্ভাবনাময় করার জন্য এই সময় ফরাসী দেশের ইতিহাস আরেকজন মানুষকে পাঠিয়েছিল - তাঁর নাম জর্জ মেলিয়ে। তিনি পেশায় কিন্তু আসলে জাদুকর ছিলেন। মেলিয়ে ভেবেছিলেন যে তাঁর ম্যাজিক প্রদর্শনীতে এইসব চলমান ছবির মজাটাও জুড়ে নেবেন। শোনা যায়, তিনি লুমিয়ের ভাইদের কাছ থেকে একটা সিনেম্যাটোগ্রাফ যন্ত্র কিনতেও চেয়েছিলেন ১০,০০০ ফ্রাঙ্ক দামে। সে যুগের পক্ষে খুব খারাপ দাম নয়। কিন্তু দুই লুমিয়ের ভাই রাজি হলেন না। তখন মেলিয়ে নিজেই নিজের যন্ত্র বানিয়ে নিলেন।
তখনো শতাব্দী শেষ হতে আর চার বছর বাকি। ১৮৯৬ সালের শরতকালে সেদিন এক মজার ঘটনা ঘটল। প্যারিসের রাস্তায় মেলিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাসের ছবি তুলছেন, এমন সময় তাঁর যন্ত্রের শাটার আটকে গেল। ফলে কি হল বলতো? সমস্ত বাসের ছবিটাই কালো হয়ে গেল। ফিল্ম ডেভেলপ করার পর মনে হতে থাকল যে বাসটি হটাত করে হয়ে গেছে কালোকফিন বহনকারী গাড়ি!! মানুষ গুলি অদৃশ্য হয়ে আবার ফিরে আসছে!! অন্যরা হলে মুষড়ে পড়ত। মেলিয়ে কিন্তু এই ভুলটিকেই মনে করলেন আশীর্বাদ। কেননা তিনি বুঝতে পারলেন যে ক্যামেরা সত্যি কথা বলে এটা ণেহাতই কথার কথা। তাকে দিয়ে ইচ্ছা করলেই বানানো কথাকেও সত্যি বলে প্রমাণ করে দেওয়া যায়। এইভাবেই নিজের অজান্তেই মেলিয়ে আবিষ্কার করে ফেলেন 'স্টপ মোশন টেকনিক'। বলা যেতে পারে, মেলিয়ে হলেন সেই মানুষ যাঁর হাত ধরে সিনেমার ইতিহাসে প্রথম, শুধুমাত্র "ঘটনা" পেরিয়ে, "গল্প" উঁকি দিল।


একটা গল্পকে কিভাবে সাজাতে হবে শটের পরে শট দিয়ে, সেটাও খানিকটা বার করতে পেরেছিলেন মেলিয়ে। আমাদের ভাষায় যেমন দাঁড়ি, কমা, ড্যাশ- এইসব থাকে, ঠিক তেমনি, ছবি জোড়ার সময় 'ফেড- ইন', 'ফেড-আউট', 'ডিসল্ভ'- এইসব কলা কৌশল মেলিয়ে খুঁজে বার করেন।


মেলিয়ের নানা ছবির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে রয়েছে "ভয়েজ টু দি মুন" ( Le voyage dans la Lune)। ছবির মূল গল্প ছিল প্রখ্যাত কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা জুল ভার্নের একটি উপন্যাস। সেই প্রথম ৮২৫ ফিট লম্বা একটা ছবি তৈরি হল যাতে আস্ত একটা গল্প ঠাঁই পেল।

Melies
'ভয়েজ টু দি মুন' এর একটি দৃশ্য

আজকে এই ছবিটা দেখলে হয়ত তোমাদের হাসি পাবে। ধরে নেওয়া হয়েছে চাঁদের পিঠ একটা সমতল জায়গা যেখান থেকে কেউ তলায় পড়ে যেতে পারে। আবার চাঁদে অভিযানের সময় যে ধরনের রকেটযানে চড়া এবং নামা দেখানো হয়েছে তাও খুব বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু মেলিয়ে কে আমরা অনেক উঁচু আসনে বসাই কারন যত নড়বড়েই হোক না কেন তাঁর ছবি, তিনিই তো আমাদের প্রথম ফিল্ম এর মাধ্যমে গল্প বলা শিখিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম সিনেমায় নানারকম "স্পেশ্যাল এফেক্টস" ব্যাবহার করেন। আর এই জন্যই যাঁর ছবি আমরা এত ভালবাসি সেই চার্লি চ্যাপলিন জর্জ মেলিয়েকে মনে করতেন "আলোর জাদুকর" (the alchemist of light).

 

(ক্রমশঃ)

 

সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
অধ্যাপক, চলচ্চিত্র বিদ্যা বিভাগ,
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্রবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। ইচ্ছামতীর আবদারে ছোটদের জন্য প্রথম বাংলা ভাষায় বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন তিনি।