নববর্ষের উপহার
এই নববর্ষে, ইচ্ছামতী তোমার জন্য এনেছে নতুন উপহার - প্রখ্যাত শিল্পী রেবন্ত গোস্বামী তোমার জন্য এঁকে দিয়েছেন একটা মজার মোরগ এর ছবি। এই মোরগের ছবিটিকে ডাউনলোড করে প্রিন্টআউট নাও, আর ভরিয়ে ফেলো তোমার পছন্দমত রঙে।
আরো মজার জিনিষ আছে। তোমাদের জন্য রইল কতগুলি মজাদার ছবি। ভালো করে দেখ, এই ছবিগুলির মধ্যে, কেমন করে চেনাজানা কতগুলো শব্দ, অন্যরকম মানে নিয়ে ফেলে।
একটু ভাবো, আর আমাকে লিখে পাঠাও এরকম আরো নানা শব্দ যেগুলি দিয়ে মজার ছবি আঁকা যায়। অথবা তুমি নিজেও এঁকে ফেলতে পারো এইরকম মজাদার ছবি, আর পাঠিয়ে দিও আমাকে।
চাষ-বাস
চাঁদের-বুড়ির-চুল
মাছ-রাঙা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
প্রথম পাতাঃগ্রীষ্ম সংখ্যা ২০১০
শুভ নববর্ষ! শুভ নববর্ষ !! শুভ নববর্ষ !!!
শুভ ১৪১৭। ভালো আছ তো? -ইচ্ছামতী আর চাঁদের বুড়ির তরফ থেকে তোমার জন্য প্রথমেই রইল নববর্ষের অনেক ভালবাসা। ভাবছো, পয়লা বৈশাখ তো কবেই চলে গেছে, আর চাঁদের বুড়ির এতদিন পরে মনে পড়লো শুভেচ্ছা জানানোর কথা? আহা...আমি জানি, একটু দেরি হয়ে গেছে, কিন্তু তাতে কি? বাংলা নতুন বছরে তোমার সঙ্গে এই তো প্রথম দেখা হল, তাই না?
কি, একটু একটু রেগে আছো নাকি ? ভাবছিলে তো, চাঁদের বুড়ি নির্ঘাত ভুলেই গেছে নিশ্চয়...যে ইচ্ছামতীর নতুন সংখ্যা আসার সময় হয়ে গেছে? সেই কত্তদিন আগে শীত সংখ্যা নিয়ে এসেছিল, তারপর শীত গিয়ে বসন্তকাল কখন ফুরুত করে চলে গেল, আর প্রচন্ড রেগেমেগে এসে গেল প্রখর গ্রীষ্মকাল। সূর্য্যিঠাকুর দক্ষিণ দেশ থেকে বেড়িয়ে ফিরে চলে এলেন, উত্তরের আঙ্গিনায় দিন বড় আর রাত ছোট হয়ে গেল, অথচ ইচ্ছামতীর প্রথম পাতায় এখনও শীতের বরফঢাকা ঠাণ্ডা পাহাড়ের ছবি ! আর এদিকে গরমে সবার হাঁসফাঁস অবস্থা - ভোর না হতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে সূর্যের উজ্জ্বল আলোয়, বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে গরম, কোথাও বা দরদরে ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর, কোথাও বা বইছে গরম 'লু'...শুকিয়ে যাচ্ছে বারান্দার কোনে লতিয়ে ওঠা নরম অপরাজিতার চারাটা, ঝলসে যাচ্ছে ক্রোটোনের রংবেরঙের পাতাগুলি...
সারাদিন চোখ রাঙ্গিয়ে পৃথিবীকে বকুনি-টকুনি দিয়ে সন্ধ্যের দিকে সূয্যিঠাকুর পাটে গেলে তবেই যেন একটু শান্তি নেমে আসে...তখন দক্ষিণের থেকে সমুদ্দুর পাঠিয়ে দেয় ঠাণ্ডা ঠান্ডা দখিনা হাওয়া, জুড়িয়ে দেয় পৃথিবীর বুক। সারাদিনের ক্লান্তিতে শ্রান্ত পৃথিবী তখন গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়ে তারাভরা ঘন নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে। আকাশকে ডেকে বলে - ও আকাশ, মেঘের দেশে খবর পাঠাও...সূ্য্যিঠাকুরের রাগ কমাতে হবে তো...তাই শুনে আকাশ তড়িঘড়ি খবর পাঠায় মেঘের দেশে...তার খবর পেয়ে মেঘ রাজা এক বিকেলে পাঠিয়ে দেয় ধূসরকৃষ্ণ মেঘসৈন্যদের...তারা দুন্দুভি-দামামা বাজিয়ে ছেয়ে ফেলে আকাশ, ঝলসিয়ে দেয় বিদ্যুতের চকচকে ফলা, ঢেকে দেয় সূর্য্যকে, শুকনো তৃষিত পৃথিবীর বুকে ঢেলে দেয় ঠাণ্ডা জল, তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে ঝড়ের রানী কালবৈশাখি...
দেখ একবার... আমাদের কেন দেরি হল, সেই গল্প করতে গিয়ে করে ফেললাম গ্রীষ্মের সাতকাহন! আসলে সূ্য্যিঠাকুরের রাগের প্রকোপে আমাদেরও একটু হাঁসফাস অবস্থা। আর তাই, ইচ্ছামতীকে সাজিয়ে গুছিয়ে তোমার কাছে নিয়ে আসতে গিয়ে আমি একেবারে ঘেমে-নেয়ে একসা হয়ে গেছি...যাকগে, আর কথা না বাড়িয়ে , আমি বরং তোমাকে জানিয়ে দিই, এই সংখ্যায় তোমার জন্য কি কি থাকছে। এই সংখ্যায় থাকছে চারটে নানা স্বাদের গল্প, অনেকগুলি ছড়া; থাকছে আইভরি কোস্টের বাসিন্দা আলির গল্প; শীত -গ্রীষ্মের নানান তথ্য; গ্রীষ্মের চিঠি; আর থাকছে নববর্ষে তোমার জন্য কিছু মজাদার উপহার।
আচ্ছা বলতো, বৈশাখ মাসটা কি আমাদের কাছে শুধুমাত্র নববর্ষের জন্যই পরিচিত? নাকি বাংলা বছরের প্রথম মাস বলে? না, শুধুমাত্র এই দুটো কারণের জন্য বৈশাখ আমাদের কাছে এত পরিচিত মাস নয়। এই মাস আমাদের কাছে অনেক বেশি পরিচিত একটা বিশেষ দিনের, বিশেষ তারিখে জন্য। এতক্ষণে তুমি নিশ্চয় বুঝে গেছ কোন দিনের কথা বলছি। হ্যাঁ, পঁচিশে বৈশাখ হল সেই বিশেষ দিন। সেইদিন আপামর বাঙালির মনের মানুষ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। ইংরাজি ১৮৬১ সালে ৭ই মে ছিল বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ। এই ২০১১ সালে আমরা তাঁর জন্মদিনের ১৫০ বছর পালন করছি।ভাবো তো, একজন মানুষ, কত বিশাল মাপের হলে, কত ভালবাসার জন হলে, তাঁর জন্মদিন একশো বছরেরও বেশি সময়ে ধরে, সারা দেশ জুড়ে পালন করা হয়...। শুধু তাই নয়, তাঁর লেখা বই 'সহজ পাঠ' স্কুলে ছোটদের বাংলা ভাষা শেখানোর জন্য পড়ানো হয়; তাঁর লেখা অগুন্তি গল্প-কবিতা-উপন্যাস-প্রবন্ধ সব বয়সের মানুষকে নতুন ভাবনা-চিন্তার খোরাক যোগায়; শুধু কি এই? তাঁর লেখা গান, আমাদের জীবনের প্রতি মূহূর্তের সাথী; সকালের প্রার্থনা হোক, বা উতসবের সন্ধ্যা, রবি ঠাকুরের গান ছাড়া যে সবই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই সংখ্যার 'গ্রীষ্মের চিঠি'তে থাকছে এই রবি ঠাকুরের ছোটবেলার, তাঁর ভাবনা-চিন্তার, তাঁর হাতে তৈরি শান্তিনিকেতনের গল্প আর ছবি।
এই মে মাসে ২ তারিখে আমাদের আরেক মনের মানুষ সত্যজিত রায়ের জন্মদিন। তাই এই সংখ্যার 'ছবির খবর' বিভাগে থাকছে অপুর গল্প। পড়ে দেখ কিন্তু।
সত্যজিত রায়
থাকছে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রেবন্ত গোস্বামীর আঁকা আর লেখা; আর থাকছে জনপ্রিয় শিশু-সাহিত্যিক সুনির্মল চক্রবর্তীর লেখা বিদেশি রূপকথা।
চিঠির শুরুতে তোমাকে বলছিলাম মেঘ, বৃষ্টি, কালবৈশাখির গল্প, সূর্য্যিঠাকুরের রেগে যাওয়ার গল্প... এদিকে কিছুদিন আগে পৃথিবী নিজেই যে একটু একটু রাগ দেখাতে শুরু করেছে, সে খবরটা তো তুমি শুনেছ নিশ্চয়...এইয়াফ্যাতলাওকুল (Eyjafjallajokull ) নামের আইসল্যান্ডের সেই আগ্নেয়গিরি, যার ভেতর থেকে মাত্র কয়েকদিন আগে এত লাভা এবং ছাই বেরিয়েছে, যে, সেই ধূসর ছাই কয়েক হাজার ফুট উপরে উঠে গিয়ে ঢেকে ফেলেছিল ইউরোপের অনেকখানি আকাশ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিমানের উড়ান বন্ধ হয়ে গেছিল। এখনও বহু যাত্রী তাদের ঘরে ফিরতে পারেননি, আইসল্যান্ডের বহু খামারের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, এবং এই পরিস্থিতি আরো বেশ কিছুদিন চলতে পারে। এই ছাই ভরতি মেঘের কারনে পরিবেশের ভারসাম্য ও নষ্ট হতে পারে।
এইয়াফ্যাতলাওকুল
এইরকম একটা ঘটনা যখন ঘটে, তখন যেন আমরা নতুন করে, আবার করে বুঝতে পারি, প্রকৃতি মা কতটা শক্তিশালী; তার আঙ্গুলের এক টোকায় ভেঙ্গে পড়তে পারে বিশাল হিমবাহ; তার হালকা ফুঁয়ে উঠতে পারে প্রবল জলোচ্ছ্বাস; সে নড়ে উঠলে জেগে উঠতে পারে আগ্নেয়গিরি। কিন্তু তাই বলে প্রকৃতিকে ভয় পেলে চলবে না। বরং প্রকৃতিকে ভালবাসতে হবে। আগামি ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। তুমি কি ভেবে দেখেছ, কিভাবে তুমি তোমার পরিবেশকে সুন্দর রাখতে পারো, প্রকৃতিকে ভালোবাসতে পারো?
আমি বরং আমার কথা এবার শেষ করি। আর তুমিও বসে পড় ইচ্ছামতীর সাথে, জমিয়ে আনন্দ ভাগ করে নিতে।
ভাল থেকো।
চাঁদের বুড়ি
২১ বৈশাখ ১৪১৭
৫ই মে,২০১০
ছবিঃ উইকিপিডিয়া
- বিস্তারিত
- লিখেছেন চাঁদের বুড়ি
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
দৈত্য ক্যাক্টাসদের দেশে
এবারে আমার লেখা পাঠাতে দেরী হোলো। হঠাৎ জরুরী কাজে আমাদের ১৪০০ মাইল দূরে যেতে হলো। ফিরে আসার সময় পিউ আর আমি একটা দোকানে বাজার করছিলাম – সেই দোকানে দেখলাম মনসা গাছের পাতা বিক্রি হচ্ছে। লোকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কাঁটা সহ মনসা পাতা – সেই পাতা কিভাবে রান্না করে খাওয়া যায় আমরা তো ভেবেই পেলাম না। তাই ভাবলাম তোমার কাছে জানতে চাই। জানো তুমি? কি ভাবে রান্না করে মনসা পাতা?
মনসা গাছের কথায় বলি পিউ আর আমি গেছিলাম একটা জায়গায় যেখানে ৫০ ফুট উঁচু মনসা গাছ আছে! অবাক হলে? সেই যায়গায় ৩০ থেকে ৫০ ফুট মনসা গাছে ভরা। গাছের কাঁটা ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা। জায়গাটা মরুভূমি। নাম সোনোরান মরুভূমি। আমেরিকার দক্ষিন-পশিচম প্রান্তে। অ্যারিজোনা প্রদেশে। সাগুয়ারো ন্যাশনাল পার্ক। সারা পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র সোনোরান মরুভূমিতেই জন্মায় এই ধরনের ক্যাকটাস গাছ।
সোনোরান মরুভূমিতে অনেক ধরনের ক্যাকটাস গাছ আছে। তবে সাগুয়ারো হল বিখ্যাত। এদের কিছু গাছের বয়স ১৫০ বছরেরো বেশী। সাগুয়ারো ক্যাকটাস এর একটা শাখা বড় হতে ৭৫ বছর লেগে যায়। বিশেষত বসন্ত কালে এই গাছ খুব সুন্দর লাগে। সে সময় গাছে ফুল আসে, সাদা ফুলে গাছের ডগা গুলো ভোরে যায়। যেদিকে চোখ যায় চারিদিক বড় বড় ক্যাকটাস গাছে ভরা – আর গাছের ডগা ফুলে ভরতি। মৌমাছি উড়ে উড়ে মধু খাচ্ছে। সে এক দেখবার মতো জায়গা।
যেদিকে দু চোখ যায় সব যায়গায় শুধু ক্যাকটাস গাছে ভরা। গাছের ডালে পাখিরা গর্ত করে বাসা বানায়। জানো কি ক্যাকটাস গাছের বয়স হিসাব করা খুব মুস্কিল, যদি না জানা থাকে কবে গাছটা বসানো হয়েছে। কারন ক্যাকটাস গাছেতে অন্যান্য গাছের মত কোনো ring থাকে না যাতে বয়স গোনা যাবে। নিচের ছবিতে একটা উদাহরণ দেওয়া আছে – যাতে আন্দাজ করা যায় সাগুয়ারো ক্যাকটাস এর বয়স।
বসন্ত কালে ক্যাকটাস গাছে ফুল আসে। ঐ অঞ্চলে আরো অন্য অন্য ক্যাকটাস গাছ ও আছে। ছোলা ক্যাকটাস, প্রিকলী পেয়ার, অরগ্যান পাইপ, ব্যারেল ক্যাকটাস। নিচে দুটো ছবি দিলাম।
আমরা ছবি তোলার জন্য সময় সময় রাস্তা থেকে সরে গিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকেছিলাম। আমাদের প্যান্ট ক্যাকটাস এর কাঁটাতে ভরে গেছিল। কাঁটা বার করতে আমাদের নাজেহাল অবস্থা।
লেখা ও ছবিঃ
দেবাশীষ পাল
রচেস্টার, নিউ ইয়র্ক, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
সাগুয়ারো ন্যাশনাল পার্ক সম্পর্কে আরো জানতে হলে দেখতে পারো এই লিঙ্কটি।
গাছের বয়স-উচ্চতা তালিকাটি নেওয়া হয়েছে এই লিঙ্ক থেকে।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন দেবাশীষ পাল
- ক্যাটfগরি: দেশে-বিদেশে
জয়পুর-গোলাপী শহর
জয়পুর থেকে ফিরছি ইতিহাসের ঘ্রাণ নিয়ে আর মনের মাঝে জেগে আছে গোলাপী শহর, যেখানে কথা বলে ওঠে প্রতিটি প্রাসাদ,দুর্গ,পাথর,চিত্রকলা।
কি বলে জানো? বলে বহুদিন আগের নানা গল্প; তখন আমাদের পৃথিবীটা অন্যরকম ছিল, দেশটাও।
দিল্লী থেকে ট্রেনে জয়পুর যেতে সময় লাগে পাঁচ ঘন্টা।সকাল ছটায় রওনা হয়ে সকাল এগারোটায় পৌঁছে গেলাম জয়পুর,রাজস্থানের রাজধানী যাকে ‘পিঙ্ক সিটি’ বা ‘গোলাপী শহর’ বলা হয়।
গোলাপী শহর
এই শহর টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহারাজ সওয়াই জয়সিং।‘সওয়াই’ শব্দের অর্থ এক এবং এক চতুর্থাংশ।যিনি সাধারণের থেকে সব দিক দিয়ে এক চতুর্থাংশ বেশি এমন প্রতিভাসম্পন্ন রাজাই পেতেন ‘সওয়াই’ উপাধি।
মহারাজ সওয়াই জয়সিং
অনেক কিছু দ্রষ্টব্য জয়পুরে; আমরা শুরু করলাম ‘অ্যালবার্ট হল্ মিউজিয়াম’ দিয়ে।
রামনিবাস বাগ
মিউজিয়াম টি রামনিবাস বাগে অবস্থিত।যেটি নির্মিত হয়েছিল সওয়াই দ্বিতীয় রামসিং দ্বারা।সুইনটন জেকব নামে প্রযুক্তিবিদ এটিকে রূপদান করেন।১৮৮৭ সালে এটি সাধারণের জন্য খোলা হয়।মিউজিয়াম টির স্থাপত্যশৈলী সুন্দর।এখানে রাজাদের ব্যবহৃত বহু দ্রব্যসামগ্রী সযত্নে রাখা আছে।
বিভিন্ন রকম অস্ত্রশস্ত্র,তীর ধনুক,ছুরি,বন্দুক
নানারকম বাদ্যযন্ত্র রাজকীয় পোশাক পরিচ্ছদ,অনেক পুঁথিপত্র,রাজস্থানী চিত্রকলা।
এর থেকে বোঝা যায় রাজারা গান ও ছবি খুব ভালবাসতেন।একটি ইজিপশিয়ান মমির ও দেখা মিলল এখানে।চৈনিক বৌদ্ধ ও রামায়ন মহাভারতের নানা গল্প এখানে রাখা চিত্র ও মূর্তিগুলিতে ধরা পড়ে।
চৈনিক বৌদ্ধ চিত্রকলা
রামায়ণের বানী
আমার সবচেয়ে মজা হয়েছে প্রচুর পায়রা দেখে।
পায়রা
গাছের এডালে ওডালে লাফিয়ে বেড়াচ্ছিল দুষ্টু কাঠবেড়ালী, যেন পুটুস পাটুস চোখে আমাদের ওখানেই থেকে যাওয়ার অনুরোধ করছিল।তবে আমাদের যে যেতে হবে আর এক অভিযানে।এবার গন্তব্য অম্বর দূর্গ(স্থানীয় ভাষায় আমের)।
আধ ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম সেখানে।এটি একটি গিরিদুর্গ।ঘুরে ঘুরে পথ গেছে সেখানে।খুব উত্তেজনা আর আনন্দ হচ্ছিল মনে,যেন বইয়ে পড়া কোনো রূপকথার গল্প আস্তে আস্তে জীবন্ত হয়ে উঠছে আর এইমাত্র ধরা দেবে চোখের সামনে।আর হলও তাই !
অম্বর দূর্গ
আমার নতমস্তক হয়ে শত শত বার প্রনাম জানাতে ইচ্ছে করছিল ঐ রাজাদের,আর নিজেকে সত্যিই ধন্য মনে হচ্ছিল এই ভারতের এই পুণ্য ভুমিতে আমার জন্ম এই ভেবে।
দূর্গ থেকে নিচের দৃশ্য অভাবনীয় সুন্দর।
কত যুদ্ধ, বিগ্রহ,রাজ্যপাট আর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এই দূর্গগুলি।সেই কীর্তিমান রাজারা আজ নেই,কিন্তু এখানে প্রতিটা ইঁটপাথরে কান পাতলে শোনা যাবে তরোয়ালের ঝনঝনা,ঘোড়া ও হাতিদের সগর্ব আস্ফালন্।তাই তো বললাম,এখানে ইতিহাস কথা বলে।
দুর্গের মাথায় বসেছিল অনেক হনুমান,এত জনমানবে তাদের ভয়ডর নেই;তারাও বেশ রাজকীয় মেজাজে মনের সুখে সুস্বাদু গাঁদাফুল ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল,যেন কোনো লোভনীয় মিঠাই খাচ্ছে।
শিসমহলের কারুকার্য দেখে মুগ্ধ হলাম।
আমের দুর্গের মধ্যেই আছে মানসিং মহল।
দ্বিতীয় দিন গেলাম জয়গড় কেল্লা দেখতে।সেটি আমের কেল্লাটির থেকেও ওপরে। কেল্লাটি বানিয়েছিলেন মহারাজ জয়সিং।এটি মূলত সৈন্যদের জন্য বানানো।
মহারাজ জয়সিং একটি কামান নির্মাণ করান যার নাম জয়বান।
এরপর আমরা চড়লাম উটের পিঠে।দেখ কি সুন্দর মুখ তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
দেখলাম সওয়াই প্রতাপ সিং এর তৈরী জলমহল,যেটি মানসাগর সরোবরে স্থিত।গ্রীষ্মকালে একটু শীতল পরিবেশে থাকার জন্যই এটি নির্মিত হয়।
শুনলাম রাজস্থানী বাদ্যযন্ত্রে সঙ্গীত।
মহারাজ মাধো সিং যখন ১৯০২ সালে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন তখন বিশালকায় দুটি রৌপ্যপাত্রে গঙ্গাজল নিয়ে গিয়েছিলেন।
তৃতীয় দিন দেখলাম রাজা সওয়াই জয়সিং এর তৈরী যন্তরমন্তর।সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিনায়ন দেখার জন্য নাড়ীবলয়।‘বৃহৎ সম্রাট যন্ত্র’ নামে সবথেকে বড় সূর্যঘড়ি।
গণেশ মন্দিরে গিয়ে গণেশজীকে প্রনাম করে দেখে এলাম বিড়লা মন্দির।রাতে চৌকিধানী গিয়ে দেখলাম রাজস্থানী নৃত্য।
দড়ির ওপর খেলা বাইস্কোপ আর পুতুল নাচে ছোটোবেলাকে আবার ফিরে পেলাম।
তিন রকম রুটি ও নানারকম মন মাতানো পদের রাজস্থানী থালি আহারে মন ভরে গেল।
এবার ফেরার পালা।পরেরদিন সকালে ট্রেন। তাই তোমাকেও বলি,যাও নিজের চোখে দেখে এসো ইতিহাস কে।দেখবে সে কখন তোমার বন্ধু হয়ে গেছে।
দ্বৈতা গোস্বামী
গুরগাঁও, হরিয়ানা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী
- ক্যাটfগরি: দেশে-বিদেশে
লোহারা
হিমাচল প্রদেশের এক ছোট্ট গ্রাম লোহারা। এই গ্রামের বাসিন্দারা কুলু শাল তৈরির জন্য বিখ্যাত । আমি সেইসব শিল্পীদের সঙ্গে ডিজাইন এবং রঙের ব্যবহার নিয়ে নতুন কাজ করার জন্য সাত দিনের ওয়ার্কশপ করতে গিয়েছিলাম লোহারাতে।
এই গ্রামটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। লোক কথায় বলে, মান্ডির রাজা চিত্রসেন তাঁর ভাইকে এইখানে যুদ্ধে হারিয়েছিলেন। চিত্রসেন আদতে ছিলেন বাংলার সেন বংশের রাজা। বাংলাদেশ যখন মুসলিম নবাবদের হাতে চলে যায়, তখন চিত্রসেন উত্তর ভারতের দিকে চলে যান। চিত্রসেন ছিলেন ফর্সা, কিন্তু তাঁর ভাইয়ের গায়ের রঙ ছিল কালো। চিত্রসেন মাঝে মাঝেই তাঁর ভাইকে "কয়লা" বলে ক্ষেপাতেন। শেষে একদিন চিত্রসেনের ভাই রেগে গিয়ে তাঁকে সম্মুখ যুদ্ধে আহ্বান করলেন। যুদ্ধের জায়গা স্থির হল এই ছোট্ট গ্রামটি। রাজা আর তাঁর ভাইয়ের সাথে তাঁদের নিজের নিজের সৈন্যবাহিনীও এলো।যুদ্ধের শেষে ভাইকে হারিয়ে যখন চিত্রসেন তার মুন্ডচ্ছেদ করতে উদ্যত হলেন, তখন, তাঁর ভাই বললেন -"লো হারা" ( নাও, হার স্বীকার করলাম )। এই কথা শোনার পর চিত্রসেন আর তাঁকে মারলেন না।
সেই থেকে এই জায়গার পুরানো নাম মুখে মুখে বদলে হয়ে গেল লোহারা। মানুষ গ্রামটার পুরানো নাম ভুলে গেল।
চিত্রসেন বহুবছর মান্ডিতে রাজত্ব করেছিলেন। তিনি নানারকম শিল্পকর্মে উতসাহ দিতেন। তিনি উত্তর ভারতে একজন জনপ্রিয় বাঙালি রাজা ছিলেন।
এই লেখার সঙ্গে লোহারা গ্রামের শেষনাগের মন্দিরের একটা ছবি এঁকে দিলাম।
রেবন্ত গোস্বামী
অধ্যাপক
গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যাণ্ড ক্রাফট, কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন সৃজন বিভাগ
- ক্যাটfগরি: জানা-অজানা