সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চাঁদের বুড়ির চরকা-চিঠিঃ ১৪২৮/০৩ঃ সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন

পুপুর কাকুর বিয়ে। বাড়ি ভর্তি লোকজন, হইচই। বড়রা একটু পরে পরেই হাঁক পাড়ছেন - চা খাব, কফি খাব। ঝটপট চা তৈরি হয়ে চলেও এল। আর তারপরেই পুপু লক্ষ্য করল, সবাইকে চা দেওয়া হচ্ছে পাতলা পাতলা সাদা প্লাস্টিকের কাপে। 'সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক'-এর তৈরি কাপ, যেগুলিতে একবার চা খেয়েই ফেলে দিতে হয়। এদিকে স্কুলে তো ওদের শেখানো হয়েছে যে এই সব প্লাস্টিক ব্যবহার করা উচিত নয়। তাই পুপু একটু জোরে সবার মাঝে একবার বলল - " এ কীইইই...তোমরা এই কাপগুলো কেন ব্যবহার করছ? এগুলো ব্যান্‌ড্‌, জানো না?" কিন্তু পিসিমণি, জ্যেঠু, কাকু, ঠাম্মা, ছোটপিসি, সোনা দিদি, কেউ পাত্তাই দিল না ওকে। পুপু দেখল, বাবা সবাইকে চা দিচ্ছেন ওই প্লাস্টিকের কাপে। ও আবার বাবাকে ডেকে বলল — " আরে...এই কাপগুলো তো সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক, তোমরা জানোনা এগুলো রিসাইকেল হয় না, ল্যান্ডফিলে জমে থাকে... তোমরা পেপার কাপ আনোনি কেন?" কিন্তু গল্পে-আড্ডায় মশগুল বড়রা ওর কথা শুনলেনই না। পুপুর একবার মনে হল, পিসিমণি বোধহয় শুনেছেন, কিন্তু দেখল পিসিমণিও কাউকেই কিছু বললেন না। কী আর করা, বড়রা তার কথায় কান দিচ্ছে না বলে মনটা একটু খারাপ হল অবশ্য। তাই পুপু এক কোণে বসে আবার মায়ের মোবাইল খুলে নিজের পছন্দের গল্পের বইটা পড়তে শুরু করে দিল।

এইরকম অভিজ্ঞতা তোমারও এক-দুইবার হয়েছে নিশ্চয়? এই যে, যেটাকে তুমি ভুল বলে জানো, স্কুলে পড়ায়, পরীক্ষায় উত্তর দিতে হয়, প্রোজেক্ট কপি বানাতে হয় সেইসব বিষয় নিয়ে বড়রা কেউ মাথাই ঘামান না? আমরা, আজকের বড়রা, এমন সব ছোট্ট ছোট্ট জরুরী বিষয় নিয়ে বহুদিন আগে থেকেই মাথা ঘামাতে ভুলে গেছি বলেই আজ তোমাদের ছোট্টবেলা থেকে এত সচেতন হতে হচ্ছে। কিন্তু তোমরা আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও আমরা শুনি কই? তাই বলে পুপুর মত তুমিও বড়দের এমন ভুল দেখলে মন খারাপ করে চুপ করে থেকো না। আর নিজের এইসব ভালো অভ্যাসগুলো কোনোদিন ভুলো না।

এই যে অতিমারির মধ্যে আমরা আছি, সেই গতবছর থেকেই —সঠিকভাবে মাস্ক পরতে হয়, বারবার হার ধুতে হয়, বাইরে বেরোলে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হয়—এমন সমস্ত প্রাথমিক নিয়ম তোমার মত ছোটরাও জেনে গেছ। আমাদের কত নতুন-পুরনো বন্ধুরা, ছবি এঁকে পাঠিয়েছে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ছোটদের থেকে বড়রা বেশি অসতর্ক। তাঁরা অনেক সময়েই নিয়ম মানেন না, মাস্ক ব্যবহার করেন না, ভীড়-জমায়েতে হাজির হন। বাড়ির বড়রা যদি কোনো কারণে এমন সব নিয়ম নাও মানেন, তুমি কিন্তু নিয়ম মেনে চলতে ভুলো না।

আমরা প্রত্যেকে যদি ভাবি- আর কেউ ভালো অভ্যাস রাখুক বা না রাখুক, আমি যতটা সম্ভব রাখব, তাহলে দেখা যাবে একজন একজন করেও, ভালো অভ্যাস বজায় রাখার মানুষের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। আর পরিবেশকে ভালো রাখা, প্রকৃতির যত্ন নেওয়া, অন্যদের ভালো থাকার কথা ভাবা যে আসলে নিজেদেরকেই ভালো রাখার একটা উপায়, সেটা তো তুমি, তোমার বন্ধুরা, সবাই জানো এখন, তাই না?

ইচ্ছামতীর এই কিস্তিতে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের কয়েকজন নতুন বন্ধু ছড়া লিখে, ছবি এঁকে পাঠিয়েছে। সবগুলো পড়ো কিন্তু। জুন মাসের ৫ তারিখ পেরিয়ে গেল 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস'। সেই কথা মনে রেখে আমরা বন্ধুদের জন্য গত মাসে পোস্ট করেছিলাম নতুন লেখালিখির খেলার পোস্টার, যার বিষয়ভাবনা ছিল 'আমার পছন্দের জীবজগৎ'   -  আমরা ভেবেছিলাম , নিজের পছন্দের গাছপালা বা পশু বা পাখির সম্পর্কে অনেক বন্ধুর লেখা পাবো। কিন্তু এসেছে মোটে দুটো লেখা। কেন বলতো? লেখার বিষয় পছন্দ হয়নি বুঝি? নাকি অনেকদিন স্কুল যাওয়া বন্ধ বলে মনখারাপ? কেমন বিষয়ে লেখালিখি করতে পারলে তুমি খুশি হবে সেটা আমরা জানতে চাই। আমাদের মেইল করে জানিও, কেমন?

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ইচ্ছামতীতে প্রকাশিত হয়েছিল দুটি লেখা - 'আমি হব হামিংবার্ড এর মত' আর 'মোত্তাইনাই!' পড়েছিলে কী? এছাড়া , এই কিস্তিটা জুড়ে, বিভিন্ন বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলির মধ্যে দিয়ে, নানাভাবেই ফিরে ফিরে এসেছে প্রকৃতি জীবজগৎ আর অন্য মানুষদের সঙ্গে মিলেমিশে ভালো থাকার আর ভালো রাখার নানাস্বাদের গল্পের খোঁজ।

সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন সঙ্গে নিয়ে ভালো থেকো।

চাঁদের বুড়ির চরকা

১ আষাঢ়, ১৪২৮
১৬ জুন, ২০২১

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা