সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চাঁদের বুড়ির চরকা-চিঠি - ১৪২২/০৫- স্বাধীনতা দিবস নিয়ে গপ্পোগাছা

আজ ভারতের ৬৯ তম স্বাধীনতা দিবস।

আজকের দিনে , ইচ্ছামতীর তরফ থেকে আমাদের দেশের জন্য রইল অনেক ভালবাসা।

সকাল সকাল গপ্পো করছিলাম ইচ্ছামতীর সাথে। আমাদের দেশ নিয়ে। আমাদের 'স্বাধীনতা' নিয়ে। অনেক অনেক গপ্পো হল। অনেক কথা হল, সেইসব কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে আমরা 'আমাদের দেশ' বলতে কি ভাবি, সেটাই বোঝার চেষ্টা করলাম। আর যেটা বুঝলাম, সেটা তোমার সাথে ভাগ করে নিচ্ছি।

' আমাদের দেশ' মানে কিন্তু শুধুই একটা নাম নয়। ভূগোল বইতে একটা আঁকাবাকা সীমান্ত আঁকা ম্যাপ নয়। আমাদের দেশ মানে শুধু কয়েকটা আলো ঝলমল বড় শহর নয়। বা জাতীয় ক্রিকেট দল, কয়েকজন নামিদামী খেলোয়াড় বা অভিনেতা নন। আমাদের দেশ মানে শুধুই সেইসব মানুষ নন যাঁরা বিশ্বের দরবারে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। আমাদের দেশ মানে কয়েকটা মন্দির বা মসজিদ নয়। আমাদের দেশ মানে শুধুই কয়েকটা মাত্র রঙ নয়। এই সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা দেশের প্রতিটি কোণ, প্রতিটা পাহাড় আর নদী, উপত্যকা আর বেলাভূমি, শহর আর গ্রাম, ফুল আর ফল, পাখি আর পশু, মাছ আর পোকা, প্রতিটা ভাষা-নৃত্য-গীত, প্রতিটা উপাসনালয়, প্রতিটা রঙ, আর প্রত্যেকটা মানুষকে নিয়েই - 'আমাদের দেশ'।

'ভারতবর্ষ', 'ভারত', বা 'ইন্ডিয়া' - যে নামেই ডাকো না কেন, আমাদের দেশ একটাই। আর আমাদের এই দেশটা বড়ই ভাল। দেশের কিছু মানুষ যদি ভুল কাজ করে, তার জন্যে পুরো দেশটাকে খারাপ বলে যারা, ইচ্ছামতী আর আমি তাদের দলে নই। তোমার ক্লাসে কেউ যদি দুষ্টুমি করে, তার জন্য কি সারা ক্লাসের শাস্তি হওয়া উচিত?

আর তাহলে 'স্বাধীনতা' মানে কি? - জানতে চাইল ইচ্ছামতী।

সে তো অনেক বড় গল্প। এখন করতে বসলে রাত পেরিয়ে আরেকটা দিন এসে যাবে। এটুকু বলি, বৃটিশ সাম্রাজ্যের শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেই স্বাধীন হওয়ার দিনটাই আমরা প্রতিবছর ১৫ই আগস্ট উদযাপন করি। সেই গল্প তো আমরা সবাই জানি। কেউ একটু বেশি বেশি জানি, কেউ একটু কম কম জানি - সব্বার স্কুলের ইতিহাস বইতে আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনী বর্ণনা করা আছে। ইচ্ছামতীর পাতাতেও ' স্বাধীনতার গল্প ' ধারাবাহিকে আমরা একটু একটু করে ভারতের স্বাধীনতা পাওয়ার ঘটনাক্রম জানতে পারছি। কিন্তু "স্বাধীনতা" শব্দের অর্থ এখানেই থেমে যায় না। "স্বাধীন" হওয়ার দায় কিন্তু কম নয়। ঐ যে ইংরেজিতে একটা কথা আছে - 'With great power comes great responsibilities'- কথাটা কয়েকবছর ধরে 'স্পাইডারম্যান' ছবির দৌলতে খুবই জনপ্রিয়। স্বাধীনতা লাভ করা মানে তো এক ধরণের ক্ষমতা লাভ করা। তাই সেই ক্ষমতা পেয়ে শুধু আনন্দ করলেই চলবে না। ক্ষমতার সাথে সাথেই আসে দায়িত্ব। যেমন তুমি ক্লাসে যদি মনিটর হও, তাহলে সেটা একটা বিশেষ ক্ষমতা, যেটা তোমাকে ক্লাসের শিক্ষক দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতা পেয়ে, মনিটর হলেই তো আর হল না ! ক্ষমতা পেয়ে যে যে কাজ তোমার করার দায়িত্ব, সেগুলো যদি তুমি সঠিকভাবে পালন না কর, তাহলে আর মনিটর হয়ে লাভ কি ?

আমাদের দেশের স্বাধীনতা লাভের পর, গত ৬৯ বছর ধরে যাঁরা দেশের মনিটর হয়ে এসেছেন, তাঁরা তাঁদের ক্ষমতাকে প্রয়োগ করে কে কতটা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন, সেই নিয়ে বড়দের মত তর্কাতর্কিতে যাওয়ার কোন দরকারই নেই। বরং এটা ভেবে দেখতে পার, এই স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে তুমি দেশের প্রতি কতটা দায়িত্ব পালন করতে চাও । দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করার জন্য কিন্তু দেশের মনিটর হওয়ার দরকার নেই।

'স্বাধীনতা দিবস' বললেই তো মনে পড়ে ভারতী স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা, নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজের সশস্ত্র সংগ্রামের কথা, আর আধুনিক ভারতের জমকালো সেনাবাহিনীর কথা। তাই আজ থেকে ইচ্ছামতীর পাতায় শুরু হল এক নতুন ধারাবাহিক - 'সেনাবাহিনীর গল্প'। লেখক ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক। তাঁর লেখা এই গল্পগুলি কিন্তু সব আসলে সত্যি ঘটনা, সত্যি সত্যি সেনাদের জীবনের নানা ধরণের গল্প। শুধু গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য স্থান-কাল-নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে।

অন্যান্য গল্প এবং তথ্যমূলক লেখাগুলির সাথে পড়ে দেখ 'সাউন্ড অফ মিউজিক' ছবির পঞ্চাশ বছর পূর্তি নিয়ে প্রতিবেদন, 'ছবির খবর' বিভাগে। 'সাউন্ড অফ মিউজিক' ছবিটি যদি না দেখে থাক, তাহলে অবশ্যই দেখে ফেল। এই ছবিতেও রয়েছে আরেক স্বাধীনতা প্রাপ্তির গল্প।

আজ এই পর্যন্তই থাক। কথা হবে আবার।

ভাল থেক।


ছবিঃ পারিজাত ভট্টাচার্য্য

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা