সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চন্দনার বিড়ালেরা

চন্দনার তিনটে বিড়াল – মেনি, পুষি আর ম্যাঁও। মেনি ধবধবে সাদা, পুষি ছাইছাই রঙের আর ম্যাঁও সাদার উপর পাঁশুটে ছোপ।

চন্দনার বিড়াল বললেও এরা কিন্তু কেউই চন্দনাদের বাড়িতে থাকেনা । চন্দনাদের বাড়ী শহরের একপ্রান্তে, অনেক ফ্ল্যাটবাড়ী গজিয়ে উঠলেও কিছু কিছু ফাঁকা জায়গা রয়ে গেছে । চন্দনাদেরও একতলা বাড়ি, পিছনে ছোট একটা উঠান মত জায়গা, মা কিছু কিছু গাছপালাও লাগিয়েছেন ।মেনি, পুষি, ম্যাঁও প্রতিদিন সকালে আর সন্ধ্যায় সেখানে এসে ডাকাডাকি করে। চন্দনা এসে ওদের ভাত-টাত দেয়, মা’কে ম্যানেজ করতে পারলে ছোট-বড় মাছের টুকরো । কোনও দিন মা’কে লুকিয়ে নিজের সকালের দুধটা ।

অন্যসময় এদের নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। কখনো সেনকাকুদের গ্যারাজে, কখনো বোস-জ্যেঠিমাদের বাড়ির ছাদে। কোনদিন ঘুরতে ঘুরতে অন্য পাড়াতেও চলে যায় । দু-একদিন হয়ত এলোই’না । চন্দনা মনখারাপ করে বসে থাকে, এদিক-ওদিক খোঁজাখুঁজি করে। তারপর হঠাৎ একদিন সকালে আবার ম্যাঁওম্যাঁও।

চন্দনা’র পুষ্যিদের বাবা-মা কারও বিশেষ পছন্দ নয় । মা রেগেমাগে বলেন, পুষবি ত একটা ভাল দেখে কুকুর-টুকুর পোষ, রাস্তার বিড়ালদের সঙ্গে এত মাখামাখি কিসের ? বাবা গম্ভীর ভাবে বলেন, বিড়াল ডিপথিরিয়া’র বাহক।

চন্দনা অবশ্য এসব গায়ে মাখেনা ।

চন্দনার বিড়াল-প্রীতি গোটা পাড়াই জানে।সে পুষ্যিদের খুজতে বেরলে পাড়ার ছেলেরাই তাকে দেখিয়ে দেয় । আবার কারও বাড়ি থেকে দুধ বা মাছ চুরি গেলে চন্দনাকেই কথা শুনতে হয় ।

সেবার বৃষ্টি হয়ে গোটা পাড়া ভেসে গেল । চন্দনা বাবাকে নিয়ে মেনি-পুষিদের খুজতে বেরল । অনেক খুঁজে দেখা গেল জ্যেঠিদের দাওয়ায় তিনজনে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। মাঝে মধ্যে জলের ছাট আসছে।

চন্দনা একটা বস্তায় ঢূকিয়ে তিনজনকে বাড়িতে এনে তুলল। মা চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় করলেন। বিড়ালেরা অবশ্য এসবে কান না দিয়ে মহানন্দে খেয়ে ঘুমিয়ে সময় কাটাতে লাগল। তাদের ময়লা পরিস্কার করতে গিয়ে কাজের মাসী বেশি মাইনে চেয়ে বসল । দুদিন পরে জল নেমে গেলে চন্দনা বাধ্য হয়েই কাঁদো্কাঁদো মুখে আবার ওদের বাইরে ছেড়ে দিয়ে এল।

কিছুদিন পর চন্দনার পুষ্যিদের সংখ্যা বেড়ে গেল। মা কিছুদিন থেকেই বলছিলেন, একদিন সকালে দেখা গেল মেনি আসেনি। চন্দনা খুঁজতেখুঁজতে গিয়ে দেখল সে বোস-জ্যেঠিমাদের ছাদে পুরান কাগজ, ন্যাকড়া আরও কি সব হাবিজাবি জড়ো করে বসে আছে। চন্দনাকে দেখে করুণস্বরে খুব আস্তে করে মিঁউ করল । চন্দনা জ্যেঠিমাকে বলে মেনিকে বিস্কুট আর জল দিয়ে এল। পরের দিন সকালে যেতে জ্যেঠিমা হাসিমুখে বললেন, উপরে গিয়ে দ্যাখ, তোর পুষ্যি বেড়ে গেছে । চন্দনা দৌড়ে গিয়ে দেখল লালচে বড় ইঁদুরের মত দুটো বাচ্চা মেনির পেটের তলায় শুয়ে আছে । সে বাড়ি থেকে একবাটি দুধ এনে মেনিকে খাইয়ে দিল । কিছুদিন পর মেনি তার দুই সন্তানকে নিয়ে আবার সকালে সন্ধ্যায় আসা-যাওয়া শুরু করল ।

মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে চন্দনা মা’র সঙ্গে জামসেদপুরে মামা’র বাড়ি বেড়াতে গেছে। যাবার আগে সে বাবাকে পইপই করে তার পুষ্যিদের দেখাশুনো করতে বলে গেছে ।

কিন্তু দুদিন পরে বাবার ফোন পেয়ে তার মাথায় হাত । তার বেড়ালেরা কয়েকদিন ধরে আসছেনা। পাড়াতেও দেখা যাচ্ছেনা।

চন্দনার বিড়ালেরা

চন্দনা কান্নাকাটি করে পরের দিনই মা’কে নিয়ে ফিরে এল। এসে আর একমুহূর্ত দেরী নয়, সে গোটা পাড়া চষে ফেলল । তার বিড়ালেরা কোথাও নেই। সকলেই বলল কয়েকদিন ধরে ওদের দেখা যাচ্ছেনা ।

চন্দনা মনের দুঃখে রাতে কিছু খেলনা। পরের দিন সকালে মায়ের বকুনি খেয়ে সে একটা টোস্ট দাঁতে কাটছিল । গোটা বাড়ীতে একটা থমথমে ভাব ।

এমন সময়ে ম্যাঁওম্যাঁও। চন্দনা পড়ি কি মরি করে দৌড়ে গিয়ে দেখল সবাই এসে গেছে। মেনি, পুষি, ম্যাঁও, মেনির দুই বাচ্চা । চন্দনা আনন্দে কেঁদে ফেলল ।

খবর পেয়ে মা-বাবাও চলে এসেছেন। মা বড় একবাটি দুধ এনে উঠানে নামিয়ে দিয়ে রাগের গলায় বললেন, এই নাও, খাইয়ে উদ্ধার কর। এরপর যেখানে যেখানে যাবে, এদের সঙ্গে করে নিয়ে যেও ।

বিড়ালেরা দুধের বাটিতে মুখ ডুবিয়ে মহানন্দে সায় দিয়ে বলল, হ্যাঁও ।

শিল্পীঃ শিল্পী ঘোষ

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা