দাঁড়কাক
সে অনেক অনেকদিন আগেকার কথা। এক দেশে ছিল এক রানি আর রানির ছিল একটা ছোট্ট মেয়ে। সে এতটাই ছোট ছিল যে তাকে সবসময় কোলে কোলে নিয়ে রানিকে ঘুরে বেড়াতে হত। কারন সে যে খুব ছোট্ট ছিল আর রোগাও ছিল। তবে ছোট্ট হলে হবে কি মেয়েটা ছিল ভীষন ছটফটে আর দুষ্টু। তাকে খাওয়াতে ঘুম পাড়াতে আর তার কান্না থামাতে রানির ঝামেলার অন্ত নেই। একদিন রানি এমনি করেই কোলে করে মেয়েকে নিয়ে তার দুষ্টুমি থামানোর জন্য রাজমহলের বারান্দায় পায়চারি করছেন কিন্তু মেয়েতো কিছুতেই কথা শোনেনা, কান্না থামায় না। রাজমহলের পাশ দিয়ে তখন উড়ে যাচ্ছিল অনেকগুলো দাঁড়কাক আর রানি তো তখন মেয়ের দুষ্টুমিতে রেগে আগুন, তাই জানলা খুলেই দাঁড়কাকের দিকে তাকিয়ে মেয়েকে বলল তুই যেন এমনি দাঁড়কাক হয়ে উড়ে যাস অনেক দূরে তাহলেই আমি খানিকক্ষন বিশ্রাম পাব। কিন্তু রানির মুখের কথা শেষ হতে না হতেই তার মাথার ওপর ঝটপট শব্দ করে মেয়েটা দাঁড়কাক হয়ে উড়ে গেল অনেক অনেক দূরে এক অন্ধকার বনের ভেতর। সেদিন থেকে রানির মেয়ের আর কোন খবর নেই- সে দাঁড়কাক হয়েই রইল আর রানির বুকে জমে রইল দুঃখের পাহাড়।
তারপর অনেকদিন পর একজন লোক সেই অন্ধকার বনের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শুনতে পেল দূরে কোথাও একটা দাঁড়কাক কাঁদছে। কাকের কান্নার শব্দ অনুসরন করে করে লোকটা দাঁড়কাকের কাছে পৌঁছতেই, দাঁড়কাক বলে উঠল
বন্ধু, আমাকে তুমি সাহায্য কর। আমি এক রানির মেয়ে, কিন্তু এখানে জাদুবলে আমি বহুদিন দাঁড়কাক হয়ে আছি;
তুমি আমাকে উদ্ধার করে সাহায্য করবে?
এই কথা শুনেই লোকটা জিজ্ঞেস করল সে কিভাবে তাকে এই জাদুরুপ থেকে আবার পুরোনো রুপে যেতে সাহায্য করতে পারে?
দাঁড়কাক বলল, বন্ধু শোনো, তোমাকে কি করতে হবে- এখান থেকে আরও কিছু দূর গভীর বনের দিকে গেলেই তুমি দেখতে পাবে একটা পুরোনো বাড়ী, সেখানে এক বুড়ি বসে রয়েছে- সে তোমাকে খাবার আর জল দেবার জন্য ডাকবে, কিন্তু তুমি ওইসব খবরদার ছুঁওনা কারন তাহলেই তুমি ঘুমিয়ে পড়বে আর আমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। বাড়ীর পেছনে যে বাগান আছে সেখানে দেখবে চামড়ার বিশাল এক স্তুপ, সেখানেই তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কোরো। আগামী তিন দিন ধরে প্রতি দুপুরেই ঠিক দুটোর সময় আমি ঘোড়া গাড়ী করে আসব সেখানেই।প্রথম দিন আমি সাদা ঘোড়া করে, দ্বিতীয় দিন খয়েরী ঘোড়া করে আর শেষের দিন আমি আসব কালো রঙের ঘোড়া টানা গাড়ি করে। তুমি ঘুমিয়ে পড়লে কিন্তু আমি মুক্ত হতে পারব না। এই কথা শুনে লোকটা দাঁড়কাককে আশ্বস্ত করল যে, সে ঘুমিয়ে পড়বে না, আর দাঁড়কাকও মানে রানির সেই মেয়ে আরও একবার তাকে মনে করিয়ে দিল যে সেই বুড়ির কাছ থেকে সে যেন জল খাবার কিচ্ছুটি না খায় কারন বুড়ির হাত থেকে কিছু খেলেই সে ঘুমিয়ে পড়বে।
দাঁড়কাকের কথা শুনে লোকটা এগিয়ে গেল বাড়ির দিকে; গিয়ে দেখল ঠিক যেমনটি বলেছিল দাঁড়কাল ঠিক তেমনই এক বুড়ি বসে রয়েছে বাড়ীর দাওয়ায়। দেখা মাত্রই বুড়ি তার কাছে এগিয়ে এল , তাকে দেখেই বলল তুমিতো বাবা বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছো, অনেক দূর থেকে আসছ বুঝি? এসো কিছু খাবার আর জল খেয়ে একটু জিরিয়ে নাও। কিন্তু লোকটা তো দাঁড়কাককে কথা দিয়েছে তাই সাথে সাথেই সে না বলে দিল। কিন্তু বুড়িও তো নাছোড়বান্দা, তাই তাকে বলল খাবার না খাও এক গ্লাস জল অনন্ত খাও বাবা, তাহলে কিছুটা হলেও একটু স্বস্তি পাবে। লোকটাও এতোটা দূরে হেঁটে আসার ফলে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, দাঁড়কাকের কথা ভুলে গিয়ে সেও জল খেয়ে নিল। দুপুর দুটোর কিছু আগেই দাঁড়কাকের কথা মতো সে বাড়ীর পেছনের বাগানে যেখানে চামড়ার বিশাল স্তুপ ছিল সেখানে হাজির হল আর দাঁড়কাকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু, কিছুক্ষন পরেই লোকটার চোখ লাল হতে হতে ঘুমে ঢলে এল, সে নিজেকে হাজার চেষ্টা করল চোখ বড় করে করে জেগে থাকার কিন্তু কোন কিছুই কাজে লাগল না। কিছুক্ষনের মধ্যেই সে এমন ঘুমে চলে গেল যে বাইরের কোন শব্দই আর তার কানে গিয়ে পৌঁছনার মতো অবস্থা রইল না।
এদিকে দাঁড়কাক তো ঠিক দুটোতে তার কথা মতো সাদা ঘোড়া টানা গাড়িতে করে এসে হাজির। এসেই ঠিক যা ভেবেছিল, তাই দেখে ভীষন দুঃখ পেল, বারে বারে বলে দেওয়া স্বত্ত্বেও তার কথা না শুনে লোকটা সেই ঘুমিয়েই পড়ল। দাঁড়কাক আর কি করে, মনের কষ্টে সে ফিরে গেল সেদিনের মত।
পরেরদিন লোকটা ঠিক করল তাকে যতই বলা হোক না কেন সে কিচ্ছুটি মুখে তুলবে না এমনকি এক ফোঁটা জল পর্যন্ত সে গ্রহন করবে না। কিন্তু বুড়ি তো নাছোড়বান্দা আর শেষপর্যন্ত বুড়ির এই জোড়াজুড়িতে হেরে গিয়ে লোকটা আগের দিনের মতই সেদিনও এক গ্লাস জল খেয়ে ফেলল। আর দুপুর দুটোর আগে বাগানের ভেতর চামড়ার স্তুপ এর ওপর অপেক্ষা করতে করতে আগের দিনের মতই গভীর ঘুমে চলে গেল। এমনিই রাজকন্যা দুঃখে ছিল গতদিনের কারনে, তার ওপর আজকেও এসে সে দেখল লোকটা ঘুমিয়ে পড়েছে। খয়েরী রঙের ঘোড়াদের থেকে নেমে এসে সে লোকটাকে অনেক ডাকাডাকি করে তোলার চেষ্টা করল , কিন্তু সে এতটাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়েছিল যে কোন শব্দই তার কানে গিয়ে পৌঁছলোনা আর রাজকন্যেও মনের দুঃখে সেদিনের মত ফিরে গেল।
তৃতীয় দিন লোকটা মনে মনে ঠিক করল আজ যে করেই হোক রাজকন্যার কথা রাখতেই হবে আর আজ সে সত্যিই এক দানা খাবার তো দূর অস্ত, এক ফোঁটা জলও সে স্পর্শ করবেনা। তাই দেখে বুড়ি তাকে বলল, তুমি কি ভেবেছ? না খেয়ে মরে যাবে? লোকটা এই কথা শুনে বলল যে সে কথা দিয়েছে কাউকে তাই খাবার আর জল কিছুই গ্রহন করতে পারবেনা আর সে চায়ও না তার দেওয়া কথা থেকে সরে আসতে। কিন্তু কিছু পরেই বুড়ি একটা বড় থালায় করে কিছু ফল আর এক গ্লাস আঙ্গুরের রস তার সামনে আনতেই ফলের গন্ধে তার ভেতরটা আনচান করে উঠল আর নিজেকে সামলাতে না পেরে সে সমস্ত কিছুই আগের দিনের মত খেয়ে ফেলল। দুপুর দুটোর একটু আগেই সে বাগানের দিকে রওনা হল কিন্তু যেতে না যেতেই ঘুমে ডুবে গেল আর পাথরের মত নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইল চামড়ার স্তুপের ওপর। সেদিনও দুটোর সময় রাজকন্যে এল চারটে কালো রঙের ঘোড়ায় টানা কালো রঙের গাড়ীতে করে চড়ে। গাড়ী ঘোড়া সব কিছুর রঙই কালো ; গত দুদিনের ঘটনায় রাজকন্যা এমনিতেই খুব দুঃখে ছিল তাই আসতে আসতেই সে মনে মনে ভাবছিল -লোকটা তাকে যে উদ্ধার করতে পারবে না এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত হয়ে গেছে। সেদিনও রাজকন্যা দেখল লোকটা ঘুমিয়ে পড়েছে যথারীতি। ঘোড়া থেকে নেমে রাজকন্যা তার পাশে একটা পাউরুটির টুকরো ,একটা মাংসের টুকরো আর এক বোতল আঙুরের রস রেখে দিয়ে মনে মনে জাদুবলে প্রার্থনা করল লোকটার যেন এ জিনিসগুলোর কোনদিনও অভাব না হয়। তারপর তার হাতের একটা সোনার আংটি খুলে লোকটার হাতে পড়িয়ে সেখানে রাজকন্যের নাম খোদাই করে দিল। বাগান থেকে ফিরে যাওয়ার আগে রাজকন্যে সাদা একটুকরো কাগজে একটা ছোট্ট চিঠি লিখে লোকটার পাশে দিয়ে গেল।চিঠিতে তাকে উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি এবং উদ্ধার করতে না পেরে লোকটার ঘুমিয়ে পড়া সবকিছুরই কথা রাজকন্যা লিখে দিল আর তার সাথে এও লিখলো যে লোকটা যদি এরপরও সত্যিই রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে চায় তাহলে সে যেন রত্নাগড়ের দূর্গে যায়, রাজকন্যাকে সেখানেই সে পাবে। চিঠিটা লোকটার পাশে রেখেই রাজকন্যা ঘোড়ার গাড়িতে উঠে রত্নাগড়ের দূর্গের দিকে রওনা হয়ে গেল।
এদিকে, ঘুম ভাঙতেই পুরো ঘটনার কথা মনে করে আর রাজকন্যাকে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি না রক্ষা করতে পারার কথা ভেবে লোকটার তো দুঃখের অন্ত নেই, লজ্জায় তার নিজের প্রতিই নিজের রাগ হতে থাকলো। সে মূর্হুতেই লোকটা ঠিক করলো সে রত্নাগড়ের দুর্গে যাবেই আর রাজকন্যাকে উদ্ধারও করে আনবে। কিন্তু রত্নাগড়ের দূর্গ কোথায়? কে তাকে বলে দেবে সে পথ? এসব ভেবে ভেবে কুলকিনারা করতে না পেরে সে নিজেই গভীর বনের দিকে রওনা দিল। চোদ্দ দিন ধরে একটানা বনের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত খুঁজেও যখন সে রত্নাগড়ের দূর্গ খুঁজে পেলনা তখন বনের একপ্রান্তে নরম ঘাসের ওপর এসে ক্লান্ত শরীরে সে শুয়ে পড়ল। এতোটা রাস্তা চলার পর সেও বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তাই সাথেই সাথেই তার চোখ বুঝে এল। কখন যে চারপাশ অন্ধকার হয়ে এসেছে তার খেয়ালই নেই। হঠাৎই চারপাশ থেকে হালকা কান্না আর চিতৎকারের শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেল। লোকটা তাকিয়ে দেখল তার দিকেই আলোর এক সরু রেখা এগিয়ে আসছে। আলোর দিকে তাকিয়েই সে বুঝতে পারল দূরে কোন এক ছোট্ট বাড়ী থেকেই সে আলো আসছে। আলো ধরে ধরে লোকটা এগোতে এগোতে একসময় সে বাড়ীর সামনে এসে হাজির হল। সামনে এসেই দেখতে পেল ছোট বাড়ীটার সামনে এক বিশাল বড় দৈত্য পাহারায় রয়েছে। দৈত্যকে দেখেই ভয় পেয়ে গেলেও মনে মনে লোকটা ভাবল, যদি তাকে দেখতে পেয়ে যায় দৈত্য তাহলে সে মূর্হুতেই তার প্রান চলে যাবে কিন্তু তাও অনেক ভেবে লোকটা এগিয়ে গেল বাড়ীটার দিকে । কিছুক্ষনের মধ্যেই দৈত্যও লোকটাকে দেখতে পেয়ে বলল- খুব ভালো করেছো তুমি এসেছো। অনেকক্ষন ধরেই আমি কিছু খাইনি, তাই এই খিদের মুখে তোমাকেই আমি খাবার হিসেবে আজ গ্রহন করব। কিন্তু লোকটা একটুও ভয় পেলনা। সাহসের সাথে সে বলল- দেখ, দৈত্যভাই, তুমি আমাকে খেলে শুধু আমাকেই পাবে আর তাতে তোমার পেটও বিশেষ ভরবে না কিন্তু আমার কাছে সে উপায় আছে যাতে তোমাকে অঢেল খাবারের ব্যবস্থা আমি করে দিতে পারি। দৈত্যতো এ শুনে আহ্লাদে আটখানা। লোকটাকে ডেকে খাবার টেবিল এ নিয়ে এল দৈত্য। আর লোকটার কাছেও তো রাজকন্যের দেওয়া বর ছিল।তাই সে যতখুশী পাউরুটি, মাংস আর আঙুরের রস এনে দিল দৈত্যকে। পেট পুরে খেয়ে দৈত্যর আনন্দ দেখে কে! সে বলল বলো, তোমার জন্য কি করতে পারি? লোকটা দৈত্যকে রত্নাগড় দূর্গের রাস্তা চিনিয়ে দিতে বলল। দৈত্য তার ঘর থেকে পুরোনো নকশা এনে তাকে দূর্গের রাস্তা দেখিয়ে দিল। দূর্গ পাশের রাজ্যে ছিল, তাও নয় নয় করে প্রায় একশো মাইল দূরে তো হবেই । লোকটার তো মাথায় হাত। এত দূর রাস্তা সে কি করে পায়ে হেঁটে যাবে! তার বিপদের কথা সবিস্তারে খুলে বলাতে দৈত্য বলল, তার কাছে মাত্র দু ঘন্টা সময় আছে, এই সময়ে সে কাঁধে করে তাকে যতদূর পৌঁছে দিতে পারবে দিয়ে আসবে কারন ফিরে এসে তাকে তার ছেলেকে খাওয়াতে হবে। লোকটাও রাজি। যেমন বলা তেমনি কাজ- পিঠে করে দৈত্য লোকটাকে প্রতিবেশী রাজ্যে নিয়ে চলল আর রত্নাগড় দুর্গের কিছু দূর পর্যন্ত দিয়ে এসে দৈত্য বিদায় নিয়ে ফিরে এল।
কাছাকাছি আসতেই লোকটা দেখতে পেল দূর্গটা পুরোটা একটা কাঁচের পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে আর সব জাদু প্রহরীরা দুর্গের চারপাশে ঘুরে ঘুরে পাহারা দিচ্ছে; তাদের চোখ এড়িয়ে দুর্গের কাছাকাছি আসতেই সে দেখতে পেল অনেক ওপরে রাজকন্যা দাঁড়কাকের রুপে পাহাড়ের ওপর বসে রয়েছে। তাকে দেখেই লোকটার প্রানে খুশীর জোয়ার এল আর সে কাঁচের পাহাড় বেয়ে দাঁড়কাকের কাছে পৌঁছোবার চেষ্টা করতে থাকল; কিন্তু পাহাড়তো কাঁচের তাই যত সে ওপরে উঠতে চায় ততই সে পা হড়কে নিচে চলে আসে; এমন করে কেটে গেল দিন কেটে গেল রাত কেটে গেল বছর- কিন্তু লোকটা মনস্থির করে ফেলেছে রাজকন্যা কে উদ্ধার না করে সে বাড়ী ফিরবে না। তাই পাহাড়ের নিচে সে তার নিজের একটা থাকার ঘরও বানিয়ে ফেলল আর সেখান থেকেই রোজ সে একবার করে পাহাড়ে চড়ার চেষ্টা করে আর দেখে তার মাথার ওপর দাঁড়কাকের রুপ নিয়ে পাহাড়ের ওপর রাজকন্যা ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়ায় আর দুপুর হলেই দুর্গের ভেতর ঢুকে যায় । দুঃখ হলেও সে এবার হাল ছাড়বে না ঠিক করেছে।
একদিন সে তার তার ঘর থেকে দেখতে পেল তিনজন চোর নিজেদের মধ্যে খুব ঝগড়া করছে কি একটা জিনিস নিয়ে। খানিকক্ষন দেখার পরও যখন সে দেখলো তাদের ঝগড়া থামছে না তখন মনস্থির করল সেখানে গিয়ে ব্যাপারটা একটু দেখে আসা দরকার। কাছে আসতেই সে জানতে পারল তাদের ঝগড়ার আসল কারন। প্রথম চোর বললো সে একটা জাদুকাঠি পেয়েছে যা দিয়ে ছুঁলে পৃথিবীর সব বন্ধ দরজাই খুলে যাবে, দ্বিতীয় চোর বললো সে একটা জামা পেয়েছে যা পরলে সবার চোখ থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া যাবে আর তৃতীয় চোর বলল সে একটা ঘোড়া পেয়েছে যাতে যেখানে খুশি অনায়াসে যাওয়া যাবে এমনকি কাঁচের পাহাড়েও পৌঁছোনো যাবে। তারা ঠিক করতে পারছে না কোনটা কে নেবে, নাকি তারা তিনজনে ভাগাভাগি করে নেবে সব জিনিসগুলো!
মুর্হুতের মধ্যে লোকটার মাথায় এক বুদ্ধি খেলে গেল। সে বলল আমি এর একটা সহজ উপায় বের করে দিতে পারি তোমাদের-তোমরা তোমাদের তিনটে জিনিসই আমাকে দিয়ে দাও আমি এর বদলে তোমাদের আরও মূল্যবান জিনিস দেব। সেটা হয়ত অর্থ নয় কিন্তু অর্থের থেকেও মূল্যবান। কিন্তু, তার জন্য আমাকে আগে পরীক্ষা করে দেখাতে হবে তোমরা যা বলছ তা সবই সত্যি। তখনই তৃতীয় চোর তাকে ঘোড়ায় বসিয়ে দিয়ে বলল দেখো, এ ঘোড়া তোমায় সত্যি যেকোনো জায়গায় নিয়ে যায় কিনা আর বাকি দুই চোরও তার হাতে জামা আর জাদুকাটি দিয়ে দিল পরীক্ষা করার জন্য। জাদুকাঠি পাওয়ার সাথে সাথেই লোকটা অদৃশ্য হয়ে গেল আর ঘোড়া ছুটিয়ে কাঁচের পাহাড় বেয়ে রত্নাগড় দূর্গের দিয়ে উঠতে লাগল। লোকটাকে দেখতে না পেয়ে আর ঠকে গেছে বুঝতে পেরে চোর তিনটে তো ততক্ষনে পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসে গেছে।
এদিকে দুর্গের সামনে আসতেই লোকটা দেখল দুর্গের দরজা ততক্ষনে বন্ধ হয়ে গেছে, সে জাদুকাঠি ছোঁওয়াতেই দরজা খুলে গেল আর সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে লাগল।সেখানেই সে দেখতে পেল রাজকন্যা একটা বড় পাত্রে আঙুরের রস নিয়ে বসে রয়েছে মনকেমন করে। সাথে সাথেই তার হাতের আংটি রাজকন্যার সামনে রাখা পাত্রে সে ফেলে দিতেই শব্দ করে উঠল। রাজকন্যা আংটি হাতে নিয়েই তার নাম লেখা দেখে বুঝতে পারল যে সেই মানুষটা এসে গেছে যে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। আর তাকে দাঁড়কাক হয়ে বাইরে উড়ে উড়ে বেড়াতে হবে না। রাজকন্যাতো লোকটাকে আর দেখতে পাচ্ছে না, সে যে জাদু জামা পড়ে অদৃশ্য হয়ে রয়েছে। চারিদিকে তাকাতে লাগল রাজকন্যা, আর লোকটা ঘোড়া থেকে নেমে রাজকন্যাকে কোলে তুলে ঘোড়ায় চেপে বসল, তারপর ঘোড়া চালিয়ে সোজা দুর্গের বাইরে। দুর্গের সবাই ছুটে এসে রাজকন্যাকে খুঁজতে লাগল কিন্তু তারা তাকে পাবে কি করে? লোকটা তো বাতাসের বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে রাজকন্যাকে দুর্গের বাইরে নিয়ে চলে এসেছে ততক্ষনে।
রাজকন্যাকে নিয়ে ফিরে এলে রাজা আর রানির আনন্দ দেখে কে! তারা তো আনন্দে কেঁদেই ফেললেন আর রাজকন্যা?
সে আর কি করবে?- লোকটার বাঁদিকের গালে ঠোঁট বুলিয়ে বলল তুমি আমায় উদ্ধার করেছো। তুমিই আমার বর। তারপর ধুমধাম করে রাজকন্যার সাথে লোকটার বিয়ে দিলেন রানিমা আর তারপর থেকে তারা পরমসুখে আনন্দে দিন কাটাতে লাগল।
(জার্মানীর রূপকথা অবলম্বনে)
রমিত দে
কলকাতা
- বিস্তারিত
- লিখেছেন রমিত দে
- ক্যাটfগরি: বিদেশী রূপকথা