খেলাঘরখেলাঘর

শামুক ও মৌমাছি
একদিন এক রানী মৌমাছি তার দলবল নিয়ে মধুর সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সজোরে ভোঁ ভোঁ করে শব্দ করে উড়তে উড়তে তারা এসে পড়ল এক শামুকের বাড়ির সামনে। মা শামুক ওদের দেখেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল।
বলল – ‘আমার ষোলোটা ছেলেমেয়ে বাড়িতে ঘুমাচ্ছে। তারা এখনও খুব ছোট। হাঁটতে শুরু করার আগে তাদের আরো পনেরো দিন ঘুমানোর দরকার। তোমরা সবসময় এরকম বিশ্রী কানফাটানো আওয়াজ করলে তারা ঘুমাবে কি করে? গতকাল তোমার বাড়ির লোকজন তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে এসে সারাদিন এখানে ছিল আর ভীষন কোলাহল করেছে। আজ আবার তুমি এসেছ বিরক্ত করতে। এই ভয়ানক আওয়াজ সহ্য করতে না পেরে আমার কোন ছেলেমেয়ে যদি মারা যায় তাহলে আমি গিয়ে তোমাদের গোটা বাড়ি ভেঙ্গে তছনছ করে দেব। তোমাদের কোথাও থাকার জায়গা থাকবে না তখন। তোমরা কি জানো যে এই গাছটা আমার নিজের। আমার মালিক কুড়ি বছর আগে আমাদের জন্যে এই গাছটা লাগিয়েছিল, যাতে এর ফল খেয়ে আমরা বেঁচে থাকতে পারি। কিন্তু প্রত্যেক বছর যখনই এই গাছে ফুল ফোটে তখনই তোমরা দল বেঁধে আস আর সব মধু চুরি করে খেয়ে চলে যাও। তার ওপর সারাক্ষন বিদ্ঘুটে শব্দ করে আমাদের বিরক্ত করো। এক্ষুনি যদি তোমরা এখান থেকে বিদায় না হও তো আমি আমার মালিক আর আমার বাড়ির অন্যান্য লোকজনদের ডাকবো।’

তখন রানী মৌমাছি বলল – ‘তোমরা ধূলো আর নোংরা থেকে জন্মেছ। তোমার কোন মালিক নেই। বাড়িতে অন্য কোন লোকজনও নেই। কোন কালে তোমার পূর্বপুরুষরা সবাই মারা গেছে। তাও কোন মানুষ গ্রাহ্য করনি। কারন এই বিশাল পৃথিবীতে তোমরা কারো কাজে লাগ না। কিন্তু আমরা হলাম মৌমাছি। আমাদের তৈরী মধু খেয়ে মানুষরা ভালো থাকে, শরীরে বল পায়, সাস্থ্য ভালো হয়। মধু ওষুধের থেকেও উপকারী। মৌমাছিরা সারা পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। সমগ্র মানবজাতি আমাদের ভালোবাসে। তাই আমাদের জন্যে তারা ফুল গাছ লাগায়। তোমরা কি মনে করো তোমরা মানুষের থেকেও উঁচু দরের কোন প্রানী?

একটা গল্প বলি শোন। একদিন একটা দুষ্টু ছেলে আমাদের বাড়ি ভেঙ্গে দিতে এসেছিল। কিন্তু তার মা তাকে বলল – তুমি অনেক কিছু ভেঙ্গে নষ্ট করো। কিন্তু খবরদার মৌমাছির বাসায় হাত দিও না। ওরা সারাদিন কত পরিশ্রম করে আমাদের জন্যে মধু সংগ্রহ করে। কোন রানী মৌমাছিকে যদি তুমি মেরে ফেল তাহলে তার সব ছেলেমেয়েরা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। তখন শীতকালে আমরা রুটি দিয়ে খাওয়ার মতো একটুও মধু পাবো না। তখন ছেলেটা মায়ের কথা শুনে এখান থেকে চলে গেল। সে পাখি ধরতে পারে, মাছ ধরতে পারে, ফুল ছিঁড়তে পারে, যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে কক্ষনো বিরক্ত করবে না কারন আমরা খুব উপকারী প্রানী। তোমরা কী? তোমরা সারাদিন শুধু শম্বুক  গতিতে চলাফেরা করো, কারো কোন কাজে লাগো না। ’

মা শামুক এই শুনে খুব রেগে গেল। সে বাড়িতে গিয়ে ছেলেমেয়েদের বলল – ‘শোন সবাই। মৌমাছিরা আমাদের শত্রু। পনেরো দিন পরে তোমরা হাঁটতে শিখে যাবে। তখন তোমাদের মধ্যে পাঁচজন মৌমাছিদের বাড়ি গিয়ে ওদের মৌচাকটা ভেঙ্গে দিয়ে আসবে।’