সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
চাঁদের বুড়ির চরকা-চিঠিঃ ১৪২৭/০৬ - ফেব্রুয়ারির চিঠি

বেশ কয়েকবছর আগের কথা। আমার সঙ্গে আলাপ হল বছর বারোর  ধ্রুব আর তার বোন নিষ্ঠার। ধ্রুব এবং নিষ্ঠা ইংলন্ডে থাকে। তাদের মা ইংরেজ, আর বাবা বাঙালি। তারা বছর দুয়েক পরে পরেই কলকাতায় আসে তাদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। ফেসবুকের একটি বাংলা ভাষা শেখার গ্রুপের মাধ্যমে ধ্রুব আর নিষ্ঠার মায়ের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তাদের মা এডিথ তাঁর স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় এসে বুঝতে পেরেছিলেন, এখানে বয়স্ক আত্মীয়দের সঙ্গে গল্প করতে হলে তাঁকে বাংলা ভাষা শিখতে হবে, কারণ, তাঁর কলকাতার বেশিরভাগ আত্মীয় টানা ইংরেজি বলতে অভ্যস্ত নন, আর এডিথের বৃটিশ উচ্চারণ সবসময়ে বুঝতেও পারে না । তাই এডিথ বাংলা বলতে, লিখতে, পড়তে শিখতে শুরু করেন। সেবার কলকাতায় আসার পরে আমি তাদের সবার সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। নানারকমের গল্পের মধ্যে ধ্রুব আমাকে জিজ্ঞেস করল - তুমি ক'টা ভাষা জানো? আমি বললাম - সাড়ে তিন খানা। বাংলা, ইংরেজি আর হিন্দি - এই তিনটে ভাষাই আমি লিখতে, পড়তে , বলতে ও বুঝতে পারি। আর উর্দু ভাষাটা আমি পড়লে এবং/ অথবা শুনলে খানিকটা বুঝতে পারি, তবে বলতে বা লিখতে পারি না। যেহেতু ওই ভাষাতে আমি পুরো সড়্গড় নই, তাই বললাম সাড়ে তিন খানা ভাষা জানি। আমার কথা শুনে ধ্রুব চোখ গোল গোল করে বলেছিল - ওরেব্বাস, তুমি এতগুলো ভাষা জানো? আমি তো মোটে একটা জানি- ইংলিশ। সেদিন, ধ্রুবের কথা শুনে আমি হঠাৎ বুঝতে পেরেছিলাম, আমরা, যারা দুটো-তিনটে ভাষা বুঝি --- আমাদের জন্য এই দুনিয়ার কতগুলো জানলা খোলা। আমি চাইলে তিন ভাষার বই পড়তে পারি, সিনেমা দেখতে পারি আর এই ভাষাগুলোর যেকোনো একটাও ব্যবহার করতে জানেন, এমন সমস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারি। ইংরেজিভাষী দেশগুলির বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত।

মাত্র কয়েকদিন আগেই , ২১ ফেব্রুয়ারি, উদযাপন হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এইবছর, ইউনেস্কোর তরফে এই দিনের থীম ছিল " Fostering multilingualism for inclusion in education and society," --- যেটাকে বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায় --- ' শিক্ষা ও সমাজে অন্তর্ভুক্তির জন্য বহুভাষিকতাকে উৎসাহিত করা'। খুব সহজভাবে বলতে গেলে, লেখাপড়ায় উন্নতি এবং সবরকমের কাজকর্মে অংশগ্রহণ করতে গেলে একের বেশি ভাষা জানা থাকা দরকার। তাই যেমন তুমি ইংরেজি বা হিন্দি ভালোভাবে জানলে দেশে বিদেশের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সহজে কথা বলতে পারবে, তেমনই বাংলা ভালো করে জানলে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষদের সঙ্গে --- যাঁরা ইংরেজি বা হিন্দি জানেন না--- তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারবে। বাংলা ভাষায় শিশু-কিশোর সাহিত্যের বিপুল সম্ভার পড়ার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।

প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে এই দিনটা আসে, নানারকমের উৎসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়, টিভিতে দেখা যায় অনুষ্ঠানের ঘোষক এবং অংশগ্রহণকারীরা  অল্প সময়ের জন্য পুরো বাংলাতে কথা বলছেন , একটাও ইংরেজি ব্যবহার না করার চেষ্টা করছেন। একটা দিন বা কয়েক ঘন্টার জন্য  আমাদের মাতৃভাষাকে, বাংলা ভাষাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়, ভালোবাসা জানানো হয়, কিন্তু পরের দিন থেকেই আবার পরের দিন থেকে তাকে তুলে রেখে দেওয়া হয় সেই একদম ওপরের তাকে, কোণের দিকে। বাংলা গল্পের বই কিংবা স্কুলের বাংলা ক্লাস আর বাংলা পড়া নিয়ে কথা বলতে গেলেই অনেকেরই মুখ কেমন ব্যাজার হয়ে যায়।

কিন্তু সবাই কি আর তাই করে? তুমিও কি আর তা-ই করো? আমাদের তো মনে হয়, সব্বাই তেমন করে না আর তুমিও তেমন করো না । যদি করতে, তাহলে কি আর তুমি ইচ্ছামতীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে? ইচ্ছামতীর কাছে লেখা পাঠাতে?ছবি পাঠাতে? কিংবা আমাদের এই এতজন সাহিত্যিক বন্ধুরা দারুণ সব গল্প, ছড়া, আলোচনা লিখে পাঠাতেন আমাদের কাছে? আর সেইসব গল্প বার বার পড়ার জন্য তুমি কি ফিরে আসতে ইচ্ছামতীর  কাছে?

ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা আমাদের বন্ধুদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাদের প্রিয় বই সম্পর্কে। লিখে পাঠাতে বলেছিলাম তাদের প্রিয় বই বিষয়ে। কয়েকজন বন্ধু আমাদের লিখে পাঠিয়েছে তাদের প্রিয় বই বিষয়ে। আমাদের বন্ধুদের পাঠানো লেখাগুলি আমাদের মনের বিশ্বাসকেই আরেকবার জোরালো করে দিল। প্রমাণ করে দিল - তুমি যেখানেই থাকো না কেন, যে কোনো মাধ্যমেই পড়াশোনা করো না কেন, বাংলা ভাষাকে ভালোবাসবে কি না, কিংবা বাংলা বই বা ওয়েব পত্রিকা পড়বে কি না --- পুরোটাই নির্ভর করছে তোমার নিজের ইচ্ছের ওপরে।

তবে সত্যি যদি জিজ্ঞেস করো, আমরা আরও অনেক বেশি বই-এর খবর পাওয়ার আশা রেখেছিলাম। ইচ্ছামতী আর চাঁদের বুড়ি অপেক্ষায় থাকব, তোমার যেদিন ইচ্ছে হবে, লিখে পাঠিও তোমার পছন্দের বই নিয়ে।

খুব ভালো থেকো।

চাঁদের বুড়ির চরকা-চিঠিঃ ১৪২৭/০৬ - ফেব্রুয়ারির চিঠি

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা