সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
পিয়ালকথা

পিয়ালের এদেশটা একদম ভাল লাগছে না। একতো বন্ধুদেরকে সব ছেড়ে আসতে হয়েছে, তার ওপরে এখানে ভাষা বোঝেনা ভাল করে, সারাক্ষণ জ্যাকেট, টুপি মুড়িসুড়ি দিয়ে থাকতে হয়। আর কলকাতা থাকতে রোজ সক্কাল, সক্কাল উঠেই ঠাম্মির কাছে রেডি হয়ে যেত ইস্কুলের জন্য, তারপর দাদুভাইয়ের হাত ধরে গুটিগুটি স্কুল যাওয়া। এখানে মা সকালবেলা তুলে দেয় আর তারপর একা একাই রেডি হয়ে স্কুলবাসে চড়া। মা অবশ্য সাথে যায় কিন্তু রূপকথার গল্প বলে না দাদুভাইয়ের মতন।

স্কুল বাসে যেতেও ওর কান্না পায়। ও বাসে উঠলেই দুষ্টু রবটা চেঁচিয়ে, চেঁচিয়ে ডাকতে থাকে "পি অল, পি অল"। প্রথমদিকে ও বুঝতেই পারত না রব ওকে ওরম করে ডাকলেই সব্বাই মুখ লুকিয়ে হাসে কেন। তারপর একদিন যখন হোমরুমেও ওকে রব পি-অল বলে ডেকেছিল তখন মিসেস জোন্স সবার সামনে ওকে খুব বকেছিল। তখনই পিয়াল জেনেছিল ইংরেজিতে পি মানে শুশু।

পিয়ালের খুব দুঃখ হয়েছিল। কিন্তু তার থেকেও বেশি হয়েছিল অভিমান। বাবা মা কেন ওর এরকম একটা নাম রাখল? সেদিন ওর এত্ত অভিমান হয়েছিল যে দাদুভাইয়ের ঠামির সাথে স্কাইপিতেও কথা বলেনি। শেষে মন খারাপ একটু কমলে দিদুনকে ফোন করে আর্জি পেশ করেছিল নাম পাল্টাবার।

দিদুন তো হেসেই অস্থির। আগে নাকি এরকম মজার কথা শোনেনি। ফোনের মধ্যেই শুনছিল দিদুন দাদানকে বলছে " শুনছ মেয়ের কান্ড! পিয়াল নাম পাল্টাতে চায়।" দাদান কিন্তু পিয়ালের কথায় হাসেনি। জিগেস করেছিল “নাম পাল্টাবে কেন দিদিভাই? নাম নিয়ে কি হয়েছে?" দাদানের গলায় প্রশ্রয়ের আভাস পেয়ে ফোঁপাতে, ফোঁপাতে সবটুকুনই বলেছিল পিয়াল। শুধু মাঝরাত্তিরে পাশের ঘর থেকে ভেসে আসা নিত্যিকারের ঝগড়াটুকুর কথা হাজার চেষ্টা করেও বলতে পারেনি দাদানকে।

প্রতিদিন পিয়াল বিছানায় যাওয়ার একটু পরেই শুরু হয় মা-বাবার ঝগড়া। পিয়ালের মা ডাক্তার। ক্যানসার নিয়ে কী সব গবেষণা করে। আর সেজন্যই বছর দুয়ের জন্য ওরা এদেশে এসেছে। পিয়ালের বাবা অভিনেতা। সাথে আবার নিজে নাটকও লেখে। গতবছর পিয়াল মা, ঠাম্মি, দাদুভাই, দাদান, দিদান সবাই মিলে বাবার নাটক দেখতে গেছিল। বাবা সেজেছিল দুষ্টু রাক্ষস। এক মুখ ঝোপজঙ্গলের মতন দাড়ি, কালিঝুলি মাখা ইয়াব্বড় দাঁতওয়ালা লোকটাকে মোটেই বাবা বলে চিনতে পারেনি পিয়াল। তাই লোকটা ওর দিকে এগোতেই একদৌড়ে দাদানের পেছনে গিয়ে লুকিয়েছিল। তারপর মুখহাত ধুয়ে এসে বাবার সে কী হাসি। সবাই বাবার সাথে তাল মিলিয়ে হাসছিল পিয়ালের ওপর। শুধু মা একটুও হাসেনি। লজ্জায় কাঁচুমাচু পিয়ালকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে বলেছিল, " রাক্ষস দেখলে বাচ্চারা তো ভয় পাবেই। তুমি নিঁখুত রাক্ষস সেজেছ বলেই না পিয়াল এতো ভয় পেল। তুমি একটু বাজে করে সাজলেই পারতে। মায়ের কথা শুনে পিয়াল মায়ের বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে মনে মনে বলেছিল, "ঠিক, ঠিক" আর বাবা হা হা করে দমখুলে হেসে উঠেছিল।

বাবা আর আজকাল হাসেনা। সারাক্ষন মুখ গোমড়া করে ঘরের কোনে মুখ গুঁজে কী সব লেখে। পিয়াল ডাকলে একটু আধটু কথা বলে বটে কিন্তু পিয়াল বুঝতে পারে বাবার একটুও কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। সারাদিনের মধ্যে একবারই বাবা বাড়ির থেকে বেরোয়। পিয়াল স্কুলবাস থেকে নামলে বাসস্টপ থেকে বাবা ওকে বাড়ি নিয়ে আসে। পিয়াল নিজেই নিজেই জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে সিরিয়াল দিয়ে খেয়ে নেয়। আর তারপরে মা বাড়ি ফেরা অবধি পিয়াল একা একাই আইপ্যাড খুলে গেম খেলে বা গল্পের বই পড়ে। হোমওয়ার্কটা স্কুলবাসে শেষ হয়ে যায়। পিয়াল লক্ষ্য করেছে স্কুলবাসে বসে হোমওয়ার্ক করলে বাকিদের কথাবার্তা বা ক্ষেপানোগুলো ওর কানে আসে না। মা বাড়ি ফিরলে খাবার টেবিলে টুকটাক কথা হয়, ওর আর মায়ের মধ্যে। বাবাকে হাজারবার ডাকলে খেতে আসে আর তারপর চুপচাপ মাথা নিচু করে খেয়ে উঠেই আবার পড়ার টেবিলটাতে গিয়ে মুখ গুঁজে লিখতে বসে যায়।

খাওয়া শেষে পিয়ালের ঘুমোনোর সময়। কলকাতায় থাকতে এই সময় পিয়াল শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ত। বাবার মুড ভালো থাকলে আইপ্যাডটাও পাওয়া যেত মাঝেসাঝে। কিন্তু এখানে খাওয়া হলেই পিয়াল একছুট্টে সোজা গিয়ে বিছানায় ঢুকে পড়ে। আলো নিভিয়ে অন্ধকারে ঠাকুরকে মনে মনে বলতে থাকে যাতে পাশের ঘর থেকে ভেসে আসা ঝগড়াটা শোনার আগেই ও ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু হয়না সেটা। অন্ধকারে গোলাগুলো তীরের মতন কানে বেঁধে।

"তোমার জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো। আমার কেরিয়ারটা শেষ হয়ে গেলো তোমার অ্যাম্বিশনের জন্য।"

"তোমাকে তো আমি আসতে বলিনি। বলেছিলাম দু বছরের জন্য আমি একাই যাই। তুমি এলে কেন? তখন তোমাকে কে বলেছিল আসতে? আমি আর পিয়াল ঠিক চালিয়ে নিতে পারতাম।"

"পিয়ালকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না। তুমি সেই সুযোগে আমার ওপরে চাপ দিয়ে নিয়ে এলে। আমি কালকেই চলে যাবো।"

"হ্যাঁ, তাই যাও, আর ফেরত এস না।"

প্রতিদিনই প্রায় একই কথা ঘুরেফিরে চলে। পিয়ালের মনে হয় ও দৌড়ে গিয়ে বলে মা বাবা তোমরা প্লিজ আর ঝগড়া করোনা। কিন্তু ওর ভয় করে পাছে ও যে সব জানে এটা বললে বাবা যদি সত্যি সত্যি চলে যায়। তাই ও গুটিসুটি মেরে কম্বলের তলায় কাঠ হয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে রোজ।

সেদিন দাদানকে ও রবের কথা বলেছিল সবটুকুনই। দাদান একসময় হেডমাস্টার ছিল একটা স্কুলে। অনেক দুষ্টু ছাত্র পড়িয়ে অভ্যেস আছে। বাকিদের মতন কথা শেষের আগেই হাসাহাসি না করে একটু একটু প্রশ্ন করে দাদান জেনে নিয়েছিল ওর রোজকার স্কুলের গল্প। তারপর দাদান বলেছিল তোমাকে এবার কটা কথা জিগেস করি দিদিভাই। তোমার উত্তর পেলে সেই মতন বলবো কী করে তোমার সমস্যার সমাধান করবে।

"তোমার নতুন স্কুলে বন্ধু হয়েছে দিদিভাই?"

হ্যাঁ বলতে গিয়েও আটকে গেছিল পিয়াল। সত্যিই নতুন স্কুলে ঢুকে থেকে ও কারোর সাথেই বন্ধুত্ব করেনি। এখানে কেউ কেউ কথা বলতে এলেও ও অল্প স্বল্প কটা কথা বলেছে খালি। কদিন পরে ওরাও মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে ওর ওপরে।

"তা এখানে কারোর সাথে বন্ধুত্ব করোনি কেন তুমি?"

"স্বাতী, সালমা আর প্রেরণার জন্যই সারাক্ষণ মন কেমন করছে আমার, কত্ত কিছু খেলতাম আমরা টিফিনবেলায়। এখানে তো এদের কথাই বুঝিনা ভালো করে।"

"কিন্তু দিদিভাই, বন্ধু ছাড়া তো কারোর ভালো লাগেনা। কালকে তুমি স্কুলে গিয়ে সবার সাথে কথা বলো। দেখো তো কারোকে ভালো লাগে কিনা। "

"কিন্তু তাহলেই কি রব আমাকে ছেড়ে দেবে? ও জানো একদিন আমার টিফিনটাও কেড়ে খেয়ে নিয়েছিল। অনেকদিন পর মা সেদিন নিজে আমাকে স্যান্ডুইচ করে দিয়েছিল। আমি হোমরুমে বসে খাচ্ছিলাম, রব এসে জিগেস করলো কী খাচ্ছিস? আমি যেই বললাম মা স্যান্ডুইচ বানিয়ে দিয়েছে, ও সবটা কেড়ে খেয়ে নিলো।"

"আচ্ছা, দিদিভাই রব কে কী ভাবে জব্দ করবে, সেটা আমি একটু ভেবে বলছি কিন্তু তুমি কালকে গিয়ে কিন্তু সবার সাথে কথা বলবে। আমি কালকে আবার ফোন করবো কী হল জানতে।"

সেদিন অনেকদিন পর ঘুমোতে যাওয়ার সময় মনটা ভালো লাগছিল পিয়ালের। পরের দিন স্কুলবাসে উঠে নিজের থেকেই গিয়ে জুলিয়ার পাশে বসে পড়েছিল। ও অনেকদিন খেয়াল করেছে রবের খেপানো শুনে বাকিরা হাসলেও জুলিয়া মুখটা করুণ করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। দাদানের কথামতোন এখানে যদি বন্ধু খুঁজতেই হয় তাহলে ওর সাথে কথা বলাই সব থেকে ভালো।

একমুখ হেসে পিয়াল ব্যাগ থেকে এক্লেয়ারসের প্যাকেট বের করে। পিয়াল এমনিতেই একটু কম কথা বলে, লাজুক। তাই নতুন করে বন্ধুত্ব করতে হলে অনেক ভেবেচিন্তে ওর মনে হয়েছে এটাই সব থেকে ভালো উপায়।

"হাই জুলিয়া, কেমন আছো? ক্যান্ডি খাবে? আমার কাছে ইন্ডিয়ান ক্যান্ডি আছে।"

" হ্যাঁ, দাও. আজকে হোমওয়ার্ক করবে না তুমি?"

"নাহ, হোমওয়ার্ক তো স্কুল থেকে ফেরার সময়েই হয়ে যায়। এখন বই মুখে দিয়ে বসি যাতে রব বেশি না জ্বালায়।"

"সত্যি, রবটা কেন জানি বড্ড জ্বালায় তোমায়। ও আগে এরকম ছিল না। শান্ত ছিল। কিন্তু এবার সামার ভ্যাকেশন থেকে ফেরার পরেই কেন জানিনা এরকম হয়ে গেছে। শুধু তোমাকে না, ক্লাসের বাকিদেরকেও বিরক্ত করে। জানো তো আগের দিন মা আমাকে পাস্তা করে দিয়েছিল। রব এসে কেড়ে নিয়ে সব টা ফেলে দিল।"

"সত্যি। এই রবের জ্বালায় আর পারা যায়না।"

"শোন না, আজকে টিফিনে একসাথে বসবে? দুজনে থাকলে হয়তো রব অত বিরক্ত করবে না।"

জুলিয়ার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছিল পিয়ালের। তাই একটু ভেবেচিন্তে রাজি হয়ে গেলো। স্বাতীর মতন না হলেও প্রেরণার সাথে অনেকটা মিল আছে জুলিয়ার। একই রকম শান্ত, হাসিখুশি স্বভাবের। জুলিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে একটু আপশোসই হচ্ছিল পিয়ালের। নিজে গুটিয়ে না থেকে আগে কথা বললে আরো অনেকদিন আগেই পিয়ালের এখানেও বন্ধু হয়ে যেত। লাঞ্চে জুলিয়া আবার পিয়ালকে ধরে আইকোর সাথে আলাপ করালো। তিনজনে মাইল হপ্সকচ খেললো লাঞ্চ খাওয়া হলে। সেদিন বহুদিন পরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে পিয়ালের অতটা মন খারাপ করছিলো না।

বাড়ি ফিরতেই যদিও মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। বাবা আজকেও মুখ গুঁজে কীসব লিখছে। তবে আজকে পিয়ালের মন খারাপের সাথে একটু রাগও হলো। বাবা মা ঝগড়া করছে তাতে ওর কী। ওর সাথেও বাবা কথা বলেনা। ও অন্যদিনের মতন নিজের মতন জামাকাপড় ছেড়ে খাবার খেতে না গিয়ে গটমট করে গিয়ে বাবার টেবিলের কাছে গিয়ে বলল "বাবা, তোমার সাথে আমার কথা আছে।"

"উফ, পিয়াল এখন বিরক্ত করো না, আমি কাজ করছি।"

"তুমি তো সারাদিনই কাজ করো, আমার সাথে তো কথাই বলো না কখনো। একটু, একটুখানি জাস্ট পাঁচ মিনিট?"

"বড্ডো বিরক্ত করছো তুমি কী ব্যাপার?"

"তুমি তো এখন সারাক্ষণই কাজ করো। আমার সাথেও গল্প করো না, মায়ের সাথেও না। কী লিখছো বাবা? নতুন নাটক?"

"বুঝবি না রে মা। হঠাৎ করে অকেজো হয়ে গেলে খুব মুশকিল হয়। তখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোটা খুব মুশকিল।"

"কী বললে? আমি তো কিছুই বুঝলাম না।"

"এখন বুঝবি না, একটু বড় হ, তারপর বুঝবি। এখন যা, খেয়ে খেলাধুলো কর, আমি কাজ করছি।"

পিয়াল পায়ে পায়ে ঘরে চলে এলো। অকেজো মানে তো যেটা কাজ করে না। বাবা তো দিব্যি হাঁটতে চলতে পারে। তাহলে অকেজো মানে কী? আজকে দাদানকে রাত্তিরে জিগেস করতে হবে তো। রাতে দাদান ফোন করেই মাকে বলল পিয়ালকে দাও। ওর আর আমার জরুরি কথা আছে।

"কি দিদিভাই, আজকে স্কুলে কোনো বন্ধু হল?"

"হ্যাঁ, জুলিয়া আর আইকো।"

"বাহ্ খুব ভালো খবর। তা কী করলে তিনটিতে আজকে সারাদিন?"

"একটু একটু গল্প করেছি, আর এক্কাদোক্কা খেলেছি। জানো দাদান এখানে এক্কাদোক্কাকে হপ্সকচ বলে।"

"দারুন ব্যাপার তো। আর আজকে রব বিরক্ত করেনি তো?"

"করেছে তো। আইকোকে লো আই কিউ বলেছে। জুলিয়াকে জেলব্রেক বলেছে। আমাকে পি অল বলেছে। তবে একটা জিনিস জানো দাদান, জুলিয়া বলল রব নাকি গত বছর অবধি খুব ভালো ছিল। এবছর সামার ভ্যাকেশনের পর থেকে এরকম দুষ্টু হয়ে গেছে।"

"তাহলে দিদিভাই, ওই সামার ভ্যাকেশনেই কিছু একটা হয়েছে। তুমি দেখো তো খুঁজে বের করতে পারো কিনা। এই রব এর মতন যারা অন্যদেরকে অকারণে জ্বালায় তাদের বুলি বলে। আর এই বুলিরা কিন্তু নিজেরা খুব দুঃখী মানুষ হয়। সেই জন্য আশেপাশের কারোকে ভালো দেখলেই তাকে গিয়ে বিরক্ত করে।"

"কিন্তু রবের দুঃখ জেনে আমি কী করবো?"

"দেখো যদি ওর দুঃখ দূর করতে পারো, তাহলে নিশ্চয়ই রব ভালো হয়ে যাবে। এইটা তোমার এবারের কাজ। আর ইস্কুলে নতুন নতুন বন্ধু করো। তাহলে দেখবে রব ক্ষেপালেও আর অতটা খারাপ লাগবে না।"

"আচ্ছা দাদান। চেষ্টা করে দেখি। আচ্ছা, অকেজো মানে কী গো?"

"অকেজো মানে যেটা কাজ করে না. কেন কী নষ্ট হলো আবার?"

"না না কিছু নষ্ট হয়নি। কিন্তু মানুষ কী করে অকেজো হয়?"

"যখন কোনো মানুষের কাজ থাকেনা, সে অকেজো হয়ে যায়। কেন? তোমাকে কেউ অকেজো বলেছে বুঝি?"

"না না একটা গল্পের বইতে পড়লাম। তা দাদান অকেজো হলে লোকে রাগ করে কেন? আমার কাজ না থাকলে তো আমি সারাদিন খেলতে পারতাম, কার্টুন দেখতে পারতাম।"

"আচ্ছা দিদিভাই তোমার আইসক্রিম খেতে ভালো লাগে কেন? রবিবার করে মা একটু খানি দেয় বলেই না। আজকে যদি মা ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সবেতে খালি আইসক্রিম খেতে দিতো, কেমন লাগতো?"

"নানা অতো আইসক্রিম কেউ খেতে পারে নাকি? বোর হয়ে যেতাম তো।"

"অকেজোটাও ঠিক তেমনি। বেশিদিন কাজ না থাকলে মানুষের ভালো লাগেনা। তখন মানুষ খুব দুঃখী হয়ে যায়। কেউ রাগ করে, কেউ গোমড়া হয়ে যায়, কেউ মন খারাপ করে। আবার কাজ শুরু করলে ঠিক হয়ে যায়. বুঝলে?"

সেদিন দাদানের সাথে কথা বলার পর বাবার ব্যাপারটা পিয়ালের কাছে একটু একটু পরিষ্কার হল। কলকাতায় বাবার অনেক কাজ ছিল। নিজে নাটক করা, অন্যদের শেখানো, মাঝে মাঝে অভিনয় করা। এখানে তো বাবার কোনো কাজই নেই, বাবা অকেজো। তাই জন্যই বাবা সারাদিন মুখ গোমড়া করে লেখালিখি করে আর রাত্তিরবেলা মায়ের সাথে ঝগড়া করে। কিন্তু বাবাকে ও কি করে কাজ দেবে? ও তো কারোকে চেনেই না। সেরাতটা পিয়ালের এইটা ভাবতে ভাবতেই কেটে গেল।

পরের দিন স্কুলবাসে উঠেই পিয়াল জুলিয়াকে দাদানের থিওরি বলল। জুলিয়াও খুব উত্তেজিত। আমরা তাহলে রবের ওপর স্পাইং করব। আর যেই কিছু দেখতে পাবো অমনি আমরা তিনজনে গিয়ে ওকে ক্যাঁক করে চেপে ধরবো। দাঁড়াও, স্কুলে ঢুকেই আইকোকে বলছি। রবের প্রব্লেম সল্ভ করলেই ও সেলফিশ জায়েন্ট থেকে হ্যাপি জায়েন্ট হয়ে যাবে। যে কথা সেই কাজ। ওরা তিনজনেই এখন রবকে চোখে চোখে রাখে। যদিও এখনো কিছু পায়নি তবে ওরা সব সময় একসাথে থাকে বলে রব আজকাল ওদের খুব একটা ঘাঁটায় না। কিন্তু আসল কাজ কিছুই এগোল না এখনো। রবের কোনো দুঃখের খবর ওরা বের করতে পারেনি। আর বাবার কাজও এখনো কিছু হয়নি, তাই বাড়ির পরিস্থিতিও আগেরই মতন। তবে আইকো আর জুলিয়ার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে আগের থেকে দিনগুলো বেটার যাচ্ছে।

এর মধ্যেই দেখতে দেখতে নভেম্বর পড়ে গেলো। সেদিন খেতে বসে মা পিয়ালকে বলল

"পরশু আমাদের হসপিটালে ‘ব্রিঙ ইওর কিডস ডে’। যাবি নাকি আমি কোথায় কাজ করি দেখতে?"

পিয়াল তো এক কথায় রাজি। মায়ের অফিসে যাবে বিশাল মজার ব্যাপার। আর মায়ের ল্যাবের যন্ত্রপাতিগুলো কলকাতায় ঘাঁটাঘাঁটি করতে বেশ মজা লাগতো। এখানেও সেরকম জিনিসপত্র থাকবে নিশ্চয়ই।

মা মিসেস জোন্সকেও ফোন করে পারমিশন নিয়ে নিল। উনি বললেন এখানে অনেক অফিসেই এই নিয়মটা চালু, তাই এই দিন সাধারণত স্কুল বন্ধই থাকে। নাচতে নাচতে মায়ের হাত ধরে পিয়াল চলল মায়ের ল্যাবে। বাবার মুখটা একটু ছোট হয়ে গেছিলো পিয়াল লক্ষ করেছে। কিন্তু ও জানে বড়োদের সব সময় বলতে নেই যে ও সব দেখেছে। শুধু মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো বাবার কথা ভেবে। দেশে এরকম ছুটি থাকলে বাবার সাথে নাটক দেখতে যেতে পারতো ও।

মায়ের ল্যাবটা বিশাল বড়। অনেক রকমের যন্ত্রপাতি। এত কিছু দেশের ল্যাবরেটরিতে ছিল না। মাকে সেটা বলতেই মা বলল "সেজন্যই তো এখানে এসেছি সোনা। এখন থেকে শিখে গিয়ে কলকাতায় এগুলো চালু করবো।" খানিকক্ষণ পরেই মায়ের একটা মিটিং ছিল। মা বলল পিয়ালকে যেমন ইস্কুলে ক্লাস করতে এইটা নাকি মায়ের ক্লাস। মায়ের এখন পিয়ালের মতন ক্লাস হবে। পিয়ালের বেশ মজা লাগছিলো মা ও ওর মতন ছাত্র ভেবে। কিন্তু মা খুব চিন্তায় পড়ল, এই দেড় ঘন্টা পিয়াল কী করবে ভেবে। বলছিল আজকে ক্লাসও করবে না। শেষে পিয়ালই বললো ইস্কুল কামাই করা ঠিক না। তুমি ক্লাসে যাও। আমি একটু এখানে বসে আইপ্যাডে গেম খেলি। মা অগত্যা তাতেই রাজি হয়ে পিয়ালকে বারবার ঘর থেকে বেরোতে বারন করে ক্লাসে চলে গেলো।

একটু পরেই পিয়ালের আর গেমে মন বসছিলো না। দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মায়ের আসতে তখন পাক্কা এক ঘন্টা। তা এতক্ষন করেটা কী ও? পিয়াল ভাবল একটু চুপি চুপি চারদিকটা ঘুরে আসে। মা ফেরত আসার আগেই বরং ও ফেরত চলে আসবে। হাতে ঘড়ি আছে, তাই দেরি হবার ভয় নেই। আইপ্যাডটা টেবিলে রেখে পিয়াল চুপি চুপি বেরোলো হাসপাতাল দেখতে। কী বিশাল বড় হাসপাতাল, সাথে আবার একটা বিশাল বাগানও আছে। বাগানটা ঘুরে দেখতে পিয়ালের খুব ভালো লাগছিলো। হঠাৎ ওর চোখে পড়লো, বাগানের ঠিক মাঝখানে ছোট্ট একটা চার্চ। পিয়ালের মনে পড়লো, মা বলেছিলো রোগীদের আত্মীয়রা ওখানে বসে তাদের সুস্থ হবার জন্য প্রার্থনা করে। পিয়ালের মনে হলো, আচ্ছা বাবার মন খারাপ কমানোর জন্য এখানে প্রার্থনা করলে হয়না? মন খারাপও তো একটা অসুখই। যা ভাবা সেই কাজ। আস্তে, আস্তে চার্চটার কাছে এগোতেই পিয়াল কানে ঢুকলো একটা চেনা গলা। রবের গলা না? পিয়াল চটপট একটা পিলারের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। হ্যাঁ, রবই তো। সাথে আরেকজন লোক, মনে হয় রবের বাবা।

রব হাঁটু গেড়ে যীশুর মূর্তির সামনে বসে আছে আর বলছে "প্লিজ আমার মাকে ভালো করে দাও। আমার মা ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগেনা। সব্বার মা তাদেরকে কত আদর করে. আমার মা কেন হসপিটালে? মা কবে ভালো হবে?" রবের বাবা ওর মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলছে "মা ঠিক সেরে যাবে। অসুখটা ধরা পড়েছে তো, এবার ওষুধ পড়লেই সেরে যাবে।"

"কিন্তু লোকে যে বলে ক্যান্সার হলেই সবাই মরে যায়। মা কি তাহলে মরে যাবে?"

পিয়াল এতক্ষন চুপটি করে পিলারের পেছনে দাঁড়িয়ে রবের কথা শুনছিল। এবার আর চুপ থাকতে পারলো না। জোর গলায় বলে উঠলো, "মিথ্যে কথা, ক্যান্সার হলে মোটেই সবাই মরে যায়না। আমার মা বলেছে ঠিক সময়ে ক্যান্সার ধরা পড়লে সেরে যায়।"

রব তো পিয়ালকে দেখে ভূত দেখার মতন চমকে উঠেছে। "পিয়াল, তুমি এখানে কেন? তুমি এখানে কি করছো?"

পিয়াল কোন উত্তর না দিয়ে রবের বাবা কে বলল "আংকেল, আমার মা এখানে ডাক্তার। তোমরা প্লিজ আমার সাথে এসো। মা আন্টিকে দেখে রবকে ঠিক বলে দেবে। মা নিশ্চয়ই আন্টিকে সরিয়ে দেবে।"

পিয়ালকথা

রবের বাবা এতক্ষনে বুঝলেন। রবকে বললেন "এই সেই নতুন মেয়ে যে তোমার ক্লাসে ভর্তি হয়েছে? তুমি বাড়ি এসে যার গল্প করো।"

পিয়াল এবার একটু অবাক হয়ে রবের দিকে তাকালো, রব বাড়িতে ওর গল্প বলেছে! কী বলেছে কে জানে। যাকগে সেটা পরে ভাবলেও হবে। এখন ওদের মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। পিয়াল এবার রবের হাত ধরেই মায়ের অফিসের দিকে দৌড় লাগলো। দেড় ঘন্টা প্রায় হয় হয়। মা ফিরে এসে ওকে না দেখতে পেলে খুব রাগ করবে।

মায়ের অফিসের কাছে আসতেই পিয়াল দেখে মা খুব চিন্তা চিন্তা মুখে ঘর থেকে বেরোচ্ছে। ও এক দৌড়ে মায়ের সামনে গিয়ে মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল "মা, আমি খুব সরি, তোমাকে না বলে বেরিয়েছিলাম বলে। খুব অন্যায় করেছি। আমি সরি। আর মা, এ আমার বন্ধু রব। ওর মায়ের ক্যান্সার হয়েছে। তুমি প্লিজ একটু দেখে বলে দাও না রবের মা কবে ঠিক হয়ে যাবে। ওর মায়ের শরীর খারাপ বলে রবের খুব মন খারাপ।"

ততক্ষনে ওদের পেছন পেছন হাঁপাতে। হাঁপাতে রবের বাবাও উপস্থিত। "হাই, আমি রবের বাবা। মিস্টার ফোর্ড। আপনি আমাকে জেমস বলে ডাকতে পারেন। আমি খুব লজ্জিত যে আমি আর আমার ছেলে আপনাকে এইভাবে বিরক্ত করছি।"

মা পিয়ালকে বকতে গিয়েও হঠাৎরব আর রবের বাবাকে দেখে চমকে গেছিল। তাও সেটা সামলে এক মুখ হেসে বলল "আর আমি পিয়ালের মা। ডক্টর বসু। আপনি আমাকে রিনা বলে ডাকতে পারেন। আর প্লিজ ভাববেন না যে আপনি আমাকে বিরক্ত করছেন। প্লিজ ভেতরে আসুন। আমি চিকিৎসার কাগজপত্র গুলো একবার দেখেনি। তারপর রবের সাথে কথা বলব।"

ভেতরে গিয়ে মা অনেক্ষন ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব কটা চিকিৎসার কাগজ দেখলো। রবের বাবাকে অনেকগুলো প্রশ্ন করলো। পিয়াল তখন চুপ করে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে। বুকটা ঢিপঢিপ করছে। এবার যদি মা বলে রবের মায়ের অসুখ সারবেনা? কী হবে তখন? পিয়াল একটু মায়ের মুখটা দেখে গেস করার চেষ্টা করে মা কী ভাবছে।

বেশ অনেক্ষন খুঁটিয়ে দেখে মা মুখ তুলে হাতের ইশারায় রবকে ডাকলো,

"নাম কী তোমার?"

"রবার্ট, রব। মা ঠিক হয়ে যাবে?"

"ইয়েস, তোমার মা এক্কেবারে ঠিক হয়ে যাবে। আমি এতক্ষন বসে সব কাগজপত্র দেখলাম। তোমার মায়ের অসুখটা খুব ঠিক সময়ে ধরা পড়েছে। কয়েকটা ওষুধ পড়লেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবে।"

পিয়াল দেখলো রবের সাথে সাথে ওর বাবার মুখটাও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। "আপনি শিওর রিনা? ক্যাথি ঠিক হয়ে যাবে?"

"ইয়েস, জেমস ক্যাথির অসুখটা একেবারে ফার্স্ট স্টেজ। ওষুধ পড়লে পুরোপুরি সেরে যাবে। উনি আমার আন্ডারেই আছেন। আমি নিয়মিত আপনাদেরকে ক্যাথির খবর দিতে থাকবো। কি রব? এবার তুমি খুশি তো?"

পিয়াল দেখলো, রবের চোখটা ছলছল করছে। মিসেস জোনসের কাছে অত বকা খেয়েও যে ছেলে ঘাড় গোঁজ করে দাঁড়িয়ে ছিল, তার আজকে মায়ের এক কথায় দু চোখ বয়ে জল বইছে। তবে এর মধ্যেও রব এক গাল হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলো "থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ" বলতে বলতে।

জেমসও যে খুব খুশি মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। "আপনি জানেন না রিনা, আজ আপনি কত ভরসা দিলেন। ক্যাথির অসুখ নিয়ে আমি দিশেহারা, তার ওপরে আমার নাটকের ডাইরেক্টর হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে নিউ ইয়র্ক চলে গেছেন, তার সাথে রবের দেখাশুনা, সব মিলিয়ে আমি যে কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আপনি আজকে অন্তত আমাকে একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত করলেন।"

পিয়াল এতক্ষন চুপ করেই পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আসলে ওর মনে হচ্ছিল পাছে কথা বললে মায়ের মনে পড়ে যায় যে ও না বলে ঘুরতে বেরিয়েছিল। তাহলেই আবার প্রবল বকা খাবার সম্ভাবনা। কিন্তু নাটকের কথা শুনে ওর মুখ থেকে আপনা থেকেই বেরিয়ে এলো "বাবা করতে পারে তো এটা।" জেমস সাথে সাথে ওর দিকে তাকালেন "কে করতে পারে বললে?" মা তাড়াতাড়ি সামাল দিতে বলল "কিছু মনে করবেন না। আসলে ওর বাবা মানে আমার হাজব্যান্ড কলকাতার একটা নাটকের দলের সাথে যুক্ত। ও নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখে, ডাইরেক্টও করে। তাই আপনার ডাইরেক্টর নেই শুনে পিয়াল বলে ফেলেছে।"

"আপনার হাজব্যান্ড কি ইন্টারেস্টেড হবেন আমাদের সাথে কাজ করতে? আমাদের আসলে এক জন ডাইরেক্টরের এক্ষুনি দরকার। আমাদের সামনের মাসেই শো।উনি রাজি থাকলে আমরা এক্ষুনি ওনার ইন্টারভিউ নিতে পারি। আর আমাদের পছন্দ হলে, আর ওনার আমাদের কে পছন্দ হলে উনি আমাদের সাথে কাজ করতে পারেন। আমার কার্ড দিলাম। আপনার হাজব্যান্ডকে বলবেন চাইলে যোগাযোগ করতে।" মাকে আরো অনেকবার ধন্যবাদ জানিয়ে জেমস আর রব চলে গেলেন সেদিনের মতন।

পিয়াল এইবার দৌড়ে এসে মায়ের কোলে মুখ গুঁজে দিলো। "আমি সরি মা, আর না বলে ঘুরতে যাবো না।" মা আস্তে আস্তে পিয়ালের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে অন্যমনস্ক ভাবে বলল "হ্যাঁরে, বাবা বাড়িতে বসে মন খারাপ করে, তুই খেয়াল করেছিস না? আমার মেয়েটা কত্ত বড় হয়ে গেলো।" পিয়াল এবার লজ্জা পেয়েই আবার মায়ের কোলে মুখ গুঁজে দিলো। ধুস বড় আবার কী? ও তো শুধু বাবাকে অকেজো থেকে কেজো করতে চাইছিল।

বাবাকে বাড়ি গিয়ে জেমসের কথা বলে বাবা বিশ্বাসী করতে চায়না। শেষে মা আর পিয়াল অনেক জোরাজুরি করে বাবাকে ফোন করাল। বাবা দুদিন পরে ইন্টারভিউ দিয়ে এসে বলল জেমসদের কোম্পানিতেই বাবা চাকরি পেয়ে গেছে। আর এদিকে স্কুলে রবও এক্কেবারে ভালো হয়ে গেছে। একটুও দুষ্টুমি করছেনা। উল্টে ক্লাসসুদ্ধ সব্বাইকে সেধে সেধে হেল্প করছে। জুলিয়া আর আইকো তো দুজনেই অবাক। পিয়ালকে বলল দেখেছো রব হঠাৎ করে কিরকম ভালো হয়ে গেছে। ঠিক যেন সামার ভ্যাকেশনে আগের রব। পিয়াল শুধু মিটিমিটি হেসেছে। ও তো জানে কারণ টা কী, কিন্তু সেটা বললে রব লজ্জা পাবে তাই সাত পাঁচ ভেবে পিয়াল কথাটা গোপনই রেখে দিলো।

ছয়মাস কেটে গেছে। ক্যাথি আন্টি এখন পুরোপুরি ঠিক। মাঝে মাঝেই রবের সাথে ওদের সবার জন্য কুকি আর পেস্ট্রি বানিয়ে পাঠান। বাবাও এখন আগের যতই হাসিখুশি। বাবার হাসির চোটে মাঝেমাঝে পুরো বাড়িটাই কাঁপতে থাকে। পিয়ালের এখন এদেশটা ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মাঝে একটু একটু মন কেমন করে। বছর দেড়েক বাদে এদের সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবে।


ছবিঃ ঈশিতা ছেত্রী

শিক্ষা ও চাকুরীসূত্রে গত দশ বছর ধরে নিউ ইয়র্কবাসী। আপাতত একটি বায়োটেক কোম্পানিতে পেটেণ্ট এজেন্ট আর রাত্রিবেলায় পার্ট টাইম ল স্টুডেন্ট। এর ফাঁকে সময় পেলে গল্পের বই পড়তে, ছবি তুলতে আর জমিয়ে রাঁধতে ভালোবাসেন। চাকরি আর স্কুলের কড়াকড়ি থেকে ছাড়া পেলে বেড়াতে যাওয়াটাও আরেক শখ।

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা