সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
বাদনা পরবের দেওয়ালচিত্র

রেলইঞ্জিন কারখানার শহর চিত্তরঞ্জন-এর প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত অজয় নদ থেকে জিটি রোডের মাঝে অবস্থিত নামোকেসিয়া, ঘিয়াডোবা, হলুদকানালী, কুন্ডলপাড়া, তাবাডি, তল্লাশি, আল্লাডি,জোর বাড়ী, কুসুম কানালী,মাদুরাই গ্রাম গুলোই আমার চেনাশোনা সাঁওতাল গ্রাম, আমার সীমাবদ্ধতা।

বাদনা পরবের দেওয়ালচিত্র

রেল ইঞ্জিন কারখানার স্থাপন পর্বে বন্দুক গুলির সামনে ওঁদের তীর ধনুক টিকতে পারেনি। পূর্ব পুরুষদের হাজার বছরের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত হতে হয়েছিল। কিস্কু,মূর্মূ,সরেন, মারান্ডী, বেসরা,হেমব্রম,কোল, টুডু, বাস্কী,হাঁসদা প্রভৃতি পদবীধারী বিভিন্ন জনজাতিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এইসব আদিবাসী গ্রামগুলিতে।

বাদনা পরবের দেওয়ালচিত্র

চিত্তরঞ্জন শিল্পশহরের লাগোয়া এই গ্রামগুলিতে জানুয়ারি মাসে বাদনা পরব পালিত হয়। রেল কারখানায় বাদনা পরবের ছুটি থাকে দশই জানুয়ারি। প্রতিবছর দশই জানুয়ারির একদিন আগে বা পরে বাদনা পরবের শুরু। প্রথম দিন ভগবতী পুজো, দ্বিতীয় দিন নানা পুজোপাঠ, তৃতীয় দিনে হয় 'গরু খুটান'। শেষ হয় সংক্রান্তিতে জঙ্গলে শিকার করা দিয়ে। জঙ্গল নেই তাই শিকার এখন প্রতীকী। অনেক গ্রামের মরদেরা 'কানগোই' পাহাড়ে যায় শিকারের আশায়।

বাদনা পরবের দেওয়ালচিত্র

বাদনার একমাস আগে থেকেই ঘরের দেওয়ালে কাদামাটি গোবরের প্রলেপ, জমানো পলাশ থেকে বাসন্তী রঙ, গাছের পাতা থেকে সবুজ রঙ, গুঁড়ো কয়লা আর পচা পাঁক থেকে কালো রঙ দিয়ে লতাপাতা, সহজিয়া ফুলের চিত্রকলায় সেজে উঠতো সেইসব দেওয়াল। কাজ করে ঘরে ফেরা সাঁওতালী কামিনদের গান এখন হারিয়ে গেছে, ওদের 'মিহিজাম' হাটের বিকিকিনি আর নেই। তেমনি বাদনা পরবের মাদলের নাচ গান হারাচ্ছে যান্ত্রিক ডিজের উদ্দামে আওয়াজের পেছনে।আজ থেকে বছর তিরিশেক আগে অবধিও, এইসব পরবের সময়ে, একেকদিন রাতের অন্ধকারে মিলেমিশে , দূরের এই গ্রামগুলি থেকে ভেসে আসত মাদলের আওয়াজ, ঢুকে পড়ত আমাদের কোয়ার্টারের আঙিনায়।সেই বনের ফুলের মতো সরল-সুন্দর জীবন আজ নাগরিক দূষণে ধুলোর মতো বিবর্ণ হয়ে গেছে যেন।

বাদনা পরবের দেওয়ালচিত্র

এই লেখার সঙ্গে দেওয়ালচিত্রগুলি তাবাডি গ্রামের চৈতালি হাঁসদার আঁকা। ছবিগুলি অন্তত তিন বছরের পুরনো। এইবছরে শীতের ছুটিতে লক্ষ্য করেছি, এমন ছবি দিয়ে সাজানো বাড়ি আর দেখাই গেল না। অনেক পুরনো অভ্যাসের মত এই সব গ্রামে এইরকম ছবি আঁকার অভ্যাসও হয়ত হারিয়ে গেল চিরদিনের মত।

ছবি এঁকেছেন চৈতালি হাঁসদা
ছবি তুলেছেন আশুতোষ সুর

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা