সবুজ মনের রসদ
Ichchhamoti Logo
স্ফটিকের বল

এখন যে গল্পটা তুমি পড়ছো, সেটা স্পেনের এক গ্রামের গল্প। বহুকাল আগে দক্ষিণ স্পেনে ছোট্ট এক গ্রাম ছিল। সে গ্রামের লোকজন ছিল ভীষণ আমুদে। তাদের যা ছিল তাই নিয়ে তারা আনন্দে জীবন কাটাতো। গ্রামের বাচ্চাকাচ্চা সবাই তাদের বাড়ির বাগানে গাছগাছালির ছায়ায় প্রাণ ভরে খেলাধুলা করতো। নাসির নামে এক রাখাল ছেলে তার মা-বাবা আর দাদিমার সাথে ওই গ্রামের কাছেই বাস করতো। প্রতিদিন সকালে রাখাল ছেলেটা তার ভেড়া আর ছাগলগুলোকে পাহাড়ের ঢালে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যেত। আবার বিকেলে তাদের নিয়ে গ্রামে ফিরে আসতো। রাতে ঘুমানোর সময় নাসিরের দাদিমা তাকে মজার মজার সব গল্প শোনাতেন। বেশিরভাগ সময় নাসির তারাদের গল্প শুনতে চাইতো। দাদিমায়ের মুখে গল্পগুলো শুনতে নাসিরের কী যে ভালো লাগতো!

রোজকার মতো একদিন নাসির পোষ্যদের ঘাস খাওয়া দেখতে দেখতে বাঁশি বাজাচ্ছিল। ভারী চমৎকার বাঁশি বাজাতে জানতো সে। হঠাৎ বুনোফুলের ঝোপের পেছনে অদ্ভূত এক আলোর দিকে তার চোখ পড়লো। কৌতূহলী হয়ে যখন সে ঝোপের দিকে গেল, ভীষণ সুন্দর ঝকঝকে একটা স্ফটিক বল চোখে পড়লো তার। এত সুন্দর বল সে আগে দেখেনি! স্ফটিক বলটা সাতরঙা রঙধনুর মতো কেমন ঝিকমিক করছিল! নাসির খুব আশ্চর্য হয়ে গেল। সাবধানে বলটা তুলে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো। হঠাৎ স্ফটিক বলটা থেকে খুব নীচু গলায় কারো কথা শুনতে পেলো নাসির। গলাটা বলছে, "তোমার মনের ইচ্ছার কথা আমায় বলতে পারো, আমি পূরণ করবো।"

নাসিরের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না সে সত্যিই বলটার ভেতর থেকে কারো গলা শুনতে পেয়েছে। কিন্তু যখন সে নিশ্চিত হলো যে সত্যিই সে কারো গলা শুনেছে, তখন খানিকটা দিশেহারা হয়ে গেল। তার এত এত ইচ্ছা, সে কিছুতেই ঠিক করে উঠতে পারছিল না কোনটা রেখে কোনটা বলবে। তখন সে নিজেকে শুনিয়ে বললো, "আগামিকাল পর্যন্ত যদি অপেক্ষা করি, তাহলে হয়ত আরো অনেককিছুই মনে পড়বে, তখনই ঠিক করা যাবে কোনটা চাইলে ভালো হবে।" এই ভেবে নিয়ে বলটা সে তার ঝোলায় পুরে, পোষা প্রাণীদের নিয়ে খুশিমনে বাড়ি ফিরলো। পথেই মনে মনে ঠিক করলো বলটা সম্পর্কে সে কাউকে কিচ্ছুটি বলবে না।

পরদিনও নাসির ঠিক করে উঠতে পারলো না তার কী চাওয়ার থাকতে পারে, কারণ তার তো সবই আছে। আগের মতোই দিন গড়িয়ে যেতে থাকলো। কিন্তু নাসির তখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলো না। সে চিন্তায় তাই বলে নাসির মোটেও মনমরা হয়ে থাকতো না। বরং দিন দিন সে যেন পাল্লা দিয়ে ফূর্তিবাজ হয়ে ‌উঠছিল। গ্রামের লোকজন নাসিরের এমন পরিবর্তনে খুব অবাক হয়ে গেল। এই ছেলের এত কিসের ফূর্তি! কারো মাথায় ঢুকলো না।

কী কারণে নাসির এত আনন্দে থাকে, সেটা দেখবার জন্য একদিন ওই গ্রামেরই এক দুষ্টু ছেলে নাসির আর তার পোষ্যদের পিছু পিছু গিয়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইল। ভেড়া আর ছাগলগুলোকে মাঠে ছেড়ে দিয়ে, এককোণে বসে বলটা বের করে তার দিকে নাসির খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকল। গাছের আড়াল থেকে ছেলেটা চুপচাপ সব দেখল। সে তক্কে তক্কে থাকল কখন ক্লান্ত হয়ে নাসির ঘুমিয়ে পড়বে। কিছুক্ষণ পর সত্যি সত্যি নাসির ঘুমে ঢুলে পড়লো। সেই সুযোগে ছেলেটা স্ফটিক বলটা বগলদাবা করে পালিয়ে গেল।

স্ফটিক বলটা নিয়ে গ্রামে পৌঁছে ছেলেটা দারুণ এক জিনিস দেখাবে বলে গ্রামের সবাইকে ডাকলো। চমৎকার রঙচঙে বলটা দেখে তো সবাই অবাক। তারা বলটা হাতে নিয়ে ঘুরিরে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। হঠাৎ স্ফটিক বলটা থেকে একটা নরমসরম গলা শুনতে পাওয়া গেল। ওটা থেকে কেউ বলছে, " আমি তোমাদের ইচ্ছা পূরণ করতে পারি।" এক গ্রামবাসী বলটা নিজের হাতে নিয়ে চেঁচিয়ে বললো, "আমার এক থলে ভর্তি সোনাদানা চাই।" আরেকজন বলটা নিয়ে প্রথমজনের চেয়ে আরেক পর্দা গলা তুলে চেঁচালো, " আমার বাক্স ভর্তি গহনা চাই।" কেউ কেউ তাদের পুরোনো বাড়ির বদলে বিশাল সোনার দরজাওয়ালা নতুন বাড়ি চাইলো। অনেকেই আবার কয়েক থলে ভর্তি গহনাগাটি চাইলো।

স্ফটিকের বল

গ্রামবাসী সবার সব ইচ্ছাপূরণ হল। কিন্তু তবুও গোটা গ্রামের কেউ নিজেকে সুখী ভেবে তৃপ্তি পাচ্ছিল না। কারণ তারা একে অন্যকে হিংসা করা শুরু করলো। যার বাড়ি আছে, সে হিংসা করতে শুরু করলো যার থলে ভর্তি সোনা রয়েছে তাকে। আবার যার সোনা আছে, সে হিংসা করা শুরু করলো যার নিজের বিশাল বাড়ি আছে তাকে। আর এসব কারণে গ্রামবাসীরা একে অন্যের উপর রেগেমেগে কথা বলাই বন্ধ করে দিলো। গ্রামের খোলা যেসব মাঠে আগে ছোটো বাচ্চাগুলো খেলাধুলো করতো, সেগুলো আর আগের মতো ছিল না। সব জাগয়া জুড়ে বিশাল বিশাল সব বাড়ি আর সোনাদানায় ভরে গেছে। বাচ্চাদের খেলাধুলোর জন্য কোন জায়গা অবশিষ্ট ছিল না। গ্রামের বাচ্চাগুলো ভীষণ মনমরা হয়ে উঠলো। শুধুমাত্র নাসির আর তার পরিবারের সবাই আনন্দ আর তৃপ্তির সাথে দিন কাটাচ্ছিল। নাসির আগের মতোই সকাল বিকেল খুশি মনে বাঁশি বাজায়।

একদিন গ্রামের বাচ্চাগুলো স্ফটিক বলটা নিয়ে নাসিরের কাছে গেল। তারা নাসিরকে বললো, " আমাদের ছোট্ট গ্রামটা আগে কত্ত সুখী আর ফূর্তিতে ভরপুর ছিল।" বাচ্চাদের সাথে আসা বাবা মায়েরাও দুঃখী গলায় জানালো, "সব দিক থেকেই আমরা সবাই খুব অসুখী। জাঁকজমকপূর্ণ বাড়ি-ঘর বা প্রচুর সোনাদানা আমাদের জন্য শুধু কষ্টই বয়ে এনেছে।"

নাসির যখন বুঝলো গ্রামের লোকগুলো সত্যিই অনুতপ্ত তখন সে বললো, " যদিও স্ফটিক বলটা আমার কী চাই সেটা জানতে চেয়েছিল, কিন্তু চাইবার মতো কিছু না থাকায় সেটা আমার বলা হয়ে ওঠেনি। এখন তোমরা যদি সব কিছুর বিনিময়ে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে রাজী থাকো, তবে আমি স্ফটিক বলের কাছে এটাকেই আমার ইচ্ছা হিসেবে জানাতে পারি।"

গ্রামবাসী আনন্দের সাথে নাসিরের কথায় রাজী হলো। নাসির তখন স্ফটিক বলটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে বললো এই গ্রাম আগে যেমন ছিল ঠিক তেমনভাবেই ফিরিয়ে দেয়া হোক। মুহূর্তের মধ্যে বিশাল সব বাড়িঘর, সোনাদানা উবে গিয়ে তার জায়গায় সবুজ মাঠ দেখা দিলো। আগের সেই পুরোনো চেহারার সবুজ গাছগাছালিতে ভরা গ্রামটা ফিরে এলো।

আবারও গ্রামের মানুষজনের মন হাসিখুশিতে ভরে উঠলো। বাচ্চারা সবুজ মাঠে গাছের ছায়ায় প্রাণভরে খেলার আনন্দে মাতলো। নাসির আগের মতোই বাঁশি বাজিয়ে তার আনন্দভরা জীবন কাটাতে লাগলো। সূর্যাস্তের সময় তার বাজানো বাঁশির মধুর সুর গোটা গ্রামে ছড়িয়ে পড়তো। সে সুরে গ্রামের সবার মন ভরে উঠতো।

তাহলেই ভেবে দেখো, নাসির আর তার গ্রামবাসীদের গল্প থেকে আমরা এটাই শিখলাম যে আমাদের যা আছে তাই নিয়েই খুশি থাকা উচিত, লোভী হওয়া একদম ঠিক না।

ছবিঃ মিতিল

আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে শপথগ্রহণ করছি এবং তার সকল নাগরিক যাতে : সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার; চিন্তা,মতপ্রকাশ, বিশ্বাস, ধর্ম এবং উপাসনার স্বাধীনতা; সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন ও সুযোগের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি-সম্ভ্রম ও জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি সুনিশ্চিত করে সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে; আমাদের গণপরিষদে, আজ,১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
undefined

ফেসবুকে ইচ্ছামতীর বন্ধুরা