প্রায় একশো বছর আগের কথা। একজন তরুন শিল্পী ছিলেন। খুব ভাল ছবি আঁকতেন আরে মূর্তি গড়তেন। তাঁর আঁকা ছবির কদর করত দেশ - বিদেশের সবাই। তিনি আবার ছবি আঁকতেও শেখাতেন। সেই সময়ে সবাই যখন ইউরোপের ধাঁচে ছবি আঁকছে, তখন তিনি ভারতের নিজস্ব মুঘল ও রাজপুত ধাঁচের ছবি এঁকে এই শিল্পের এক নতুন দিক তুলে ধরেন।
একদিন এই শিল্পীকে তাঁর কাকা, যিনি একাধারে কবি এবং লেখক ছিলেন, ডেকে বললেন ছোটদের জন্য গল্প লিখতে। শিল্পী তো অবাক!! তিনি তো ছবি আঁকেন। রঙ -বেরং এর তুলির টানে ভরিয়ে তোলেন ক্যানভাস। তিনি গল্প লিখবেন কি করে? কাকা তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, যেমন করে গল্প কর, সেরকম করেই লেখ। লেখা হল প্রথম গল্প 'শকুন্তলা'। কন্ব মুনির আশ্রমে বড় হয়ে ওঠা সুন্দরী শকুন্তলা আর রাজা দুষ্মন্ত এর গল্প। সে যে কি সুন্দর গল্প - পড়তে পড়তে মনে হবে তুমি যেন কন্ব মুনির আশ্রমেই আছ! কাকা বলেছিলেন যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ভাষা শুধরে দেবেন। কিন্তু একটা শব্দ ও বদল করতে হয়নি। বলতো কার কথা বলছি? - বলছি আমাদের প্রিয় লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা। আর সেই কাকা কে ছিলেন জান? - কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
'শকুন্তলা', 'ক্ষীরের পুতুল', 'নালক', 'রাজকাহিনী', 'বুড়ো-আংলা', আরো কত কত গল্প, ছড়া, নাটক, তিনি লিখেছেন ছোটদের জন্য।তাঁর ভাষা সহজ, সরল, পড়ে বুঝতে একটু ও অসুবিধা হয়না। আর গল্পের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে কি সুন্দর সব ছবি। সে 'ক্ষীরের পুতুল' গল্পে দিগনগরের দীঘির ঘাট ই হোক, বা 'রাজকাহিনী'র রাজপুত রাজা-রানীদের সাহস আর বীরত্বের গল্পই হোক - সব যেন চোখের সামনে ভাসতে থাকে। অবনীন্দ্রনাথ খুব সহজেই ছুঁতে পারতেন ছোটদের মনকে। সেইজন্যই তো তিনি কত সহজে ফুটিয়ে তুলতে পারেন ছোট্ট রাজপুত্র গায়েব এর বাবার পরিচয় না থাকার কষ্ট; রাজকুমার বাপ্পাদিত্যের ভীল বালকদের সাথে বন্ধুত্বের গল্প।
আর 'বুড়ো-আংলা'র রিদয়! - তার মত দুষ্ট ছেলে আর দুটো আছে নাকি? সে এত দুষ্ট যে গনেশ ঠাকুর রেগেমেগে তাকে আঙ্গুল সমান বুড়ো-আংলা বানিয়ে দিলেন। বেচারা রিদয় তখন বুনো হাঁসেদের পিঠে চেপে উড়ে চলল কৈলাশ পর্বতের দিকে, গনেশ ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য। উড়তে উড়তে রিদয় দেখতে পেল নিচে রঙিন নকশী কাঁথার মত বিছানো সুন্দর বাংলা দেশ। সেই ছবির মত বিবরণ জানতে হলে অবশ্যই পড়ে ফেলতে হবে 'বুড়ো-আংলা'।
অবনীন্দ্রনাথ নিজেও বোধ হয় জানতেন যে তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে রঙিন ছবির টুকরো। তাই তো, 'বুড়ো-আংলা' গল্পে হাঁসের দল উড়তে উড়তে যখন প্রতিটি গ্রাম- শহর-মাঠ - জঙ্গলের খবর নিচ্ছে কুঁকড়োদের কাছ থেকে, তখন তারা হাঁকে -
"কার বাড়ি?"
"ঠাকুর বাড়ি।"
"কোন ঠাকুর?"
"ওবিন ঠাকুর -ছবি লেখে।"
মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা
- বিস্তারিত
লজ্জাবতী গাছ দেখেছ? যাকে ইংরেজি তে ডাকা হয় টাচ-মি-নট বলে? যদি এই গাছের পাতাগুলো একটু হাত দিয়ে ছুঁয়ে দাও, দেখবে আঙ্গুল লাগার সঙ্গে সঙ্গে মেলে থাকা পাতাগুলো গুটিয়ে যাবে। আবার বেশ কিছুক্ষন পরে ধীরে ধীরে পাতাগুলো আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ছোঁয়ামাত্র গুটিয়ে যায় বলে এই গাছের নাম লজ্জাবতী - যেন লজ্জা পেয়ে মুখ লুকিয়েছে।
গাছ লজ্জা পায় - ভাবলে অবাক লাগে না? লজ্জা হয়ত সত্যি সত্যি পায়না , কিন্তু গাছটা হাতের ছোঁয়া বা স্পর্শ অবশ্যই বুঝতে পারে। গাছের যে প্রাণ আছে, স্পর্শবোধ আছে, গাছের কোন অংশ কাটলে বা টেনে ছিঁড়লে যে গাছের ও ব্যথা লাগে, আমাদের মত গাছেদের ও খুব ঠান্ডা বা খুব গরমে কষ্ট হয়, একথা আমাদের প্রথম কে জানিয়েছিলেন বলতো? আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে, এই কথা আমাদের জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। ২০০৮ সালে তাঁর জন্মের ১৫০ বছর পালন করা হচ্ছে।
জগদীশ চন্দ্রের জন্ম হয় ১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর। বড় হয়ে তিনি ইংল্যান্ড এ যান চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে। কিন্তু সেই পড়াশোনা তিনি করতে পারেননি অসুস্থতার কারনে। তার বদলে তিনি কেম্ব্রিজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৮৮৪ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসাবে কাজে যোগ দেন। সারাদিন কলেজে পরিশ্রম করে তিনি রাত জেগে তাঁর গবেষণা চালাতেন। তখন কলেজে ভাল ল্যাবরেটরি ছিলনা, একটা ছোট্ট ঘরে তিনি নিজের গবেষণা করতেন। তিনি নিজের হাতে বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি তৈরি করতেন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে জগদীশ চন্দ্র অনেকরকম আবিষ্কার করেন এবং নানারকম সূক্ষ্ম যন্ত্র তৈরি করেন। সেইসব যন্ত্র এখনো রাখা আছে কলকাতার বসু বিজ্ঞান মন্দিরে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু যন্ত্র কিন্তু এতই সূক্ষ্ম এবং আধুনিক যে আজ ও দিব্বি ব্যবহার করা যায়।
জগদীশ চন্দ্র বসু এক সঙ্গে নানারকম বিষয় নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করতেন - সে পদার্থ বিদ্যার বিভিন্ন দিক ই হোক বা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের নানান বিষয় ই হোক। তাঁর অনেক রকম গবেষনার মধ্যে তিনি যে দুটির জন্য সবথেকে পরিচিত, তার মধ্যে একটি তো আগেই বলেছি। তিনি 'ক্রেস্কোগ্রাফ' নামে এক যন্ত্র তৈরি করেন। এই যন্ত্র দিয়ে মাপা যায় একটা গাছ প্রতি সেকন্ড-এ কতটা করে বাড়ছে। গাছের গায়ে ইলেকট্রিক শক দিয়ে, নানারকম রাসায়নিক ব্যবহার করে তিনি দেখান যে গাছ ও বিভিন্ন ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানায়।পদ্ম ফুল সূর্য ওঠার পর পাপড়ি মেলে আর দিনের শেষে গুটিয়ে নেয়। সূর্যমুখী ফুলের কুঁড়ি সূর্যের দিক বদলের সাথে সাথে মাথা ঘোরায়। একটা গাছকে অন্ধকারে রাখলেও সে ঠিক আলোর দিকে মুখ করে বাড়তে থাকে। জগদীশ চন্দ্রই আমাদের প্রথম জানান যে গাছ গুলি এইরকম করে উষ্ণতার পরিবর্তনের জন্য। গাছেদের সম্পর্কে এইরকম আরো নানা তথ্য আমরা জানতে পারি তাঁর গবেষণার থেকে।
আরেকটি গবেষণা, যার জন্য তিনি বিখ্যাত, হল ওয়্যারলেস প্রযুক্তি নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা। রেডিও আবিষ্কারের শিরোপা যদিও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মার্কনি কে দেওয়া হয়েছিল, এখন কিন্তু এটা সারা পৃথিবী স্বীকার করে নিয়েছে যে জগদীশ চন্দ্রই প্রথম এই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। সেই সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক বৈজ্ঞানিক দের মত কলকাতায় বসে জগদীশ চন্দ্র ও এই বিষয়ে অনেক গবেষণা করেন এবং মার্কনির পরীক্ষার অনেক আগেই অনেকদূর কাজ করে ফেলেছিলেন।
কিন্তু তাহলে তখন তাঁর নাম লোকে জানতে পারেনি কেন? আসলে, তিনি ছিলেন একজন সাধকের মত।তিনি চাইতেন তাঁর পড়াশোনা এবং গবেষণা সবার কাজে লাগুক। তিনি তাঁর যাবতীয় ভাবনা চিন্তা সবার সামনে তুলে ধরতেন। তাই তিনি মাত্র একবার এক বন্ধুর অনুরোধ ছাড়া আর কোনদিন তাঁর কোন আবিষ্কারের জন্য "পেটেন্ট" বা স্বত্বাধিকার দাবি করেননি।
তিনি কিন্তু শুধু বৈজ্ঞানিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষায় প্রথম বিজ্ঞান ভিত্তিক গল্প বা সায়েন্স ফিকশন এর লেখক। তাঁর লেখা সেই বইটির নাম "নিরুদ্দেশের কাহিনী"।
জগদীশ চন্দ্রের আগে অবধি সারা পৃথিবী ভারতবর্ষ কে চিনত ধর্ম ও দর্শন শিক্ষার কেন্দ্র বলে। আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুই ভারতবর্ষের আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার প্রথম পথপ্রদর্শক।
মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা
- বিস্তারিত
ছবির উতসব
ছোট্ট মেয়ে সাসলায়া আর তার মূক ভাই দারিও থাকে নিকারাগুয়ার কোন এক শহরে। জঞ্জালের ঢিপি থেকে জঞ্জাল কুড়ানোর ফাঁকে ইশকুলেও যায় দুজনে। থাকে জঞ্জালের ঢিপির পাশে একটা ভাঙাচোরা আস্তানায় দাদুর সাথে। কিন্তু মাকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে না যে! তাই দুইজনে মাকে খুঁজতে পাড়ি দেয় পাশের দেশ কোস্টারিকায়। শহর পেরিয়ে, অনেক পথ ঘুরে, একটা জাহাজে চেপে অন্য অনেক মানুষের সঙ্গে কোস্টারিকার সীমান্তে জঙ্গলে পৌঁছায় তারা। কিন্তু জঙ্গলের মধ্যে হঠাত শুরু হয় প্রহরীদের টহলদারি। ছিটকে যায় দুই ভাই বোন। সাসলায়া আর ভাইকে খুঁজে পায়না। ক্লান্ত পায়ে এক নতুন শহরে পৌঁছায় সে। ভাইকে খুঁজতে খুঁজতে সেই শহরের ভীড়ে হারিয়ে যায় ছোট্ট সাসলায়া।
এই গল্প নিয়েই ছবি বানিয়েছেন কোস্টারিকার চলচ্চিত্র পরিচালক ইশতার ইয়াসিন গুতিয়েরেজ। ছবির নাম " এল কামিনো"। তৈরী হয়েছে ২০০৭ সালে। ভাবছ এই দূর বিদেশের ছবি আমি দেখলাম কি করে? আমি এই ছবি দেখলাম "চতুর্দশ কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উতসবে।" তুমি কি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উতসবের নাম শুনেছ? সে এক দারুণ জমজমাট ব্যাপার। প্রতি বছর ১০ -১৭ ই নভেম্বর কলকাতায় এই উতসব হয়। ২০০৮ সালে এই উতসব ১৪ বছরে পা দিল।
কলকাতার বিভিন্ন সিনেমা হলে দেখান হয় দেশ- বিদেশের কয়েকশো ছবি ও তথ্যচিত্র। বেশ কিছু ছোটদের ছবিও দেখানো হয়। কয়েকটি হলে বিনামুল্যে প্রবেশপত্র ও পাওয়া যায়। এ কিন্তু এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। অজানা ভাষার ছবি হলে আবার ছবি দেখার সাথে সাথে তার ইংরাজি সাবটাইটেল পড়াও অভ্যেস করতে হয়।
এইরকম উতসব দেখলে কি হয় বলতো? কত দেশের কত রকমের গল্প, নানা রকম মানুষের জীবনের নানা রকম ঘটনা- দেখে, জেনে, মনের জানালা টা অনেক বড় হয়ে যায়। এ যেন ঠিক একটা নতুন বিদেশী গল্পের বই পড়ার আনন্দ! এইরকম চলচ্চিত্র উতসব কিন্তু শুধু কলকাতায়ই হয়না। ভারতের বেশ কয়েকটা বড় শহরে এবং দেশ বিদেশের বিভিন্ন শহরে এইরকম উতসব সারা বছর ধরেই হয়। ভারতের দক্ষিনে হায়দ্রাবাদ শহরে তো প্রতি বছর শুধুমাত্র ছোটদের জন্য হয় এক বিশেষ চলচ্চিত্র উতসব।
বড় হয়ে তো অবশ্যই দেখতে যাবে এইরকম কোন এক উতসব। আর আগামি বছর নভেম্বর মাসের শুরুতে যদি সুযোগ পাও, তাহলে বাবা মার সঙ্গে দেখতে যেও একটা বা দুটো ছবি - কলকাতা চলচ্চিত্র উতসবে।
মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
সেই প্রথম ছবি
চার্লি চ্যাপলিন, লরেল -হার্ডি, গুপি গাইন বাঘা বাইন, বাড়ি থেকে পালিয়ে, সোনার কেল্লা, সাউন্ড অফ মিউজিক, স্পাইডারম্যান, হ্যারি পটার- নামগুলোকে একসাথে বললাম কেন? - কারণ, এগুলি সব আমাদের অত্যন্ত প্রিয় কতগুলো ফিল্ম বা ছবি এবং চরিত্রের নাম। প্রজাপতির মত গোঁফ ওয়ালা চার্লি, আর মোটা হার্ডি -রোগা লরেল এর কান্ডকারখানা দেখে আমরা হেসে লুটিয়ে পড়ি, গুপি-বাঘার গান শুনে মুগ্ধ হই, সোনার কেল্লায় ছোট্ট মুকুলকে খুঁজতে বেরই ফেলুদার সঙ্গে, আবার স্পাইডারম্যান আর হ্যারি পটার এর আশ্চর্য সব ক্ষমতা দেখে তো চোখ একেবারে গোল গোল হয়ে যায়! কিন্তু দেখতে দেখতে কখনো ভেবে দেখেছ কি, কিরকম ভাবে শুরু হল এই সব ফিল্ম বা ছবি তৈরি? কারা প্রথম ভেবেছিলেন এই আশ্চর্য মাধ্যমের কথা, যা কিনা জীবন কে অনুকরন করবে? যে মাধ্যমে চরিত্র রা সব কথা বলবে, গান গাইবে, নাচ করবে, যুদ্ধ -মারামারি ও করবে, আবার ভালবাসার কথাও বলবে! যে মাধ্যম ভালো বই এর মত আমাদের শোনাবে এবং দেখাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কত রকমের গল্প !
হয়েছিল কি, উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে, অর্থাৎ প্রায় একশো বছরের ও বেশ কিছু আগে, যাঁরা ছবি নিয়ে মাথা ঘামান, তাঁরা সবাই চাইছিলেন যে কি করে ছবিকে গতি দেওয়া যায়। কেননা তাহলে চলমান ছবির এই মিছিল হয়ত বাস্তবের আরো কাছাকাছি আসবে।আটলাণ্টিকের এপারে ও ওপারে নানা গুণী মানুষ এইসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ইংল্যান্ড এর ফটোগ্রাফার এডোয়ার্ড মাইব্রিজ। তিনিই প্রথম একটি চলমান ঘোড়ার ছবি তোলেন , ঘোড়ার চলার পথের পাশে সারি সারি অনেকগুলি ক্যামেরা বসিয়ে। ওদিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন টমাস আল্ভা এডিসন, যিনি আমাদের কাছে বেশি পরিচিত "লাইট বালব" এর উদ্ভাবক হিসাবে। তিনি উদ্ভাবন করেন "কিনেটোস্কোপ" নামে এক যন্ত্র, যেখানে একটি ছোট ছিদ্রে চোখ লাগিয়ে ভেতরের চলমান ছবি দেখা যেত।
শেষ পর্যন্ত কিন্তু শিকে ছিঁড়ল ফ্রান্সের লুমিয়ের ভাইদের কপালে। অগাস্ট এবং লুই লুমিয়ের ছিলেন দুই ভাই যাঁরা একই রকম পরীক্ষা -নিরিক্ষা চালাচ্ছিলেন। তাঁদের ব্যাবহার করা যন্ত্রের নাম ছিল সিনেম্যাটোগ্রাফ। বলা হয়ে থাকে, ১৮৯৫ সালের কনকনে ঠান্ডায় বড়দিনে তাঁরা প্রথমে লিঁও শহরে, তারপরে প্যারিসে তাঁদের প্রথম কয়েকটি ছবি দেখান। দিনটা স্মরণীয়, কারন আর কেউ তার আগে , যাকে আমরা ছায়াছবি বলি, তা দেখানোর সুযোগ পাননি মানুষ কে। এই ছবিগুলি ছোট ছিল, আর তাতে কথা বা শব্দ ছিল না।
ছবির বিষয় কিরকম? - যেমন, কারখানা থেকে বেড়িয়ে আসছে একদল শ্রমিক, বা ট্রেন ঢুকছে কোন রেল স্টেশনে, এইসব। আসলে , সেই আদিযুগে, কি করে আলো কমাতে বাড়াতে হয় তা জানা ছিল না। ক্যামেরাকে কিভাবে নড়াতে হয় তাও জানা ছিল না। ক্যামেরাকে দাঁড় করিয়ে রেখে এক রিলের মধ্যে যতটা দেখান যায়, ততটাই দেখানো হত। আজকের ছবির মত এত কারিকুরি সেখানে ছিল না।
একবার তো যা ঘটল তা রীতিমত মজার। লুমিয়ের ভাইয়েরা ছবির আয়োজন করেছেন। আর তাতে যথারীতি রেলগাড়ী পর্দা দিয়ে এগিয়ে আসছে। দর্শকরা ভাবল এই বুঝি ট্রেন তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হুড়োহুড়ি করে তারা দরজা দিয়ে বাইরে চলে যেতে চায় ভয়ে। তাদের বুঝিয়ে শান্ত করতে কত যে সময় গেল!!
সে যুগের মানুষ সিনেমাকে খুব যে শিল্প -টিল্প ভেবেছিল এমন কিন্তু নয়। তাদের ধারনা ছিল, গ্রামের মেলায় বা শহরের ফুটপাথে যেরকম কিছু মজার ভানুমতীর খেলা আয়োজন করা হয়, এ সেরকমই। ছবিগুলো নড়ছে, নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে, হাসছে - আমরা বলতে পারছি বিজ্ঞান কত এগিয়ে গেছে!
ছবি কিন্তু গল্প বলা শিখবে আরো পর থেকে।
[চলবে]
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
কলকাতা
- বিস্তারিত
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত
হে অরণ্য কথা কও
সবাইপুরের কাছে এসে ইছামতীর তীরের সৌন্দর্য আরও রহস্যময় হয়ে উঠলো। যেন তীরভূমির এই প্রাচীন অশ্বথ গাছটা, ওই প্রাচীন ষাঁড়া গাছগুলো আমায় চেনে আমার বাল্যকাল থেকে,যেন এখনি বলবে- এই দ্যাখো সেই খোকা কত বড় হয়েছে! সবাইপুরের বাঁক ছাড়িয়ে অদূরে কাঁচিকাটার খেয়ায় কারা পার হচ্চে। একটি ছোকরা,সঙ্গে একটি প্রৌঢ়া, দুটি ছেলেমেয়ে,একখানা সাইকেল। ছোকরা বললে, আশুরহাটে তাদের বাড়ী। পাশেই মরগাঙের খাল, বহুদিন পরে আমি ঢুকলাম নৌকো করে এই খালের মধ্যে। ছোট একটা বাঁশের পুলের তলা দিয়ে বাঁ ধারে আরামডাঙার বাঁশবন, খেজুরবাগানের তলা দিয়ে ওই গ্রামের একটা ঘাটে পৌঁছুই। ছোট্ট খালের এই ঘাটটি ঠিক যেন একটি ছবি। ছায়া নিবিড় স্নিগ্ধ অপরাহ্ন,নীল আকাশ,ঘন সবুজ জলজ ঘাস ও দুর্বাস্তৃত তৃণক্ষেত্র-সামনে কতকগুলি প্রাচীন গাছের আধ অন্ধকার তলায় একটা পুরোনো ইটের দরগা। কতকাল এদিকে আসিনি,আমারই গ্রামের পেছনে আরামডাঙার এই ঘাট কখনো দেখেছি বলে মনে হয় না-হয়তো কখনো আসিই নি-অথচ কোথায় লিপুদারায় সেই বন্য সরোবর,ভালকীর সেই ঘন অরণ্য, মানভূমের মাঠাবুরু শৈলশ্রেণী,বামিয়াবুরু ও চিটিমিটি, রাঁচির পথে হির্নি জলপ্রপাত, ও পোড়াহাট রিজার্ভ ফরেস্ট। কোথায় দিল্লী,কোথায় আগ্রা, কোথায় চাঁট গাঁ,কোথায় শিলং,দার্জিলিং কোথায় না গিয়েচি! অথচ জীবনে কখনো আসিনি আমার গ্রাম থেকে মাত্র দুমাইল দূর আরামডাঙার এই ছবিটির মতো সুন্দর,তীরতরু শ্রেণীর নিবিড় ছায়াতলে অবস্থিত প্রাচীন পীরের দরগা ও ছোট্ট ঘাটটিতে।...
পড়ে পাওয়া বিভাগে আমরা আমাদের পছন্দের লেখক বা মনিষীদের লেখা থেকে বা তাঁদের জীবনের কিছু টুকরো তুলে ধরব। তোমার পছন্দের লেখক কে? তুমি কি তাঁর ছোটবেলা সম্বন্ধে কোন গল্প জানো ? জানলে লিখে পাঠাও আমাদের। আমরা সবাই মিলে সেই লেখা পড়ব । বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়র লেখা কোন বই তুমি কি পড়েছ? তাহলে লিখে জানাও আমাদের কেমন লেগেছে সেই বই।
- বিস্তারিত
- লিখেছেন বইপোকা
- ক্যাটfগরি: নিয়মিত