খেলাঘরখেলাঘর

amar chottobela

[ পূর্বতন পূর্ববঙ্গ , এখনকার বাংলাদেশের স্মৃতিকথা ]

প্রতিদিন সকালে কে তোমার ঘুম ভাঙায়? আমি কিন্তু জানি। হয় তোমার মা অথবা বাবা, আর নাহয় অ্যালার্ম ঘড়ি। তিড়িং করে এক লাফে উঠে পড়তে হয়। উঠতে গড়িমসি করে দেরি করলেই ভারি বিপদ। স্কুলের গাড়িটা চলে যায় যদি হুশ করে!

আমার ঘুম কে ভাঙাতো বলতে পার? একটা ঘুঘুপাখি। ছোটবেলায় থাকতাম মামার বাড়ীতে। রাতে শুতাম "দিয়ানি"র কাছে। দিয়ানি কথাটা কখনো শোননি তো? আমিই কি জানতাম তখন! আসলে দিদিমা কে ডাকতাম দিদিমণি বলে। অতবড় একটা কথা তাড়াতাড়িতে হয়ে যেত "দিয়ানি"। সেটাই চালু হয়ে গেছিল আর কী...

ঘরের টিনের চালের ওপর রোজ বসত ঘুঘুটা আর ডাকাডাকি করত। একদিন দিয়ানিকে জিজ্ঞেস করলাম - "ও ওরকম সুর করে একই ভাবে ডাকছে কেন?"

দিয়ানি বললেন "ও তোমাকে উঠতে বলছে। বলছে গোপাল ঠাকুর ওঠো, ওঠো! তুমি তো আমার গোপাল ঠাকুর, তাই ওরকম বলছে।" একটু থেমে আবার বললেন," তাই বলে এখনি উঠনা কিন্তু, সকাল হয়নি এখনো।" সেই থেকে ঘুম ভাঙলেও ওঠা বারন ছিল সকাল হবার আগে। আমার তো মজাই হল। আধ ঘুমে, আধ জাগার মাঝে শুয়ে থাকার যে কী আনন্দ সে আর কী বলব!

প্রতিদিন তোমরা ঘুম থেকে উঠে স্কুল যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে শুরু কর। কিন্তু আমার ছিল অন্য রকম কাজ। ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে আমায় যে কাজটা করতে হত রোজ, সেটা শুনলে নিশ্চয় আঁতকে উঠে নাক শিঁটকে বলে উঠবে "অ্যাহ!"

বাগানে ঘুরে ঘুরে কতকগুলো গাছের পাতা জোগাড় করতে হত রোজ। এগুল হল আনারসের কচি পাতা, শিউলির মোটা পাতা; এছাড়াও ছিল আরো কতকগুলো তেতো তেতো পাতা। সেসব দিয়ানি শিলে থেঁতো করে তেতো রস বার করতেন। আর আমাদের সব ভাই বোনেদের এক ঝিনুক করে গিলতে হত সোনামুখ করে। মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরতো "অ্যাহ!"

এর পর দাদুর কাছে বসতে হত বর্ণপরিচয় আর স্লেট পেন্সিল নিয়ে। সে স্লেট তোমরা দেখনি। পাথরের তৈরি বড্ড ভারী ছিল সেই স্লেট। কিন্তু কী আর করার ছিল বল- তখন তো বাচ্চাদের হাতে প্রথমেই খাতা কলম দেওয়া হত না লেখা শেখার জন্য! স্লেট এ দাদু "অ" "আ" ইত্যাদি লিখে দিতেন আর আমাকে সেই লেখার ওপর হাত বোলাতে হত।

এসব হতে হতেই দিয়ানি ডাক দিতেন সকালের জলখাবার খাওয়ার জন্য। কী খেতাম জানো? সুগন্ধি চালের মিঠে মিঠে ফেনা ভাত, মটর ডালের বড়ি সেদ্ধ, আর আলু সেদ্ধ দিয়ে। খাওনি বোধ হয় কখনো, তাই না? হয়ত বলবে "এমা, এ আবার কীরকম সকালের খাবার?"

খেলে বুঝতে ব্যাপারখানা কী!!

[চলবে]

 

 

সন্তোষ কুমার রায়
রূপনারায়ণপুর

সন্তোষ কুমার রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। শৈশব ও কৈশোর যথাক্রমে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় কাটলেও, কর্মজীবন কেটেছে বাংলা বিহার সীমান্তের হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ শিল্পনগরীতে। শিল্পনগরী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের এবং বড়দের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখেছেন বহুবছর। বর্তমানে ইচ্ছামতীর পরশমণি বিভাগে নিয়মিত লেখা ছাড়াও তিনি একটি গ্রুপ ব্লগের সদস্য রূপে লেখালিখি করেন ।