খেলাঘরখেলাঘর

আগের সংখ্যায় (বসন্ত সংখ্যা ২০০৯) তোমাদেরকে কেটলির গুন গুন করার কথা শুনিয়েছিলাম। সঙ্গে আরোও অনেক কথা ছিল।
কেটলি নিয়ে আর দু'একটা কথা হবে নাকি?
হবে? তাহলে চল, রান্নাঘরে হানা দিই আর একবার। কখন সেটা করব জিজ্ঞেস করছ? রান্নাঘর যখন ফাঁকা থাকবে তখন গেলেই হল। তবে পাশে মা বা অন্য কেউ বড় একজন থাকা উচিত।

কেটলিতে জল ভর্তি করে নিয়ে গ্যাসের ওপর বসাও। জলটা একটু বেশি নিতে হবে কিন্তু। তাহলে বাষ্পটা নল দিয়ে বেরোতে পারবে না। কেননা বাষ্প বেরোবার নলের মুখটা জলের মধ্যে ডুবে থাকবে। আর সেটাই আমরা চাই।

জল ফুটতে থাকলে বাষ্প তৈরি হয়ে সেটা নল দিয়ে বেরোতে না পেরে ভেতরে জমতে থাকবে। ভেতরে বাষ্প জলছে কিনা একটু পরেই টের পাবে ঢাকনার খটাং খটাং আওয়াজ শুনে। নলের মুখ দিয়ে বেরোতে না পেরে বাষ্প ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে ঐ ঢাকনা সরিয়ে। আর তাতেই ঐ শব্দ।

গায়ে জোর না থাকলে কি সেটা সম্ভব?
এটাই হল বাষ্পের ঠেলা বা ধাক্কা মারের ক্ষমতা। ইংরাজিতে একে বলে steam power বা বাষ্পীয় ক্ষমতা।

এই ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর কথা চলেছিল বেশ কয়েকশ' বছর ধরে। কবে থেকে? তা ধর ১৫৫০-৫১ সাল থেকে। সেই সময় থেকে নানা ধরনের কাজ করার জন্য তৈরি হয়েছে নানারকমের স্টীম বা বাষ্পীয় ইঞ্জিন।
কল-কারখানায় তো কাজ করেছেই, এমনকি রেল গাড়ি চালাবার কাজেও লেগেছে এই ইঞ্জিন।

এখন অবশ্য স্টীম-ইঞ্জিন আর  রেলগাড়ী চালাবার কাজে ব্যবহার করা হয়না। ইলেকট্রিক বা ডীসেল ইঞ্জিনেই গাড়ী চলে। কিন্তু কিছুদিন আগে পর্যন্তও বাষ্পীয় ইঞ্জিনই ব্যবহার হত।
প্রথম রেল-ইঞ্জিন তৈরি করেন জর্জ স্টিফেনসন। ইনি মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ইঞ্জিন বানানোর কাজে হাত লাগান এবং সফল হন। এই ইঞ্জিন প্রথমে কয়লার ওয়াগন টানার কাজে লাগানো হলেও পরে যাত্রী পরিবহনের কাজে ব্যবহার হতে থাকে।


জর্জ স্টিফেনসন

প্রথম স্টীম-ইঞ্জিন দিয়ে যাত্রী পরিবহনের কাজ কবে শুরু হয়েছিল জান? -সেই ১৮২৫ সালে।
স্টীম-ইঞ্জিন দেখেছ? স্টীম ইঞ্জিন আজকাল বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনশালায় রাখা থাকে। যেমন, কলকাতায় হাওড়া স্টেশনের রেল মিউজিয়ামে যত্ন করে সাজিয়ে রাখা আছে পুরোনো দিনের স্মৃতি হিসাবে।

এই প্রসঙ্গে একটা কথা তোমাদের জানিয়ে রাখি। কবে প্রথম হাওড়া স্টেশন থেকে রেল চলেছে জান? সেটা হল ১৮৫৮ সালের ১৫ই আগস্ট। প্রথম বাষ্পীয় ইঞ্জিনটানা রেলগাড়ি চলেছিল হাওড়া থেকে হুগলী পর্যন্ত। যে ইঞ্জিনটা ঐ গাড়িটাকে টেনেছিল তার আদুরে নাম ছিল "ফেয়ারি কুইন" [Fairy Queen ]। বাংলায় কি বলব একে -"পরী রানী"?


ফেয়ারি কুইন
 
 
 
সন্তোষ কুমার রায়
রূপনারায়ণপুর, বর্ধমান
 
 
ছবিঃ
উইকিপিডিয়া
ভিসিটইন্ডিয়া

 

সন্তোষ কুমার রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। বিষয় পদার্থবিজ্ঞান। শৈশব ও কৈশোর যথাক্রমে বাংলাদেশে এবং কলকাতায় কাটলেও, কর্মজীবন কেটেছে বাংলা বিহার সীমান্তের হিন্দুস্থান কেব্‌ল্‌স্‌ শিল্পনগরীতে। শিল্পনগরী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় ছোটদের এবং বড়দের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখেছেন বহুবছর। বর্তমানে ইচ্ছামতীর পরশমণি বিভাগে নিয়মিত লেখা ছাড়াও তিনি একটি গ্রুপ ব্লগের সদস্য রূপে লেখালিখি করেন ।