খেলাঘরখেলাঘর

 




আকাশ কালো করে মেঘ জমেছে। চারিদিক অন্ধকার। ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে। স্কুলের মাঠটায় জল দাঁড়িয়ে গেছে। গাছের শুকনো পাতাগুলো ভেসে ভেসে চলেছে। কাল ছোটকা কাগজ দিয়ে যে নৌকাটা বানিয়ে দিয়েছিল সেটা প্যান্টের ডান দিকের পকেটে রাখা আছে। একবার জলে ভাসিয়ে দিতে পারলে যা দারুন ভেসে ভেসে যাবে। ভাবতেই আনন্দ লাগছে  সমুর।

- ‘সমু, কী প্রশ্ন করেছি? উঠে দাঁড়াও।’
মাস্টারমশাই-এর গম্ভীর গলা। সমু থতমত খেয়ে উঠে দাঁড়ায়।
- ‘জানলার বাইরে কী দেখছিলে? ’
- ‘কিছু দেখিনি। না মানে বৃষ্টি পড়ছে, তাই দেখছিলাম।’
- ‘ছয়ের ঘরের নামতা মুখস্থ হয়েছে? ছ সাততে কতো হয়? ’
- ‘ছ সাততে ছেচল্লিশ।’
- ‘ছ সাততে ছেচল্লিশ? যাও ক্লাসের বাইরে যাও। বাইরে গিয়ে যত খুশী বৃষ্টি দেখ। পড়াশোনা করার কোন দরকার নেই তোমার।’

মাথা নিচু করে ক্লাসের বাইরে গিয়ে দাঁড়ায় সমু। মনটা খারাপ হয়ে যায়। প্রায় রোজদিন ওকে মাস্টারমশাই ক্লাসের বাইরে বার করে দেয়। বাবা জানতে পারলে খুব বকবে। কী যে করা যায়। কেন যে রোজ রোজ অন্যমনস্ক হয়ে যায় সমু। ছোটকার ওপর খুব একচোট রাগ হয়। কাল যদি ছোটকা নৌকাটা না বানিয়ে দিত তাহলে আজ কিছুতেই বৃষ্টি দেখেই ওর নৌকার কথা মনে হত না। আর নৌকার কথা মনে না এলে ও কিছুতেই অন্যমনস্ক হত না। আর অন্যমনস্ক না হলে ওকে ক্লাসের বাইরেও বেরতে হত না। যত গন্ডগোল ঐ ছোটকাটার জন্যে।

বৃষ্টিটা যেন আরো জোরে এল। বৃষ্টির ছাট আসছে। বারান্দাটা বেশ সরু। সমু দেওয়ালের দিকে সরে গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ কেউ একটা ঠ্যালা মারে – ‘সরে দাঁড়া। এটা আমার জায়গা।’
চারিদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলনা সমু। ভুল শুনেছে বোধহয়। আবার দেওয়ালের দিকে সরে দাঁড়াতে যায়। আবার একটা ধাক্কা। এই বার বেশ জোরে। ধাক্কা খেয়ে বারান্দায় পড়ে যায় সমু। খুব রাগ হয়ে যায়।
- ‘কে মারছিস রে? সাহস থাকে তো সামনে আয়। ঘুঁসি মেরে নাক ভেঙ্গে দেব।’
- ‘দেখতেই পায় না আবার মারবে। এই দিকটা আমার জায়গা। তুই তোর জায়গায় দাঁড়া। একদম আসবি না এদিকে।’
যেন ভেংচি কাটে ছেলেটা। দেখতে সত্যিই পাচ্ছে না সমু কিন্তু দিব্যি সব কথা শুনতে পাচ্ছে।
- ‘কোন জায়গাটা তোর?’
- ‘তোদের ক্লাস রুমের পাশের এই ঘরটা আমাদের। ঘরের সামনের জায়গাটাও আমাদের।’
 
সমু ভালো করে তাকিয়ে দেখে ঘরটা। ওদের ক্লাসরুমের পাশের ঘরটা সবসময় তালাবন্ধ থাকে। ভাঙ্গা চেয়ার টেবিল বেঞ্চি সব গাদা করে রাখা আছে ঘরটায়। ধুলো, নোংরা আর মাকড়সার জাল ভর্তি। কোনো দিন কেউ এই ঘরটা খোলে না, পরিস্কার করেনা। খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে
- ‘এই ঘরটায় তুই থাকিস নাকি?’
- ‘না, এখানে থাকব কেন? আমি থাকি সিং পাড়ায়। এটা আমাদের ইস্কুল।’
- ‘ইস্কুল? কোন ক্লাসে পড়িস তুই?’
- ‘দোকান ক্লাস।’
- ‘সে আবার কী ক্লাস? আমি যেমন ক্লাস টু-তে পড়ি তুই তেমন কোন ক্লাসে পড়িস?’
- ‘আঃ বললাম তো দোকান ক্লাস। আমাদের ক্লাসের এই রকমই নাম।’
- ‘কী মজার নাম রে তোদের ক্লাসের। কিন্তু তুই ক্লাসের বাইরে কেন?’
- ‘কেন আবার? যে জন্যে তুই ক্লাসের বাইরে সেই জন্যেই। অংক পারিনি বলে মাষ্টারমশাই আমাকে ক্লাসের বাইরে বার করে দিয়েছে। সেই কখন থেকে মাথা নিচে করে পা ওপরে তুলে বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুলের ওপর ব্যালেন্স করে দাঁড়িয়ে আছি। আঙ্গুল ব্যাথা হয়ে গেল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।’
- ‘কই কোথায় দাঁড়িয়ে আছিস? তোকে দেখতে পাচ্ছিনা কেন বলতো?’
- ‘আমি ভূত তো। তাই।’
- ‘ভূতদের দেখা যায়না কেনরে?’
- ‘দেখা যায়। তবে আমরা মানুষদের দেখা দিই না। মানুষরা আমাদের দেখলে বড্ড ভয় পায়।’
- ‘ভয় পায় কেন? ভুতেরা দেখতে খুব বিচ্ছিরি হয় বলে?’
- ‘না না। সে অনেক ব্যাপার তুই বুঝবি না। আসলে ভূতে আর মানুষে বন্ধু হয়না তো তাই।’
- ‘কেন হবে না কেন? এই তো তোকে আমি দেখিনি কিন্তু তাও তোকে আমার কেমন বন্ধু বন্ধু মনে হচ্ছে।’
- ‘হ্যাঁ আমারও অবশ্য তোকে বেশ বন্ধু বন্ধু লাগছে। মনে হচ্ছে তোর কাছে আমি দেখা দিতে পারি। তবে এখানে নয়। এখানে অন্য ছেলেরা আমাকে দেখে ফেললে অসুবিধে হয়ে যাবে। তুই আমাদের ক্লাসে চল।’
- ‘দরজায় তো তালা লাগানো। যাব কি করে?’

সমু পাশের ঘরের দিকে তাকায়। হঠাৎ দেখে তালা লাগানো দরজাটা ম্যাজিকের মতো খুলে গেল। ভেতরটা বেশ অন্ধকার। সমুর ঢুকতে একটু অস্বস্তি করছিল। কিন্তু এমন ঠ্যালা খেল পেছন থেকে যে কিছু বোঝার আগেই সে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে দড়াম করে ঘরের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল।

সমু দেখল ঘরের মধ্যে সারি সারি নানা রঙের বেঞ্চি পাতা। বেঞ্চির এমন লাল নীল সবুজ রঙ কোনদিন দেখেনি সমু। সেখানে অদ্ভুত দেখতে নানা সাইজের ভূতেরা পা ঝুলিয়ে বসে কোলের ওপর স্লেট পেনসিল নিয়ে অংক কষছে। সামনের ব্ল্যাক বোর্ডে গুন ভাগের কিছু অংক দেওয়া আছে।

ওকে দেখা মাত্রই সবাই খুব চমকে গেল। তারপর ভোজবাজীর মতো সবাই উধাও হয়ে গেল। একমাত্র ওর বন্ধু ভূতটা পাশেই দাঁড়িয়েছিল। সমু তাকে জিজ্ঞেস করল – ‘সবাই পালালো কেন রে?’
- ‘পালাবে কেন? তোকে দেখে অদৃশ্য হয়ে গেছে।’
- ‘ওঃ আচ্ছা। আমাকে দেখে ভয় পেয়ে গেছে বুঝি।’
- ‘না, না। ভূতেরা মানুষদের ভয় পায় না। মানুষরাই ভূতেদের ভয় পায়।’
- ‘দ্যাখ ভূত, এই তো তুই আমার পাশেই একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছিস। কই আমার তো ভয় লাগছে না।’
- ‘এই খবরদার আমায় ভূত বলে ডাকবি না । আমার নাম তিড়িং।’

‘তিড়িং’ নাম শুনে এমন হাসি পেল সমুর যে পাক্কা তিন মিনিট হেসেই চলল। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে গেল, পেট ব্যাথা হয়ে গেল। হাসতে হাসতে বসেই পড়ল ভূতেদের বেঞ্চিতে। আর যেই না বসা সঙ্গে সঙ্গে ঠ্যালা খেয়ে ছিটকে পড়ল মেঝেতে। তাতে এমন চমকে গেল সমু যে সঙ্গে সঙ্গে তার হাসি বন্ধ হয়ে গেল।
- ‘এই কে আমায় ঠ্যালা মারলি রে?
বলতেই দেখে ঘর ভরতি ভূত সবাই ফিরে এসেছে। একজন এগিয়ে এসে বলল
- ‘আমি ঠ্যালা মেরেছি। তুই আমার গায়ের ওপর বসে পড়েছিলি কেন? ভূত বলে কি আমার গায়ে লাগে না?’
- ‘তা দেখতে না পেলে কী করব। তোরা আমাকে দেখেই সবাই হাওয়া হয়ে গেলি যেমন। আমি কি তোদের দেখে ভয় পেয়েছিলাম নাকি? আচ্ছা, তোর নাম কি রে?’
- ‘আমার নাম বিড়িং।’
তিড়িং বিড়িং... কী মজার নাম রে সব ভূতেদের। আবার এমন হাসি পেল সমুর যে আবার পাক্কা তিন মিনিট হেসেই চলল। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে গেল, পেট ব্যাথা হয়ে গেল। হাসতে হাসতে বসেই পড়ল মেঝেতে। অবাক হয়ে বিড়িং জিগ্যেস করল - ‘এত হাসি পাচ্ছে কেন তোর?’
- ‘তোদের নাম শুনে। তিড়িং বিড়িং এরকম আবার কারো নাম হয় নাকি?’
- ‘হয় তো। আমাদের দোকান ক্লাসে সবার এরকমই নাম। পিড়িং সিড়িং চিড়িং কিড়িং মিড়িং নিড়িং...’
- ‘থাক থাক আর নাম বলিস না। আমার আবার ভয়ানক হাসি পাচ্ছে।’
- ‘শুধু শুধু এমন হাসি পায় কেন তোর? তোর সমু নাম শুনে তো আমরা হাসিনি। তাহলে তুই আমাদের নাম শুনে হাসছিস কেন? ভূত বলে কি আমাদের দুঃখ হয় না।’ ভূতটা বুঝি দুঃখে কেঁদেই ফেলবে এইবার।
তাড়াতাড়ি সমু বলে - ‘আচ্ছা আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গেছে। আর হাসব না। তোদের অংকের মাস্টারমশাই কোথায় রে? দেখতে পাচ্ছি না তো।’
- ‘এখন আমাদের প্র্যাকটিস টাইম। তাই মাস্টারমশাই বাড়ি চলে গেছে।’
- ‘কিসের প্র্যাকটিস করবি?’
- ‘অংক। মাস্টারমশাই পাঁচটা গুন আর পাঁচটা ভাগ দিয়ে গেছে। তিন ঘন্টা পরে এসে দেখবে। আমাদের পরীক্ষা তো সামনেই। তাই এখন আমাদের খুব পড়ার চাপ। আমরা সবাই এখন মন দিয়ে অংক কষব। তুই বরং তোর ক্লাসে চলে যা। নাহলে সবাই তোকে খুঁজবে।’

ঠিক তখনই ঢং ঢং করে ক্লাস শেষ হওয়ার ঘন্টা পড়ল। সমু ছুটে গিয়ে নিজের ক্লাস রুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পড়লো। মাস্টারমশাই বেরিয়ে গেল পাশ দিয়ে। আর যাওয়ার সময় খুব কঠিন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন - ‘পরের দিন যদি আবার এরকম হয় তাহলে বাড়িতে খবর পাঠানো হবে।’



বিকেলে স্কুল ছুটি হয়ে গেল। সমুর বাড়ি স্কুলের কাছেই। দশ মিনিটের হাঁটা রাস্তা। সমু রোজ হেঁটেই বাড়ি ফেরে। আজ স্কুল থেকে বেরিয়েই দেখল ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। গায়ে মাথায় কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়তেই মন ভালো হয়ে গেল সমুর। ছাতা না খুলে ভিজতে ভিজতে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। রাস্তায় কোথাও জল জমে আছে দেখলে ভারী আনন্দ লাগছিল। যেন ছোট্ট একটা পুকুর। সেই পুকুরের ওপর দু’পা জড়ো করে ঝপাং করে লাফিয়ে পড়ার একটা আলাদাই মজা। গুনে গুনে উনচল্লিশটা জমা জল খুঁজে বার করে তার একটাও বাদ না দিয়ে তাদের ওপর লাফিয়ে জল ছিটিয়ে কাদা ভূত হয়ে বাড়ি ফিরল সমু।
বাড়ি ফিরতেই মা-এর বকুনি – ‘এই কাদা মাখা জামা জুতো সব আজ নিজে পরিস্কার করবে। মা করে দেবেনা। এইখানে সাবান রইল। বালতিতে জল রইল।’

এই তো ঝামেলা করে মা। মা কী ছোটবেলায় এরকম লাফাতো না? মা-এর জামা এরকম কাদা হত না? সমু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না। ভাবে যদি একটা টাইম মেশিন থাকতো তো মায়ের ছোটবেলাটা ঠিক দেখে আসতো। তারপর দরকার মতো মাকে লিস্ট দিতো কবে কখন কী সব দুষ্টুমি মা করতো। তখন মা আর কিছুতেই ওকে বকতে পারত না। কিন্তু সেরকম কোন সুযোগ নেই। কিছুই সমুর মনের মত হয় না। বড় হলে একটা টাইম মেশিন আবিস্কার করতেই হবে। কিন্তু কবে যে বড় হবে সমু।

বই-এর ব্যাগ পড়ার টেবিলে রেখে জামাকাপড় ছেড়ে লক্ষ্মী ছেলের মত সব খাবার খেয়ে নিল সমু। তারপরে কাগজের নৌকাটা ভাসিয়ে দিল বাড়ির সামনের জমা জলে। নৌকাটা বেশ খানিক দূর ভেসে ভেসে গেল। কিন্তু একটু দূরে গিয়েই একটা বড় ইঁটের টুকরোতে আটকে আড় হয়ে গেল। সমু নৌকাটাকে ঠিক করার জন্যে জলে নামল। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের চীৎকার – ‘এক পাও আর জলে নামাবে না। অনেক ভিজেছ আজকে। আর বেশী ভিজলে নির্ঘাত জ্বর হবে।’ এখন জলে না নেমে নৌকাটা কী করে ঠিক করা যায়। কী মুস্কিল যে করে মা। একটা বড় লাঠি পেলেও বা একটা উপায় হত।
- ‘এই নাও এই লাঠিটা দিয়ে ঠিক করো নৌকাটা।’
একটা বড় লাঠি এগিয়ে দিলো কেউ। আরে এ যে সেই ভূতটা।

- ‘আরে তিড়িং যে। তুই এখানে কোথা থেকে এলি?’
- ‘আমি তোর সঙ্গে সঙ্গে এসেছি ইস্কুল থেকে। আমায় একটু অংক শিখিয়ে দিবি সমু?
- ‘অংক? কিন্তু আমি তো নিজেই ভালো অংক জানিনা।’
- ‘সে তো তুই মন দিস না বলে। আসলে তো তোর বুদ্ধি আছে। তুই ইচ্ছে করলেই অংক শিখে নিতে পারিস। কিন্তু আমি কিছুতেই অংকগুলো বুঝতে পারিনা।’
- ‘না রে আমার বুদ্ধি নেই। আমি পরীক্ষাতে সব সময় অংকে খুব কম নম্বর পাই। বাবা বকে, মা বকে, মাস্টারমশাই বকে।’
- ‘আমার থেকে তোর বেশি বুদ্ধি। আমি দশ বছর ধরে দোকান ক্লাসে পড়ছি। আমায় দে না অংক শিখিয়ে। তুই যা বলবি আমি তোর জন্যে সব করে দেব। তুই শুধু আমায় দোকান ক্লাসটা পাস করিয়ে দে।
- ‘তুই দশ বছর ধরে এই একই ক্লাসে আছিস?’
- ‘হ্যাঁ তো। দু বছর গেল যোগ শিখতে। তিন বছর বিয়োগ। তিন বছর গুন। এই হল মোট সাত বছর।’
- ‘সাত কোথায়? আট বছর হল তো। দুই আর তিনে পাঁচ। পাঁচ আর তিনে আট।’
- ‘হ্যাঁ ঠিক। দেখেছিস তো তুই আমার থেকে কত ভালো অংক জানিস। আট বছর এইভাবে গেল। আচ্ছা সমু, দশ থেকে আট বাদ দিলে কত থাকে রে?’
- ‘দুই।’
- ‘হ্যাঁ, ঐ দু বছর ধরে ভাগ শেখার চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছুতেই শিখতে পারছি না। তার ওপর মাঝে মাঝেই যোগ বিয়োগও ভুল করে ফেলি। যেমন এক্ষুনি ভুল করে ফেললাম। এই বছর না পাস করতে পারলে আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে রে।’
- ‘তাই নাকি? কেন কেন?’
- ‘দশ বছরে দোকান ক্লাস পাস না করলে দোকানে বসতে দেবেনা আমায়। আমায় বেকার ভূত হয়ে জীবন কাটাতে হবে। আমার কবে থেকে শখ একটা বলের দোকান করার। দোকানি হওয়াই আমার ভূত জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।’
- ‘বলের দোকান করবি তুই? ভূতেরাও বল খেলতে ভালোবাসে বুঝি?’
- ‘হ্যাঁ খুব ভালোবাসে। কত রঙের, কত রকমের বল পাওয়া যায়। কিছু বল আছে যেগুলো হাওয়ায় ঘুড়ির মত ভেসে থাকতে পারে। আকাশে উড়ে উড়ে আমরা সেই বল দিয়ে খেলি। আমি দোকানি হলে তোকে সেই বল দেবো একটা।’
- ‘দিবি তো? মনে থাকে যেন।’
- ‘মনে থাকবে ঠিক। আচ্ছা সমু তুই কি হতে চাস রে?’
- ‘কী জানি। আমার একেক সময় একেক রকম হতে ইচ্ছে করে। মাথাটা গুলিয়ে যায়। তাই মা বলেছে বড় হয়ে ভাবতে। তবে আমার কদিন ধরে মনে হচ্ছে আমি বড় হয়ে ঠিক একটা টাইম মেশিন বানাবো।’
- ‘টাইম মেশিনটা কি জিনিস?’
- ‘এটা একটা যন্ত্র যাতে চেপে আমি দেখে আসতে পারি আমার মা বাবার ছোটবেলা। বাবা, মা কেমন দুষ্টুমি করত সব জেনে যেতে পারব। আর জেনে যেতে পারব যে মা পেঁপে আর উচ্ছে খেতে ভালোবাসত কিনা। বাবার সন্ধ্যে বেলা পড়তে বসলে ঘুম পেত কিনা।’
- ‘আচ্ছা। সে তো দারুন যন্ত্র রে।’
- ‘হ্যাঁ, দারুন।’
- ‘তাহলে কী ঠিক করলি তুই? আমাকে অংক শেখাবি তো? আমি তোর সব কাজ করে দেব। যা যা বলবি সব। টাইম মেশিন বানাতে পারব না অবশ্য। এছাড়া সব পারব। যেমন তোর বই গুছিয়ে দেওয়া, তোর জুতো পালিশ করে দেওয়া, তোকে ঘুম থেকে রোজ ডেকে দেওয়া।’
- ‘আচ্ছা দেখি পরীক্ষা করে পারিস কিনা। যা তো আমার কাদা জামাটা ধুয়ে পরিস্কার করে দে তো দেখি।’
সঙ্গে সঙ্গে তিড়িং গিয়ে এক মিনিটের মধ্যে জামা কেচে ধুয়ে সুন্দর করে তারে মিলে দিয়ে এসে বসলো সমুর পাশে। সমু তো হাঁ হয়ে গেল দেখে।
তিড়িং এসেই বলল – ‘বল আর কি কাজ করে দিতে হবে।’
- ‘আমার পেনসিল বক্সে পেনসিলগুলো সব ভোঁতা হয়ে গেছে। দে তো সার্প করে।’
তাও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হয়ে গেল। তখন সমু তিড়িংকে বলল
- ‘আচ্ছা আমি কাল থেকে তোকে অংক শেখাবো। কিন্তু তোকে রোজ এসে আমার বিছানা গুছিয়ে দিতে হবে, স্কুলের জামাকাপড়ও পাট করে গুছিয়ে রাখতে হবে। রুটিন দেখে স্কুলের বই ব্যাগে পুরে দিতে হবে। পেন্সিল সার্প করে দিতে হবে। সকালে মা ডাকার আগেই ঘুম থেকে ডেকে দিতে হবে। আর ক্লাসে আমি অন্যমনস্ক হয়ে গেল আমাকে অল্প ঠ্যালা মেরে মনে করিয়ে দিতে হবে। সব মনে করে করতে পারবি তো? ভুলে গেলে চলবে না। তুই বরং একটা কাগজে লিখে রাখ।’
- ‘লিখে রাখতে হবে না। সব মনে থাকবে। এ আর এমন কি কাজ হল?’
- ‘কিন্তু তোকে অংক শেখাবো কখন?’
- ‘কেন? বিকেলে যখন তুই খেলিস তখন।’
- ‘আচ্ছা। ঠিক আছে।’
তিড়িং চলে গেল বাড়ি।

এতো বৃষ্টিতে তো আজ বাইরে খেলতে যাওয়া যাবে না। নৌকাটাও ভেসে ভেসে কোথায় চলে গেছে চোখে পড়ছে না।  সমু মা কে ডেকে বলল – ‘আমাকে অংক দাও তো মা। একটু অংক কষি।’
মা শুনে তো আকাশ থেকে পড়লেন – ‘আজ ছেলের আমার খুব সুমতি যে নিজে নিজে অংক কষতে চাইছে। ব্যাপারটা কী? সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে?’
- ‘মা, আজ সূর্য ওঠেনি সকাল থেকে। দেখছ না কেমন মেঘলা আকাশ। আমাকে অনেক বেশি করে অংক দাও আজকে। যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ সব। শুধু একটা কথা আমি ভুল করলে আমাকে বকা চলবে না। তুমি বুঝিয়ে দেবে। দেখবে আমি কেমন সব বুঝে যাব। আজ খুব মন দিয়ে শুনবো। একটুও অন্যমনস্ক হব না।’
- ‘আচ্ছা তাই হবে। এমন ভালো ছেলে হয়েছিস আজ। আমি একটুও বকব না।’

মা-এর সঙ্গে বসে বসে অনেক অংক প্র্যাকটিস করে ফেলল সমু। খুব মন দিয়ে সব বুঝে নিল। মনে মনে খুব উত্তেজনা লাগছে। কাল থেকে আবার তিড়িংকে মাস্টারমশাই-এর মত অংক শেখাতে হবে।



পরদিন সকাল সকাল তিড়িং এসে ঘুম থেকে ডেকে দিল। ওর ব্রাশে পেস্টও লাগিয়ে দিল। সমু যখন দাঁত মাজতে গেল তখন মা সমুকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে গেল – ‘আরে তুই এত সকালে?’
- ‘ঘুম ভেঙ্গে গেল।’
- ‘এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে গেল ? শরীর ভালো আছে তো তোর?’

বই পত্র সব রুটিন দেখে গুছিয়ে দিল তিড়িং। একটা বই-এর মলাট ছিঁড়ে গিয়েছিল সেটায় নতুন মলাটও করে দিল। কিন্তু ওর হাতের লেখা খারাপ বলে নাম লিখে দিল না। সমুর হাতের লেখা খুব ভালো। ও নিজেই সুন্দর করে নিজের নাম, বই-এর নাম, ক্লাস সব লিখে নিল। স্কুলে যাওয়ার সময় জামা জুতো পরতেও সাহায্য করল তিড়িং। সবই অবশ্য অদৃশ্য হয়ে করছিল যাতে কেউ ওকে দেখে না ফেলে।

স্কুলে আজ সব ক্লাসে খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করেছে সমু। অন্যমনস্ক হলেই তিড়িং ওর মাথাটা ঝাঁকিয়ে দিচ্ছিল। অংকের ক্লাসে সব অংক পেরেছে বলে মাষ্টার মশাই খুব অবাক হয়ে গেছে। একটুও বকেনি বরং খুব ভালোবেসে পিঠ চাপড়ে দিয়েছে। বলেছে – ‘এই তো চাই। রোজ রোজ তোকে এরকম মন দিয়ে ক্লাসে পড়া শুনতে হবে আর এরকম তাড়াতাড়ি অংক কষে ফেলতে হবে। মন দিলেই তুই পারবি।’

স্কুল থেকে ফিরেই মাঠে গেল সমু। তিড়িং ও স্লেট পেনসিল নিয়ে এসে গেল। আজ আকাশ বেশ পরিষ্কার। কিন্তু মাঠে জল জমে আছে আর বিস্তর কাদা। তাই বল খেলতে নামেনি কেউ। সমু অনেকগুলো যোগ করতে দিল তিড়িং কে। তিড়িং না পারলে সব বুঝিয়ে দিল ভালো করে। কুড়িটা অংক করার পর তিড়িং কে ছুটি দিয়ে দিল। তারপর দুজনে একটা ছোট নিচু পেয়ারা গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসে বসে অনেক গল্প করল।

এই ভাবে দু সপ্তাহের মধ্যেই সমু যোগ আর বিয়োগ শিখিয়ে ফেলল তিড়িং কে। তিড়িংকে এখন যোগ, বিয়োগ যা দিচ্ছে সে নিমেষে করে ফেলছে। ছোট ছোট যোগ বিয়োগ দিলে স্লেটে না লিখে মুখে মুখেই করে ফেলছে। আর ওকে শেখাতে গিয়ে সমুও অংকে এমন ভালো হয়ে গেছে যে স্কুলে হঠাৎ মাস্টারমশাই ওকে খুব ভালোবাসতে শুরু করেছে। এমন কি ক্লাসের বন্ধুরাও যেন ওকে একটু সমীহ করে চলছে।

পরের সপ্তাহ থেকে গুন আর ভাগ শেখাতে হবে তিড়িং কে। হাতে আর বেশী সময় নেই। রোজ সন্ধ্যেবেলা স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতে মায়ের কাছে মন দিয়ে গুন আর ভাগ প্র্যাকটিস করে সমু ।



রবিবার দুপুরে বাবা ঘুমাচ্ছিল। মা কাগজ পড়ছিল। সমু কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না। শেষে হাতে একটা গল্পের বই নিয়ে ছাদে ঘুরতে গেল। হঠাৎ দেখে তিড়িং আর তার একটা বন্ধু ভূত ছাদের কার্নিসে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
- ‘আরে তিড়িং তুই এখন এখানে কেন? আজ তো রবিবার। আমার ছুটি। তোরও ছুটি।’
- ‘সমু তুই আমাকে যেমন অংক শেখাচ্ছিস তেমন একেও একটু ইংরেজীটা শিখিয়ে দে না।’
- ‘এ তোর বন্ধু? তোর নাম কী রে ?’
সেই ভূতটা বলল – ‘আমার নাম চিচিং।’
- ‘তুই তিড়িং-এর সঙ্গে পড়িস?’
- ‘না, আমি খবর ক্লাসে পড়ি।’
- ‘সেটা আবার কী ক্লাস?’
- ‘এই ক্লাসটা পাস করলে আমি সাংবাদিকের কাজ পাব। নানা দেশ ঘুরে ঘুরে সব দেশের ভূতেদের খবর সংগ্রহ করে আনব। সে গুলো ছেপে কাগজে বেরবে।’
- ‘তাই নাকি? সে তো দারুন ব্যাপার। কিন্তু তুই কি দোকান ক্লাস পাস করে গেছিস?’
- ‘না না আমাদের দোকান ক্লাস পড়তে হয় না।’
- ‘তিড়িং যে পড়েছে?’
- ‘তিড়িংকে তো পড়তেই হবে। ও তো দোকানি হতে চায়। দোকানিদের জিনিষপত্র বিক্রী করে টাকা পয়সার হিসেব রাখতে হবে তো। তাই যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ না জানলে চলবে না। কিন্তু আমি তো শুধু খবর লিখবো। তার জন্যে বাংলা আর ইংরেজীটা ভালো করে শিখতে হবে। আমি বাংলাটা ভালো জানি। কিন্তু শুধু বাংলা জানলে আমি বিদেশে যেতে পাবো না। বিদেশে যেতে হলে ইংরেজীটাও জানতে হবে।’
- ‘ইংরেজী জানতে হবে কেন?’
- ‘বাঃ রে বিদেশের ভূতরা কি আর বাংলা বলতে পারে। ইংরেজী না বললে তারা কিছু বুঝবেই না। আমার ভূত জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বিদেশ যাওয়া। তুই একটু আমায় ইংরেজী শিখিয়ে দে। যতদিন আমি এ দেশে আছি তুই যা বলবি আমি সব করে দেব।’
- ‘আচ্ছা শিখিয়ে দেব। কিন্তু তার আগে দেখি কী করে দিতে পারিস তুই। কিছু করে দেখা আমায়।’
- ‘কী করা যায় তোর জন্যে? আচ্ছা, তুই কি ফল খেতে ভালোবাসিস?
- ‘পাকা কুল, আতা, খেজুর, জামরুল।’
সঙ্গে সঙ্গে ভ্যানিস করে গেল চিচিং। আর এক মিনিটের মধ্যে কলাপাতার মধ্যে মুড়ে এক থোকা কুল, গোটা দশেক খেজুর, পাঁচটা জামরুল আর দুটো পাকা আতা নিয়ে হাজির। সমু তো তাজ্জব।
- ‘কোথা থেকে আনলি এসব? কার গাছ থেকে পেড়ে আনলি? সে আবার আমায় ধরে মারবে না তো?’
- ‘আরে না না। আমি তো সব জঙ্গলের গাছ থেকে তুলে এনে দিলাম। তুই যা খেতে চাইবি আমি তোকে সব খাওয়াতে পারব।’
- ‘আইসক্রীম খাওয়াতে পারবি রোজ বিকেলে? তাহলে আমি পাক্কা তোকে ইংরেজী শিখিয়ে দেব।’
- ‘এটা কোন ব্যাপার হল? আমি আইসক্রীম-এর কারখানা থেকে একটা করে আইসক্রীম নিয়ে আসব রোজ। একেক দিন একেক রকম। কিন্তু রোজ আইসক্রীম খেলে তোর ঠান্ডা লাগবে না তো? তাহলে আবার মায়ের কাছে বকুনি খাবি।’
- ‘হ্যাঁ। এইটা একটা মুস্কিল। তাহলে বরং তুই জঙ্গল থেকে রোজ দু রকমের গাছ পাকা ফলই তুলে আনিস।’
- ‘ঠিক আছে। তাহলে কাল থেকে আমায় ইংরেজী পড়াবি তো?
- ‘হ্যাঁ পড়াব। আমি যা জানি তোকে সব শিখিয়ে দেব। এমন শিখিয়ে দেব যে তুই গড় গড় করে আমার ইংরেজী বই পড়ে ফেলতে পারবি।’
চিচিং আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে।

পরের সপ্তাহটা খুব খাটুনি গেল সমুর। রোজ রোজ তিড়িং কে অংক শেখানো। গুন আর ভাগ শেখাতে খুব পরিশ্রম হল। নামতা মুখস্থ করাতে গিয়ে তো ঘেমে গেল সমু। তিড়িং-এর যা বুদ্ধি সে আর বলার নয়। অনেক বার রেগে যেতে গিয়েও সামলে নিল নিজেকে।

চিচিং তাও একটু ভালো। তাড়াতাড়ি শিখে নিয়েছে। সমুর কাছে পড়ে গিয়ে আবার বাড়িতেও অনেক পড়েছে। তাতেও মাঝে মাঝেই উচ্চারন ভুল করত। একই জিনিষ বার বার ভুল করছে দেখলে সমু মাঝে মাঝে রেগে যেত। কিন্তু চিচিং এত বুদ্ধিমান যে সমু রেগে গেলেই ওকে একটা আইসক্রীম এনে দিত। আর আইসক্রীম দেখলে কি আর রেগে থাকা যায় নাকি?



সেই বছর সমু পরীক্ষায় দারুন রেজাল্ট করল। অংকে একশোতে একশো, ইংরেজীতে নব্বই। বাকী সব বিষয়েই অনেক ভালো করেছে। বাবা, মা ওর নম্বর দেখে খুব খুশি। পরদিনই একটা নতুন ক্রিকেট ব্যাট আর বল এনে দিয়েছে বাবা। আর মা একটা গল্পের বই দিয়েছে – ‘ভূতেরা চাউমিন খেতে ভালোবাসে।’

এপাশে চিচিং খুব ভালো নম্বর পেয়ে খবর ক্লাস পাস করে সাংবাদিক হয়ে ইউরোপ চলে গেছে। তার লেখা কাগজে মাঝে মাঝে বেরোয়। বেরোলেই তিড়িং এসে সমুকে কাগজটা পড়তে দিয়ে যায়। সে এক অদ্ভুত ধরনের কাগজ। দিনের বেলা কোন লেখা দেখা যায় না। রাত্রিবেলা অন্ধকারের মধ্যে কাগজটা খুললে নানা রঙ-চঙ্গে লেখা আর ছবি নজরে পড়ে। সে সব দুর্ধষ খবর। পড়তে পড়তে সমুও মনে মনে ইউরোপ ঘুরে ফেলে। তিড়িং তো ইংরেজী পড়তে পারে না। তাই সমু রাত্রে সব খবর পড়ে নেয়। পরদিন তিড়িং কাগজ ফেরত নিতে এলে ওকে বাংলায় সব বলে দেয়।

তিড়িংও খুব ভালো ভাবে পাস করে গেছে দোকান ক্লাস। সিং পাড়ায় একটা ভাঙ্গাচোরা পোড়ো বাড়ি আছে যেখানে কোন মানুষ থাকে না। বাড়িটার চারিদিকে বট অশ্বত্থ গাছ গজিয়ে ছেয়ে ফেলেছে। সেই বাড়িটার দোতলায় একটা বিশাল ঘরে তিড়িং-এর বলের দোকান। সমুর বল হারিয়ে গেলেই সমুকে ফ্রীতে একটা করে বল দেয় তিড়িং।

এখন সমু নিজের কাজ সব নিজে করে নেয়। তিড়িংকে আসতে বারন করে দিয়েছে। বাবা মা আর একটুও বকে না ওকে। এখন ওকে ক্লাসেও সবাই খুব ভালো ছেলে বলে। মাস্টারমশাইরাও খুব ভালোবাসেন। ও তো জেনে গেছে যে একটু মন দিয়ে পড়লেই আর একটু বেশী করে প্র্যাকটিস করলেই সব বিষয়ে ভালো নম্বর পাওয়া যায়।

 

 

রুচিরা
বেইজিং, চীন