খেলাঘরখেলাঘর

Abanindranath Thakur

প্রায় একশো বছর আগের কথা। একজন তরুন শিল্পী ছিলেন। খুব ভাল ছবি আঁকতেন আরে মূর্তি গড়তেন। তাঁর আঁকা ছবির কদর করত দেশ - বিদেশের সবাই। তিনি আবার ছবি আঁকতেও শেখাতেন। সেই সময়ে সবাই যখন ইউরোপের ধাঁচে ছবি আঁকছে, তখন তিনি ভারতের নিজস্ব মুঘল ও রাজপুত ধাঁচের ছবি এঁকে এই শিল্পের এক নতুন দিক তুলে ধরেন।

একদিন এই শিল্পীকে তাঁর কাকা, যিনি একাধারে কবি এবং লেখক ছিলেন, ডেকে বললেন ছোটদের জন্য গল্প লিখতে। শিল্পী তো অবাক!! তিনি তো ছবি আঁকেন। রঙ -বেরং এর তুলির টানে ভরিয়ে তোলেন ক্যানভাস। তিনি গল্প লিখবেন কি করে? কাকা তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, যেমন করে গল্প কর, সেরকম করেই লেখ। লেখা হল প্রথম গল্প 'শকুন্তলা'। কন্ব মুনির আশ্রমে বড় হয়ে ওঠা সুন্দরী শকুন্তলা আর রাজা দুষ্মন্ত এর গল্প। সে যে কি সুন্দর গল্প - পড়তে পড়তে মনে হবে তুমি যেন কন্ব মুনির আশ্রমেই আছ! কাকা বলেছিলেন যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ভাষা শুধরে দেবেন। কিন্তু একটা শব্দ ও বদল করতে হয়নি। বলতো কার কথা বলছি? - বলছি আমাদের প্রিয় লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা। আর সেই কাকা কে ছিলেন জান? - কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

'শকুন্তলা', 'ক্ষীরের পুতুল', 'নালক', 'রাজকাহিনী', 'বুড়ো-আংলা', আরো কত কত গল্প, ছড়া, নাটক, তিনি লিখেছেন ছোটদের জন্য।তাঁর ভাষা সহজ, সরল, পড়ে বুঝতে একটু ও অসুবিধা হয়না। আর গল্পের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে কি সুন্দর সব ছবি। সে 'ক্ষীরের পুতুল' গল্পে দিগনগরের দীঘির ঘাট ই হোক, বা 'রাজকাহিনী'র রাজপুত রাজা-রানীদের সাহস আর বীরত্বের গল্পই হোক - সব যেন চোখের সামনে ভাসতে থাকে। অবনীন্দ্রনাথ খুব সহজেই ছুঁতে পারতেন ছোটদের মনকে। সেইজন্যই তো তিনি কত সহজে ফুটিয়ে তুলতে পারেন ছোট্ট রাজপুত্র গায়েব এর বাবার পরিচয় না থাকার কষ্ট; রাজকুমার বাপ্পাদিত্যের ভীল বালকদের সাথে বন্ধুত্বের গল্প।

আর  'বুড়ো-আংলা'র রিদয়! - তার মত দুষ্ট ছেলে আর দুটো আছে নাকি? সে এত দুষ্ট যে গনেশ ঠাকুর রেগেমেগে তাকে আঙ্গুল সমান বুড়ো-আংলা বানিয়ে দিলেন। বেচারা রিদয় তখন বুনো হাঁসেদের পিঠে চেপে উড়ে চলল কৈলাশ পর্বতের দিকে, গনেশ ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য। উড়তে উড়তে রিদয় দেখতে পেল নিচে রঙিন নকশী কাঁথার মত বিছানো সুন্দর বাংলা দেশ। সেই ছবির মত বিবরণ জানতে হলে অবশ্যই পড়ে ফেলতে হবে 'বুড়ো-আংলা'।

অবনীন্দ্রনাথ নিজেও বোধ হয় জানতেন যে তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে রঙিন ছবির টুকরো। তাই তো, 'বুড়ো-আংলা' গল্পে হাঁসের দল উড়তে উড়তে যখন প্রতিটি গ্রাম- শহর-মাঠ - জঙ্গলের খবর নিচ্ছে কুঁকড়োদের কাছ থেকে, তখন তারা হাঁকে -

"কার বাড়ি?"
"ঠাকুর বাড়ি।"

"কোন ঠাকুর?"
"ওবিন ঠাকুর -ছবি লেখে।"

 

 

মহাশ্বেতা রায়
কলকাতা

মহাশ্বেতা রায় চলচ্চিত্রবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ওয়েব ডিজাইন, ফরমায়েশি লেখালিখি এবং অনুবাদ করা পেশা । একদা রূপনারায়ণপুর, এই মূহুর্তে কলকাতার বাসিন্দা মহাশ্বেতা ইচ্ছামতী ওয়েব পত্রিকার সম্পাদনা এবং বিভিন্ন বিভাগে লেখালিখি ছাড়াও এই ওয়েবসাইটের দেখভাল এবং অলংকরণের কাজ করেন। মূলতঃ ইচ্ছামতীর পাতায় ছোটদের জন্য লিখলেও, মাঝেমধ্যে বড়দের জন্যেও লেখার চেষ্টা করেন।